”মুসলিম শুটার হইলে তোমরা ইসলামকে দায়ী কর।
ব্ল্যাক শুটার হইলে তোমরা সমগ্র ব্ল্যাক রেসকে দায়ী কর।
আর সাদা শুটার হইলে তোমরা কেবল উক্ত ব্যক্তিকে দায়ী কর।
বাট হুয়াই?”

উপরের কথাটি সাথে অনেকে না বুঝেই হ্যাঁ হ্যাঁ করে যাচ্ছেন। তা দেখে অবাক হলাম। কারণ লেখাটা সরল ভাবে চিন্তা না করে আরেকটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে অর্থ পরিষ্কার হবে। এর আগে বলতে চাই; ভারতবর্ষে ইংরেজরা শাসন করে প্রায় দুই’শ বছর এর আগে মুসলিমরা শাসন করে কয়েক’শ বছর। তাহলে প্রশ্ন আসে এক শাসনকে ইংরেজ শাসন আবার অন্যটিকে ইসলামিক বা মুসলিম শাসন বলা হয় কেন?

প্রথমেই স্মরণ রাখা প্রয়োজন; মধ্যপ্রাচ্য থেকে অর্থাৎ আরব, ইরান থেকে যারা ভারতবর্ষে শাসন করতে আসলেন তারা এবং তাদের নিযুক্ত কবি, ইতিহাসবিদরা তাদের শাসনকে বলেছে-ইসলামিক শাসন। অর্থাৎ তারা নিজেদের শাসন ব্যবস্থাকে ইসলামে নামে চালিয়েছেন। ফলে ইরান, আফগান, আরব শাসনের বদলে তাদের শাসনব্যবস্থা ছিল ইসলামিক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ কিন্তু ইসলামিক রাষ্ট্রে সকল ক্ষমতা এবং সর্বশক্তিমান হচ্ছে আল্লাহ। তারা আল্লাহ’র নামেই শাসন চালিয়ে যান। অন্যদিকে ব্রিটিশরা শাসন করেন কোম্পানির নামে অতঃপর শাসন চলে মহামান্য রানীর নামে। হ্যাঁ; তারাও খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার ও প্রসার করেছিল কিন্তু তারা খ্রিস্ট ধর্মের নামে বা বাইবেলের নামে শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেননি। যা করেছিল আফগান, ইরানের শাসকরা। ফলে তাদের শাসনব্যবস্থার সকল কিছু ইসলামিক অন্যদিকে ইংরেজদের শাসন ব্যবস্থা রানীর শাসন ব্যবস্থা, খ্রিষ্টীয় শাসন ব্যবস্থা নয়।

যদি কোন বাংলাদেশী মুসলিম ইউরোপে গিয়ে অন্যায় করে তাহলে কেউ তাকে মুসলিম বা বাঙালি বলে গাল দেবে না। কারণ অন্যায় মানুষই করে। যদি যদি আপনি অধিক সংখ্যক বাঙালি নিয়ে জাতীয়তাবাদকে সামনে এনে ওখানে অন্যায় করে তাহলে বাংলাদেশীদের গাল দেওয়ার সুযোগ থাকে। কারণ আপনি জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে অন্যায়টা করেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি অন্য কারো জন্য ক্ষতির না হচ্ছেন ততক্ষণ আপনার গাল খাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু যখন ইসলাম রক্ষা, নবীর ইজ্জত রক্ষা, অথবা কোরানের রেফারেন্স দিয়ে ৭২টা হুর অর্জন করার জন্য কারোকে জবাই বা হত্যা করেন তাহলে অবশ্যই আপনার ধর্মটা তারা চিহ্নিত করবে। কারণ আপনি ধর্মটাকেই সামনে রেখে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। টুইন টাওয়ার হত্যার সময় যদি আফগানরা বলত;- রাশিয়া আর আমেরিকা মিলে আমাদের দেশটা ধ্বংস করেছে। সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমরা এই হামলা করেছি। তাহলে সেখানে অভিযোগ হতো; আফগানদের টুইন টাওয়ার হামলা। উগ্র জাতীয়তাবাদ তখন সামনে আসত। তারা মুসলিম নাকি বৌদ্ধ তা বিবেচ্য বিষয় হতো না। কিন্তু যখন তারা ইসলামকে ঢাল হিসেব সামনে নিয়ে আসল তখন তা আর আফগান হামলা বা তালেবান হামলা থাকেনি। তখন তা হয়ে গেছে উগ্র মুসলিম হামলা। বিষয়টার মাইর প্যাচ এখানেই।

আরও সহজ করে বলতে গেলে; আমাদের দেশের আদিবাসীদের যখন উচ্ছেদ করা হয় বা তাদের উপর নিপীড়ন করা হয় তখন ওটা মুসলিম নিপীড়ন হয় না তা হল বাঙালি নিপীড়ন বা আগ্রাসন। কিন্তু যখন আল্লাহ হুয়াকবার বা জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয় তখন হয়ে যায় মুসলিম আগ্রাসন। তখন তা আর বাঙালি আগ্রাসন থাকে না। কথা হল হত্যাকারী কোন বিষয়টিকে বুকে ধারণ করে হত্যা করছে। জাতীয়তাবাদ নাকি ধর্মীয় উগ্রতা নাকি বর্ণবাদ। সকল জাতীয়তাবাদের সীমানা থাকলেও মুসলিম জাতীয়তাবাদের সীমানা সেই। যাই হোক তা আবার ভিন্ন আলাপ।

আমেরিকা যখন ইরাক বা আফগান হামলা করে তখন সে খ্রিস্ট ধর্ম সামনে এনে হামলা করে না। বাইবেলের সুরা পাঠ করে জিহাদি জোশ বাড়ায় না। বরং সে তার রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার কথা (যদি তা বড় বড় কোম্পানির স্বার্থ) বলে হামলা করে। রাষ্ট্র থেকে ধর্ম পৃথক রাখার ফলে যে কোন বিষয়ে ধর্ম সামনে আসে না আসে রাষ্ট্র অথবা জাতীয়তাবাদ। যেমন- মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী-বিএনপির শাসকে কেউ ইসলামিক শাসন বলে না কিন্তু জামাতে ইসলামের শাসনকে ইসলামিক শাসন বলে। কারণ আওয়ামী-বিএনপি ইসলামের নামে শাসন করে না যা করে জামাত।

ইসলামিক জঙ্গিদের হামলার কারণে অনেকেই হয়তো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে কিন্তু অনেকেই আবার লজ্জিত বা এদের আচরণে বিরক্ত হোন। সত্য কথা কী বেশির ভাগ শিক্ষিত মানুষ ধর্মকে সংস্কৃতি হিসেবে পালন করে এর বাহিরে কিছু না। কাছের বন্ধু-বান্ধবদের বিষয়ে তাই দেখেছি। কিন্তু ধর্মীয় হামলা, উগ্রতার জন্য এই নিরীহ মানুষগুলো ভিন্ন সময় ভোগান্তির শিকার হবে। অথচ মত ও পথের সাথে এদের রয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব। সুতরাং হত্যাকারী কে বা কোন দেশের বা কোন ধর্ম তা কোন বিষয় নয়। বিষয়টা হল হত্যাকারী অন্যায় বা হত্যা করার সময় কোন বিষয়টি সামনে এনে হত্যা করছে। আমেরিকার কিছু দিন পরপর গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। কারো মনে সুখ নেই তাই তিনি কোন শপিং সেন্টারে এসে কয়েক জনকে গুলি করে তারপর আত্মহত্যা করলেন। এখানে ব্যক্তি তার জাতীয়তাবাদ অথবা ধর্ম কোনটাই আনছে না। একজন সাদা মানুষ রাগের বশে কালোকে হত্যা করতেই পারে। এটা সামাজিক অন্যায় বলে বিবেচিত হবে কিন্তু মানুষটি কালো হয়েছে বিধায় তাকে হত্যা করা হয়েছে তখন তা বর্ণবাদী হয়ে যায়। কারণ বর্ণবাদী চিন্তা ধারা থেকেই এই হত্যা। তাই এসব আনাড়ি যুক্তি দিয়ে ধর্মীয় সন্ত্রাসকে বাঁচানো যাবে না। ধর্মকে রক্ষা করতে চাইলে ধর্মীয় মানুষগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর এর জন্য চাই ধর্ম ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সংস্কার! সংস্কার ছাড়া কোন ধর্ম বা সমাজ মুক্তির দিকে ধাবিত হতে পারেনি, পারবেও না।