এতদিন জানতাম পুরুষ এক প্রকার। এখন জানি পুরুষ কয়েক প্রকার। এক প্রকার নারীকে উলঙ্গ করে, আরেক প্রকার নারীকে আবৃত করে, আরেক প্রকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে পুলিশ নাম ধারণ করে নারীর উলঙ্গাবস্থার দর্শক কিংবা ধর্ষক, আরেক প্রকার অনুগ্রহ কিংবা দুঃখের প্রকাশক।

হে নারী, পুরুষ তোমাকে উলঙ্গ করে, পুরুষ তোমাকে বোরকা দ্বারা আবৃত করে, পুরুষ তোমাকে অনুগ্রহ করে, পুরুষ তোমার চলার রাস্তা নির্ধারণ করে দেয়। তুমি নিজের জন্য কি করো? টিএসসিতে তোমাকে উলঙ্গ করা হলো। তুমি নিজের জন্য কি করলে? তোমার কি তখন উচিৎ ছিলো না সেই ছেলেগুলোকে ধরে, তাদের প্যান্ট খুলে ন্যাংটো করে প্যান্টগুলি গাছের আগায় ঝুলিয়ে দেওয়া? তুমি কেনো পারলে না ওদের গালে অন্তত পক্ষে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিতে? তুমি উলঙ্গ হয়ে শুধু কান্না করলে, আর তাকালে পুরুষ দেবতাদের দিকে, তারা তোমাকে রক্ষা করবে বলে। কেনো তুমি নিজের রক্ষা নিজে করতে পারলেনা? নারী তুমি এত দুর্বল কেনো?

নববর্ষের দিনে নারীকে উলঙ্গ করার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পালন করেছে পুরুষ। নারী, তোমাকে বুঝতে হবে বছরের প্রথম দিনে পুরুষের নারী উলঙ্গ কার্য উদ্বোধন হয়ে গেছে। এ এখন সারা বছর ধরে চলবে। আর তোমার জন্য সারা বছর, বছরের পর বছর আহত কিংবা নিহত হবেন লিটন নন্দীর মত মানুষরা। আর তুমি হবে সবচেয়ে বড় দর্শক তোমার উলঙ্গিত শরীরের। নারী, তুমি প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে বঞ্চিত, প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গায় ধর্ষণের শিকার, প্রতিদিনই তুমি কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত। তুমি কতদিন তোমার নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছো? তোমার অন্ধত্ব কি উৎসাহিত করছে না এই নরপশুগুলিকে? নারী, তোমার হাত, পা, মাথা, মুখ এগুলো কিসের জন্য? পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য? না তোমার মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য?

যদি মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য হয়, তাহলে জেগে উঠো। সীমাবদ্ধ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসো, নির্যাতনকারী পুরুষের সাথে যে কোনো অবস্থায় লড়ার শক্তি সঞ্চয় করো, অন্য নারীকে সহযোগিতা করো। যারা নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলে তাদের সমর্থন করো। সংগঠিত হও। নেতৃত্ব দাও। যে পুরুষ একবার তোমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করবে, সেই পুরুষকে দশবার ধর্ষণের যোগ্যতা অর্জন করো। এটাই হবে সবচেয়ে ভাল প্রতিবাদ। যে পুরুষ তোমাকে একবার উলঙ্গ করবে, তাকে সারা জীবনের জন্য উলঙ্গ করার ব্যবস্থা করো। তখন আর কেউ তোমাকে নারী ভাববে না। ভাববে পুরুষ কিংবা পুরুষতন্ত্রের যম। আর নিজেকে রক্ষার জন্য পুরুষতন্ত্রের যম হওয়া ছাড়া নারীর কোন উপায় নেই। তাই হে নারী, শালীনতা কিংবা ইজ্জত এগুলোর ঊর্ধ্বে নিজেকে কামনা করো। নিজের চলার নিয়ম নিজে তৈরি করো। পুরুষের নিয়মকে বর্জন করো। এ জগত শুধু পুরুষের না, এ জগত মানুষের, এ জগত সকল প্রাণীর। নারী তার মতো তার জগত তৈরি করবে, এটাই নিয়ম।

জাগো নারী জাগো
দেখিতে চাইগো জাগ্রত নাড়ির স্পন্দন,
বিশ্ব জুড়িয়া যেদিন করিবে
‘পুরুষ’ অধিকারের আন্দোলন।
নারীর ক্ষমতা অধিক হবে গো
পুরুষ হবেগো বঞ্চিত,
জাগ্রত নারীর আন্দোলনে তবে গো
হবে সম অধিকার প্রতিষ্ঠিত।