মডারেট মুসলিমদের প্রতি খোলা চিঠি
আলী এ. রিজভী

অনুবাদ: সৈয়দ জামাল

প্রথমেই বলে নেই আমি কি কি করবো না।

আমি বলছি না যে, বিশ্বব্যাপী আপনাদের স্বধর্মী ভয়ংকর নৃশংসতার বিষয়ে আপনারা নিশ্চুপ বসে আছেন। আমি নিশ্চিত আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই ISIS-এর মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে উচ্চস্বরে দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানিয়েছেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই আপনাদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে হলেও নিজেদেরকে তাদের থেকে পৃথক করেছেন আপনারা সার্থকভাবে ISIS কে বিচ্ছিন্ন করতে এবং এর গ্রহণযোগ্যতাকে ধ্বংস করতে সাহায্য করেছেন।

সহিংস জিহাদের মতো মৌলবাদী কার্যক্রমে বা জোর পূর্বক ধর্মান্তর করনে আপনাদের সহানুভূতিশীল আচরণের জন্যও আমি আপনাদেরকে অভিযুক্ত করছি না । আমি এটাও জানি আমাদের মতো আপনারাও, যেহেতু পরিস্থিতির অধিকাংশ শিকারই আপনাদের মতোই মডারেট/মধ্যপন্থী মুসলিম, তাদের এইসব আদিম কৌশলের নিন্দা করেন, এমনকি কখনো কখনো বেশ জোরেই । এক্ষেত্রে আমি আপনাদের সাথেই আছি ।

কিন্তু আমি কথা বলতে চাই আপনাদের ক্ষীয়মাণ বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে – আপনাদের অনেকেও স্পষ্টভাবে যে কথাটি বলেছেন ।

আপনাদেরকে মানুষ আগের থেকেও আরো বেশী ভুল বুঝছে বলে মনে করছেন আপনারা, যেহেতু বিশ্ব জুড়ে মুসলিম মৌলবাদীরা মুসলিম আবরণে দম্ভের সাথে নিজেদেরকে ইসলামের প্রতিনিধিত্বকারী / Voice of Islam বলে উপস্থাপন করছে । এবং দুঃখজনক যে, সবাই এটা বিশ্বাসও করছে ।

হতাশাটা কিন্তু স্পষ্ট । কমেডিয়ান বিল মা’র(Bill Maher)এর সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের জবাবে (যাতে তিনি উদারপন্থী দের ইসলামের সমালোচনার ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকার জন্য সমালোচনা করেন), ইসলামী পণ্ডিত রেজা আসলান (Reza Aslan) CNN এর সাক্ষাৎকারে তাকে (বিল মা’র) তীব্র আক্রমণ করেন । সুস্পষ্ট হতাশাবোধ থেকে, তার বক্তব্যে তিনি “স্টুপিড” এবং “বাইগট” শব্দগুলোও ব্যবহার করেন । (তিনি অবশ্য পরে এর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন) ।

আমরা আসলান সাহেবের অন্যান্য যুক্তির ব্যাপারে পরে দেখবো । কিন্তু প্রথমে, আসুন দেখি ওই বিষয়ে যেটা তিনি তার সাক্ষাত্কার গ্রহণকারীকে / অনুষ্ঠান সঞ্চালককে বলেছিলেন – যার সাথে, আমি জানি, আপনাদের অনেকেই একাত্ম বোধ করবেন। তার মতে – “মডারেট মুসলিমদেরকেও প্রায়ই মৌলবাদীদের সাথে একই পাল্লায় মাপা হয়” । এটা সত্য এবং এটা আপনাদের মতো মডারেট মুসলিমদের প্রতি মূলত: অন্যায় ।

আপনারা কিন্তু এটাকে অ-মুসলিমদের অজ্ঞতা বা বিদ্বেষ, কিংবা মিডিয়ার পক্ষপাত বলে আর দোষারোপ করতে পারেন না । অ-মুসলিমরা এবং মিডিয়া এখন আর ওই মুসলিম বিশ্বের মতো – যেটা থেকে আপনারা এবং আমি এসেছি, তেমন অনড় অবস্থানে নেই ।

সমস্যাটা হলো, আপনাদের মতো মডারেট মুসলিমরাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ওই আখ্যান গুলো চিরস্থায়ী করতে – যদিও আপনারা সেটা চান না ।

কিভাবে হচ্ছে সেটা বোঝার সুবিধার্থে, বিষয়টি বিপরীত দিক থেকে দেখা জরুরী ।
বলুনতো, এই বিষয়গুলো আপনার পরিচিত মনে হচ্ছে কিনা:

(১) কোনও মডারেট মুসলিম বলছেন ISIS আসলে “সহিহ মুসলিম না”, ইসলাম আসলে শান্তির ধর্ম।

(২) একজন প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা করলেন: কোরানের ঐসব আয়াত সম্পর্কে, যেমন ৪.৮৯, যেখানে বলা হয়েছে “অবিশ্বাসীদের ধরো এবং হত্যা করো”? অথবা, ৮.১২-১৩, যেখানে অবিশ্বাসীদের স্কন্ধে এবং আঙ্গুলের অগ্রভাগে আঘাত করার জন্য ফেরেশতা পাঠানোর কথা বলা হয়েছে বা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতাকারীদের কঠোর শাস্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে । অথবা ৫.৩৩ যেখানে আল্লাহ রাসুলের বিরোধিতা করার জন্য এবং ব্যাপক অর্থে ধর্মের নিন্দাকারী ও ধর্ম ত্যাগকারীদের হত্যা ও ক্রুশবিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে । অথবা, ৪৭.৪, যাতে যুদ্ধে অবিশ্বাসীদের গর্দানে আঘাত করার কথা বলা হয়েছে?

(৩) মুসলিমগণ এই আয়াত গুলো আল্লাহর বাণী দাবী করে এর সমর্থনে বলে থাকেন যে এই আয়াতগুলো “অপ্রাসঙ্গিক” ভাবে উদ্ধৃত হয়েছে; এগুলোর অপব্যাখ্যা করা হয়েছে যা মূলত: রূপক অর্থে বলা হয়েছিল (অর্থাৎ এগুলো আক্ষরিক অর্থে নেয়ার প্রয়োজন নেই); অথবা এগুলো ভুলভাবে অনুবাদ করা হয়েছে ।

(৪) এই ধরনের বাণী সমূহ (অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থে বর্ণিত একই ধরনের বাণীর মতোই) যে কোনো অর্থেই প্রশ্নাতীত নয় সেটা এগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অনুবাদ দেখানোর বা বলার পরেও মুসলিমগণ তাদের ধর্ম গ্রন্থকেই সমর্থন করেন ।

কখনো কখনো এই ধরনের আলোচনায় প্রশ্নকর্তাকে ইসলাম বিদ্বেষী অথবা ধর্ম বিদ্বেষী বলে আখ্যায়িত করা হয়, যেমনটা আসলান সাহেব করেছেন বিল মা’র কে এবং তার CNN এর অনুষ্ঠান সঞ্চালককে । এটা খুব গুরুতর অভিযোগ যা আলোচনা থামিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট । কেউই বিদ্বেষী হিসেবে আখ্যায়িত হতে চায় না

কিন্তু নিজেকে একবার অ-মুসলিমদের কাতারে বিবেচনা করে দেখুন । আসলে তারাই কি ইসলামকে সন্ত্রাসের সাথে সম্পৃক্ত করছে ? আমরা চারিদিকে জিহাদীদের অনেক ছবি ও ভিডিও দেখি যেখানে তারা কাউকে (সাধারণত: অ-মুসলিমদের) শিরশ্ছেদ করার, বিস্ফোরণ ঘটানোর বা কারো উপর আক্রমণের আগে “আল্লাহু আঁকবার” ধ্বনি তুলে, কোরানের কিছু আয়াত পড়ছে । তাহলে সন্ত্রাসের সাথে এই সম্পৃক্ততাটা কারা ঘটাচ্ছে?

কি করতেন আপনারা, যদি পরিস্থিতিটা ঠিক এর উল্টো হতো? অ-মুসলিমদের কি চিন্তা করা উচিত – যখন আপনাদের মতো মডারেট মুসলিমরাও ওই একই কথা, একই গ্রন্থকে নিখুঁত, অভ্রান্ত বলে দাবী করেন, যেটাকে কিনা মৌলবাদীরাও তাদের হত্যাকাণ্ডগুলোর সমর্থনে উদ্ধৃত করে?

যারা “আক্ষরিক” অর্থে কোরান পড়েন তাদের ব্যাপারে অন্যান্য মডারেটদের মতো, রেজা আসলানও প্রায়শই বিলাপ করেন । আশ্চর্য শোনালেও, আমরাও এ বিষয়ে কিছুটা একমত পোষণ করি: “আক্ষরিক” অর্থে কোরান পাঠে – অথবা আল্লাহ ঠিক যেভাবে লিখেছেন এটা – আমাকে ঠিক ততটুকুই বিচলিত করে যতটুকু করে জনাব রেজাকে ।

এটাই বলছি এবং জনাব রেজা একা নন । আপনাদের অনেকেই বিকল্প ব্যাখ্যায় জোর দেন – এক ধরনের রূপক অর্থ ব্যাবহার করতে আগ্রহী – যাতে করে এই পবিত্র গ্রন্থটি যেভাবে লেখা হয়েছে সেটি এড়িয়ে যাওয়া যায় । আপনারা কি কখনো চিন্তা করেছেন – এই আচরণ অন্যরা কিভাবে দেখে? এতে অন্যরা কিন্তু মনে করে আপনারা যারা এটাকে ঈশ্বরের নির্ভুল বাণী বলে দাবী করছেন – সেখানে কোনো ঘাপলা আছে । আপনারা কোরানের পবিত্র বানীকে তার আলোকেই ব্যাখ্যা না করে বরং আপনাদের নিজেদের মতো অর্থ করে প্রচার করছেন । স্পষ্টত: এটাকে ঐশ্বরিক কৃতি বলে না । “গ্রন্থটিকে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝা হচ্ছে” এই দাবীর ফলে গ্রন্থকারের অস্পষ্টতা ও তার অযোগ্যতার বিষয়টিই উঠে আসে । আমি জানি, আপনি ঠিক এভাবে বোঝাতে চান না – আসলে আজ আপনি যেখানে – আমিও একসময় সেখানেই ছিলাম । কিন্তু এটা বোঝা জরুরী কেন বিষয়টি অনেক অ-মুসলিমদের কাছে এভাবেই উপস্থাপিত হচ্ছে ।

কোনো সাহিত্যকে যদি রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করতে হয়, সেক্ষেত্রেও অন্তত:পক্ষে সেটার মূল ভাবটি ঠিক রাখা জরুরী । রূপক অর্থ ব্যবহার করা হয় কোনো ভাবনাকে বিশদ ও বিশুদ্ধ ভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, সেটাকে পেঁচানো বা অস্পষ্ট করে তোলার জন্য নয় । কোনো আক্ষরিক শব্দে যদি ভয়ানক সহিংসতার কথা থাকে – কিন্তু সেটাকেই আবার শান্তি ও ঐক্য বলে দাবী করা হয়, তখন আর আমরা কোন ব্যাখ্যা বা রূপকের জগতে নেই, বিকৃত ও মিথ্যা বর্ণনার দিকে এগিয়েছি । এই রকম বিপরীতমুখীতা যদি এক বা দুইটি আয়াতে সীমাবদ্ধ থাকতো, সেক্ষেত্রে আমি আপনাদের যুক্তি মেনে নিতাম । আপনাদের ব্যাখ্যা যদি দুনিয়ার সব মুসলিমের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো, আমিও আপনাদের যুক্তি মেনে নিতাম । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এর কোনটিই বাস্তবে হচ্ছে না।

এই অংশে এসে আপনি হয়তো আপনার মাথা ঝাঁকাচ্ছেন । আমি জানি আপনার ব্যাখ্যা আপনার মতো বিশ্বাসীদের কাছে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য । সেটাই স্বাভাবিক । মানুষ যখন তাদের বিশ্বাস বা ধর্মবোধকে পরিত্যাগ করতে না চায়, তখন তারা যা কিছু পায় তাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে-ওই দুটোর সামঞ্জস্য বিধানে ।

কিন্তু বিশ্বাস করুন, প্রকৃত পক্ষে বিষয়গুলো কিন্তু বিভ্রান্তকর । আমি পশ্চিমা উদার মনাদের সাথে বিতর্ক করেছি, যারা স্বীকার করেছেন – তারা এই যুক্তিগুলোকে মোটেও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না, কিন্তু তাদের মতামত প্রকাশ করতে ভয় পান – পাছে না আবার ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে তকমা লেগে যায় বা নিতান্তই মুসলিম সমাজের মধ্যপন্থী (মডারেট)দের স্বার্থে আঘাত লাগে – যারা তাদের মতোই জিহাদ এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে চায়! আপনাদের উদারপন্থী অনেক মিত্রই আন্তরিক, কিন্তু আপনি আশ্চর্য হবেন জেনে, অনেকেই আপনাদেরকে বলবে না – তারা আপনাদের সম্পর্কে কি ভাবে, কারণটা মূলত ভয় বা রাজনৈতিক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থ । তাদের সাথে বিল মা’র এর একমাত্র পার্থক্য হলো – মা’র যা বিশ্বাস করেন, বলে দেন!

দুঃখজনক হলেও সত্য, এই কারণেই আপনাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে । এই আচরণের জন্যই বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মডারেট মুসলমানদেরও দেখা যায় লক্ষণীয় ভাবে বিচলিত । আপনাদের ভালো উদ্দেশ্য থাকার পরেও, আপনাদের সাথে মৌলবাদীদের পার্থক্যটা কার্যকরীভাবে কমিয়ে ফেলার কারণে আপনারা অ-মুসলিম বিদ্বেষীদের উৎসাহিত করছেন – যার অনেকটা আবার আপনাদের অজান্তেই । ধর্মের নামে ভয়ংকর কাজগুলোর নিন্দা করছেন আপনারা, কিন্তু সেই কাজগুলোই যখন পবিত্র গ্রন্থে আয়াত হিসেবে বর্ণিত হয় – তখন আপনারা আপনাদের সকল বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করেন সেসবের সাফাই গাইতে ! এই স্ববিরোধিতার মূলে আছে হয় সত্য অস্বীকার কিংবা নিছক কপটতা, যেগুলোর ফলে কোনো কার্যকর আলোচনা হয়ে দাড়ায় অসম্ভব ।

এটাই সৃষ্টি করে একটি উভয় সংকট । কোরান যে ঈশ্বরের প্রশ্নাতীত বাণী – এটা ইসলামের মৌলিক ভিত্তি, যেটা মডারেট- প্রগতিশীল নির্বিশেষে প্রায় সব মুসলিমই বিশ্বাস করেন । আপনাদের অনেকেই মনে করেন কোরান বা তার কোনো অংশ এমনকি এর উপর বিশ্বাসটা পরিত্যাগ করলেই নিজেকে আর মুসলিম দাবী করা যাবেনা । আমি সেটা বুঝি, কিন্তু এটা কি এভাবেই চলবে?

কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে, মুসলিম পরিবারের অংশ হিসেবে বাস করে, যত দূর মনে পড়ে ইসলামিক সংস্কারের আলোচনা শুনে এসেছি । পরিশেষে, আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃত পক্ষেই কোনো সংস্কার করতে হলে প্রথমেই আন্তরিকভাবে যেটা করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে – এটা “ঈশ্বর প্রদত্ত বাণী, তাই নির্ভুল” এই ধারণার পুনর্বিবেচনা করা ।

এবং শুধু আমিই নই । মাজিদ নওয়াজ (Maajid Nawaz), একজন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মুসলিম, কোরানের সমস্যাগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন । সম্প্রতি এই Huffington Post এ একটি সাহসী আর্টিকেলে ইমরা নাজীর (Imra Nazeer)ও মুসলিমদের আহ্বান করেছেন “কোরান ভুলের ঊর্ধ্বে” এই ধারণাকে পুনর্বিবেচনা করতে ।

তিনি কি সঠিক বলেছেন? প্রথমে এটাকে একটা বাজে চিন্তা বলে মনে হতে পারে । কিন্তু এটা সম্ভব, এবং এর অতীত নজিরও আছে ।

*****

আমি বড় হয়েছি রিয়াদ, সৌদি আরবে, ইন্টারনেট যুগের আগে । আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি স্কুল পরবর্তী সময়ে ক্লাসিক্যাল আরবিতে – যে ভাষায় এটা লেখা, কোরান পাঠ ও তেলাওয়াত করতে শেখাতেন ।

আমার পরিবার পৃথিবীর ১.৬ বিলিয়ন মুসলিমের সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশে পড়ে – যারা আরবি ভাষী নন, যেমন ইন্দোনেশিয়া, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, তুর্কী এবং ইরান । তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই আরবিতে কোরান পড়তে পারে – যদিও আমরা এর অর্থ বুঝতে পারিনা ।

অধিকাংশ মুসলিম বাড়ীতেই, কোরানকে আক্ষরিক অর্থেই সে বাড়ীর সর্বোচ্চ স্থানে রাখা হয় । আমাদের বাড়ীতে, এটা রাখা হতো লম্বা বইয়ের তাকের উপরে । অজু না করে এটা স্পর্শ করা যেত না । ঋতু চলাকালীন সময়ে কোনো নারী এটা স্পর্শ করতে বা পড়তে পারতেন না । সুন্নি প্রথা অনুযায়ী পবিত্র রমজানে মাস ব্যাপী তারাবী নামাজে এটা সম্পূর্ণ পড়া (খতম তারাবী) হতো । অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ে, বিয়ের সময় বর-কনের মাথার উপর আশীর্বাদ স্বরূপ এটা রাখা হয় । কোনো শিশু যখন প্রথম কোরান খতম করে – এটা একটা স্মরণীয় দিন, পার্টি দেয়া হয়, উপহার দেয়া হয় ।

কিন্তু, ইন্টারনেট চালু হওয়ার আগে, আমি এমন লোকের দেখা কমই পেয়েছি – ধার্মিকসহ – যারা তাদের নিজেদের ভাষায় কোরান পড়েছেন । আমরা শুধু শুনে গেছি আমাদের মুরব্বীরা যা বলেছেন । এখন যেভাবে আমরা গুগলে বা অন্য কোনো ভাবে সাথে সাথেই কোন তথ্য যাচাই করতে পারি – তখন তেমন সুযোগ ছিল না ।

কোরানে এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলোর সম্পর্কে আমাদের তখন কোনো ধারণা ছিল না । রেজা আসলান এর মতো আমাদের এই ভুল ধারণা ছিল যে সৌদি আরবের কঠোর শাস্তিগুলো যেমন কতল বা শিরচ্ছেদ এবং অঙ্গচ্ছেদ – এগুলো তাদের সংস্কৃতির অংশ – ধর্মের কোনো বিধান না । পরবর্তীতে জানতে পারি কোরানেই শিরচ্ছেদের নির্দেশ আছে, এবং আয়াত ৫:৩৮ এ সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে, চোর – সে পুরুষ হোক বা নারী হোক – তাদের হস্তচ্ছেদন করতে হবে ।

আবার এমন অনেক কিছুই আছে যেটা মনে করা হতো কোরানে আছে – কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তেমন কিছুই নেই । এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ – হিজাব এবং বুরকা – এর কোনটিই কোরানে উল্লেখ নেই । শাস্তি হিসেবে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যু – এটাও কোরানে নেই, তবে হাদিসে (সুন্নাহ/সুন্নত বা নবীর প্রথা), এবং এমনকি ওল্ড টেস্টামেন্ট এও আছে, কিন্তু কুরানে নেই ।

কোরানে ছেলে বা মেয়েদের খতনা সম্পর্কে কিছুই পাওয়া যায়না । কিন্তু, দু’টোই আবার হাদিসে আছে । আসলান সাহেব মেয়েদের খতনা বিষয়ে আলোচনায় ইচ্ছাকৃত ভাবে এড়িয়ে গেছেন যে সুন্নি ব্যবহার শাস্ত্র/ আইন শাস্ত্র বিষয়ে যে চারটি স্কুল আছে তার মধ্যে শাফি’ স্কুল হাদিস অনুসারে মেয়েদের খতনা বাধ্যতামূলক করেছে, এবং বাকী তিনটি স্কুলও সেটা সুপারিশ করেছে । এই কারণেই ইন্দোনেশিয়া, বিশ্বের সব চেয়ে বড় মুসলিম দেশ, যাদের অধিকাংশই শাফি পন্থী, আসলান সাহেবের মতে যে দেশে মেয়েরা ১০০ % ছেলেদের সমান, সেই দেশে মেয়েদের খতনার হার কম পক্ষে ৮৬%, এবং ৯০% পরিবার এই প্রথা সমর্থন করে । মিশরে, যেটা নাকি বিশ্বের সব-চেয়ে বেশী আরাবিয়ান মুসলিম এর দেশ, সেখানে মেয়েদের খতনা করার হার ৯০% এর বেশী । তবে হ্যাঁ, পুরুষ-মহিলাদের খতনা প্রথা ইসলাম পূর্ব সময়েও ছিল । কিন্তু এটা বলা সঠিক হবে না যে এগুলোর সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই ।

*****

আমার বেড়ে উঠার সময়ে, এই ধরনের তথ্য গুলো আমরা পাইনি । কিন্তু ইন্টারনেট এর কল্যাণে আজ তা সবার জন্য উন্মুক্ত ।

আজ কিন্তু ১২ বছরের বাচ্চাও যে কোনো টপিক এর উপর প্রায় ডজন খানেক ভাষায় কোরানের বহুবিদ অনুবাদ খুঁজে বের করতে পারে । কিছুই আর লুকানো নেই । এখানে দেখার সব কিছুই আছে । লি রিগবি’র (Lee R।gby) খুনি তার কর্মের সমর্থনে সুরা আত-তাওবা – এর কথা বলেছে, আমরা অনলাইনে খুঁজে দেখতে পারি সেখানে আসলে কি লেখা আছে । ISIS যখন সুরা আল- মায়িদা’র ৩৩ আয়াত অথবা সুরা মুহাম্মদ এর ৪ আয়াত পাঠ করে তাদের কর্মের পিছনে স্বর্গীয় অনুমোদনের কথা বলে – আমরা নিজেরা কিন্তু এটা খুঁজে দেখে সম্পর্কটা মেলাতে পারি ।

বলা নিষ্প্রয়োজন, এটা একটা বড় সমস্যা – যেটাকে আপনাদেরই ঠিক করতে হবে । মানুষ যখন দেখে মডারেট-রা ইসলাম শান্তির ধর্ম বলে দাবী করে আবার একই সাথে এই আয়াত গুলোকেও নির্ভুল বলে বিশ্বাস করে এবং এটাও দাবী করে যে মানুষ এগুলোর ভুল ব্যাখ্যা করছে – তখন কিন্তু এইসব কিছুই পরস্পর বিরোধী বলে প্রতীয়মান হয় । যখন তারা এই আয়াত গুলো পড়ে এবং দেখে যে মৌলবাদীরা ঠিক তাই করছে যা বলা আছে – এটা তখন হয়ে যায় সঙ্গতিপূর্ণ । এটাই শঙ্কার বিষয় । আপনারা এটা বোঝার চেষ্টা করুন । সমালোচকদের বর্ণবাদী বা রেসিস্ট বলে চিৎকার করে গালি দিলেই, যেটা গত সপ্তায় Ben Afflek করেছেন Maher এবং Sam Harr।s এর প্রতি, এটা কিন্তু বন্ধ হবে না ।

(অবশ্য, ইসলামের সমালোচনাকে যদি আপনারা বর্ণবাদী / রেসিজম বলে মনে করেন – তাহলে আপনারা বলতে চাচ্ছেন পুরো ইসলামটাই একটা বিশেষ জাত । এটা নিয়ে একটা শব্দ আছে) ।

হ্যাঁ, কোনো ধর্মের কোনো অনুসারীর কর্ম দিয়ে সেই ধর্মকে বিবেচনা করা ভুল এবং অন্যায়, সেটা প্রগতিশীল মুসলিম বা আল-কায়েদা যেটাই হোক । কিন্তু ওই ধর্মের শাস্ত্রীয় বিধান সমূহ – যা কিনা এখন সবাই পড়তে পারছে অনলাইনে – সহজেই, সেটা বিবেচনা কিন্তু মোটেও অন্যায় না ।

আজ, যখন আপনাদের বিশ্বাস এবং পবিত্র গ্রন্থ নিয়ে মানুষ ন্যায়সঙ্গত / যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন করে – তার উত্তর গুলো আপনাদের ভালোভাবে দেয়া প্রয়োজন । ‘মিথ্যা’ অথবা ‘বিরক্তিকর’ – ‘রূপক অর্থ’ – ‘ভুল ব্যাখ্যা’ – এগুলো বলে এসব প্রশ্নকে ঝেড়ে ফেলে বা এড়িয়ে গেলেই এসব থামে না । একইভাবে প্রশ্নকারীকে বিদ্বেষী বলেও ।

তাহলে, কিভাবে সাড়া দিবেন?

 

*****

নতুনদের উপকারে আসবে তারা যদি শুধু কোরান না পড়ে – সাথে অন্যান্য আব্রাহামিক ধর্মীয় পুস্তক গুলোও পড়েন । পড়লে দেখতে পাবেন, কোরানে যে হিংস্রতার কথা বলা আছে তার থেকে বেশী না হলেও কম নেই – ওল্ড টেস্টামেন্ট এ । ধর্ম অবমাননাকারীদের এবং ব্যভিচারীদের প্রতি পাথর নিক্ষেপ, সমকামীদের হত্যা – সব আছে । যখন আপনি Deuteronomy (ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তোরাহ-এর পঞ্চম খণ্ড) ২০ এর অন্তত ১০ টা আয়াত পড়ে ফেলেছেন – আপনার মনে হতে পারে – আপনি ISIS এর নির্দেশনামা পড়ছেন ।

নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করবেন তখন – এটা কিভাবে সম্ভব? ইহুদীদের গ্রন্থ আর আমাদের গ্রন্থে তেমন কোনো পার্থক্য নেই ! তাহলে কি করে তাদের অধিকাংশই ধর্মনিরপেক্ষ (সেক্যুলার)? কি কারণে এদের অধিকাংশই তৌরাত / ওল্ড টেস্টামেন্ট এর বাণী গুলোকে খুব গুরুত্বের সাথে নেয় না – যা কিনা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে ঈশ্বরের বাণী, যেগুলো তিনি মোজেস এর উপর নাজিল করেছিলেন যেমনটা মোহাম্মদের উপর হয়েছিল কোরান, এবং তারপরেও তারা তাদের ইহুদী পরিচয়টা শক্ত ভাবে ধরে রেখেছে ? এটা কি ইসলাম এবং মুসলিমদের ক্ষেত্রে হতে পারে?

উপরের বিষয় থেকেই উত্তরটা দেয়া সম্ভব – যেটা হচ্ছে “হ্যাঁ” এবং এটা পরীক্ষিত সত্য । এবং সেটা হতে হবে মুসলিম পরিচয় থেকে ইসলামিক পরিচয়টাকে বিচ্ছিন্ন করেই – একটা কমিউনিটির / সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে – কোনো ভাবাদর্শের ভিত্তিতে না ।

ভাবাদর্শে ঐক্যমত্য খুঁজে পাওয়া অসম্ভব । সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং এতে অমুসলিমদের থেকে মুসলিমরাই প্রাণ হারিয়েছে বেশী – এটাই এর জলজ্যান্ত প্রমাণ । কিন্তু একটা সম্প্রদায়-বোধ যে কোন সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে । অন্যান্য আব্রাহামিক ধর্ম-গুলোর দিকে দেখুন – যেগুলোতে অনেক সংস্কার হয়েছে । আপনারা ভালো করেই জানেন ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরও সহিংসতা-পূর্ণ অনেক অন্ধকারাচ্ছন্ন ইতিহাস আছে; আজকাল যে কোনো সুযোগ পেলেই আপনারা যা নিয়ে কথা বলে থাকেন, এবং আপনারা ঠিকই বলেন । কিন্তু তারা কিভাবে বের হয়ে এসেছে সেই অতীত থেকে?

খ্রিস্টানদের ধর্ম গুরু পোপ যতই জন্ম-নিয়ন্ত্রণ, গর্ভপাত এবং বিবাহ-পূর্ব যৌন-সংগমের বিরোধিতা করুন – অধিকাংশ ক্যাথলিকরা আজ তাদের নিজেদের পছন্দকেই বেশী গুরুত্ব দেয়, তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্বতঃপ্রবৃত্ত যৌন সংগমকে কোনো পাপ বলে মনে করে না । অধিকাংশ ইহুদীরা ধর্ম নিরপেক্ষ, এবং অনেকেই নিজেদেরকে নাস্তিক (Atheist) বা অজ্ঞেয়বাদী (Agnostic) বলে পরিচয় দেয় – নিজের ইহুদী পরিচয় ধরে রেখেও । এই সম্প্রদায়ের ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধীতাকারীরা কখনো কখনো সমালোচনার শিকার হতে পারেন এটা ঠিক কিন্তু তাদের ভিন্নমতের জন্য প্রাণ দিতে হয় না ।

এটা মুসলিম বিশ্বের সম্পূর্ণ বিপরীত । বিশ্বব্যাপী ২০১৩ সালের Pew Research Study অনুযায়ী, মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশগুলো যেমন মিশর এবং পাকিস্তান এর অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে যারা ধর্ম ত্যাগ করে তাদের হত্যা করা উচিত । তারা সব সময় এই ঝগড়া নিয়ে মেতে থাকে – কে খাঁটি মুসলিম আর কে না ! তাদের ধর্মের নামে যে সহিংসতা হচ্ছে সেটার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর চেয়ে কার্টুনিস্টদের বা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বিরুদ্ধে তারা খুব দ্রুততার সাথে লড়াই শুরু করতে পারে সেই ধর্ম-বিশ্বাস রক্ষায় ।

(টীকা:বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ISIS এর বিরোধিতা, সেটা যে মাত্রারই হোক না কেন, একটা বড় অগ্রগতি) ।

*****

“মডারেট” এই শব্দটি এর বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে । Fareed Zakaria মধ্য প্রাচ্যের মডারেট-দের কে আখ্যায়িত করেছেন “উদ্ভট কল্পনাকারী” হিসেবে । এমন কি Nathan Lean এর মতো পক্ষ সমর্থনকারীও মনে করছেন এই শব্দটি ব্যবহারও কারো কোনো কাজে আসছে না ।

ইসলামের সংস্কার দরকার – মডারেটরদের নয় । কিন্তু “সংস্কার” শব্দটি আবার “অভ্রান্ত” বা “ভুলের ঊর্ধ্বে” এসব শব্দের সাথে মানায় না ।

সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো কোনো কিছুর পরিবর্তন করা, কোনো ধারা/রীতি ঠিক করা এবং নতুন দিকে চালিত হওয়া । কিন্তু কোনো কিছু ঠিক করতে হলে, আপনাদেরকে আগে মানতে হবে যে এটা ভেঙ্গে পড়েছে বা কার্যকারিতা হারিয়েছে – এমন না যে এটা ভাঙ্গা /অকার্যকর মনে হচ্ছে অথবা বাজে লোকেরা এটাকে ভাঙ্গা / অকার্যকর বলে অপ-প্রচার চালাচ্ছে । হ্যাঁ, এটাই মানতে হবে – ভেঙ্গে পড়েছে বা কার্যকারিতা হারিয়েছে । এটাই হবে সংস্কারে আপনাদের প্রথম পদক্ষেপ ।

এটাকে যদি বেশী চরম পন্থা বলে মনে হয়, তাহলে একটু নবী মুহাম্মদের কথা চিন্তা করুন, যিনি কুরাইশদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে আমূল সংস্কারের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন যার ফলশ্রুতিতে কুরাইশরা তাকে মক্কা থেকে বিতাড়িত করেছিল । চিন্তা করে দেখুন কেন যিশু খ্রিস্ট কে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল । উনারা কিন্তু আত্মসমর্পণ করেননি অথবা লজ্জা পেয়ে প্রচলিত বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করতে পিছপা হননি ।

উনারা কিন্তু কোনভাবেই “মডারেট” ছিলেন না । তারা ছিলেন চরম পন্থী, বিদ্রোহী । সংস্কারক । এবং এভাবেই পরিবর্তন সাধিত হয় । সব বিপ্লবই শুরু হয় বিদ্রোহ থেকে । ইসলামও এভাবেই এসেছে । সমস্যা বা ত্রুটিপূর্ণ ধারণা গুলোকে চ্যালেঞ্জ করা কিন্তু ধর্ম বিদ্বেষ / ধর্মদ্রোহিতা না, এবং এটা ধর্ম অবমাননাও না । এটাকে যদি কিছু বলতেই হয় – তবে সেটা “সুন্নাহ” !

নেমে পড়ুন, এবং একে উদ্ধার করুন !

*****

আমেরিকার Huffington Post এর অক্টোবর ৬, ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত
লিঙ্ক: http://www.huffingtonpost.com/ali-a-rizvi/an-open-letter-to-moderat_b_5930764.html

অনুবাদকের নোট:
Ali A. Rizvi : পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত-কানাডিয়ান লেখক, চিকিৎসক
Reza Aslan : ইরানীয়ান বংশোদ্ভূত-আমেরিকান লেখক, ইসলামী পণ্ডিত
Bill Maher : ‘রিয়েল টাইম উইথ বিল মার’ নামের জনপ্রিয় এইচবিও শোর সঞ্চালক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক
Maajid Nawaz: পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ, ইসলামী জঙ্গিবাদী সংগঠন হিজবুত তাহরীর এর সাবেক
নেতা, ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ
Imra Nazeer: শ্রীলংকান বংশোদ্ভূত সাবেক মুসলিম
Lee Rigby : ব্রিটিশ আর্মির সৈনিক
Ben Afflek : আমেরিকান অভিনেতা
Sam Harris : আমেরিকান লেখক
Fareed Zakaria: ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান সাংবাদিক
Nathan Lean : আমেরিকান লেখক