কলম ধরতেই হল !!

৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩, আশা করি এই দিনটি বাংলাদেশের মানুষ কোন দিনও ভুলবেনা। বাঙালি জাতির কলঙ্ক মোচনের তাগিদে এক অবিস্মরনীয় জাগরণের দিন। পাকিস্তানের গর্ভ থেকে ‍‘বাংলাদেশ’ জন্ম লাভের সময় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহীনির দেশীয় দোসর-দালাল রাজাকার-আলবদর-আলসামস তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধী তথা যুদ্ধাপরাধীদের অসমাপ্ত বিচার সম্পন্ন করার দাবী নিয়ে ১৯৭৫ সালে বাঙ্গালী জাতির পিতাকে হত্যার পর শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্তে প্রথম ১৯৯২ সালে রাজপথে লাখ জনতার সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় গনআদালত এবং গঠিত হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি; তাদের পথ ধরে আন্দোলনকে পর্যায়ক্রমে এগিয়ে নিয়ে যায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বিভিন্ন সংগঠন সহ শত শত সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং সর্বশেষ শাহবাগ আন্দোলন তথা “গণজাগরণ মঞ্চ”।

আজ প্রায় একবছর সাত মাস পর আমাকে লিখতে হচ্ছে “শাহবাগ কোন পথে?” । ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের পর রাজনীতিতে যেমন দ্বিধা বিভক্তি তৈরি হয়েছিল ঠিক তেমনি আজ স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর নতুন প্রজন্ম আবারো দ্বিধা বিভক্তিতে নিজের পায়ে নিজেই ধারালো কুড়াল মারছে! হায় !!
দু:খ হচ্ছে আজ, আমি নিজেও একজন শাহবাগের যোদ্ধা। সেই উত্তাল দিনগুলোতে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনে জাতি অধীর আগ্রহে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল তখন ইমরান এইচ সরকার সহ আমরা মূলত ১৪টি সংগঠনের নেতারা সহ কিছু সংগঠকবৃন্দ বসে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতাম কিভাবে আন্দোলন পরিচালিত হবে আর আমাদের সাথে ছিল বাংলাদেশের বারটি ছাত্র সংগঠন, ইমরান সরকারের ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিষ্ট নেটওয়ার্ক, আমার সংগঠন যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ সহ নানা সংগঠন এবং সংগঠকবৃন্দ। আমি এক এক করে সবার নাম বলতে পারব যারা সেই সময়ে গণজারণ মঞ্চের সংগঠক হিসাবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। যাদের কথা কেউ কখনো বলেনি তাই তাদের ত্যাগের কথা আজ হয়তো কেউ জানেনা। তারা আজ শাহবাগে নেই ! এটা একটা বড় প্রশ্ন! কেন নেই তারা ? আন্দোলনের বলি রাজিব, দ্বীপ সহ আমার সেই সহযোদ্ধা বন্ধুদের স্মরণ করছি গভীর ভাবে যাদেরকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

‘শাহবাগ আন্দোলন’ আমরা এর নামকরণ করি ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ হিসাবে, যা উত্তাল ছিল ৫ই ফেব্রুয়ারী থেকে ২০শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩ পযর্ন্ত। এরপর ধীরে ধীরে এর প্রাণ হারাতে থাকে। ভাল কথা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম ১২ টি ছাত্র সংগঠনের নামগুলো বলতে। নামগুলো জানা প্রয়োজন। আমি সংগঠনগুলোর নাম এবং তৎকালীন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নামগুলোও বলছি (১) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দীকি নাজমুল আলম, (২) জাসদ ছাত্রলীগ, সভাপতি হোসাইন আহমেদ তাফসির ও সাধারণ সম্পাদক সামসুল ইসলাম সুমন, (৩) ছাত্রমৈত্রী, সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু ও সাধারণ সম্পাদক তানভির রুসমত, (৪) ছাত্র ইউনিয়ন, সভাপতি এস এম শুভ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক, (৫) সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তমাল, (৬) বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, সভাপতি আব্দুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল রায়, (৭) ছাত্র ফেডারেশন, সভাপতি প্রবীর সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত মল্লিক, (৮) ছাত্র আন্দোলন, সভাপতি মনজুর রহমান মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, (৯) বিপ্লবী ছাত্র সংহতি, সভাপতি মীর রেজাউল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মো: রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, (১০) ছাত্র ঐক্য ফোরাম, আহ্বায়ক সোহান সোবাহান, (১১) নাগরিক ছাত্র ঐক্য, আহ্বায়ক নাজমুল, (১২) ছাত্র সমিতির আহ্বায়ক শান্ত জোগন,

“গণজাগরণ মঞ্চ” প্রথম ধাক্কা খায় ২৬শে মার্চ ২০১৩তে ! সেদিন শাহবাগে আমাদের একটি সমাবেশ ছিল । ঠিক একমাস একুশ দিন পর আমাদের সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থাকবেনা জানিয়ে দিল সাফ। ইমরান সরকারের চেহারায় অন্ধকার নেমে আসল। তখন আমি ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাকে বল্লাম, ভাই ছাত্রলীগ সভাপতিকে ফোন করেন তিনি না আসলে আজ ব্লান্ডার হয়ে যাবে। বাপ্পার অনেক জোড়া-জড়িতে ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ সমাবেশে ঠিকই আসলো কিন্তু সেদিন ছাত্রলীগ কোন জমায়েত মানে তাদের তেমন কোন নেতা-কর্মী ছিল না। চোখে পড়ছিল বিষয়টা যেখানে লাখ মানুষের জমায়েতে আমরা সমাবেশ করেছিলাম সেদিন মাত্র হাজার খানিকের কম মানুষ হয়েছিল। যারা বলতেন এবং ধারণা করতেন গনজাগরণ মঞ্চ আওয়ামীলীগের সৃষ্টি এবং আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারা মনে মনে খুব খুশি হয়েছিল সেদিন। তাদের এই ধারনাটায় অনেক বড় ভুল ছিল। কারণ আমি নিজে দেখেছি গণজাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় মিটিংয়ে সেখানে গণতন্ত্রের চর্চা হতো। আমরা “ছাত্র-সামাজিক-সাংস্কৃতিক” সংগঠন মিলে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রস্তাব পেশ এবং সেগুলো ঐক্যমতের মাধ্যমে পাস করে মুখপাত্র ইমরান সরকার মিডিয়ার সামনে তা পেশ করতেন। আমার ধারণা ছাত্রলীগ সাগঠনিক ভাবে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে নিজেদেরকে সড়িয়ে নেবার পিছনে যে কারণগুলো ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হল আমাদের মিটিং যে সিদ্ধান্ত হতো সে সিদ্ধান্তের বাহিরে ইমরান নিজেই বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিজের মত করে মিডিয়ায় উপস্থাপন করত! আর এতে আমাদের মূলত এই চোদ্দটি সংগঠনের মাঝে ঐক্যের ফাটল ধরা শুরু করেছিল। ইমরান আমাদের সবার মুখপাত্র মাত্র, সে আমাদের সবার প্রতিনিধিত্ব করছিল! তবে কেন সে আমাদের নির্দিষ্ট ইস্যুর বাহিরে সুকৌশলে অবস্থান নিচ্ছিল তা আমাদের কাছে স্পষ্ট ছিল না!

আসলে আন্দোলন যেন রক্তে ঢুকে গেছে আমার গত বছর মাঝামাঝি সময়ে শাহবাগ ছেড়ে সাত দিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলাম দক্ষিন এশিয়ায় জঙ্গিবাদ রোধে নাগরিক সমাজের ভূমিকা নিয়ে একটি পাঠচক্রে অংশগ্রহন করার জন্য। তখন কলকাতার রাজপথে আন্দোলন চলছিল “কামদুনির-প্রতিবাদে”। নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। সাথে ছিল কলকাতার বন্ধু-দাদা জয়ন্ত। তাকে বললাম আমি যাব। সে আমায় নিয়ে গেলো কলেজ স্ট্রিটে !! পুরো পথটুকো হেটে প্রতিবাদি মিছিলে প্রতিবাদ করতে করতে আসলাম মূল মঞ্চের সামনে । কিযে ভাললাগা !! সেই অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা আমি কখনোই ভুলবনা। আমি দেখলাম কলকাতায় যে বয়সের যোদ্ধারা রাজপথে নেমেছিল বাংলাদেশে ঠিক তার বিপরীত মানে বেশিরভাগ তরুনরাই শাহবাগে অবস্থান করেছিল। ফিরে এলাম দেশে, এরিমধ্যে প্রেক্ষপট আরো খারপ হয়ে গেছিল, আমাদের সাথের সহযোদ্ধাদের অনেকেই নিরবে চলে যেতে লাগল।
“গণজাগরণ মঞ্চের” কফিনের প্রথম পেড়েকটি মারা পড়ল গোলাম আযমের রায়ের দিন, সেদিন আমি, আমার সংগঠনের নেতাকর্মী, ছাত্রমৈত্রীর, ছাত্র ইউনিয়নের, ছাত্র আন্দোলনের, ছাত্র ঐক্যফোরামের, ছাত্র সমিতির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের নেতাকর্মী সহ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান সরকার এবং শ’পাঁচেক কর্মী নিয়ে আমরা শাহবাগের রাজপথে মিছিল বের করি ঠিক তখন ছাত্র ফ্রন্টের কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিল ‍“শেখ হাসিনার সরকার, রাজাকারদের পাহাড়াদার”। আমি মিছিলের সামনে থেকে ইমরানকে বলি এই স্লোগান প্লিজ বন্ধ করতে বলেন !! প্রতিউত্তরে সে আমায় হাসতে হাসতে জবাব দেয় চলুক ভাই! চলুক না! তখনেই বুঝেছি আমাদের সবার বানানো নেতা আজ অন্য সুরে কথা বলছেন। তিনি আন্দোলন থেকে সড়ে এসছেন!! বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পর একমাত্রই তার কন্যা শেখ হাসিনা সরকারই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন । অন্য কোন সরকার কখনেই এদের বিচার করবে না, সেটা নিশ্চিত আমরা।

গণজাগরণ মঞ্চের ভাঙ্গন, প্রথম বছর শেষ না হতেই ৫ই ফেব্রুয়ারীতে ইমরান সরকারের ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিষ্ট নেটওর্য়াক (বোয়ান) এর অধিকাংশ নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে। একভাগ গণজাগরণ মঞ্চ নামকরণ করে শাহবাগে অবস্থান নেয়, আর এই অংশের শুরু দিকে নেতৃত্ব দেয় এফ এম শাহিন সহ তার সমমনারা এবং পরে কামাল পাশা তার হাল ধরে আর বাকিরা খোদ ইমরান সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে প্রেস কনফারেন্সে এর মাধ্যমে খোদ ইমরান সরকারকেই বাদ দিয়ে ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিষ্ট নেটওর্য়াক (বোয়ান) এর নতুন কমিটি ঘোষণা করে। এদিকে শুরুর বারটি ছাত্র সংগঠন থেকে ছাত্রলীগ চলে যাবার পর অবশিষ্ট এগারোটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ঐক্য ফোরাম ও ছাত্র সমিতি এই ৫টি ছাত্র সংগঠন একই ভাবে ইমরানের একক কর্তৃত্ব ও সেচ্ছা চারিতার প্রতিবাদে তার উপর অনাস্থা জানিয়ে প্রেস কনফারেন্স করে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে আমরা যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চের পক্ষ থেকে সকল পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সমঝতার মাধ্যমে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি বিবৃতি দেই। এই পরিস্থিতিতে ইমরান সরকারের সাথে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্ট অবস্থান নেয়। আর অবশিষ্ট চারটি ছাত্র সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চের কোন পক্ষেই অবস্থান না নিয়ে ছাত্রলীগের মত নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থায় ফিরে যায়। আর দেখলাম এই সুযোগে সুবিধাবাদী দলেরা জামাত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তাবয়ন করতে ইমরান সরকারের আসে পাশে ঘুরা ঘুরি করে সুযোগ বুঝে ইমরান সরকারের আস্থাভাজন হবার চেষ্ঠা করছিল । সন্দেহ আরো ঘনিভূত হতে থাকে আসলেই কোন পথে চলছে শাহবাগ ?

মুখপাত্র গণজাগরণ মঞ্চ, ইমরান এইচ সরকার। পরিচয় তার অনেক। আমি গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টি হবার আগে তাকে একজন তরুন রাজনীতিবিদ ডাক্তার হিসাবে চিনতাম। আগে তার সাথে অনেক ঘনিষ্ঠতাও ছিল। আমি ব্লগে এবং ফেসবুকে লিখতাম আর সংগঠন চালাতাম আর ইমরান সরকার আওয়ামীলীগ অফিসের মিডিয়া সেলে বসত আর আমার মত এক্টিভিষ্টদের সাথে যোগাযোগ তৈরির কাজ করত যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার কাজ করত। গণজাগরণ মঞ্চ হবার পর ইমরান সরকার কেমন যেন একটু দূরে চলে গেল সবার থেকে। মানে প্রায় সব স্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হল। যা অবশ্যই অনাকাঙ্খিত। সবার ভিতরেই ইমরান সরকারকে নিয়ে নানা ক্ষোভ তৈরি হল। কিন্তু মুখপাত্র যেন সব কিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকত ! ইতিমধ্যে গণজাগরণ মঞ্চ একই নামে দুইটি ভাগে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে যা সবার চোখে পড়ছিল।

শাহবাগকে আবারো এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ করবার জন্য, আমরাই উদ্যোগ নিলাম তাই “শাহবাগ আন্দোলন” নামে আমরা ৭টি সংগঠন জোট বাধলাম, বোয়ান, যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ, ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র সমিতি এবং ছাত্র ঐক্য ফোরাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খন্ডিত শাহবাগকে একত্রিত করা। আর এ নিয়ে আমরা গণজাগরণ মঞ্চের কামাল পাশা ও শাহীন অংশের সাথে বারং বার বসলাম। তারা ইমরান সরকারের সাথে সমঝতা করতে নারাজ ছিল শুরুর দিকে পরে অবশ্য গত কয়েকদিন আগে যখন সাঈদীর রায় আমাদের কাঙ্খিত রায় হলো না তখন এই অংশ অবশ্য সমঝতা করতে রাজি হয়। অন্য দিকে আমরা যখন ইমরান অংশের সাথে শুরু থেকে ঐক্যের ডাক দেই প্রতি বারেই আমরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসি, তার পিছনে সবচেয়ে বড় কারন হল ইমরান সরকারের একজন উপদেষ্টা সাবেক ছাত্রদল নেতার বাধ সাধা। তারা চায়না এই আন্দোলন ঐক্যবদ্ধ হোক ! সর্বশেষ আমি শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষ থেকে যখন ইমরান সরকারের সাথে একটি বৈঠক করি, আমি তাকে বলি ভাই পরিস্থিতি খুব খারাপ দেশ ও জাতির স্বার্থে আপনাকে সকল সমস্যা সমাধান করতে হবে। মূল সমস্যাটা হচ্ছিল আপনার একক কর্তৃত্ব, সেচ্ছাচারিতা এবং মুখপাত্র পদকে কেন্দ্র করে! সাথে গণজাগরণ মঞ্চের মূল চেতনার বাহিরে অন্যান্য ইস্যুতে মঞ্চের মুখপাত্রের অবস্থান এই পরিস্থিতির জন্যই দায়ি তাও বললাম তাকে। এখন উচিৎ সবাইকে ডেকে আপনার পদত্যাগ করা এবং আপনাকে সাথে নিয়ে অন্তত একটা জাতীয় সমন্বয় সেল তৈরি করা। এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলা আমাদের সেই মিটিং ভেস্তে যায় ইমরান সরকারের অনঢ় অবস্থানের কারনে। তিনি সবাইকে নিয়ে সমঝতা চান না সাফ বলে দিলেন এবং আওয়ামীলীগ সমমনা কোন এক্টিভিষ্টদের কারো সাথে তিনি বসতে রাজি ননও এমন কি যারা গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম দিককার সংগঠক হিসাবেও সুপরিচিত ছিল তাদের সাথেও নয়! আমি বুঝে গেলাম আমাদের সবার প্রিয় মুখপাত্র এক্টিভিষ্ট হিসাবে আর নেই তিনি একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে আর্বিভাব হতে যাচ্ছেন। তা তিনি হতে পারেন, এতে কোন বাধা নেই তবে তার কোন অধিকারও নেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এত বড় আন্দোলনকে নষ্ট করা।

সর্বশেষ ফাসির দন্ডপ্রাপ্ত কুখ্যাত রাজাকার সাঈদীর আপিলের রায় আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়ায় আমরা তিন পক্ষই শাহবাগে অবস্থান নেই। আমাদের মধ্যে উত্তেজনাও চলছে। যুদ্ধাপরাধীর রায় নিয়ে নয়। একে অপরকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে। অবস্থা দেখে আমরা শাহবাগ আন্দোলনের জোট আবারো গণজাগরণ মঞ্চর-ইমরান অংশ এবং গণজাগরণ মঞ্চ-পাশা অংশের সাথে আলোচানা বসি। পাশা-মঞ্চ সমঝতায় রাজি হলেও ইমরান-মঞ্চ আগের মতই তার নতুন মুখগুলো নিয়ে প্রস্তাব নাকচ করে দিল। অত্যান্ত দূর্ভাগ্যজনক । তার প্রতি ধিক্কার ছাড়া আরা কিছুই দেবার নেই। বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগনের চেতনা নিয়ে খেলা করবার কোন অধিকার ইমরান সরকারের নাই। ইমরান সরকার প্রকাশ্যে স্বাধীনতা বিরোধী এনজিও কর্মী এবং যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে অবস্থান নেওয়া রাজনৈতিক দলের চিহ্নিত কর্মীদের নিয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবিতে আন্দোলন একটু বিব্রতিকর! সাধারণত রাজনীতিবিদরাই এমন কাজটি করতে পারেন। ইমরান সরকারকে বেছে নিতে হবে কোন পথে তিনি হাটতে চান ? শাহবাগের চেতনার পথে নাকি ব্যক্তি স্বার্থের পথে ? খুব মনে পড়ে স্লোগানটি – “ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা” । “দালালী না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ”। ইমরান সরকারকে অনুরোধ করব জনতার কাতারে এবং রাজপথে ফিরে আসতে। সব কিছু ভুলে ঐক্যে ডাক দিয়ে আন্দোলনকে সামনের দিকে আমাদের সবাইকে নিয়ে যেতে হবে। সামনে আরো কঠিন দিন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আমরা যদি এখনো ভুল পথে হাটি তবে ক্ষমতার হৃদ-বদলে হয়তো কখনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করার দায়ে আমাদেরও বিচার করবে স্বাধীনতা বিরোধীরা।

জয় বাঙলা।