অতঃপর দেখা গেল, সাকুল্যে এ যাবত ১২খানি বই লিখিয়াছি – সকলই বিজ্ঞানের। যৌথ বা একক প্রয়াসে এই ডজনখানেক বিজ্ঞান বিরচিত হইল। দ্বাদশতম গ্রন্থখানির নাম দিয়াছি ‘থাকে শুধু অন্ধকার’; কেন লিখিলাম এই বই? কীভাবে লিখিলাম? শুন দিয়া মন-

প্রথমার অফিসে বিকেল-সন্ধ্যায় কোনো একদিন – জানুয়ারি ২০১৩ হবে। শ্রদ্ধেয় রাজিব নূর কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, “মানুষের ভবিষ্যৎ কী?” এককথায় কি আর উত্তর হয়? যদিও কিছু আংশিক উত্তর আমার অন্যান্য বইতে ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু সেসব বইয়ে উত্তরের দিকে ইঙ্গিত আছে, খসড়া আছে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে আলোচনা নেই। মনে হলো, নতুনতর তথ্য দিয়ে শূধু এই বিষয়েই একটা বই লেখা দরকার। এর কয়েকমাস পর প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম মারা গেলেন। ফার ফিউচার সম্পর্কে তাঁর বইটি জগৎবিখ্যাত। পরিকল্পনাটি দৃঢ়ীভূত হইল – নিকট ও দূর ভবিষ্যত নিয়ে একটা বই লেখন জরুরি।

২০১৪ মেলায় আমার এই দ্বাদশ রচনাখানিই প্রথমে আসছে। নাম দেখে মনে হয়, কবিতা কিংবা উপন্যাসের বই। কিন্তু এটি একেবারেই বিজ্ঞানের বই – তা-ও আবার আমার অল-টাইম-ফেভারিট কসমোলজি নিয়ে। বইটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় মানুষের নিকট-ভবিষ্যতের মহাকাশ যাত্রার প্রস্তুতি ও সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখা, এবং সেই সাথে প্রযুক্তি সভ্যতার ব্যপারগুলোর ওপর একটা সাধারণ আলোচনা করা। এর পরই থাকছে দূর-ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের পরিণতি নিয়ে আলোচনা। মানুষ সহ মহাবিশ্বে আর যেকোনো ধীমান সত্তার চূড়ান্ত পরিণতি নির্ভর করে মহাবিশ্বের গতি-প্রকৃতির উপর। তাই ‘শেষ মানে খোঁজা’ জাতীয় সকল প্রশ্নের আলোচনায় অবধারিত ভাবে আসে মহাবিশ্বের পরিণতি। মানুষের প্রাযুক্তিক কর্মকাণ্ড ও তার ক্রমবিকাশ থেকে নিকট-ভবিষ্যতে তার কী ধরনে পরিবর্তন হতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করা যায়। কিন্তু দূর ভবিষ্যতে তার কেমন রূপ দেখা দিবে, তার প্রযুক্তি কোন স্তরে পৌছবে তা বলা একদমই অসম্ভব। তাই মানুষ সম্পর্কে নিকট-ভবিষ্যতের বেশি কিছু বলা যায় না। অন্যদিকে, মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে তার চূড়ান্ত পরিণতি কেমন হবে তার অনেকখানিই নির্ভর করে তার শুরুর দশার উপর – তার মধ্যে কী পরিমাণ পদার্থ আছে, কী পরিমাণ ডার্ক এনার্জি আছে, ডার্ক ম্যাটারের পরিমাণ কত ইত্যাদির ওপর। কাজেই আমরা যদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারি আর যদি আমাদের ভাল কিছু মডেল থাকে তাহলে আমরা বিশ্বের বর্তমান অবস্থার সাপেক্ষে ভবিষ্যতের একটা রূপরেখা দাঁড় করাতে পারি। এইসব পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা সংক্ষেপে যা বলতে পারি তা হলো – আজ থেকে ১০০ বিলিয়ন বছর পর আমাদের গ্যালাক্সি আর অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি একত্রে মিলে একটা সুপারগ্যালাক্সি হবে, ধীরে ধীরে অন্যান্য গ্যালাক্সি আমাদের দৃষ্টির সীমার বাইরে চলে যাবে, ১০০ ট্রিলিয়ন বছর পর প্রায় সব তারাই নিভে আসবে। আর তখনই একজন ধীমান সত্তা কী করবে? জেবনানন্দকে স্মরি

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার, বনলতা সেন

উপরে যা বললাম, আমার অন্য বইগুলিতে [ মহাকাশের কথা এবং অপূর্ব এই মহাবিশ্ব]

এই আলোচনাগুলো এসেছে স্বল্প পরিসরে। ইতোমধ্যে হাতে কিছু নতুন মেটেরিয়ালও যোগ হলো। ভাবলাম, এই বিষয়ে একটা স্বতন্ত্র বই থাকুক, And there was Light! এমনকি, এই বইয়ের শেষে আসিমভের চমৎকার একটী গল্পও থাকছে পাঠকের উপরিপাওনা হিসেবে। ওঁর ‘দ্য লাস্ট কোশ্চেন’ গল্পটা এই চূড়ান্ত পরিণতি নিয়েই, আর তাই ড. মল্লিকা ধরের অসাধারণ অনুবাদটি লেখিকার অনুমতি নিয়ে এখানে সংযোজিত হলো। আই হোপ, ইউ উইল লাইক ইট অল।

বইটি দিলাম দীর্ঘদিনের সুহৃদ কমরেড ফিরোজ আহমেদকে। বিজ্ঞান সম্পর্কে ওঁর আগ্রহ মৌলিক, আর বরাবরই যেমন হয়ে থাকে, তাঁর সাথে আমার সুতীব্র ঝগড়া হয়ই বন্ধুত্বকে গাঢ়তর করবার লক্ষ্যে। প্রচ্ছদটি করে দিয়েছেন প্রিয় হাজরা বংশীয় সভ্য শিল্পী ‘সব্য’।

থাকে শুধু অন্ধকার
পৃষ্ঠা ১২৮, মূল্য ১২০ টাকা
প্রচ্ছদ সব্যসাচী হাজরা
প্রকাশক – প্রকৃতি পরিচয় (পরিবেশক সংহতি, স্টল#১৩৭)

থাকে শুধু অন্ধকার

:hahahee: