সহানুভুতি, সমানুভুতি, সহমর্মিতা ও সহৃদয়তার গুনগুলো মানবিক গুন; এবং এই গুনগুলোর সচেতন চর্চাই মানবতা। কাজেই মানবতা হচ্ছে সেই অর্জিত গুন, যেটা মানুষের মানবীয় সত্ত্বাকে উদার হতে, কল্যাণমূলক কার্যকলাপে স্বতঃপ্রণোদিত হতে, হিতৈষি হতে, দয়াশীল হতে, দানশীল হতে, সদাশয় হতে, বদান্যতা দেখাতে উদ্বুদ্ধ করে।

কোন সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে, বা গোষ্ঠী স্বার্থ থেকে এই গুন অর্জিত হয়না বলেই তুলনামুলক ভাবে কম সংখ্যক মানুষ মানবিক ।
কোন ধর্মই মানবতার কথা বলেনা, কারন ধর্মমাত্রই মানব সম্প্রদায়কে খণ্ডিত ভাবে দেখে; ধর্মগুলো শুধুমাত্র সেই ধর্মে বিশ্বাসীদের অধিকার সমর্থন করে, সমগ্র মানব সম্প্রদায়কে এক দৃষ্টিতে দেখে না।
ধর্মগুলোর প্রতিরোধ সত্ত্বেও মানবিক চিন্তা আজ এগিয়েছে বলেই আজ আমরা সার্বজনীন আইনের প্রচলন দেখি, যদিও আমাদের আরও অনেক এগুতে হবে। এই এগুনোর পথে ধর্মই বৃহত্তম বাধা।

মানবতার গুন অর্জনের জন্য, উত্তরোত্তর মানবিক হয়ে ওঠার পূর্বশর্ত হচ্ছে মননে অসাম্প্রদায়িক হতে পারা।
অসাম্প্রদায়িকতা একটি সম্পূর্ণ নির্মোহ, নৈর্ব্যক্তিক, বিমূর্ত ধারণা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, শারীরিক সক্ষমতা, আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে, সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন ভাবে, একজন মানুষকে কেবলমাত্র একজন মানুষ হিসেবে দেখতে পারার একটি মানসিক যোগ্যতা হল অসাম্প্রদায়িকতা । একই সাথে কোন রকম শর্ত ছাড়াই সমাধিকার ও ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিটি মানুষের রাষ্ট্রীয়, আইনি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে পারা এবং সেই অধিকার নিশ্চিত করতে পারার যোগ্যতা হল অসাম্প্রদায়িকতা।
মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক বিভেদের সুযোগে, একে অপরকে “সাহায্য” করার নামে “দান” করবার যে ধারনাকে মানবিকতার সাথে আজ যুক্ত করা হয়, সেই দাক্ষিণ্যের আত্মশ্লাঘাকে মহত্ত্ব মনে করা মোটেই মার্জিত রুচির পরিচয় নয় ; মানবতার সাথে এর কোন যোগসুত্র নেই; কাউকে কিছু দিতে হলে দান হিসেবে নয়, উপহার হিসেবে দিতে হয়।

মানবতার সাথে মানব ওতপ্রোত ভাবে জড়িত হলেও মানবতার সীমা কিন্তু মানবকে ছাড়িয়ে বিশ্ব ও প্রকৃতিতে মিশে যায়।
Neil deGrasse Tyson এর ভাষায় we are all connected to each other biologically, to the earth chemically and to the rest of the universe atomically.
এই বোধ ও তার সচেতন চর্চাই মানবতার সর্বোচ্চ প্রকাশ।