পরান ভাঙ্গার শুকনো খটখটে মাঠটাতে জনাবিশেক মানুষ জড় হয়েছে। তাদের বয়স অল্প, যুবক। কেউ কেউ সুখ করে বলে তরুন প্রজন্ম। কিছু বয়স্ক লোকও দূরে দূরে দাড়িয়ে দেখছে ছেলে-ছোকড়ারা কি করে। কোথা থেকে সেখানে এলাকার নেতা এসে হাজির। জমায়েত যেখানে নেতাকে সেখানে যাওয়া লাগে। সবাই তাকে ইজ্জত করে ডাকে নিতা ভাই। নিতা ভাই এলাকার মানুষের জন্যে অনেক করে। নবযুবকদের মুখে একটাই সওয়াল- কেন মানুষকে পুড়ানো হচ্ছে? তারা তো কিছুই করে নাই। তাদের প্রশ্ন মাটিতে পড়ার আগেই নিতা ভাই বয়ান-বক্তৃতা শুরু করেন মাইক ছাড়াই।
-তোমাগো বয়স অল্প, রক্ত গরম। এই ধরনের সওয়াল তো তুমরা করবাই। তবে ব্যপার হলো- এইসব বিনাশী কাজে সবাই নেতাগো দোষে, এইটা ঠিক না। তুমরা হয়তো অবাক হবা, এইসব কাজ করতেছে কর্পোরেট বাঘেরা, উপনিবেশীক চক্র আর সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী শক্তি। দ্যশের মানুষ কি দ্যশের মানুষ পুড়াতি পারে?
নেতার কথার মাথা-মুণ্ডু কিছুই ধরতে পারে না লোকগুলো। সহসা তাদের নিতা ভাইয়ের কথা শেষ হতে না হতে কে একজন আকাশ পাতাল ঝাজরা করা দম ফাটানো অট্টহাসি দেয়। সে হাসি আর থামতে চায় না। ভিড়ের ভিতরে কে এক যুবক সেই বেয়াদপ হাসি থামাবার চেষ্টা করতেই নেতা তাকে ক্ষান্ত করে। তার কানেকানে ফিসফিসায়ে বলে- এইডা তুমি জান না, হাসি দেয়া ওর গনতান্ত্রিক অধিকার? মিনিট দুই পরে হাসি থামে ছেলেটার। সবাই তাকিয়ে দেখে, আরে এতো রাজা পাগলা। ও এখানে আসলো কেমনে, ভেবে পায় না কেউ। হাসি থামলে সবাই চেপে ধরলো পাগলকে- এই ব্যটা ক্যন হাসলি, ক ক্যন হাসলি? রাজা পাগলা উত্তর দেয়- এমনি।
এবার নিতা ভাই শুরু করলেন তার বয়ানের শেষটুকু।
-তাইলে তোমরা তোমাগো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছ। ঐ রাজা পাগলাই সে জবাব দিয়ে দিছে। ওই আমাদের দেখায়ে দিলো, এত সুন্দর একটা হাসি যদি এমনি হাসা যায়, তাইলে এইসব নাশকতার কাজও এমনি এমনি হচ্ছে, হবে। আবার এমনি এমনিই বন্ধ হয়ে যাবে। তুমরা তরুন মানুষ, তুমরা পড়াশুনার সময় পড়াশুনা করবা, প্রেম করার সময় প্রেম করবা। তুমরা একবার আকাশের দিক তাকাবা, একবার একজন আরেকজনের দিক তাকাবা। দেখবা দুনিয়াডা কত সোন্দর। যাও বাবারা, তুমরা ঘরে ফিরে যাও।
বাবারা ঘরে ফিরে যায়। বয়স্করাও যার যার গেরস্তি কাজে মন দেয়। পরান ভাঙ্গার মাঠে সন্ধার ভিতর দিয়ে পথ করে করে একসময় রাত নামে, নিরেট রাত।