সমকামিতা নিয়ে যুক্তিবাদি বনাম লিব্যারালদের যুদ্ধ এখন একদম সামনাসামনি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রবীর বাবু এই ইস্যুটা উস্কেছেন অভিজিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। এইদিন আসবে সেটা জানতাম। কারন আমাদের লাইফ স্টাইল এবং যৌন নির্বাচনের অধিকাংশ কারন এখনো আমাদের জানা নেই অথবা এই জাতীয় প্রশ্নগুলি বিজ্ঞানের গণ্ডীর বাইরে কারন পপারিয়ান ফলসিফিকেশনে এসব প্রশ্নের টেস্টেবিলিটি নেই । গত দুই দশকে সমকামিতার ওপর যত বৈজ্ঞানিক গবেষনা হয়েছে, তার অধিকাংশই আজ ভুল বলে প্রমানিত। কেও গে হয়ে জন্মায় না -আবার গে হওয়াটা রোগ ও না যে সারানো যাবে। ফলে যুক্তি, বিজ্ঞান দিয়ে সমকামিতা ভুল না ঠিক-এগুলো কোনদিন নির্নয় করা যাবে না । সমকামিতা স্বাভাবিক যৌনতা এই নিয়ে বিজ্ঞানে দ্বিমত নেই । সেই অব্দি ঠিক ছিল। কিন্ত স্বাভাবিক যৌনতা মানেই সমাজে গ্রহণযোগ্য-এই যুক্তি মানতে গেলে, বাকী অনেক কিছু যৌনতা যা স্বাভাবিক-যেমন পরকীয়া, পিডোফেলিয়া-ইত্যাদি সব কছুই বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক যৌনতা বলে পরিচিত-সেসব কিছুও গ্রহণযোগ্য হয়। সুতরাং বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক যৌনতা, তাই সমকামিতা গ্রহণযোগ্য, এই দৃষ্টিভংগী নিলে তা যুক্তিতে টিকবে না ।

তাহলে কেন আমরা সমকামিতাকে সমাজে স্বাভাবিক যৌন আচরন বলে গ্রহণ করবো-আর পিডোফেলিয়া হবে পানিশেবল অফেন্স ? খুব স্বাভাবিক ডিমার্কেশন হবে, এই ধরনের যৌন আচরন সমাজের জন্য ক্ষতিকর কি না । দুটো ব্যপা্রে ফ্যক্ট চেক করাই যায়। (১) সমকামিদের মধ্যে কি যৌন রোগ বেশী? (২) সমকামী দম্পতিরা কি সন্তান মানুষ করতে ব্যর্থ ? (১) এবং (২) এর ক্ষেত্রে উত্তর কনক্লুসিভ না । সন্তান মানুষের ক্ষেত্রে লেসবিয়ান দম্পতিরা সবার থেকেই এগিয়ে। মোদ্দা কথা সমকামিতা সমাজে ক্ষতি করে এমন অনেক অভিযোগ, স্টাডি ইত্যাদি রক্ষণশীল গ্রুপ গুলো করেছে-কিন্ত কোনটার রেজাল্ট এখনো পর্যন্ত প্রশ্নাতীত ভাবে সঠিক না ।

ফলে যেহেতু সমকামিতা নিয়ে সমাজবিজ্ঞান এবং জৈববিজ্ঞানের গবেষনাগুলি প্রশ্নাতীত না এবং প্রায়শই কয়েক বছরের মধ্যে ভুল প্রমান হয়ে যাচ্ছে-বাস্তব সম্মত অবস্থান হচ্ছে, সমাজে সমকামিতাকে স্বীকার করে নেওয়া-কারন ঐতিহাসিক ভাবে সব দেশেই সমকামিতা ছিল। আরো সঠিক ভাবে বললে প্রাচীন ভারতীয়, গ্রীস বা রোমান সম্প্রদায় ছিল উভকামী। রোমান মিলিটারী যুদ্ধে বাইরে থাকলে, সেনা ছাউনিতে ছিল সমকামী। আবার যুদ্ধ শেষে বৌএর কাছে ফিরত দু দশটা যৌন দাশদাশী নিয়ে। এমন কোন সভ্যতা জানা নেই যেখানে সমকামিতা বা উভকামীতা ছিল না । এসব নিয়ে প্যাগান সমাজে লোকে মাথা ঘামাত না । সমকামিতা যে অপরাধ – সেটা মূলত এসেছে খ্রীষ্ঠান এবং ইসলাম ইত্যাদি আব্রাহামিক ধর্মগুলির মধ্যে বিশুদ্ধ যৌনতার আইন আনতে। প্যাগান সংস্কৃতিতে সমকামিতাকে কখনোই অস্বাভাবিক আচরন বলে ধরাই হত না । হমোফোবিয়া, পরকীয়ার বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা, গণিকাদের সামাজিক অবস্থানের অবক্ষয়-এসব প্যাগানিজম খারাপ প্রমান করতে আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদি খ্রীষ্ঠান এবং ইসলামি সভ্যতার দান। রক্ষণশীলতা বলতে আজকে যেটা বোঝায় সেটা শ্রেফ জুডিও-খ্রীষ্ঠান-ইসলামিক সংস্কৃতি। প্যাগানদের থেকে আমরা ভাল , আমরা বিশুদ্ধ, প্যাগানিজম পাপ-ইত্যাদি প্রমান করতে প্যাগানদের যৌন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যতসব আইন এবং অপসংস্কার চালু হয়-তার মধ্যে হমোফোবিয়াও ছিল।

সুতরাং সমকামিতার পক্ষে এবং বিপক্ষে বিজ্ঞান ও যুক্তি ইনকনক্লুসিভ হলেও ইতিহাস খুব পরস্কার যে ইহা ছিল মানব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। খ্রীষ্ঠান এবং ইসলাম ধর্ম – ধর্মীয় ক্লাব কালচার চালু করতে-এসব নিশিদ্ধ বলে ঘোষনা করে যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি মোহনবাগানের সমর্থক তাই ইলিশ খাবে না এর বেশী কিছু না ।

প্রবীর বাবুদের যুক্তিবাদি সংগঠনের অবস্থান নিয়ে আমার কিছু বলার নেই । উনার লেখাপত্র ছোটবেলায় পড়েছি। তখন ভালোই লাগত। বর্তমানে সমকামিতা, সাম্যবাদ, মার্ক্সবাদ ইত্যাদি নিয়ে উনার লেখা বা ভাষন শুনে মনে হয়েছে বিজ্ঞান এবং দর্শনে উনার প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও নেই । আর উনার চেল্যাদের সোশালমিডিয়াতে দেখে মনে হচ্ছে এরা হিন্দু হনু, ইসলামিক ছাগুদের তৃতীয় অবতার -একই রকম অশিক্ষিত এবং অসহিষ্ণু। এই ধরনের অশিক্ষিতদের শিক্ষিত করার দ্বায়িত্ব কেও কেও কেন নিচ্ছে সেটাও পরিস্কার না । তবে ইতিহাস নির্মম । খারাপ লাগছে এইভেবে, ইতিহাসে প্রবীর বাবুর স্থান হবে জোকার নায়েকের সাথে-ভুলভাল অপবিজ্ঞানের প্রচারক হিসাবে।