হুমায়ুন আজাদ স্যার মারা যাবার পর উনার শুভাকাংক্ষীরা ইচ্ছাকৃতভাবে হোক কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক, এই কথাটি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন যে উনি ধর্মের বিরুদ্ধে লেখেন নি, উনি লিখেছেন ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে। উনি ধর্মদ্রোহী ছিলেন না, ছিলেন উগ্রবাদবিরোধী। এটা তারা করেছিলেন বা করতে বাধ্য হয়েছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠের সেন্টিমেন্ট রক্ষার জন্য। অথচ আমরা জানি হুমায়ুন আজাদ দৃঢ়ভাবে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছিলেন। বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিচারিতা এবং ইসলাম ধর্মের অন্তর্নিহিত উগ্রতাকে খুব ভালভাবে তিনি উপস্থাপন করেছেন তার লেখায়। শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে তার অবস্থান ধরে রাখতে তার শুভাকাংক্ষীরা তার লেখনীর ব্যাখ্যায় শুধুমাত্র মৌলবাদকে হাইলাইট করতেন। অথচ তিনি আদতে যে ধর্মকেই মৌলবাদের সীমারেখায় আবদ্ধ করেছেন সেটি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা এখন দেখা যায় না।

আমরা চাই না এমন ঘটনা অভিজিৎ রায়ের ক্ষেত্রেও হোক। ইতিমধ্যে তার লেখনীগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র বিজ্ঞানকেন্দ্রিক লেখাগুলোকে হাইলাইট করে তাকে একজন বিজ্ঞানলেখকের তকমা দিয়ে একটা ভাল ইমেজ তৈরি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। উনি যে স্পষ্টভাবে কোরান হাদিস থেকে শুরু করে অন্যান্য ধর্মগন্থ নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতেন, যুক্তির পর যুক্তি দিয়ে ধর্মগ্রন্থগুলোর অন্তসারশূণ্যতা প্রমাণ করে যেতেন সেই আলোচনা কেমন যেন বাইরে চলে যাচ্ছে। আমরা জানি যে তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠিতার সাথে ধর্মের বিরোধিতা করেছেন, এই বিরোধিতাকে তিনি কখনও ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ এইসবের আড়ালে লুকিয়ে রাখেন নি। কাজেই আমাদের উচিত স্পষ্ট করে বলা যে উনি নাস্তিক ছিলেন, উনি স্রষ্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাসী ছিলেন, উনি শুধু ধর্মীয় উগ্রতা নয়, ধর্মের বিরুদ্ধেই কথা বলতেন। ধর্মের অপ্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলতেন, ধর্মের অন্ধকার দিক নিয়ে কথা বলতেন, শুধুমাত্র ধর্মের কারণে পৃথিবীতে কত রক্তপাত হয়েছে সেগুলো নিয়ে কথা বলতেন।সুতরাং তার লেখনীর আলোচনায় আমাদের মূল বিষয়বস্তু আড়াল করার কোন যৌক্তিকতা নেই।

নাস্তিকতা কোন অপরাধ নয়। এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করি। কাজেই নাস্তিকতাকে আড়াল করার কোন প্রয়োজন নেই। যদি সেটা আমরা করি তাহলে সেটা হবে চরম কাপুরুষতা এবং অভিজিৎ রায়ের স্মৃতির প্রতি গভীর অশ্রদ্ধা। কলমের বিপরীতে কলম চলবে, চাপাতি নয়। কাজেই এই চর্চায় কোন গ্লানি নেই, লজ্জা নেই। কেউ আমার বিরোধিতা করতে চাইলে কলমযুদ্ধে তাকে অভিনন্দন। আমার লেখনী, সেটা যত আক্রমণাত্মকই হোক না কেন, সেটা হত্যাকান্ডকে কোনরূপে বৈধতা দেয় না।
তাই আসুন, স্পষ্ট করে বলি, আমি নাস্তিক, আমি বিশ্বাস করি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ধর্মের কোন প্রয়োজন নেই। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কথা বলি, আমি ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলি, আমি স্রষ্টা নামক মিথকে অস্বীকার করি, আমি অবিশ্বাসী, আমিই অভিজিৎ।