মহামান্য প্রধানমন্ত্রী জনাবা শেখ হাসিনা,
যথাবিহিত সম্মান পুর:সর সবিনয় নিবেদন এই যে, আপনি বাংলাদেশে নামক ভূখন্ডটির একজন মহাপরাক্রমশালী মহারাজা, আমি আপনার তথাকথিত সোনার দেশের একজন ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র মহানগন্য প্রজা ! মনে বড় ভয় লইয়া, অনেক কষ্ট করিয়া বুকে একটু বল সঞ্চয় করিয়া, আপনার নিকট এই খোলা পত্র খানা লিখিতে সাহস করিলাম ! তবু মনে অনেক দ্বিধা, কি লিখিতে গিয়া আবার কি লিখিয়া ফেলি – মুখ ফসকে এই অধমের মুখ হইতে না আবার কোন মহাসত্য কথা বাহির হইয়া আপনার চিত্ত বৈকল্য ঘটায়, এবং আপনি আমার প্রতি মহাক্রুধান্বিত হইয়া উঠেন এবং আবার না আপনার মহাঅনুগত পুলিশ বাহিনী আমাকে ধাওয়া করিয়া বেড়ায়, তাই শুরুতেই এই অধমকে একটু ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখিবার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাইয়া আমার এই পত্রখানা লিখিতে আরম্ভ করিলাম !

আমার একান্ত বিশ্বাস বাংলাদেশের সর্ববিষয়ে প্রজ্ঞাবান একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী বাংলা একাডেমি বইমেলা চলাকালীন সময়ে সেই একাডেমি প্রাঙ্গনেরই অদূরে অনেক জনতার ভিড়ে আপনার পুলিশ বাহিনীর সন্মুখে ড: অভিজিৎ রায়ের মত একজন স্বনামধন্য লেখক, বিজ্ঞানী এবং সর্বোপরি একজন মহান মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধির মানুষকে বাংলাদেশের ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা চাপাতি দিয়া কুপাইয়া খুন করিয়াছে এবং আরেকজন মানবতাবাদী লেখক তাঁহার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদকে মারাত্বক ভাবে আহত করিয়াছে! এই পোড়া দেশটায় অভিজিতের মত এমন একজন মুক্তচিন্তক, ক্ষুরধার যুক্তিবাদী, তীক্ষ্ণধী সম্পন্ন বিজ্ঞানী ও মানবতাবাদী খুব বেশী তৈয়ার হয় না – কারণ এমন মানুষ তৈয়ার হওয়ার সুযোগ এই দেশটায় খুবই সীমিত ! তাঁহার মত এমন একজন মানুষের জন্য এই দেশটাকে বহুকাল অপেক্ষা করিতে হয় ! বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের বহু মানুষ তাঁহার এই নৃশংস হত্যাকান্ডে গভীরভাবে শোকাহত এবং জোরালোভাবে প্রতিবাদে মুখরিত ! বি, বি, সি, গার্ডিয়ান এর মত পৃথিবী বিখ্যাত সংবাদ মাধ্যম সহ বিশ্বের নানা পত্র পত্রিকা এই সংবাদটি বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রচার করিয়াছে ! জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আমেরিকান স্টেইট ডিপার্টমেন্ট (US Department of State) মধ্যযুগীয় কায়দায় এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের বিষয়ে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করিয়া বিবৃতি প্রদান করিয়াছে ! আপনি কারণে অকারণে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা বিবৃতি দিয়ে থাকেন ! কিন্তু ইহা অনেকের কাছেই অতিব আশ্চর্যের ও বড়ই পরিতাপের বিষয় যে অভিজিৎ হত্যার পর আপনি একেবারেই নিশ্চুপ ! আপনার এই মহানীরবতার পিছনে অনেক কারণই থাকিতে পারে তার সবকিছু হয়ত এই অধমের জানার কথা না, তবে আপনার সাম্প্রতিক কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করিয়া এই বিষয়ে কিঞ্চিত ধারণা করা যে কোন সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পক্ষেই একেবারে অসম্ভব নহে ! ২০০৪ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারী একই স্থানে হুমায়ুন আজাদ ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের হাতে মারাত্বক ভাবে জখম হইলেন, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী রাজীব হায়দার সেই ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীদের হাতেই নির্মম ভাবে খুন হইলেন – আজ পর্যন্ত সেই খুনিরা ধরা পড়ে নাই, সেই জঘন্য অপরাধের কোনো বিচার অদ্যাবধি আপনি করিতে পারেন নাই ! আশ্চর্যের বিষয় কয়েকমাস পূর্বে আপনার রাষ্ট্রযন্ত্রের অনুগত বাহিনী তিনজন অনলাইন লেখককে(সুব্রত অধিকারী, রাসেল পারভেজ ও মশিউর রহমান) গ্রেপ্তার করিয়া জেলে পাঠাইল (যদিও পরবর্তীকালে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিবাদের মুখে আপনি তাদের ছাড়িয়া দিতে বাধ্য হইয়াছেন) – তাদের অপরাধ কি ছিল ?? তাহারা নিজেদেরকে ঈশ্বর-অবিশ্বাসী বলিয়া মনে করিত – তাহারা প্রচলিত ধর্মের অন্ধকার দিকগুলি মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিত ! কেহ যদি প্রচলিত ধর্মগুলিতে অবিশ্বাসী হইলেই, কেহ যদি ধর্মগ্রন্হসমূহে বর্ণিত কোন এক ব্যক্তি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হইলেই, কেহ যদি “ধর্মগ্রন্থ” নামক গ্রন্হগুলিতে লিখিত মানবতাবিরোধী বিষয়াদি বিশ্লেষণ করিলেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির কাছে অপরাধী বনিয়া যায় তবে অভিজিৎ রায় ধর্মান্ধদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হইলেও আপনি যে নীরবতাই পালন করিবেন ইহা তো স্বাভাবিক মনে করাই সমীচীন মনে হয় – কারণ বাংলাদেশের প্রথম সারির যে কয়েকজন মানুষ (বেগম রোকেয়া, আবুজাফর শামসুদ্দিন, আহমেদ শরিফ, আরজ আলী মাতুব্বর, কবির চৌধুরী, অজয় রায়, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, দাউদ হায়দার, আলী আসগর, হুমায়ুন আজাদ, কবি শামসুর রহমান, তসলিমা নাসরিন, অভিজিৎ রায় প্রমূখ) নিজেদেরকে প্রচলিত ধর্মের ঊর্ধ্বে তুলিয়া, মানুষের মধ্যে প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস সমূহের অযোক্তিকতা আর অসারতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করিয়া, ধর্মগুরু বা ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলিয়া প্রচারক ভন্ড ধর্ম প্রচারকদের অমানবিক মুখোশ উন্মোচন করিয়া মানুষকে বিশেষ করে বাঙালিদের অন্ধকার হইতে আলোর পথে আনিতে জীবনের ঝুঁকি লইয়া লেখালেখিতে নিয়োজিত ছিলেন অভিজিৎ রায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন !!!

সর্বমান্যা শেখ হাসিনা,
আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে একসময় আমাদের এই বাংলাদেশ (তৎকালীন বঙ্গভূমি)-কে পান্ডববর্জিত দেশ বলিয়া গণ্য করা হইত, অর্থাৎ এই ভূমিতে কোন সভ্য -ভব্য মানুষ আছে বলিয়া অন্য অঞ্চলের মানুষেরা তখন মনে করিত না ! তবে বহুকাল গত হইয়াছে আমার ধারণা আমরা সেই অপবাদ হইতে কিছুটা হইলেও মুক্তিলাভ করিতে পারিয়াছি! আমাদের এই বঙ্গভূমিতে (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলা) রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মানুষের কবি কাজী নজরুল ইসলামের মত ব্যক্তিদের মননশীল, প্রজ্ঞাবান আর মানবতাবাদী চিন্তা, চেতনায় সমৃদ্ধ কর্মে ও লেখালেখিতে এই দেশ অনেক অগ্রসর হইয়াছে ! তারপর নিয়তির নিষ্ঠুর পরিনামে আমাদের বাংলা নামের এই ভূখন্ডটি দ্বি-খন্ডিত হইয়া আমরা একসময় পাকিস্তান নামক এক অদ্ভুত ধর্মীয় রাষ্ট্রের কারাগারে বন্দী হইয়া পড়িলাম! তবে আমাদের সৌভাগ্যই বলিতে হইবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত একজন অনন্য সাধারণ নেতৃত্বের জন্ম নেওয়ার সুযোগে মাত্র ২৪ বৎসরের মাথায় আমরা পাক ইসলামী রাষ্ট্র হইতে মুক্তি চিনিয়া আনিয়া এক স্বাধীন সার্বভৌম গণ প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রে পরিনত হই – যার রাষ্ট্রীয় মূলমন্ত্র হইয়াছিল – বাঙালি জাতীয়তাবাদ (যদিও এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন থাকিয়া যায় কারণ এই দেশে কেবল বাঙালি নহে, অন্যান্য নৃতাত্বিক গোষ্ঠির মানুষও আছে), গনত্রন্ত্র, সমাজ্তন্ত্রম ও ধর্ম নিরপেক্ষতা ! আমার পত্র না আবার অতি দীর্ঘ হইয়া আপনার ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় এই আশঙ্কায় আমি কেবল এই চার মূল মন্ত্রের একটি মন্ত্র – “ধর্ম নিরপেক্ষতা” নিয়াই অল্প বিস্তর আলোচনা করিতে চাই ! এই “ধর্মনিরপেক্ষতা” শব্দটির একটু সহজ অর্থ করিলে এই দাঁড়ায় যে বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটি যে কোন ধর্মের প্রতি নিরপেক্ষ থাকিবে – অর্থাৎ রাষ্ট্র কোন ধর্মের প্রতিই কোন পক্ষপাতিত্ব দেখাইবে না, অর্থাৎ বহু ধর্মের এই মানুষের দেশে ধর্ম থাকিবে যার যার ব্যক্তিগত বিষয় – রাষ্ট্র কেবল নাগরিকদের ইহজাগতিক মঙ্গলের নিমিত্তেই কাজ করিবে ! আপনি নিশ্চয় ইতিহাস পড়িয়া জানিয়া থাকিবেন যে এক সময় মানবসভ্যতার ক্রম বিকাশের ধারায় এই পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই ধর্ম যাজকেরা রাষ্ট্র পরিচালনা করত – ধর্মগ্রন্হসমূহে লিখিত বাণীগুলিকে তারা ঈশ্বরের বাণী বলিয়া মনে করিত এবং এই সকল ধর্মগ্রন্হে যা যা লিখিত আছে সেই মত রাষ্ট্র পরিচালনা করিত ! এই ধর্মগ্রন্হসমূহে লিখিত সত্যের (???) বাহিরে আর কোন সত্য আছে বলিয়া তাহারা মনে করিত না এবং সেই ধর্মের সত্যের বাহিরে কেহ কোন সত্যকার “সত্য” উদঘাটন করিলে বা প্রচার করিলে তাহাকে কঠিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাইয়া মৃত্যুদন্ডের মত কঠিন সাজা প্রদান করা হইত ! নিশ্চয় আপনার কাছে সেই সকল ইতিহাস অবিদিত নহে যে অদ্য হইতে প্রায় ১৬০০ বৎসর পূর্বে গ্রীস দেশের হাইপেশিয়া নাম্নী এক বিখ্যাত নারী গণিতজ্ঞ, যে নাকি তখন ধর্মের বিপরীতে দাঁড়াইয়া যুক্তিবাদ, দর্শন আর বিজ্ঞান নিয়ে তরুণ সমাজের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করিয়াছিল, তাহাকে প্রাণ দিতে হইয়াছিল খ্রীস্টান মৌলবাদী সম্প্রদায়ের হাতে ! এখন থেকে ১৪১৫ বৎসর পূর্বে বাইবেলে বর্ণিত গ্রহ-নক্ষত্রের অবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বিপরীতে বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যা দেওয়ার কারণে ইতালির দার্শনিক-গণিতজ্ঞ-কবি-জ্যোতির্বিজ্ঞানী গীয়র্দানো ব্রুনোকে ক্যাথলিক ধর্মযাজকরা জীবন্ত আগুনে পুড়াইয়া হত্যা করিয়াছে ! শুধু তাহাই নহে, আজ হইতে প্রায় ১৩৬৪ বৎসর পূর্বে আরেক জগৎবিখ্যাত গণিতজ্ঞ পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে বাইবেলের পৃথিবী কেন্দ্রিক মতবাদের বিপরীতে সূর্য কেন্দ্রিক মতবাদ প্রচারের কারণে গীর্জার মৌলবাদী খ্রীস্টানদের কোপানলে পড়িতে হয় এবং তাহাকে বৃদ্ধাবস্থায় বিচারের সন্মুখীন হইতে হয় এবং জীবনের শেষ ৯ বৎসর গৃহবন্দী অবস্থায় ধুঁকিয়া ধুঁকিয়া মৃত্যুবরণ করিতে হইয়াছে !

তারপর হইতে পৃথিবীর উপর দিয়া বহু জল গড়াইয়া গিয়াছে, মানব সভ্যতা সামনে অনেক অগ্রসর হইয়াছে – যে ইউরোপ একসময় গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হইয়া গিয়াছিল সেখানে ধর্মীয় অজ্ঞানতার বিপরীতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো, যুক্তির আলো ক্রমেই ধর্মান্ধতাকে দূরীভূত করিতে সমর্থ হইয়াছে ! আজ সমস্ত ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এমনকি এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশই ধর্মান্ধতা কাটিয়ে ক্রমে ক্রমে যুক্তি ও বিজ্ঞানের চর্চাকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনের চালিকা শক্তি হিসাবে গ্রহণ করিয়াছে – এমনকি খোদ ভারতবর্ষে একসময় যখন ধর্মের নামে হিন্দুরা সতীকে স্বামীর সাথে জ্বলন্ত চিতায় সহমরণে বাধ্য করিত তাহাও আজ রাজা রামমোহন রায়ের মত মুক্তচিন্তার মানুষদের আন্দোলনের ফলে ইতিহাসের অংশ হিসাবে পরিণত হইয়াছে ! একবার চিন্তা করিয়া দেখুন সেদিন রামমোহন রায়ের মত মানুষেরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কথা না বলিলে, এই ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াইলে আজও হয়ত হিন্দুরা মহানন্দে সতী দাহ করিত ! এইখানে একটা বিষয় সবিশেষ উল্লেখযোগ্য যে আজ থেকে দুই শত বৎসর পূর্বে রাজা রামমোহন এই নিষ্ঠুর বর্বর অমানবিক ধর্মীয় প্রথা বন্ধ করিবার নিমিত্তে আন্দোলনে নামিয়া ছিলেন, কিন্তু সেই যুগেও এর বিরুদ্ধে কথা বলিতে গেলে লোকে তাদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগে বলিয়া বিশাল গোষ্ঠী জিকির তুলিয়াছে বলিয়া ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় না বা কিছু সংখ্যক ধর্মান্ধরা জিকির তুলিলেও তখনকার ইংরেজ সরকার সেই ধর্মান্ধদের সহযোগী হয়ে রাজা রামমোহনকে বন্দী করেন নাই, বরং এই মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির যুক্তিকে সমর্থন করিয়া ১৮২৯ সালে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করিয়াছেন ! কিন্তু অতীব পরিতাপ ও অপরিসীম লজ্জার বিষয় যে সেদিন থেকে আজ ১৮৬ বৎসর পরেও আমাদের এই পোড়া দেশে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলিলে ধর্মপ্রাণ বাঙালির আঁতে ঘা লাগে, তাহাদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগিল বলিয়া হাজার কন্ঠে জিকির তুলে – আর আপনার রাষ্ট্রতন্ত্রের হর্তা-কর্তারা এই জিকিরের আগুনে ঘি ঢালে ! শুধু কি তাই আপনার রাষ্ট্রযন্ত্রের তাবেদার পুলিশ বাহিনী আপনার আদেশে তাদের গ্রেপ্তার করে জেলে পুরে ! ধিক আপনাকে, ধিক আপনার আর সব সহযোগীদের ! যে দেশে দেশের কর্ণদারেরা ধর্মান্ধ, সে দেশ থেকে ধর্মান্ধতা দূর হবে সে ত আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র ! একটি আধুনিক রাষ্ট্রের কাজ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠিয়া সেই দেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা – তাদের বাক স্বাধীনতার সুযোগ দেয়া – ভদ্রতা বজায় রেখে সকল বিষয়ে সমালোচনার অধিকার নিশ্চিত করা ! কিন্তু হায় ! বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি, যার একদিন জন্ম হইয়াছিল “ধর্ম নিরপেক্ষতা”-র অঙ্গীকার লইয়া সেই রাষ্ট্রটির গলায় এখন ইসলাম ধর্মের মালা !! আর সেই দেশের রাজা যখন নিজেকে সর্বত্র প্রচার করিয়া বেড়ায় ইসলামের রক্ষক হিসাবে সেই দেশে যে ধর্মান্ধতার শিকড় দিনে দিনে আরো বিস্তৃতি হইতে আরো বিস্তৃতিতর হইবে – ধর্মান্ধতার চর্চা যে সেখানে মহীরুহে পরিণত হইবে তাহা তো বলাই বাহুল্য !! আর তাইত দেখি ইসলামের ধ্বজাধারী আল্লামা শফি হুজুর প্রকাশ্যে জনসভায় ধর্মের নামে তেঁতুলতত্বের মত বিকৃত বয়ান দেয়ার মধ্য দিয়া সারা বিশ্বের নারী সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করিতে কুন্ঠা বোধ করে না ! বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি নামে এখনো গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হইলেও আচার আচরণে একেবারে খাঁটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র, আর তাইত ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগার ব্যাপারখানা কেবল মুসলমানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ! আমি জানি আপনার মত একজন মহাগুণী মানুষ এই বিষয়টি সম্বন্ধে অবশ্যই অজ্ঞ নন, তবু লিখিতেছি যে, দেশে যখন হাজার হাজার মানুষদের লইয়া মাঠে ময়দানে ওয়াজ মাহফিল হয় তখন প্রায় জায়গাতেই ইসলামের জয়গান করিতে যাইয়া অন্য সকল ধর্মকে (নাস্তিকদের কথা বাদই দিলাম) যে ভাবে জঘন্য ভাষায় গালি গালাজ করা হয় তা আপনার গবু পরিষদ শুনিয়াও না শুনার ভান করিয়া থাকে – ভাবখানা এই যে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামের অনুসারী ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে অন্য টোটকা-পটকা ধর্মের লোকদের গালি গালাজ করিলেই বা এমন কি আসে যায় ! আল্লার সর্বশ্রেষ্ট ধর্ম আর আল্লার সর্বশ্রেষ্ট নবী মুহাম্মদের অনুসারীদের বাদ দিলে অন্যদের আবার কিসের অনুভুতি, তাদের মূর্তি ভাঙ্গলে, তাদের মন্দির, প্যাগোডা আর গির্জা পোড়াইলে আপনার রক্ষী বাহিনী (পুলিশ)-র লোকেরা দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া মজা দেখে ! আর হবেই না বা কেন ! যে দেশের রাজা জনসভায় বলে বেড়ায় ” আমি মুসলমান আমি মহানবীর অপমান সহ্য করিব না সেখানে অন্ধ ইসলাম অনুসারীরা যে আরো আস্কারা পাইবে সেইটা বুঝিতে তো আর বেশি কিছু আক্কেলের প্রয়োজন পরে না !!

মহা শ্রদ্ধাবতী শেখ হাসিনা,
এই অধমের বেহাদবি ক্ষমা করিবেন -এই ছোট মুখে আপনাকে কয়েকটা ছোট কথা জিজ্ঞেস করিতে চাই ? আপনি কি জানেন না বা জানিলেও কেন সব সময় ভুলিয়া থাকেন যে আধুনিক সমাজে, আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায়, একটি রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের উন্নতির নিমিত্তে রাষ্ট্র হইতে ধর্ম আলাদা – নইলে পদে পদে এই ধর্ম দেশের উন্নতির অন্তরায় হইয়া দাঁড়ায় ! এটি আজ সকল উন্নত দেশে একটি মীমাংসিত বিষয় ! কার কি ধর্ম বিশ্বাস এইটি রাষ্ট্রের কেন বিবেচনার বিষয় হইবে ?? একজন কোন ধর্ম পালন করে কি করে না, একজন কোন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে কি করে না, সে আল্লহ নামক কারো এবাদত করে, নাকি রাম- হনুমানের পূজা করে, নাকি ঈশাকে ঈশ্বরের পুত্র রূপে আরাধনা করে, নাকি গৌতম বুদ্ধকে ভগবান রূপে ভজন করে, নাকি একটি গাছকে দেবতা জ্ঞানে পুষ্পাঞ্জলি দেয় তাতে রাষ্ট্রের কি আসে যায় ??? রাষ্ট্র দেখবে একজন নাগরিক তাহার ন্যায্য অধিকার ভোগ করিতে পারিতেছে কি না, রাষ্ট্র দেখবে একজন নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি তাহার কর্তব্য ও দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করিতেছে কি না, রাষ্ট্র দেখবে ধর্মের নামে বা অন্য কোন অজুহাতে কোন নাগরিক অন্য কোন নাগরিককে শোষণ নির্যাতন করে কিনা – অত্যন্ত শ্লাঘার বিষয় যে বর্তমানে অধিকাংশ উন্নত দেশেই ধর্ম নিয়ে আর কোন আলোচনার প্রয়োজন পরে না ! সেই দেশের সভ্য মানুষেরা তাদের ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস অত্যন্ত সযতনে নিজের মধ্যে গোপন করিয়া রাখে – অনেক সময় তাঁহার অতি কাছের মানুষও তাঁহার ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস সম্বন্ধে বা তাঁহার আদৌ কোন ধর্ম বিশ্বাস আছে কিনা তাহা জানিতে পারে না, কারণ সেই সকল দেশের মানুষ তাদের শৈশবেই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সকল ধর্মমত সন্বন্ধেই সাধারণ ভাবে কিছুটা জানার সুযোগ পায় এবং মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই সকল প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মসকলের নেতিবাচক ভূমিকার ইতিহাস সম্বন্ধে জানিয়া ধর্মকে ইহজাগতিক কোন বিষয়ের বিবেচনায় আনয়ন করে না ! কিন্তু আমাদের এই সব পোড়া দেশে এখনো ধর্ম নামক এক কল্পকাহিনীর প্রয়োগে এক মানুষ আর মানুষকে ছোট কর, ধর্মের নামে এখনো নারীকে শোষণ নির্যাতন করে, সংখ্যাগরিষ্ট ধর্মের মানুষ সংখ্যালঘুদের প্রতি নানা ভাবে অন্যায় অবিচারে লিপ্ত হয় – যদিও রাষ্ট্রের কাজ প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে ধর্ম বর্ণ নিবিশেষে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে দেখা যায় রাষ্ট্রের কর্ণদারই কোন একটি ধর্মের পক্ষাবলম্বন করিয়া কেবল সেই ধর্মটির রক্ষক হইয়া যায় ! এই প্রসঙ্গে আমাদের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকেও বাদ দেয়া যায় না ! আমার আজও স্পষ্ট মনে পড়িয়া যায় উনি যখন পাকিস্তানের কারাগার হইতে মুক্তি পাইয়া ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী ঢাকায় নামিয়া ভাষণ দিলেন সেখানে তিনি এক পর্যায়ে বলিয়া ফেলিলেন – “আমি মুসলমান – মুসলমানেরা একবারই মরে” ইত্যাদি ইত্যাদি ” তার মানে কি দাঁড়াইল মুসলমানেরাই কেবল একবার মরে আর অন্য সকল ধর্মের মানুষেরা বার বার মরে ??? অথচ তিনি একবারও চিন্তা করিয়া দেখিলেন না যে, পাকিস্তানিরা এবং তাদের দোসর আলবদর, আলশামস আর রাজাকারেরা যারা দীর্ঘ নয়মাস এই দেশটায় হত্যা, ধর্ষণ আর লুঠপাঠ চালাইল তারাও কিন্তু ছিল সকলেই মুসলমান !! সেদিন শুধু সেই কথা বলিয়াই তিনি থামিয়া থাকেন নাই – যেই দেশের সংবিধানে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা” যুক্ত হইল সেই দেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও, আই, সি ( Organization of Islamic Cooperation) -র মেম্বার হইল , সেই দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা হইল, সেই দেশে সকলের জন্য আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করিবার পরিবর্তে তিনি হাজার হাজার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করিতে শুরু করিলেন – তার পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা – তাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়া বাংলাদেশ আর এক ইসলামী রাষ্ট্র দ্বিতীয় পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত শুরু হইল – দীর্ঘ ২১ বছর দেশে এই ইসলামিকরণ অব্যাহত ভাবে চলিতে থাকিল যদিও এই দেশটি একক কোন ধর্মীয় জনগোষ্ঠির দেশ নয় ! আপনি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বাংলাদেশের প্রগতিশীল মানুষেরা সঙ্গত কারণেই ধারণা করিয়াছিল আপনি বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি ইহজাগতিক (secular) রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করিবার প্রয়াস পাইবেন ! কিন্তু আমরা হতাশ হইয়াছি আপনি সেই পথ দিয়া হাঁটিবার পরিবর্তে বিপরীত দিক দিয়া হাঁটিতে শুরু করিয়াছেন, আপনি ধর্মীয় গোষ্ঠিকে মদদ দিতে শুরু করেছেন ! বিভিন্ন সভা সমাবেশে আপনি নিজের মুসলমানিত্ব জাহির করিতে আরম্ভ করিলেন ! আমি বড়ই আশ্চর্য হইলাম বছর খানিক পূর্বে (তারিখটা সঠিক মনে নাই ) কেহ একজন খুন হওয়ার পর আপনি এক জনসভায় বলিয়া ফেলিলেন “একজন মুসলমান আর একজন মুসলমানকে কি করিয়া খুন করিতে পারে ? ” , আপনি কি একবারও ভাবিয়া দেখিয়াছেন এমন একটি কথা বলিয়া আপনি কত বড় গর্হিত কাজ করিলেন ?, কত বড় অপরাধ করিলেন ? আপনার এই বক্তব্যের সরল অর্থ করিলে কি এই দাঁড়ায় না যে একজন মুসলমান আর এক মুসলমানকে খুন করিতে পারে না কিন্তু একজন মুসলমান অন্য ধর্মের কাউকে খুন করিলে তাহাতে দোষ নাই বা তাহা কোন অপরাধ বলিয়া বলে বিবেচিত হইবে না ?????????????

জ্ঞান তাপসী শেখ হাসিনা,
আপনি হয়ত বলিতে পারেন ধর্মের সমালোচনা করিয়া ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত করিবার প্রয়োজন কি ? তাহার উত্তরে বলিতে হয় ধর্মগ্রন্থ গুলিতে যদি কেবল ভালো ভালো জিনিসই থাকিত – আর ধর্মপালনকারীরা যদি সব ভালো ভালো কাজই করিত তবে আপনার এই প্রশ্নটি যথার্থই চিন্তার বিষয় হইত ! তবে একবার ভাবিয়া দেখুন একসময় ধর্মবেত্তারা প্রচার করিয়া বেড়াইত কোন মৃত মানুষকে স্পর্শ করা জীবিত মানুষের জন্য পাপ – কারণ সকল মৃত দেহ ঈশ্বরের অধীন ! একবার চিন্তা করিয়া দেখুন ধর্মের এই আপ্ত বাণীকে চ্যালেঞ্জ করিয়া কিছু মুক্তবুদ্ধির যুক্তিবাদী মানুষ আগাইয়া না আসিলে আজ চিকিৎসাশাস্ত্র কোথায় অবস্থান করিত ! শুধু তাহাই নহে এই মানব প্রজাতি অদ্যাবধি টিকিয়া থাকিতে পারিত কিনা তাই বা কে বলিতে পারিত !! মানব ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ধর্মের ইতিহাসের বিশ্লেষণ করিলে দেখিতে পওয়া যায় যে সত্য কাহিনীর পরিবর্তে ধর্মগ্রন্থগুলি রূপকথার কাহিনীতে ভরপুর ! মানুষের ক্রম বিবর্তনের ধারায় এক সময় মানুষের মগজে যখন কিছু বুদ্ধির সঞ্চার হইল মানুষ তখন তাহার চারিপাশের জগৎ সংসারকে বুঝিতে চাইল ! মানুষ যখন কোন ঘটনা বা বিষয়ের কোন পরীক্ষা নির্ভর ব্যাখ্যা দিতে পারিত না – তখন কিছু মানুষ কল্পনার আশ্রয় নিত – আবার কিছু সংখ্যক চতুর মানুষ তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করিবার নিমিত্তে মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে শুরু করিল এবং তাদের এই মনগড়া ব্যাখ্যা সমাজের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত বাণী বলিয়া প্রচার করিতে শুরু করিল এবং সে গুলিই একসময় পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইয়া ধর্ম গ্রন্থরূপে সমাজের সাধরণ মানুষের কাছে প্রচারিত হইল ! এই সকল ধর্মগ্রন্থে কিছু ভাল কথা থাকিলেও সেগুলি মূলত নানা মিথ্যা আজগুবি কাহিনীতে ভরপুর ! সমাজের কিছু ধুরন্ধর মানুষেরা ধর্মের এই মিথ্যা বেড়াজালের মোহপাশে সাধরণ মানুষ কে আবদ্ধ করিয়া যুগে যুগে তাদের নানাভাবে প্রতারিত করিয়া যাইতেছে – তাহারা সমাজের নতুন আবিস্কারের পথকে বাধাগ্রন্থ করিয়াছে – কাজেই যুগের প্রয়োজনেই সমাজের কিছু কিছু সৎ ও মেধাবী মানুষ সাধারণ মানুষদেরকে এই ধর্ম নামক মোহজাল থেকে মুক্ত করিবার প্রয়াসে ধর্মের বানোয়াট কাহিনীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হইয়াছে – তাহারা ধর্মের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করিয়াছে ! আপাত:দৃষ্টিতে মুক্তবুদ্ধির এই মানুষদের ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান সাধারণ মানুষের নিকট তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলিয়া মনে হইলেও সার্বিক বিচারে তাহা সাধারণ মানুষ তথা সমস্ত মানবজাতির জন্য কল্যাণই আনয়ন করে ! এই বিষয়ে আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাইতে পারে – আমি মাত্র তাহার দুই একটি এখানে উল্লেখ করিব – বাইবেলে বর্ণিত পৃথিবী কেন্দ্রিক (পৃথিবী সব কিছুর কেন্দ্রস্থল এবং সূর্য পৃথিবীর চারদিকে আবর্তিত হয়) মতবাদই যদি মানুষ বিনা চ্যালেঞ্জ-এ মানিয়া লইত তবে একবার চিন্তা করিয়া দেখুন পৃথিবী আর গ্রহ নক্ষত্র বিষয়ে মানুষের জ্ঞান আজ কোন পর্যায়ে থাকিত ! বা কোরানই সকল জ্ঞানের আঁধার এইটি যদি সকল মানুষ অন্ধভাবে মানিয়া লইয়া কেবল কোরান অধ্যযনেই সময় কাটাইতো তবে জ্ঞান বিজ্ঞানে পৃথিবীর মানুষ আজ কোথায় অবস্থান করিত তা একবার ভাবিয়া দেখুন – ধর্ম গ্রন্থগুলির মিথ্যা বয়ানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করিয়া এই সকল আপ্তবাক্যকে চ্যালেঞ্জ করিয়া বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নুতুন জ্ঞানের উদ্ভাবনের মাধ্যমেই মানবসভ্যতা আজ এতটা দূর আসিতে পারিয়াছে বা বলা যাইতে পারে মানব প্রজাতি এখনো এই পৃথিবীর বুকে টিকিয়া আছে ! আরও একটি উদাহরণ এখানে উদ্ধৃতি করিবার লোভ সামলাইতে পারিতেছি না – বাংলাদেশের ৭১ -এর গণহত্যায় পাকিস্তানিদের মূল দোসর গোলাম আজমও কিন্তু একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারী – তাহাকে সুযোগ দিলে সেও কিন্তু কোরান- হাদিসের সুরা- আয়াত উদ্ধৃতি করিয়া প্রমান করিয়া দিবে একাত্তর সালে সে যা করিয়াছে তাহা ইসলাম সম্মত !!! আমি জানি একজন সরলমনা সাধারণ মুসলমানের পক্ষে এইটি বিশ্বাস করা দুরূহ যে ইসলামে বাংলাদেশের এই গণহত্যাকে সমর্থন যোগাবার উপাদান আছে ! এইটা মানিয়া নেয়া কঠিন মনে হইলেও ইসলাম ধর্মে কিছু ভালো জিনিসের পাশাপাশি এমন অনেক মানবতা বিরোধী কথাও যে আছে তা আজ প্রমাণিত সত্য ! শুধু ইসলাম কেন সকল ধর্মেই কিছু ভালো ভালো কথা থাকিলেও সেখানে বিজ্ঞান বিরোধী, যুক্তি-বিরোধী, প্রগতি বিরোধী, নারী বিরোধী এবং মানবতা বিরোধী অন্ধ বিশ্বাসের ছড়া ছড়ি ! আর এই সকল ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত এর মূল নায়করা – কৃষ্ণ, আব্রাহাম, বুদ্ধ, খ্রীস্ট, মুহাম্মদ তাহারা কেহই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নহে ! আমি জানি, যদিও সাধারনভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা সাধারণত ধর্মের ভাল দিকগুলিই পালন করিবার চেষ্টা করিয়া থাকে তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মের বদ্ধ চিন্তা, অন্ধ বিশ্বাস তাহাদেরকে সামনের দিকে অগ্রসর হইতে বাঁধা দেয়, আর সেই কারণেই সমস্ত পৃথিবী ব্যাপিই আজ এইটি স্পষ্টই প্রতিয়মান যে, যে সকল দেশে অন্ধ ধর্মবিশ্বাসী মানুষে ভরা সেই সকল দেশ জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া জাতি হিসাবে পরিচিত ! তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের মত দেশে যেখানে আধুনিক শিক্ষার সুযোগ সীমিত সেখানে ধর্মের ক্ষতিকর দিকটা সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝা কষ্টকর হইয়া দাঁড়ায় – সেখানে মুক্তবুদ্ধির মুক্তচিন্তার মানুষদের প্রয়োজন এবং দায়িত্ব ধর্মের এই বদ্ধ চিন্তার নাগ পাশ হইতে সাধারণ মানুষকে মুক্ত চিন্তার পথে আসিতে সাহায্য করা ! এবং যুগে যুগে কিছু সংখ্যক অগ্রসরমান আলোকিত মানুষ ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করিয়া এবং সেই সকল ধর্মান্ধদের হাতে নিজেদের জীবন বাজি রাখিয়া এই দায়িত্বটি পালন করিয়াছেন বলিয়াই আজ মানব সভ্যতা বহু যোজন পথ অতিক্রম করিয়া আজকের অবস্থানে আসিয়া পৌঁছিতে পারিয়াছে ! বাংলাদেশের আরজ আলী মাতুব্বর, আবু জাফর শামসুদ্দিন, আহমেদ শরিফ, অজয় রায়, হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিন, অভিজিৎ রায় সহ এমন আরো অনেক মুক্তচিন্তার মানুষরা এই দায়িত্বটাই পালন করিয়াছেন বা করিতেছেন ! ধর্মগ্রন্থ সমূহে লিখা অন্ধবিশ্বাসের দিক গুলো, অবৈজ্ঞানিক এবং অমানবিক দিকগুলি তাহারা সাধারণ মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিবার চেষ্টা করিতেছেন ! – মিথ্যা মুখোশের আড়ালে তথাকথিত ধর্ম গুরুদের ভন্ডামি, নষ্টামির দিকটা তাহারা তাদের লিখনির মাধ্যমে তুলিয়া ধরিয়াছেন ! আর কারো ভন্ডামি নষ্টামির স্বরূপ উম্মোচন করিলে, ধর্মগ্রন্থগুলির অন্ধকার দিকগুলি তুলিয়া ধর্মের সমালোচনা করিলে সাধারণ ধার্মিক মানুষদের অনুভূতিতে আঘাত লাগিবে কেন তাহা আমার বোধগম্য নহে ! আঘাত কাহারো লাগিলে লাগিতে পারে ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের এবং সেই মৌলবাদীদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা – কাহারও ধাঁরালো যুক্তির আঘাতে তাহাদের অনুভূতি আহত হইলে যুক্তির খন্ডন তো যুক্তির দ্বারাই হওয়া উচিত নয় কি ??? তাহার পরিবর্তে সেখানে কিরিচ, চাপাতি উঠিবে কেন ? আর ইহা অতিশয় দুঃখের বিষয় যে এই অস্ত্র হাতে আগাইয়া আসিবার শিক্ষাটাও তাহাদের দিয়া গিয়াছে তাদের তথাকথিত ধর্মগুরুরা ঈশ্বর/আল্লার নামে ! প্রশ্নহীন ধর্মান্ধতা যে মানুষকে মানুষ করিবার পরিবর্তে অমানুষে পরিণত করে মৌলবাদীদের এই নৃশংস কর্মকান্ডে কি তাহাই প্রমাণ করে না ? মৌলবাদীরা যখন যুক্তির খন্ডন যুক্তি দ্বারা না করিয়া অস্ত্র হাতে আগাইয়া আসে তখন তাদের কবল হইতে মুক্তবুদ্ধির মানুষদের রক্ষা করিবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ! যে রাষ্ট্র এই দায়িত্বটুকু পালন করে না, বা করিতে ব্যর্থ হয় সেই রাষ্ট্র পৃথিবীর সভ্য জাতির কাছে একটি ধর্মান্ধ রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত হয় – যে রাষ্ট্রের রাজা ধর্মান্ধ খুনীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাইয়া তাহাদের সর্বোচ্চ সাজার ব্যবস্থা করিতে ব্যর্থ হয় সেই রাজা জনগনের কাছে ধর্মান্ধ খুনীদের সহযোগী হিসাবে বিবেচিত হয় ! এবং এই একবিংশ শতাব্দীতেও যারা এই ধর্মান্ধদের সমর্থন করে, তাদের পক্ষে অবস্থান নেয় , তারা মুক্তবুদ্ধির মানুষের কাছে পরিচিত হয় মধ্যযুগের, অন্ধকার যুগের অমানুষ রূপে !!!!

বিচারক শেখ হাসিনা,
আপনি হুমায়ুন আজাদকে যে ধর্মান্ধ দস্যুরা গুরুতর রূপে জখম করিল আজও তাহাদের বিচার করিতে পারেন নাই ! রাজীব হায়দারকে যে মৌলবাদী চক্র নৃশংস ভাবে খুন করিল তাহাদের কোন বিচার অদ্যাবধি আপনি করিতে পারেন নাই ! যদি সেই খুনিদের আপনি বিচার করিতে পারিতেন তবে হয়তবা এই ধর্মান্ধ ঘাতকরা অভিজিৎ কে খুন করিবার সাহস পাইত না ! আজ যদি অভিজিৎ হত্যার, বন্যাকে গুরুতর রূপে আহত করার চক্ররা বিচারের বাইরে থাকিয়া যায় তবে এই দস্যুরা আরো ভয়ঙ্কর দানবে পরিনত হইবে ! আপনাদের আস্কারা পাইয়াই আজ ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা দেশে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইতেছে – এইভাবে চলিতে থাকিলে বাংলাদেশকে তাহারা সহসাই আবার মধ্যযুগে ফিরাইয়া লইয়া যাইবে – তখন তাহাদের হত হইতে প্রগতির পথের কোন মানুষই রেহাই পাইবে না ! ! একের পর এক তাহারা আলোকিত মানুষদের হত্যা করিবে ! এই ধর্মান্ধ পশুরা ক্রমে ক্রমে বাংলাদেশে প্রগতির সব আলো নিভাইয়া দিবে ! সোনালী স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা এক কালের এই সোনার দেশটা এক সময় সত্যি সত্যি কেবল মাত্র একটি সন্ত্রাসের দেশ হিসাবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত হবে ! আপনি রাষ্ট্রের রাজা হয়ে এই ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের যতই তোষামোদ করেন না কেন একদিন হয়ত এই মানুষরুপি পশুদের থাবা হইতে আপনারও রেহাই পাওয়া কঠিন হইয়া দাঁড়াইবে !

মহা-মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী,
আপনার ও আপনার সহযোগী পরিষদ বর্গের কাছে আমার বিনীত নিবেদন আপনারা ধর্মীয় উন্মাদদের উন্মাদনার আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়া বন্ধ করুন – আর কাল বিলম্ব না করিয়া বাংলাদেশের প্রগতির পথকে বাঁধা মুক্ত করুন – বাংলাদেশকে বাঁচান ! শুধু তাহাই নহে এই দেশে ভবিষ্যতে যাহাতে ধর্মান্ধতা আর প্রসারিত হইতে না পারে তাহার নিমিত্তে এখন হইতেই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন ! এই বিষয়ে এই অভাজনের কয়েকটা পরামর্শ আপনার কাছে নিবেদন করিবার বাসনা করি:

১. অনতিবিলম্বে অভিজিৎ রায়, রাজীব হায়দারের হত্যাকারী ও আর সকল খুনীদের, বন্যা আহমেদ, হুমায়ুন আজাদের আক্রমনকারীদের খুঁজিয়া বাহির করিয়া তাহাদের বিচারের সন্মুখীন করিয়া সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এবং সেই সাথে এই খুনীদের সাথে সম্পৃক্ত ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠিকে সনাক্ত করিয়া তাহাদেরকে বিচারের অধীন করিয়া দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক !

২. বাক স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার ! বাংলাদেশে মানুষের এই স্বাধীনতার বড়ই অভাব ! সভ্য উপায়ে সকলের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করুন ! স্বাধীন চিন্তা, মুক্তভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার মাধ্যমে সমাজে নতুন চিন্তাধারার সৃষ্টি হয় ! কেবল মাত্র ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কারণে দাউদ হায়দার আর তসলিমা নাসরিনের মত প্রগতিশীল মুক্তচিন্তার মানুষদের নিজ বাসভূমি হইতে নির্বাসিত করা হইয়াছে ! পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের নিশ্চযতা প্রদান করিয়া তাহাদেরকে অবিলম্বে স্বদেশের মাটিতে ফিরাইয়া আনার ব্যবস্থা করুন ! দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের কবল হইতে দেশকে বাঁচাতে তাহাদের মত মানুষ বাংলাদেশের খুবই প্রয়োজন ! দেশের শত্রু – মানবতার শত্রু মৌলবাদী গোষ্টির নেতাদের নির্বাসনে না পাঠাইয়া দেশ প্রেমিক মানব প্রেমিক ব্যক্তিত্ব তসলিমা নাসরিন আর দাউদ হায়দারকে নির্বাসনে পাঠানো দেশের সভ্য মানুষের জন্য, দেশের রাজা আর অমাত্য বর্গের জন্য অতীব লজ্জার বিষয় ! অবিলম্বে তাহাদের সসম্মানে দেশে ফিরাইয়া আনিয়া এই লজ্জা হইতে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচান !

৩. পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ৬৫০০০ ! এই অধিকাংশ মাদ্রাসাগুলিই ধর্মান্ধ মানুষ তৈরী করিবার কারখানা ! সেখানে সাধারণ দরিদ্র পরিবারের কোমলমতি শিশুরা সুশিক্ষা লাভের আশায় প্রবেশ করিয়া মগজ ধোলাই হইয়া ধর্মান্ধ মৌলবাদী মানুষ হিসাবে বাহির হইয়া আসে ! যত শীঘ্র এই সকল মাদ্রাসা নামক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন করিয়া আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনুশীলনের মাধ্যমে সুশিক্ষিত মানুষ তৈরির কাজে নিয়োজিত করা যায় ততই জাতির জন্য মঙ্গল !

সবশেষে আপনার জন্য আমার একটি শুভ কামনা : ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প হইতে এই দেশের মানুষকে উদ্ধার করিতে না পারিলে এই দেশ যে সহসাই অন্ধকারে তলিয়ে যাইবে সেই ব্যাপারে আপনার চেতনা আরও শানিত হোক – এবং ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠির কবল হইতে এই দেশকে রক্ষা করিতে না পারিলে এই দেশটা যে অচিরেই ধর্মান্ধ-মৌলবাদী ঘাতকদের জন্য পরিণত হইবে একটি সন্ত্রাসের অভয়ারন্যে আর মুক্তচিন্তার মানুষদের জন্য হইবে একটি “মৃত্যু উপত্যকা” এই বিষয়ে আপনার শীঘ্রই বোধদয় ঘটুক ! ইতি – ১৭ মার্চ, ২০১৫ সাল !

বিনীত নিবেদক,
অমল রায়,
বাংলাদেশের একজন অতি সাধারণ প্রজা