ভারতের ২০১৪ এর এই নির্বাচন এবং নির্বাচনে মোদির ল্যান্ড স্লাইড বিজয়, ইতিহাসের একটা টার্নিং পয়েন্ট। প্রশ্ন এটাই-এই ফলাফল কি সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেবে? কারন মোদিকে কোন ভারতীয় মুসলিম ভোট দেয় নি। উনি সম্পূর্ন হিন্দুভোটের “জোটবদ্ধকরন” ফর্মুলাতে জিতলেন। এটা ঠিক সাম্প্রদায়িক মেরুকরন বলবো না-কারন উনি হিন্দুত্বর ভিত্তিতে ভোট চান নি। উন্নয়নের ভিত্তিতেই চেয়েছেন। উনার প্রচারকরা সফল ভাবে এটা প্রচার করতে পেরেছে উনি “বিকাশ পুরুষ”। গুজরাতে উনি উন্নয়ন এনেছেন তাই সারা দেশে উন্নয়ন আনবেন-এই প্রত্যাশাতেই অধিকাংশ হিন্দুরা তাকে ভোট দিয়েছে। যদিও ওদের “বেস” এখনো কট্টর হিন্দুত্বপন্থী স্বেচ্ছাসেবীরা। বিজয়ের খবর আসার সাথে সাথেই রাজনাথ প্রথমেই তাদের সমর্থকদের উদ্দেশে টিভিতে জানালেন কোন ভাবেই বিজয় উল্লাস মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে না যায় বা তাদের ক্ষুণ্ন না করে।

ভারতের ধর্মনিরেপেক্ষ পার্টি বা রাজনীতি বলে কিছু নেই। কংগ্রেস , সপা, সিপিএম এদের ভ্রান্ত ধর্ম নিরেপেক্ষ নীতি একদিন বিজেপিকে মহীরুহ করতই। দুর্নীতি, লাগাম ছারা খাদ্যদ্রব্যের দাম, চাকরির খোঁজ নেই- লোকে বিরক্ত হয়ে মোদির মতন একনায়কের প্রতি আশা ব্যক্ত করত একদিন না একদিন। উত্তর প্রদেশে জাতপাতের রাজনীতি করা পার্টি বহুজন সমাজবাদি সম্পূর্ন উড়ে গেল। কারন লোকে বুঝছে এই ধরনের জাত পাত ধর্মের রাজনীতি করা লোকেরা চোর ছারা কিছু না।

মোদি ধর্মের রাজনীতি করা লোক না ? আর এস এস এর হিন্দুত্ব থেকেই মোদির উত্থান। ২০০২ সালের গুজরাতে দাঙ্গা মোদিকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এর পরপরই মোদি দ্রুত বোঝেন, সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি নেমে যাবার সিঁড়ি। দ্রুত ভোল বদলিয়ে গুজরাতের উন্নয়নে মন দেন এবং যার ফল পাচ্ছেন আজ।

ভারতের রাজনীতিতে সম্পূর্ন অপ্রসাঙ্গিক হয়ে গেল বামেরা। পশ্চিম বঙ্গের ৪২ টা সিটের মধ্যে মোটে ৩ টে পাচ্ছে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত। ভারতে বামশক্তি দরকার। আশা এই যে নতুন বাম শক্তি অরভিন্দ কেজরিওলের আপের হাত ধরে উঠে আসছে যদিও এই নির্বাচনে, তাদের ফল ও আশাব্যাঞ্জক না। কিন্ত এটা পরিস্কার কংগ্রেস এবং বামেদের ভোট আস্তে আস্তে আম আদমি পার্টির হাতে জমা হচ্ছে। এটা হবে আমি বহুদিন থেকেই লিখে আসছিলাম-কারন ভারতীয় বামেরা এখনো সোভিয়েত ইউনিয়ানের গন্ধ নিজেদের গা থেকে নামাতে পারে নি।

কংগ্রেসও ভারতে অপ্রসাঙ্গিক হয়ে গেল। আগামী অতীতে হয়ত দেখব আআপ এবং বিজেপি ভারতের দুই বৃহত্তম শক্তি হিসাবে উঠে আসছে। সাথে সাথে স্থানীয় পার্টিগুলিও থাকবে ফেডারালিজমের জন্যে। এটা হবেই আগামী দুই নির্বাচনে।

মোদি কেমন প্রধানমন্ত্রী হবেন? দেখা যাক। গুজরাতের লোকেরা খুব বেশী অখুশী নয় তাকে নিয়ে। যদি হিন্দুত্বের তাস খেলতে থাকেন, খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাবেন। কারন লোকে তাকে ভোট দিয়েছে অর্থনীতি শুধরাতে। এখানে কি তিনি সফল হবেন? সংঘের চাপ থাকবে তার ওপরে। দেখা যাক। এখুনি কিছু বলা উচিত হবে না। তবে নির্বাচনে উনি হিন্দুত্বের তাস খেলে আসেন নি-এসেছেন অর্থনীতি শুধরাবেন এই আশা দিয়ে।

বাংলাদেশের বি এন পি এর থেকে একটা শিক্ষা নিতে পারে। আলীগের দুর্নীতি ও অনাচারে বাংলাদেশের লোক এত বিরক্ত ছিল, তারা যদি জামাত ছেরে মোদির মতন শুধু দেশের অর্থনীতি , দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন চালাত, আলীগ চলে যেত হিমঘরে।

আশাকরি মোদি বিদেশনীতিতে কোন উগ্রপ্রন্থা নেবেন না। বাংলাদেশের সমস্যাগুলি বুঝবেন। যদিও সে আশা কম। কারন বিদেশনীতিতে হিন্দুত্বের ছাপ থাকবেই। ভুল জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশের ইসলামিক দলগুলিকে অক্সিজেন জোগাতে পারে। আবার এটা ফালতু আশঙ্কাও হতে পারে।

তবে মোদি বাস্তববাদি ক্যামেলিওন । সময় বুঝে বদলাতে জানেন। এটা গুন এবং দোষ। এখন দেখি সামনে কি আছে।