টিক টিক করে সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে; অনেকক্ষণ হলো হাতে কলম-খাতা নিয়েছি। কিন্তু কি লিখব আর কিভাবে লিখবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তবে আমি যা বলতে চাই তা আপনাদের জানানো খুব জরুরী মনে করছি। আমি আর খুব বেশী সময় আপনাদের মাঝে থাকবো না; তবে যাওয়ার আগে আমার জীবনের কিছু কথা আপনাদের বলে যেতে চাই। আমি কতক্ষন লিখতে পারবো সেটা সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই; যখন তখন আমার লেখা থেমে যেতে পারে। হয়তো লেখাটা শেষ করতে পারবো না; তাই খুব সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি।

কিভাবে গুছিয়ে লিখতে হয় আমি তা জানিনা; হাতের লেখাও তেমন ভালো না।
তবুও; আমাকে এড়িয়ে যাবেন না। আমার মতন আর কারো জীবন এভাবে ধ্বংস হতে দেবেন না দয়া করে।

আমি আয়েশা; অবশ্য আমাকে গোনায় ধরার মতন কেউ আমি নই। আমি অতি সাধারন একটা মেয়ে। আপন ২ বোনের মাঝে আমি ছোট। আমাদের বাবা মাড়া গিয়েছিলেন আমরা ছোট থাকতেই। আমাদের মা এরপর আরও একটা বিয়ে করেছিলেন; সেই ঘরে আমাদের আরেকটা ছোট বোন আছে।

মা-সৎ বাবা বেঁচে থাকতেও আমি আর আমার বোন দুটি আলাদা এতিমখানায় বড় হয়েছি।
আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই; মার সাথে থাকতে চাই কিন্তু আমরা অনেক গরিব। আমার সৎ বাবা মাড়া গেলেন প্রায় ২ বছর হয়ে গেল। আমাদের কপালে তাই কখনোই সুখ নেই; শুধু দুঃখ আর দুঃখ।

এতিমখানায় থেকেও আমি সেখানে কলেজে পড়তাম; লেখাপড়ায় ছিল আমার প্রবল আগ্রহ। পড়তাম বললাম কারন এখন আমাকে আর পড়তে দেয়া হয়না। সেই এতিমখানায় আমার আর ঠাই নেই; কোথাও আমার ঠাই নেই। কেন নেই সেটাই আপনাদের বলতে চাই।

প্রায় ১ বছর আগের এক সকালে হোস্টেল সুপার ম্যাম আমাদের সবাইকে একসাথে ডাকলেন। তিনি বললেন আগামীকাল সকালে নাকি আমাদের জন্য এক বিশেষ দিন। সবাইকে সকাল সকাল গোসল করে সবচাইতে ভালো জামা পড়ে সেজেগুজে থাকতে বললেন। আমরা মেয়েরা কানাঘুষা করলাম সারাদিন। কি এমন বিশেষ দিন হতে পারে সেটা নিয়ে একেক জন একেকটা অনুমান করতে লাগলো।
আমি অনুমান করলাম কাল হয়তো কোন ধনী লোক আমাদের একটা গরু না হলে অন্তত একটা খাসী উপহার দেবেন; অনেকদিন হয়ে গেল ফার্মের সাদা মুরগি ছাড়া অন্য কোন মাংস খাওয়া হয়না।
সেদিন সবাইকে সকাল সকাল উঠিয়ে দিলেন সুপার ম্যাম। গোসল করে সুন্দর করে সেজে গুঁজে থাকতে বললেন। গরু-খাসি পেতে হলে সাজা কেন লাগবে সেটা বুঝতে পারলাম না।
ঘন্টা খানেক পর আমাদের ডাইনিং হলে যেতে বলা হল।
হলে গিয়ে দেখলাম আগে থেকেই অনেকে সেখানে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমাকেও লাইনে দাড়াতে বলা হল; আমি দাঁড়ালাম।

মেঝে পর্যন্ত লম্বা সাদা জুব্বা আর মাথায় দাবার কোর্টের মতন নক্সা করা একটা রুমাল বাধা একজন লোক একজন একজন করে সবার সামনে যাচ্ছেন; ভালো করে দেখছেন মেয়েদের। অনেক বেশী অবাক হলাম। এরকম লাইনে এর আগেও আমরা বহুবার দাঁড়িয়েছি। কিন্তু সেটা যখন আমরা অনেক ছোট ছিলাম তখন। এখনো এতিমখানার ছোট বাচ্চাদের দত্তক নিতে মানুষ আসে; তখন ছোটরা এভাবে লাইনে দাড়ায়; বাচ্চাদের মধ্যে থেকে যাকে পছন্দ হয় তাকে তারা দত্তক নেয়।
কিন্তু এখানে আজকে সব বড় মেয়েরা; হচ্ছেটা কি এখানে?

আমরা সেদিন কোন গরু-খাসী এমনকি একটা মুরগীও পাইনি। ওই লোক আমাদের মধ্যে থেকে কাউকে দত্তকও নেননি। আমরা সবাই এখনো আছি। তবে উনি এসেছিলেন কেন? রহস্যটা রহস্যই থাকল; বিষয়টা আমরা সবাই ২ দিন পরেই ভুলে গেলাম।

তৃতীয় দিন মা আর আমার ছোট বোন এতিমখানায় এলেন; আমি ভাবলাম আমার ছোট বোনটাকেও মনেহয় এখানে দিয়ে যাবেন মা। আনন্দিতই হলাম; ছোট বোনটাকে অনেক ভালোবাসি; ওর জন্য আমার সবসময় পেট পোড়ে।
মা বের হয়ে আমাকে আমার জামা কাপড় গুছিয়ে নিতে বললেন। এখানে নাকি আর থাকা লাগবে না আমার।
কি সর্বনাশা কথা; আমার কলেজের কি হবে?
মাকে জিজ্ঞেস করলাম সে কথা। মা কিছু বললেন না।
আমরা সেদিন বাড়ি চলে গেলাম।

বাড়ি ফিরে মার কথা শুনে তো আমার বিশ্বাস হতে চাচ্ছেনা; ওই জুব্বা পড়া লোক এসেছিলেন আমাদের মধ্যে থেকে একজনকে বিয়ে করতে। ওই লোকের নাকি আমাকে পছন্দ হয়েছে। সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না; এতিমখানা থেকে কেউ বিয়ে করে?
ওই লোক নাকি অনেক বড়লোক; মিডল ইস্টে থাকে। এতো বড়লোক মানুষ তবে আমাকে বিয়ে করতে চান কোন দুঃখে? আর ওনার বয়স তো আমার বাবার বয়সের চাইতেও বেশী; তবে আমার মতন মাত্র কলেজে পড়া একটা মেয়েকে তার বিয়ে করতে চাওয়ার কারন কি?
কলেজের কথা বলতে মনে পড়লো; আমি তো আরও পড়াশুনা করতে চাই। নিজে পায়ে দাড়াতে চাই। মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই। আমি এখনো বিয়ে করতে চাইনা।

১ সপ্তাহের মধ্যেই আমার বিয়ে হয়ে গেল।
এর মাঝে আমি একবার আমার এতিমখানায় গিয়েছিলাম; ম্যাডাম-স্যারদের সাথে আমার লেখাপড়া আর বিয়ে নিয়ে কথা বলতে। তারা বলেছেন ওই লোক নাকি অনেক ভালো মানুষ। সে আমাকে বিয়ের পর লেখাপড়া করতে দেবেন। ম্যাডাম-স্যারদের কথায় আর তারা আমাকে বুঝানোর কারনেই আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।

বিয়ের পর আমার স্বামী আমাকে তার বাসায় নিয়ে জান নি; বিয়েটাও হয়েছে ঘরোয়া ভাবে। গায়ে হলুদ হলোনা; মানুষ খাওয়ানো হলোনা; এ কেমন বিয়ে? ২০ মিনিটেই বিয়ে হয়ে গেল; আর আমার স্বামী আমাদের বাসায় আসার ১ ঘণ্টার মধ্যেই আমাকে নিয়ে তিনি কক্সবাজার চলে এলেন।
কক্সবাজারে নাকি সমুদ্র আছে পাহাড় আছে। এখানে প্রায় ২৫ দিন ছিলাম; কিন্তু সমুদ্র কিংবা পাহাড়ের দেখা আমি পাইনি।

ওই লোক আমার সাথে প্রতিদিন দিনে ৩-৪ বার জোর করে সহবাস করতো। আমার অনেক কষ্ট হত; চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে হত। তিনি আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে রাখতেন। আমার চাইতে ৩ গুন বয়সী একজন কুৎসিত লোকটা যখন আমার উপরে উঠে পরিশ্রমে ঘামতেন তখন আমার দুঃখে কষ্টে সাগরে ঝাঁপিয়ে কিংবা পাহাড় থেকে লাফিয়ে মড়ে যেতে ইচ্ছা করতো।
নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দিতাম; মেনে নেয়ার চেষ্টা করতাম যে এই লোকটা আমার স্বামী। সারা জীবন এর সাথেই কাটাতে হবে। ধর্ম স্যারের কাছে শুনেছিলাম জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে আল্লাহ নিজ হাতে লিখে দেন। আমার জন্য আল্লাহ এই লোককেই লিখে দিয়েছেন চিন্তা করে নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম।

লোকটা আমার সাথে এখন পর্যন্ত কোন কথা বলেন নি; বেশীরভাগ সময় তিনি বাইরেই থাকেন। আমি হোটেলের রুমে একা একা বসে থাকি। যখন তিনি আসেন তখন শুধুই সেক্স করেন; কোন কথা বলেন না। তিনি তো আমার স্বামী; আমার সাথে কি তার কথা বলা উচিৎ ছিল না? অন্তত আয়েশা তুমি কেমন আছ; কিংবা ভাত খেয়েছ। সে কিছুই বলেনা। সে আমার নাম জানে কিনা সেটাও এখন সন্দেহ হচ্ছে আমার।

একদিন তার দেয়া ওষুধ খাইনি বলে অশান্তির শুরু হল। কেন আমি ওষুধ খাবো জিজ্ঞেস করলাম। সে যে উত্তর দিলো তাতে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। এতো টাকা খরচ করে ৪-৫ দিন মাসিকের কারনে সহবাস থেকে বিরতি সে চায়না বলেই এই ওষুধ। তার হাতে নাকি বেশী সময় নেই; টাকা উশুল করতে হবে।

সেদিন আমি তার মোবাইল থেকে আমার মাকে ফোন করলাম। যে ছেলেটা খাবার দিয়ে যায় তার কাছ থেকে হোটেলের ঠিকানা নিয়ে রেখেছিলাম। মা এলেন ২ দিন পর। মার সাথে লোকটার যে ব্যাবহার করলেন তা শাশুড়ি তো দূরে থাক রাস্তার কুকুরের সাথেও সেই আচরন কেউ করেনা।
সেদিন জানতে পারলাম আমাকে বিয়ে করার জন্য এতিমখানায় সে ২ লাখ আর আমার মাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন নগত। আমাকে কি তিনি তবে বিয়ে করেছিলেন নাকি কিনেছিলেন সেই প্রশ্নটা মনে উকি দিলো কয়েকবার। স্ত্রীর সাথে স্বামী যা ইচ্ছা করতে পারে; মা এখানে কি বলবে? তাই তিনি চলে গেলেন। দিনে ৩-৪ বার তার কোমরের অত্যাচারের সাথে নিয়ম করে মাড়ের অত্যাচার শুরু হল। প্রতিদিন মাড় খাওয়া আর বিছানায় লাশের মতন শুয়ে থাকতে থাকতে নিজের উপরেই ঘৃণা জন্মাতে শুরু করলো।

অবশেষে লোকটা আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেল। সেখানে তার মা আর তালাকপ্রাপ্ত একজন বোন আছেন। মনে মনে ভাবলাম, এখানে হয়তো আমাকে আর কোন অত্যাচার সহ্য করতে হবেনা।

ওই লোকের অত্যাচার আসলেই থেমে গিয়েছিলো; কারন এর ২ দিন পরই তিনি বিদেশ চলে গেলেন।
শাশুড়ি আর ননদের সাথে ভাবলাম এবার শান্তিতেই থাকা যাবে।
কিন্তু সেই সুখ আমার কপালে নেই। আমি কি ঘরের বউ নাকি ঘরের কাজের লোক সেটা নিয়ে সন্দেহ হতে শুরু করলো। আগে শুধু স্বামী মাড়তো; এখন শাশুড়ি মাড়ে ননদ মাড়ে। কথায় কথায় মাড়ে। সারাদিন কাজ করি; ধোয়া কাপড় আবার ধোয়ায়। সব কাজ শেষ হয়ে গেলে আগের করা কাজ আবার করতে বলে, দিনে ৫-৭ বার ঘর ঝাড়ু আর মুছতে বলে। সব আমি মুখ বুজে করে যাই।

আমি শাশুড়ির সাথে আমার কলেজে যাওয়া বিষয়ে কথা বলি। তিনি বলেন তার ছেলের সাথে কথা বলতে। জানতে পারি আর ১ মাস পরেই সে দেশে ফিরবে; আমি আশায় বুক বাধি।
হয়তো সে ফিরে এসে আমাকে কলেজে যেতে দেবে; আমি আবার লেখাপড়া করবো। শিখবো, জানবো; শিক্ষিত হব।

৩ দিন পর বিদেশ থেকে ফোন আসে; তিনি ফোন করেছেন। আমাকে চাচ্ছেন। এই প্রথম তিনি ফোন করে আমাকে চাইলেন; আমি অনেক খুশী হলাম। দৌড়ে এসে ফোন ধরলাম। তিনি তো নেই ফোনের ওপাশে; অন্য একজন। তিনি যা বললেন আমি শুনে পাথর হয়ে গেলাম। যিনি কথা বলছেন তিনি একজন ইমাম; আমাকে নাকি ওমর তালাক দিতে চায়। ওমর আমার স্বামীর নাম; ফোনেই আমাকে ৩ তালাক দিলেন। ইমাম সাহেব বললেন কিছুদিনের মধ্যেই নাকি আমার কাছে তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়া হবে। আমি ফোনটা কান থেকে নামাতেও ভুলে গেলাম। আমার শাশুড়ি আমার কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিলেন।
এর ২-৩ দিন পর একটি তালাকনামার কাগজ ধড়িয়ে দিয়ে আমাকে এতিমখানায় পাঠিয়ে দেয়া হল।

এতিমখানায় প্রায় ১৫ দিন হতে চললো; আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি এই কয়দিন। আমি যেন সেখানে বন্দী। আমি ভাবলাম আমি হয়তো আবার কলেজে যেতে পারবো। কিন্তু আমার সাথে তো কেউ কথাই বলে না। আমি হেড ম্যামের অফিসে গেলাম। তিনি বললেন আমাকে কলেজে যেতে দেয়া যাবে না। এমনকি আমাকে নাকি এখানে থাকতেও দেয়া হবে না। বিবাহিত মেয়েদের নাকি এখানে থাকতে দেয়ার নিয়ম নেই। আমার মা এলেন তখন। আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছিলাম।

আমাকে এতিমখানা থেকে মার সাথে চলে আসতে হল। আমি ঘরের বাইরে যাইনা। তালাক প্রাপ্ত মেয়ের চাইতে অবহেলিত আর ঘৃণার পাত্র সম্ভবত বেশ্যারাও নয়। আমি কি এমন পাপ করলাম যে সমাজের চোখে আমি বেশ্যার চাইতেও ঘৃণ্য?
বসে বসে আমি অনেক ভাবলাম। আমার তো কোন দোষ নেই। এতিমখানার লোকজন টাকার জন্য আমাকে ওমরের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন; এখন আমাকে যদি ওমর তালাক দেয় তবে আমার দোষ কোথায়? আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আমার দোষ জানতে এতিমখানায় যাবো।

পরদিন আমি রওনা হলাম; এবং সম্ভবত সেদিন বাসে না চড়লে আমার জীবনে অনেক ঘটনাই বাকি রয়ে যেত। বাসে আমার সাথে পরিচয় হয় জ্যোতি আপুর সাথে। তিনি একজন সমাজকর্মী। আমি তাকে সব খুলে বললাম। তিনি ভুরু কুঞ্চিত করে খুব মনোযোগ দিয়ে আমার সব কথা শুনলেন। সব শুনে তিনি আমার সাথে এতিমখানায় যেতে চাইলেন। আমি তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলাম।

এর পরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে গেল। আমি আসলে কি হচ্ছে কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলাম না। এতিমখানা থেকে জানানো হল আমাকে ওমরের সাথে মুতাহ বিয়ে দেয়া হয়েছিলো। বিয়ের সময় আমার মাকে যে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিলো সেটাই নাকি মুতাহ বিয়ের টাকা। মুতাহ বিয়ে কি জিনিস আমার জানা ছিল না। যতটুকু বুঝলাম টাকার বিনিময়ে অল্প কিছু সময়ের জন্য ওমর আমাকে বিয়ে করেছিল। এটাকে কি বিয়ে বলে? আসলেই তো; বেশ্যা আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি রইলো? তিনি আমার সাথে যা করলেন তা কি ধর্ষণ নাকি স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র মিলন?
আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি; এতিমখানার ইমাম আমাকে কোরআন-হাদিস খুলে দেখালেন যে সেখানে আসলেই মুতাহ বিয়ের নামে নারী সম্ভোগের জন্য আল্লা-নবী পুরুষদের জন্য কিছু অভিনব আয়াত লিখে দিয়েছেন। এর আগেও নাকি অনেক মেয়েকে তারা মুতাহ বিয়ে দিয়েছেন; যারা বিয়ে করে মেয়েদের নিয়ে যায় তারা এতিমখানায় মোটা অঙ্কের টাকা দান করে। সেই লোভেই তারা আমাকে ওমরের কাছে বিক্রি করেছিল।

বিক্রি ই তো। জ্যোতি আপু সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন এর পরের দিন। এতিমখানায় সেবার নামে কি ব্যাবসা চলছে সেটা সকলকে জানানো তার কর্তব্য মনে করলেন।
সাংবাদিকদের আমি বললাম যে আমাকে বিক্রি করা হয়েছে। আমি বিচার চাইলাম।
যে কোরআনে মেয়েদের এভাবে বিক্রি করার কথা লেখা আছে সেই কোরআনে আমি থুঃথুঃ দেই বলেও জোর গলায় চিৎকার করলাম।

সেই খবর প্রচারিত হল; ছাপা হল।
কি থেকে কি হল জানিনা; আমাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল।
আমার ফাঁসী চেয়ে নাকি হাফাজতে ইসলাম নামের একদল লোক আন্দোলন করছেন বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে।
শুনেছিলাম আমার নামে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কোরআন অবমাননা করার অভিযোগে ব্লাসফেমি আইনে মামলা হয়েছিলো।
জ্যোতি আপু দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন খুব; তিনি আমাকে সাহায্য করতে এসে উলটো ঝামেলায় ফেলার জন্য অনেক বার দুঃখ প্রকাশ করলেন।
কিছুদিন পর তিনিও আসা বন্ধ করে দিলেন। পরে জেনেছিলাম তিনি দেখা করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাকে আমার সাথে দেখা করতে দেয়নি পুলিশ।
হাজতের চার দেয়ালের মাঝে আমি আকাশ খুঁজি; অন্য কয়েদীরাও আমাকে খুন করতে চায়। আমি নাকি পাপী; আমি আল্লার বানীতে থুঃথুঃ দেয়ার কথা বলেছি।

কিন্তু আমার দোষটা কোথায়?
যারা অবৈধ অনৈতিক নারী সম্ভোগকে বৈধ করতে আয়াত লিখে তা আল্লাহর নামে প্রচার করতে পারে তাদের মুখে থুঃ থুঃ দেয়া কি অপরাধ?
এই কোরআন যে লিখেছেন তিনি আল্লাহ হতে পারেন না; তিনি একজন পুরুষ যিনি অবাধে নারীদের দেহ ভোগের জন্য এইসব লিখেছেন। যিনি নিজে মুতাহ বিবাহ করেছেন এবং অন্যদের করতে উৎসাহিত করেছেন তিনিও কোন ভাবেই নবী হতে পারেন না। আমি আজীবন জানতাম এবং বিশ্বাস করতাম আমাদের নবী শ্রেষ্ঠতম মানব; কিন্তু আমি এখন আর সেটা বিশ্বাস করিনা।

আমার বিচার হল; আদালত আমাকে ফাঁসীর আদেশ দিলেন ধর্মানুভুতিতে আঘাতের অভিযোগে। আজ আমার ফাঁসী। আমার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আমাকে একটা খাতা আর একটা কলম দেয়া হয়েছে। আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার পর এই খাতাটা জ্যোতি আপুকে দেয়া হবে। আমি জানিনা এই চিঠি তিনি পাবেন কিনা; আপনাদের কাছে পৌঁছাবে কিনা আমার কথা।

আর বেশী সময় নেই; মৃত্যু ঘণ্টা শুনতে পাচ্ছি।
আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই; আমার কি অপরাধ ছিল? আমি তো সহজ সরল সাধারন একটা জীবন কাটাচ্ছিলাম। ধর্মের নামে আমাকে ধর্ষণ করা হল; বিক্রি করা হল। আমি এর প্রতিবাদ করলাম; প্রতিবাদ করা কি অপরাধ?
উহু প্রতিবাদ করা অপরাধ নয়; সম্ভবত আল্লাহ আর তার নবীদের অবিচার অনাচারের প্রতিবাদ করা অপরাধ।
খুব জানতে ইচ্ছে হয়; কেউ মুতাহ বিয়ের মতন একটা জিনিস প্রচার করে কোন বিবেকে? যারা কোরআন হাদিসে মুতাহ বিয়ে বৈধ করেছে মানুষ তাদের শ্রদ্ধাইবা করে কোন বিবেকে?

পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি; আমার ফাঁসীর প্রহর ঘনিয়ে এসেছে।
ধর্মের মুলা দেখিয়ে নারীদের অবমাননা বন্ধ করুন; সময় এসেছে কোরআন হাদিস সংশোধনের। সময় এসেছে আজব এই ব্লাসফেমি আইন বিলুপ্তির; যেখানে ধর্মের নামে মেয়েদের ধর্ষণ করা যায় কিন্তু সেই ধর্ষণের প্রতিবাদ করা যায়না।
নারী অবমাননার চাইতে আল্লাহ-নবীর অবমাননা কখনোই বড় হতে পারেনা।
মানবতার স্বার্থে এদের বিলুপ্ত করুন।

তালা খোলার আওয়াজ পাচ্ছি; কিছুক্ষন পরেই আমার ফাঁসী।
আমার চিঠিটি ফুরলো; জীবন প্রদীপটি নিভিলো।