(১)
আমাদের একটা জেনারেশন গড়ে উঠেছে তসলিমা নাসরিনকে ঘিরে! সেই স্কুল লাইফে তসলিমা নাসরিনকে পেয়েছি, তারপরে একে একে তার লেখা গোগ্রাসে গিলেছি! তারচেয়ে বেশি হয়েছে ডিবেট! প্রচুর ডিবেট করেছি- এই এক তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে! স্কুল বন্ধুদের সাথে সেই ডিবেট, বাসায় ডিবেট, পাড়ায় ডিবেট, শীতে নানাবাড়িতে বেড়াতে গেলে মামা-খালাদের সাথে ডিবেট- কাজিনদের সাথে ডিবেট! এই ডিবেট এ তসলিমা নাসরিনকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে আরো বেশি করে তসলিমা নাসরিন পড়া! যাযাদি-র মত প্রতিক্রিয়াশীল পত্রিকা তসলিমা নাসরিনের কলাম ছাপাতো- সে “প্রেমলীলা” নামে আরেকটা রগরগে টাইপের ছোট ফিচার ছাপাতো- আমাদের টিনেজার বন্ধুদের কেউ কেউ ‘প্রেমলীলা’র আকর্ষণেই যাযাদি কিনতো, সাথে তসলিমা নাসরিনও পড়তো- পড়ে এসে ডিবেট করতো- তাদের ডিবেটের কিছু রসদ ঐ যাযাদিতেও থাকতো- কেননা তারা পাঠকদের চিঠি ছাপাতো- যার একটা বড় অংশই ছিল তসলিমাকে করা সমালোচনা!

একবার এক বন্ধু লাফাতে লাফাতে এসে বললো- তসলিমা লিখেছে, সেও পুরুষদের মত গরম লাগলে গায়ের জামা খুলে ফেলতে চায়- তো তাকে পুরুষদের মত জিন্স পরতে বইলো আর রাস্তায় হিসি পেলে জিপার খুলে দাঁড়িয়ে যেতে বইলো! বলেই- বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে দিলো! যাযাদি-তে ঠিক এইরকম সমালোচনা তারা স্থান দিত! ‘প্রেমলীলা’র পাঠকেরা ঐসব পড়ে দাঁত বের করে হাসতো, পারলে তাদের দাঁতের ফাক গলে রস বের হয়ে যেত- কেননা তারা রাস্তার পাশে নারীর হিসি করার দৃশ্য কল্পনা করে সুখ পেতে চাইতো! বন্ধুরে বললাম- দাঁড়িয়ে হিসি করবে কেন, বসেই করবে! তোদের মত লোলুপ পুরুষদের কারণে যেমন গরমে কাপড় খোলা তো দুরের কথা- গেঞ্জি টাইপের হালকা কাপড় পরার জো নেই, তেমনি রাস্তার পাশে অতি জরুরি প্রয়োজনে হিসি করারো উপায় নেই …

তসলিমা নাসরিন আমাদের কৈশোরে ছিল ঝড়ের অপর নাম! যেমন তেমন ঝড় না, একেবারে কালবৈশাখী ঝড়! সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিত, উড়িয়ে নিয়ে যেত! অনেক বই ছিল খোলামেলা, অভিভাবকের চোখে নিষিদ্ধ, অনেক সময় তার বই পড়তে হতো লুকিয়ে লুকিয়ে, কিন্তু পড়তাম! স্কুল লাইফের বই পড়া মানে- হুমায়ুন আহমেদ, তসলিমা নাসরিন আর সেবা প্রকাশনী পড়া (তার আগে ফেলুদা সিরিজ, আরেকটু পরে সুনীল- সমরেশ- শীর্ষেন্দু)! হুমায়ুন পড়তাম, কারণ পড়তে ভালো লাগতো- তাড়াতাড়ি শেষ হতো- একটানে শেষ হয়ে যেত, এবং সহজলভ্য ছিল- কিছুদিন পর পর একেকটা বই আসতো! আর তসলিমা নাসরিনের বই হাতে পেতাম অনেকদিন পর পর- পড়তে হতো লুকিয়ে লুকিয়ে- পড়তে একটু বেশি সময় লাগতো কেননা একাধিকবার পড়তে হতো- তবে এটাও একটানা না শেষ করে ওঠা যেত না! কিন্তু, এটা মাথায় থাকতো অনেকদিন! কেননা, একেকটা লেখায় থাকতো মারাত্মক সব ধাক্কা, কি তার ঝাঁজ, কি তার তেজ! শুরুতে মানতে পারতাম না, পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যেত, কিন্তু ফেলতেও পারতাম না, ফলে আবার পড়তে হতো! আবার পড়তাম! অস্বস্তি হতো! অস্বস্তি নিয়ে পড়তাম, একসময় মেনে নিতেও বাধ্য হতাম! সে অন্য এক অনুভূতি …

আমার নাস্তিকতার পাঠ আরেকটু আগে! ফলে, তসলিমা নাসরিনকে আমার নাস্তিকতার গুরু বলা যাবে না! তারপরেও আমার নাস্তিক হওয়ার পেছনে তার বিশাল ভূমিকা আছে। একটা পর্যায় ছিল যখন সৃষ্টিকর্তাকে অবিশ্বাসের সমস্ত যুক্তি আমার কাছে মজুত, তর্কের ময়দানে আল্লাহকে নাই করে দিলাম, নবীকে আমাদের মত মানুষ বানিয়ে দিলাম, কোরানকে নবীর লেখা বই প্রমান করে দিলাম- কিন্তু কোথায় যেন একটা ভয়- একটা দোদুল্যমানতা, একেবারে মন থেকে দূর করতে পারছিলাম না- কোনকারণে যদি আল্লাহ থেকে থাকেন! এই অবস্থাটা কাটাতে সাহায্য করেছেন- তসলিমা নাসরিন! আল্লাহকে- নবীকে যেভাবে সরাসরি আক্রমণ করেছেন, সাহস পেলাম! সাহস ঐ জায়গায় যে, আল্লাহ- নবী যদি থেকেও থাকেও- তারা নপুংসুক ধরণের- কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না, রাখলে তাদের গজব সবার আগে সরাসরি তসলিমা নাসরিনের উপরে পড়তো, তিনি ধ্বংস হয়ে যেতেন! ফলে, একদম ঝাড়া হাত-পা হয়ে ধর্মকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করার সাহস দিয়েছেন আমাকে তসলিমা নাসরিনই! আমার নাস্তিকতা প্রচার/ তর্ক-বিতর্কের একটা পর্যায়ে তসলিমা নাসরিনের প্রভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলাম- ফলে ধিরে ধিরে দেখা গেল- আমার সাথে বন্ধু বান্ধবরা তর্ক আর করতে চাইতো না, কদাচিৎ হলেও একদম শুরুতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে গালিগালাজ শুরু হয়ে যেত! আরজ আলী মাতুব্বরের শিষ্যত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত আমার ধরণ কিছুটা এগ্রেসিভ ছিল- স্বীকার করছি! তা মূলত তসলিমা নাসরিন এবং পরে হুমায়ুন আজাদের প্রভাবেই! এখনো মাঝে মধ্যে যে, রাগ তৈরি হয়, মুখ ফসকে ক্ষোভে গালি দিয়ে ফেলি- সবই তসলিমা নাসরিন আর হুমায়ুন আজাদের প্রভাব (প্রোফাইলের ছবিটা ঐ কারণে রেখে দিয়েছি- গুরুর ছবি দেখি আর নিজেকে ঠান্ডা করার চেস্টা করি) …

যাহোক- যেটা বলছিলাম, তসলিমা নাসরিনের লেখা পড়ে ধাক্কা খেতাম, মানতে কষ্ট হতো- কিন্তু ফেলতে পারতাম না! ধর্ম সংক্রান্ত লেখা পড়ে নিশ্চয়ই এই অনুভূতি হতো না! কেননা নাস্তিকতা আমার কাছে নতুন ছিল না- প্রবল বেগে ধাক্কা খেতাম তার ঠিক অন্য লেখাগুলোতে! হ্যাঁ, তসলিমা নাসরিনই আমাকে প্রথম জানিয়েছে, ‘পুরুষ’ একটা গালির নাম! যে ‘পুরুষ’ নিয়ে হয়তো গর্ব ছিল- সেই ‘পুরুষ’ পরিচয় হয়ে দাড়ালো লজ্জার! পুরুষের মাঝে হিংস্রতা- ক্ষুদ্রতা- নীচতা- নোংরামি সব দেখিয়ে তো ছাড়লোই- কিন্তু, সবচেয়ে বড় আঘাত হয়ে দাঁড়ালো তখনই যখন দেখি- আমি নিজেও সেই হিংস্র, ক্ষুদ্র, নীচ, নোংরা, লোভী এক পুরুষই! এভাবে আমাকে চেনানোর, নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সংগ্রামে লিপ্ত করার কাজটি যিনি করেছেন- তিনি আর কেউ নন, তিনি তসলিমা নাসরিন! এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই সংগ্রামটি এত সহজ নয়- এ সংগ্রাম সারাজীবনের বোধ হয়! এই সংগ্রামের শুরু যার হাত ধরে সেই তসলিমা নাসরিনের প্রতি শ্রদ্ধার শেষ নেই! তার কিছু কিছু বিষয়ের সাথে একমত নই- কিছু কর্মপদ্ধতি অন্যরকম হলে আরো ভালো হতো বোধ করি; কিন্তু আমাদের কালে মুক্তচিন্তা প্রসারে এবং নারীবাদী চিন্তার প্রসারে তিনি অদ্বিতীয়! আজো তিনি প্রলয়ংকরী ঝড়! যে ঝড়কে ভয় পায় পুরুষবাদী ধর্মব্যবসায়ীরা!

তার জন্মদিনে অনেক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও শুভকামনা জানাই! আসুন, তাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে সামিল হই!
তসলিমা নাসরিন

(২)
অদিতি ফাল্গুনী তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে একটা কমেন্ট করেছেনঃ

///ব্যক্তি সম্পর্কের কথা বাজারে প্রকাশ করা কতটা সঠিক ও সেসব কাহিনী কতটা সত্য সেসব বিতর্কে না গিয়ে বা কেন কলামিস্ট হিসেবে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে উত্থানের সময় ঠিক সবচেয়ে বাজার কাটতি দুই পত্রিকার সম্পাদকেরই প্রেমিকা ও পরে স্ত্রী হয়েছিলেন (প্রেম বা বিয়ে অ-সম্পাদক কোন প্রাণীর সাথেও হতে পারতো)///

অদিতি ফাল্গুনীর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য দেখে খুব অবাক হলাম! এটা আবার এমন একটা নোংরা পোস্টে (https://www.facebook.com/priyomanush/posts/814705295240948?comment_id=815089575202520&notif_t=like) করা, যেখানে পোস্ট লেখক বলেছেনঃ

///যে সমস্ত শ্রদ্ধেয়, সর্বজনমান্য লেখক, কবি, শিল্পীর কাছ থেকে( উভয় বঙ্গেরই ) সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিয়ে, নামধাম ফাটিয়ে তিনি(নৗচ রুচির পরিচয় হবে, তাই বলতে চাইনে কিসের বিনিময়ে) নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন, যে বা যাঁরা বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থৗ গন্ডমূর্খ মৌলবাদৗদের আক্রোশ থেকে তাঁর প্রাণ বাঁচিয়ে তাঁকে ভারত হয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করলেন, পরবর্তীতে একের পর এক আত্মজীবনী লিখে সেই সকল পুরুষের আগ্রাসী যৌনতার ষষ্ঠীপুজো করলেন এই লেখিকা! যৌন ক্ষুধা নাকি তাঁর নিজের একেবারেই ছিলনা! তিনি সুযোগ বুঝলেই ধোয়া তুলসীপাতাটি হয়ে যেতে পারেন৷ তিনি হলেন বিশ্বসুন্দরৗ এবং এতটাই তিনি যৌন আকর্ষণ সম্পন্না যে সব পুরুষমানুষ তাঁকে দেখা মাত্রেই যৌনতার জন্য অধৗর হয়ে পড়ে! তখন তিনি অবলা নারী হয়ে যান! বাংলাদেশের কিছু নামজাদা লেখকের মানমর্যাদা সব তাঁরই যৌবনের কারণে তেনার পায়ে লুটিয়েছে৷///

এই নোংরা পোস্টলেখক সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়কে “সুপ্রিয় দা” সম্বোধন করে অদিতি ফাল্গুনি সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়ের নোংরামিকেই ফুলিয়ে ফাপিয়ে তার মন্তব্যটি উপস্থাপন করলেন! যে দুই সম্পাদকের কথা অদিতি বললেন- তাদের মধ্যে নাঈমুল ইসলাম খানের ‘খবরের কাগজ’ এই তসলিমা নাসরিনের প্রথমদিককের লেখাগুলো ছাপানো হয়! নাঈমুল ইসলাম খানের অবদান বলতে গেলে এটাই যে, তার প্ররোচনা বা উতসাহেই তসলিমা নাসরিন প্রথম প্রবন্ধটি লেখেন! মূলত ছিলেন কবি- একটা কবিতার বই ছাপা হয়েছে, কবিদের আড্ডায় মাঝে মধ্যে যান- নাঈমুল ইসলাম খানের সাথে পরিচয়, নাঈমুল ইসলাম খান খাটা খাটনি করে “খবরের কাগজ” নামে নিখাদ প্রবন্ধের সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করছেন- সেখানে ব্যক্তিগত পরিচিতির সুবাদে তসলিমা নাসরিনকে প্রবন্ধ লেখতে বলা! তার তাগাদায় তসলিমা নাসরিন প্রবন্ধ লিখতে বসেন- ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রবন্ধ একটা লিখেও ফেলেন! ভয়ে ভয়ে সেটা দেন, ছাপাও হয়, এভাবে আরো কিছু প্রবন্ধ ছাপা হয়! বিষয়টা এনেকটা এরকম পরিচিত একজন একটা লেখা দিতে বলেছে, তাই লিখেছে, দিয়েছে। যেখানে ভালো হবে কি না- প্রকাশের যোগ্য হবে কি না- এসবই তখন তসলিমা নাসরিনের জানা ছিল না, সেখানে বিখ্যাত হওয়ার উদ্দেশ্য/ লক্ষ/ বিধেয়! এগুলো অদিতি ফাল্গুনীদের সব অতিকল্পনা ছাড়া আর কি! হ্যাঁ, নাঈমুল ইসলাম খানের পত্রিকায় তসলিমা নাসরিনের প্রবন্ধ ছাপার পরে তা সাড়া ফেলে দেয়। পত্রিকার কাটতিও বাড়তে থাকে! পক্ষে বিপক্ষে প্রচুর চিঠি আসতে থাকে! একটা সময়ে দেখা গেল- তসলিমা নাসরিন ঐ পত্রিকায় লেখার আগ পর্যন্ত সব মিলে যতগুলো চিঠি এসেছিল- তসলিমা নাসরিনের কোন একটি লেখাকে কেন্দ্র করে তার কয়েকগুন বেশি চিঠি আসতে লাগলো! এদিক দিয়ে দেখলে বলতে হবে- নাঈমুল ইসলাম খান যেমন তসলিমা নাসরিনকে প্রথম প্রবন্ধ লেখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছিল- তেমনি তসলিমার লেখা প্রবন্ধগুলোর কারণে পত্রিকার কাটতি কেবল বাড়া না- পত্রিকাটি একটা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলো! কেননা, নাঈমুল ইসলাম খানের ঐ “খবরের কাগজ” পত্রিকাটি সে সময়ে মোটেও খুব জনপ্রিয় কিছু ছিল না, কিছু দিন আগে কেবল যাত্রা শুরু করেছে- এমন একটা পত্রিকাই ছিল! ফলে, অদিতি ফাল্গুনী যেটা বলেছেন- ঐ সময়ের সবচেয়ে বাজার কাটতি দুটো পত্রিকার দুই সম্পাদকের প্রেমিকা আর স্ত্রী হয়েছেন- এটা অসত্য! আর, এ বলার মধ্য দিয়ে যে নোংরা ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন- অর্থাৎ বাজার কাটতি সম্পাদকের সাথে প্রেম বিয়ে করার মাধ্যমে তসলিমা নাসরিন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, সেটা অদিতি ফাল্গুনীর নোংরা মনের পরিচায়কও শুধু নয়, তার ইর্ষাপরায়নতারই বহিপ্রকাশ শুধু নয়, নিজের লিপ্সা- অভিপ্রায়- স্বভাবের মত করে আর সকলকে দেখার নামান্তর!

ঘৃণা জানানোর ভাষা নেই!

(৩)
তসলিমা নাসরিনের ক্রিটিকদের অনেককেই দেখি শুরু করেন এভাবে- তসলিমা নাসরিন কি বস্তাপচা লেখা লিখেছে, না আছে কোন সাহিত্যমান, না আছে তাতে কোন শালীনতা- ভদ্রতা, ভব্যতা! অনেকে আবার তার পুরস্কার প্রাপ্তিকেও সমালোচিত করেন! তুলনা দেন- তারাশংকর, মানিকের সাথে- বলেন, তারাশংকর- মানিক পুরস্কার পায় না, পায় হলো তসলিমা নাসরিন! বেশ চতুর ক্রিটিক বলতে হবে তাদের! তসলিমা কি বলছেন, কি নিয়ে বলছেন- তার ধারে কাছে না গিয়ে প্রথমেই লেগে পড়ছেন- কেমনে কি বলছেন তা নিয়ে! এবং একদম প্রথমেই ধরাশায়ী করে দিচ্ছেন- এসব কোন সাহিত্যই না! তসলিমা যা লিখেছেন, তা সাহিত্য নয়- ভালো কথা, কিন্তু সেসব তাহলে কি? জবাব আসে- ওসব কিছুই না!
-আপনি তাহলে পড়েছেন কি করে?
– নাহ! আমি পড়তেই পারিনি! ওসব কি আর পড়া যায়!
– না পড়েই তাহলে কিভাবে বলছেন, এগুলো সাহিত্যই না!
– না, মানে কিছু তো পড়েছি, মানে পড়ার চেস্টা করেছি- কিন্তু পড়তে পারিনি!
– পড়তে পারেন নি মানে? কেন? পড়ার মত না? কি লিখেছে তা বুঝা যাচ্ছিল না? বাক্য গঠন উল্টাপাল্টা ছিল? বানান ভুলে ভরা? মানে, যতটুকু পড়েছেন- তাতে এরকম কোন সমস্যা পেয়েছেন?
– না ওই সমস্যার কথা বলছি না, ওগুলো কোন সাহিত্য হলো? পড়ার মত?
– না, আপনি তো পেপার পত্রিকাও পড়েন দেখি, বিনোদন পাতাও পড়তে দেখি! সেসবের সাহিত্য মানও তো আর রবীন্দ্রনাথ- মানিকের মত না! কিন্তু পড়ে শেষ করতে পারেন, তসলিমা নাসরিনেরটায় কি সমস্যা?
বাস্তবে, বুঝা যায়- মূল সমস্যা তাদের ঐ কন্টেন্টেই- কিন্তু মুখে বলে সাহিত্যমান খারাপ! তারই নানা ফন্দি ফিকির!
আমার সোজাসাপ্টা হিসাব! গল্প- উপন্যাস- কবিতা এসব হৃদয়বৃত্তিক সাহিত্যের পাশাপাশি আরেক ধরণের সাহিত্য আছে মননশীল- চিন্তাশীল সাহিত্য! যা মনকে জাগিয়ে তুলে, চিন্তাকে নাড়া দেয়! প্রবন্ধ হতে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে গল্প- উপন্যাস- কবিতার মাধ্যমেও তা হতে পারে! এনাদের কাছে, সেই প্রবন্ধ- কবিতা- উপন্যাস কোন মহান সাহিত্য রচনার মাধ্যম না, বরং নিজের কথা, কোন বিষয়ের প্রতি তার সাবমিশন, সেই বিষয়কে মানুষের সামনে তুলে ধরার তাগিদ থেকেই তারা এসব সাহিত্য রচনা করেন! তসলিমা নাসরিন হচ্ছেন- দ্বিতীয় ধারার মননশীল সাহিত্যিক! তার লেখায় রবীন্দ্রনাথ, তারাশংকর, মানিক খুজতে যাওয়া আহাম্মকি অথবা কুটনামো ছাড়া আর কিছুই না! যেমন করে বেগম রোকেয়ার সাহিত্যমানের সাথে তারাশংকর- বিভূতিভূষণের সাহিত্যমানের তুলনা হতে পারে না, যেমন করে সিমন দ্য বেভয়ারের লেখার মধ্যে- মেরি ওলস্ট্যানক্রাফট এর মধ্য শেক্সপিয়ার, দস্তয়ভস্কিরে কেউ খুজতে যায় না! রোকেয়া, সিমন, ওলস্ট্যানক্রাফটকে সবাই স্মরণ করে- তারা কি বলেছেন- কি নিয়ে ফাইট করেছেন তা নিয়ে, কেমন কি সাহিত্য করেছেন তা নিয়ে নিশ্চয়ই নয়!

(৪)
আরেক গাদা সমালোচনা দেখি- তার লেখায় নাকি যৌনতার ছড়াছড়ি! এসব নাকি চটি টাইপের লেখা! পুরাই পর্ণো!
এক হচ্ছে- যৌনতার ছড়াছড়ি, কতটুকু যৌনতা থাকলে পার্মিটেড- আর কতটুকু থাকলে সেটা ছড়াছড়ি পর্যায়ে যাবে, সে এক প্রশ্ন! আদৌ যৌনতার ছড়াছড়ি আছে কি না তা আরেক প্রশ্ন! আর যৌনতার ছড়াছড়ি থাকলেই সেটা চটি বা পর্ণো হয় কি না সে প্রশ্নও সাথে সাথে চলে আসে!

প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলবো- তার লেখাগুলোতে যৌনতার উপস্থিতি পরিমিত এবং প্রয়োজনীয়! যদিও অধিকাংশ পড়া অনেক কাল আগের এবং তার পরে কিছুদিন আগে তার দ্বি-খন্ডিত বইটি পড়েছি- এই বই বা আগের বইগুলোর পড়ার অভিজ্ঞতায় আমার এমনই মনে হয়েছে! ছড়াছড়ি বলতে তাই আমি রাজি নই! এমনটা মনে হওয়ার কারণ- যতটুকু অংশে এই যৌনতার বিষয় আছে- সেটা খুব স্ট্রাইকিং এবং বিশেষ করে উপন্যাসের ক্ষেত্রে সব ছাপিয়ে ঐ যৌনতার বিষয়টাই মূল ভরকেন্দ্রে চলে আসে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিতর্কের তৈরি করে বলে- যৌনতাপ্রধান লেখা বলে পরিচিতি ঘটে! যেমন লজ্জার সেই দাঙ্গায় ধর্ষণের শিকার হিন্দু মেয়ের দাদার এক মুসলিম নামের পতিতাকে টাকা দিয়ে ঘরে নিয়ে এসে ধর্ষণ, ভ্রমর কইয়ো গিয়াতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনক্রিয়ায় বাধ্য করা তথা ধর্ষণ, কিংবা দ্বিখন্ডিততে বিভিন্ন সম্পর্কের কিছু বর্ণনা- সবই বিতর্ক তৈরি করেছিল!

এবারে যদি আসি- এগুলো পর্ণো কিনা, চটি কি না- এককথায় বলবো, এসবের কোনটির উদ্দেশ্য যৌন সুড়সুড়ি দেয়া নয়- বরং ধাক্কা দেয়া, অস্বস্তি তৈরি করে দেয়া! এমনকি সুনীল, সৈয়দ হক, মাল্টো প্রমুখের সাহিত্যে যে পরিমাণ যৌনতা আছে, যৌনতার যেসমস্ত ডিটেইলিং আছে, যেরকম মনভুলানো বর্ণনা আছে- তার ছিটেফোটাও নেই তসলিমা নাসরিনের লেখায় (স্মরণশক্তিতে লেখছি, আবার পড়তে হবে। আপনারা পেলে বইয়ের নাম সাজেস্ট কইরেন, সেই বই আগে শুরু করবো)। যতদূর মনে পড়ে- আমি একটা লেখাতেও এমন একটা যৌনতা পাইনি- যেটা দুজনের স্বাভাবিক প্রেমের আকর্ষণের সম্পর্কের যৌনতা, যে যৌনতায় সমস্যা নেই! ফলে- যারা দাবী করছে, এসব পর্ণো ধরণের লেখা- তারা হয় তার লেখা ভালোকরে পড়েননি, অথবা সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েই এসব দাবী করেছে, আগেই বলেছি যে- তসলিমা নাসরিনের লেখার পরতে পরতে তীব্র আঘাত আছে- সে আঘাত ‘পুরুষ’ এবং ‘পুরুষবাদী নারী’ উভয়কেই জর্জরিত করতে সক্ষম!

আর যে বলবে- যেকোন ধরণের যৌনতা ভিত্তিক লেখা মাত্রই বাজে, যৌনতা গোপন বিষয়- সাহিত্য করার বিষয় না, তাকে সাহিত্য পাড়ায় পা না রাখার অনুরোধ জানাবো! এমনকি ধর্মগ্রন্থসমুহও আপনাদের পড়া ঠিক হবে না! আপনারা ধারাপাত পড়তে পারেন!

(৫)
আরেক পদের সমালোচনা আছে! তসলিমা নাসরিন গোপন সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে বলেন! বেডরুমের বিষয় বাইরে আনা কেমন নৈতিকতা? এমনকি আমাদের সন্যাসী সন্ন্যাসীও বলছেনঃ

নারী-পুরুষ এক বিছানায় শুয়ে সুখলাভ করলে তা কক্ষের বাইরে না আনাই যুক্তিসংগত। যদি জোর করে বা সিডিউস করে কিছু করা হয় তবে সেটা প্রকাশ করা উচিত, কিন্তু নিজে আনন্দ নিয়ে পরে তা প্রকাশ করে আলোচনায় থাকা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য!

প্রথমত, তসলিমা নাসরিন বেডরুমের কতটুকু বিষয় বাইরে এনেছেন? দ্বিতীয়ত, বিছানার সুখলাভের অভিজ্ঞতা আদতে তিনি বাইরে বর্ণনা কি করেছেন? আত্মজৈবনিক দ্বি-খন্ডিত বইটি এবং রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র সাথে বাসর রাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখাটা আমার পড়া হয়েছে! দ্বি-খন্ডিত বইটিতে একটি ঘটনা নেই যে- যেখানে বেডরুমের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আছে! সৈয়দ হকের সাথে পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার ঘটনার বর্ণনা এভাবে আছে যে, হক দুজনের জন্যে আলাদা রুম না নিয়ে এক রুম নেন এবং সারারাত তসলিমা নাসরিন তটস্থ থাকেন- ফেরার পরে বা কখনোই হক তসলিমাকে তার বাড়িতে এলাউ করেন না! নাঈমুল ইসলাম খানের সাথে বিয়ের পরে বা আগের যে সম্পর্কের আলোচনা আছে, সেখানে কোন যৌনতা নেই- বিয়ের পরে কিভাবে খান কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে উঠছিল সে বর্ণনা আছে! তৃতীয় স্বামীর সাথে আকস্মিক বিয়ের পরেও এরকম কোন যৌনতার বর্ণনা দেখিনা, দেখি দেখি দিনের পর দিন তসলিমা নাসরিনের উপর মারপিট-অত্যাচার। শেষে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে যখন মিনার মাহমুদ বিদেশ চলে যাওয়ার খবরে বাসায় দেখা করতে আসে- সেখানে তসলিমাকে অপমান করে- সেটা আছে, কিন্তু যৌন রগরগে বর্ণনা তো নেই! হ্যাঁ, একটা আপত্তি অনেকে তুলতে পারেন- ইমদাদুল হক মিলনের সাথে ভারত ভ্রমণে গিয়ে যৌনতায় লিপ্ত হয়েছিলেন- সেটা অকপটে স্বীকার করেছেন! সন্যাসীর কথানুসারে- বিছানার ‘সুখ-লাভ’ও হয়েছিল, কিন্তু সে যৌনতার কোন বিবরণ কিন্তু দ্বি-খন্ডিত’তে নেই! তসলিমা জানায়, একসময় তার শরীরও এটা চায় এবং তাদের মধ্যে যৌনতা হয়ে যায়! কিন্তু, তাকে নিয়ে কলকাতার এক পার্টিতে যেতে সাহস পায়না মিলন, বাংলাদেশে এসে বলতে গেলে ভুলেই যায়! এখন কথা হচ্ছে, বেড রুমের ঘটনা বাইরে না আনা নিয়ে আপত্তি, নাকি- বেডরুমের পার্টনার কে ছিল সেটা জানানোয় আপত্তি? নিশ্চিতভাবেই তসলিমা নাসরিন এমন কোন নাকে খত দিয়ে মিলনের সাথে বেডরুমে ঢুকেননি যে, মিলনের সাথে যৌনসম্পর্কের কথা বলা যাবে না! তসলিমা নাসরিন অনেক আগে থেকেই যৌনতার স্বাধীনতার কথা বলছেন, লিভ টুগেদারের কথা বলছেন এবং বলছেন- লুকিয়ে চুপিয়ে লিভ টুগেদার করার কোন মানে নেই! বিয়ে করলে কেউ লুকিয়ে চুপিয়ে করি না, প্রতিটা মানুষ জানে- দুটো মানুষের মধ্যে কি সম্পর্কের চর্চা হচ্ছে, একইভাবে এই মিলনের সাথে যে তার যৌন সম্পর্ক আছে সেটা বলতে তিনি কোন বাঁধা দেখেন না, তার যে একটা শরীর আছে, সেই শরীরেরও একটা চাহিদা আছে, আর সব মানুষের মত- যে চাহিদা কেবল পুরুষের একক সম্পত্তি নয়- তা অকপটে বলাটা আমার মতে সাহসী এবং দরকারী!

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সাথে তার বাসর রাতের বর্ণনা নিয়ে লেখাটাতেও যৌনতার সবিস্তার বর্ণনা নেই, যতটুকু আছে তাতে একতা পরিমিতি আছে! এবং একেও ‘বিছানার সুখলাভ’ এর ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে না! কেননা- এই রাতই ছিল তসলিমা নাসরিনের জন্যে সবচেয়ে ভয়ংকর রাত! কেননা, সে রাতেই তিনি আবিস্কার করেন রুদ্র যৌনরোগে আক্রান্ত, সেটা তিনি রুদ্র পুরুষাঙ্গ চুলকানো ও তাতে মলম লাগানো দেখে বুঝতে পারেন- সেটাই তিনি বলেছেন! এবং জেরায় রুদ্র স্বীকার করেন- তার নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত ছিল! ফলে এখানকার বেডরুমের বর্ণনাকেও স্বাভাবিক বলা যাবে না! আরেকটি প্রবন্ধে সুনীলের সাথে একটা ঘটনার কথা বলেছেন। সেটা বেডরুমের না- একটা হোটেল রুমে যেখানে ডিনারের পরে বিদায় নেয়ার সময়ে হঠাত করেই সুনীল তসলিমার গায়ে আপত্তিকরভাবে হাত দিয়েছিলেন! সেই বর্ণনাতেও কোন ডিটেইলিং নেই, কেবল জানিয়েছেন- আপত্তিকরভাবে গায়ে হাত দিয়েছেন! সুতরাং, কোন স্বাভাবিক সম্পর্কের বেডরুমের ঘটনা কখনোই প্রকাশ্যে আনেন নি। এ বিষয়ে মুজিব মেহেদীর একটি দারুন কমেন্ট আছেঃ

প্রায় পৃথিবীজুড়েই বন্ধ দরজার ওপারে দুজন নারী-পুরুষ যা করে, তা-ও আজকাল মনিটরিংয়ের বিষয় বলে স্বীকৃত হয়েছে ও হতে চলেছে। কারণ, এক্ষেত্রে মনিটরিং জারি না রাখলে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স দমানো যাবে না বলে বুঝতে পেরেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

(৬)
একটা অভিযোগ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকের মুখেই শুনি! তসলিমা নাসরিন মারাত্মক পুরুষ বিদ্বেষী! তার চোখে সমস্ত পুরুষই লম্পট! অনেকেই এসে আগ বাড়িয়ে জানিয়ে যান, সব পুরুষ ভক্ষক নন- সমাজে রক্ষক পুরুষও আছে!

ভালো, তার মানে একথাটা স্বীকার করছেন যে, সব পুরুষ রক্ষক নন- সমাজে ভক্ষক পুরুষও আছে! আর স্বীকার যদি করেই থাকেন- তাহলে এক তসলিমা নাসরিন শুধু ভক্ষক পুরুষদের নিয়ে যদি লিখেনও- তাতে আপনাদের এত গোস্বা কেন? আপনারা বাকি তাবতেরা লেখুন না- সমাজের বাকি রক্ষক পুরুষদের নিয়ে! কেউ তো নিষেধ করছে না?

দ্বি-খন্ডিত পড়ে একটা মজার বিষয় দেখলাম- সেখানে নির্মলেন্দু গুনের আলোচনা আছে, সেখানে বিদ্যাপ্রকাশ প্রকাশনীর প্রকাশকের কথা আছে, তাদের পুরো বইয়ের কোথাও ভক্ষক হিসেবে বলা হয়নি; এরকম আরো কিছু ক্যারেক্টার আছে! অন্য বইগুলোতে খুঁজলেও হয়তো পাওয়া যাবে! আর পাওয়া যদি নাও যায়, তসলিমা নাসরিনের লেখার বিষয় যখন নারীর উপর নির্যাতন, তখন তার লেখায় ঘুরেফিরে ‘ভক্ষক’ ক্যারেক্টার চলে আসে! তার মানে কি এই দাঁড়ায়- সব পুরুষই ভক্ষক? না, তসলিমা নাসরিন কখনো এমনটা দাবী করেছেন? বাস্তবে, এ হচ্ছে- পাঠকের সিদ্ধান্ত! মূলত পুরুষ পাঠক- নিজেকেও যখন একই রকম হিসেবে আবিস্কার করে, তখন নিজেকে ভক্ষক হিসেবে মিলিয়ে ফেলে- নচেত তসলিমার লেখার কোন একটি ক্যারেক্টারের ভক্ষক হওয়াকে নিজের দিকে টেনে এনে ‘সব পুরুষ’কে কেন দেখবে?

পুরুষ পাঠকের ক্ষেত্রে এমনটা হতেই পারে, নারী পাঠকের ক্ষেত্রে এরকম অভিযোগের কারণ কি? মনস্তত্বটাও কি? আমার ধারণা, এই মনস্তত্বের সাথে ইনসিকিউরিটি ধারণা জড়িত! একবার একবাসে এক মাঝবয়েসি ভদ্রলোক নিজের স্ত্রীকে একপাশে রেখে পাশের এক নারীর গায়ে হাত দিতে গিয়ে সেই নারীর হাতে ধরা খেয়েছিলেন! পরে দেখা গেল- ঐ লম্পট পুরুষটির পাশে সবচেয়ে বেশী তার হয়ে ফাইট করছেন তার গুনধর স্ত্রীটি! একেবারে সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন- তার স্বামী নিতান্তই ভদ্রলোক ও ভালো মানুষ, যেনবা ভাজা মাছটি উল্টে খেতে পারে না! কেন এমন করলো তার স্ত্রী? ঐ যে, ইন্সিকিউরিটি ফিলিংস! আমাদের সমাজের অনেক নারীই তার স্বামীর বাজে অভ্যাস আছে, সেটা বিশ্বাস করতে পারেন না, আসলে চান না! কেননা- এতে তার দুনিয়া জগতটা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়! আমি দেখেছি- অনেক নারী তার স্বামীর এরকম কুকীর্তি হাতে নাতে ধরার পরেও- ডুকরে ডুকরে কাঁদার পরে স্বামীর সামান্য অযুহাত বিশ্বাস করে একদম শান্ত হয়ে যাচ্ছেন, যেন বা স্বামীর যেনতেন একটা অযুহাত শোনার জন্যে বা বিশ্বাস করার জন্যেই অপেক্ষায় ছিলেন!
ফলে, নারী পাঠকেরা যখন পুরুষের সুরে জানায়- সব পুরুষ ভক্ষক নন- তখন বুঝতে হবে- এ আসলে নিজেকে প্রবোধ দেয়ার চেস্টা ছাড়া কিছুই না!

(৭)
বাকিসব সমালোচনাগুলো আমার চোখে প্রশংসা, ওগুলোর জন্যে আমি বরং শ্রদ্ধা করি! ফলে বিস্তারিত কিছু বলার নেই- সংক্ষেপেই বলছি …
 ধর্ম নিয়ে আক্রমণাত্মক লেখেন, খুব ধর্মবিদ্বেষীঃ ধর্মের বিরুদ্ধে না লেখার কোন কারণ খুজে পাই না!
 চরিত্র খারাপ, বারে বারে সঙ্গী পরিবর্তন করেনঃ যৌনতা একটা স্বাভাবিক চাহিদা, এই চাহিদা পূরণের অধিকার সবার আছে বলে আমি মনে করি! তিনি কাউকে জোর করেন নি বা সিডিউস করেননি, কোন সঙ্গীর প্রতি কমিটেড থাকার পরে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করেছেন- এরকম প্রতিশ্রুতিভঙ্গেরও কোন ঘটনা জানা নেই! ফলে, কি সমস্যা?
 লিভ টুগেদারের পক্ষে প্রচার চালানঃ ভালো তো!

(৮)
পরিশেষে, তিনি সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকারের অনুকম্পায় ভারতে থাকছেন, বিজেপি সরকারের অনুকম্পার জন্যে তাকে হাত পাততে হয়েছে, হচ্ছে- এ আমায় খুব কষ্ট দেয়! যখন বিরোধীপক্ষ বলে তসলিমা নাসরিন হিন্দুবাদী বিজেপি আরএসএস এর পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে- তখন সহসাই জবাব খুজে পাই না! না পেরে পাল্টা আক্রমণ করি, আপনারাই তাকে দেশে আসতে দিচ্ছেন না, ছি! বারেবারে মনে হয়- অন্তত ইউরোপেই তিনি ভালো ছিলেন! বড় গলায় তা বলতেও পারি না- খুব লজ্জা লাগে, কেননা নিজ দেশে এখনো আমরা আনতে পারিনি, পারছি না …

আমরা কি এ লজ্জার হাত থেকে মুক্তি পাবো না?