আয়না পড়া, পানি পড়া, বাটি চালান, জাদু-টোনা করা, বান মারা ইত্যাদি ব্যাপারগুলোর নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। এগুলো যুক্তিবাদী মানুষের কাছে প্রবল হাসির জিনিস হলেও অনেকের কাছে গুরুতর সত্য। অনেকে এসবের সুফল ও কুফল হাতেনাতে পেয়ে থাকেন। যেমন, কারো কোনও জিনিস বা টাকা পয়সা হারিয়ে গেল। তখন হারানো জিনস ও হরণকারীকে খুঁজে পেতে আয়না পড়া, চুন পড়া, চাল পড়া ও বাটি চালান খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। চাল পড়া ও চুন পড়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিদেরকে খাওয়ানো হয়। এতে করে দোয়ার কুদরতে দোষী ব্যক্তির গলা থেকে তাৎক্ষণিক রক্ত ঝরতে শুরু করবে অঝোরে। তুলারাশির জাতক জাতিকারা আয়নার ভেতরে দেখতে পাবে চোরের মুখ এবং চুরির সময়কাল, পদ্ধতি ইত্যাদির বৃত্তান্ত ভিডিও চিত্র।

তুলারাশির জাতক জাতিকারা পড়ানো বাটিতে হাত দিলে দোয়ার বরকতে সেই পড়ানো বাটি তাকে চালিত করে নিয়ে যাবে প্রকৃত চোরের কাছে।এতে করে আসল চোর জনসমক্ষে ধরা পড়ে।থানা পুলিশের ঝামেলায় যেতে হয় না মোটেও। তাছাড়া পুলিশ বেশিরভাগ সময়ই নিরপরাধ মানুষকে অযথা হয়রানি করে থাকে।

যেকোনো প্রকার দুরারোগ্য রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য পানি পড়া, মধু পড়ার কোনও বিকল্প নেই। যেমন বাতের ব্যথা, দাঁতের ব্যথা, পেটের ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি। আরোগ্যলাভ তাৎক্ষণিক ও সুনিশ্চিত। মনে কেবল বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন। বিগত জীবনে বহু বহু গ্যালন পানি-পড়া বিছমিল্লাহ বলে আমিও পান করেছি। আমার কথায় আস্থা রাখুন। ফল পাবেন। এছাড়া হাত-ব্যথা, পা-ব্যথা, কোমর-ব্যথা ও মাথাব্যথার জন্য রয়েছে তেল-পড়া।

আরেকটা বিশেষ ধরনের তেল-পড়া রয়েছে নবজাত শিশুদের জন্য। খাঁটি সরিষার তেল পড়া। এই ফলপ্রসূ চিকিৎসা পদ্ধতি আমি নিজ-চোখে উপভোগ করেছি। এক টেবিল চামচ পড়ানো খাঁটি সরিষার তেল নবজাত শিশুকে হাঁ করিয়ে তার কচি মুখের ভেতরে বিছমিল্লাহ সহকারে ঢেলে দিতে হবে। তেলের কঠিন ঝাঁঝে,ও দোয়ার বরকতে ফুলের মতন কোমল শিশুর জিহ্বা, গলা, কণ্ঠনালী দুর্বিষহভাবে জ্বলে উঠবে। আর অসহায়, তেলাক্রান্ত শিশুটি গগনবিদারী চিৎকার করতে থাকবে ঘণ্টাখানেক। তারপর দুর্দশাগ্রস্ত, বিধ্বস্ত শিশুটি ক্লান্ত হয়ে, চোখমুখ খাঁটি সরিষার তেলের মত লাল করে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। এই বিশেষ তেল-পড়া নাকি অনেক গুণে গুণান্বিত। এতে শিশুদের পুষ্টি হয়, শিশুরা বাড়ে ভালো, ঘুমায় ভালো, জ্বালাতন করে না।

মনে করুন, আপনি কারো প্রণয়প্রার্থী। তার চরণতলে মনে মনে আপনার জীবন সঁপে দিয়ে রেখেছেন। গুনগুন করে তার উদ্দেশ্যে গাইছেন, চরণ ধরিতে দিয়ো গো। কিন্তু হায়! যার চরণতলে জীবন সঁপেছেন, যার চরণ ধরার জন্য বেসুরে গাইছেন, তিনি আপনার জীবন মন গান সকলই পায়ে মাড়িয়ে দিয়ে নিঠুরের মতন চলে যান নিশ্চিন্তে।আর যেতে যেতে বলেন, পায়ের তলে নরম ঠেকলো কি? কী করবেন আপনি এই শোচনীয় অবস্থায়? হাল ছেড়ে দেবেন? ধরাশায়ী হয়ে পড়ে থাকবেন? না। পানি-পড়া, পানপড়া বা আতর পড়া আপনার ব্যর্থপ্রেমে সফলতা আনতে পারে। শুধু সাহস করে আপনার প্রাণের প্রার্থিত মানুষকে পানপড়া বা পানি পড়া একটু কৌশলে খাইয়ে দিতে হবে। আর আতর পড়া আপনার নিজের গায়ে মেখে তার চারপাশে সৌরভ ছড়াতে হবে। তিনি সাথে সাথে বিমোহিত হয়ে লায়লি বা মজনু হয়ে আপনার পায়ে এসে লুটিয়ে পড়ে বলবেন, এই চরণকমল যে ধরলুম আর ছাড়বো না।

মনে করুন, এমন কোনো লোক আছে যাকে আপনি দুইচোখে দেখতে পারেন না। সারা-দিবানিশি তার সর্বাঙ্গীণ সর্বনাশ কামনা করেন। তার অনিষ্ট কামনা করে উপাসনালয়গুলোতে টাকাপয়সা, সিন্নি-ফিরনি মানত করেন। নফল এবাদত করে তার উপর লানত বর্ষণ করতে থাকেন। কিন্তু তার এমন ঈশ্বরের প্রাণ যে, সে মরেও না, তার কোনও ক্ষতিও হয় না। উপরন্তু আপনি নফল এবাদত করে সারা হচ্ছেন, উপাসনালয়ে টাকা দিতে দিতে ভিখিরি হয়ে যাচ্ছেন। কী করবেন তখন? এত অল্পতেই নিরাশ হয়ে যাবেন? না। তার জন্য বান মারুন। এক বানেই পটল তুলতে বাধ্য হবে সেই কৈ মাছ। আপনি যদি আওয়ামীলীগ করেন তবে খালেদা জিয়ার জন্য বান মারুন, বিএনপি হলে শেখ হাসিনার জন্য বান মারুন। হরতাল-অবরোধ করে দেশের ক্ষতি করার দরকার পড়বে না মোটেও।

আরো রয়েছে কলম পড়া, বই পড়া। সমাসন্ন পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী যেই কলমগুলোতে লিখবে ও যে বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষা হবে সে বইগুলো পীর, হুজুর বা মৌ-লোভীর কাছ থেকে পড়িয়ে নেওয়া। এই পদ্ধতিতে গেলে পড়াশোনার ঝামেলায় যাবার কোনো দরকার নেই। বই ও কলম পড়িয়ে এনে ফুরফুরে মনে ঘুরতে থাকুন। পরীক্ষায় প্রথমের আগে শূন্য হবেন নিশ্চিতভাবে। আমার নিজের চোখে দেখা। তাছাড়া ভালো ফলাফলের জন্য পরীক্ষার আগে বাসায় এবং মসজিদে মিলাদ-মাহফিল তো অবশ্যই দিতে হবে।

ভালো ছাত্রছাত্রী হবার জন্য আরো অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন জ্ঞানের তাবিজ। এই তাবিজ পরিধানে শুধু ভালো ছাত্রছাত্রী নয়, জ্ঞানী হওয়াও কোনো ব্যাপার না।একটা ঘটনা বলছি। আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। সামনে পরীক্ষা। অংক পরীক্ষার চিন্তায় বুক ঢিপঢিপ করছে। আমার এক বান্ধবী যে আমার চেয়েও বড় গণিতবিদ তার দেখলাম কোনো চিন্তা-চেতনাই নেই পরীক্ষা নিয়ে। কারণ সে দুই টাকা দিয়ে একটি জ্ঞানের তাবিজ কিনে ফেলেছে বাসার সামনের তাবিজ বিক্রেতা থেকে।এই তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে রাখলেই পরীক্ষা ভালো হয়ে যাবে। আমি তাকে অনেক অনুনয়-বিনয় করে বললাম, আমাকে অন্তত একদিনের জন্য তাবিজটা পরতে দে। আমার কাছে দুই টাকা নেই। আমার পাষাণ বান্ধবী আমায় বলল, আটআনা দিলে একদিনের জন্য ভাড়া নিতে পারিস তাবিজটি। বিনে পয়সায় পাবি না। আমি দুইটাকা চুরি করে তাবিজ কিনেছি, তোকে মাগনা দেবো কেন? আমি তার পর দিন আট আনা চুরি করে এনে তাবিজখানা ভাড়া নিয়ে নিলাম একদিনের জন্য। বাড়িতে নিয়ে অতি সাবধানে ভেতরে খুলে দেখলাম। লেখা রয়েছে, হে প্রভু জ্ঞান দাও। আমি সাথে সাথে নকল করে ফেললাম। একটা কাগজে ‘হে প্রভু জ্ঞান দাও, লিখে তাবিজের প্যাকেট কিনে মোম দিয়ে সীলগালা করে সুতো দিয়ে গলায় ঝুলিয়ে দিলাম জ্ঞানের তাবিজ। মনে মনে সারাক্ষণ অধ্যয়ন করতে লাগলাম, হে প্রভু জ্ঞান দাও, হে প্রভু জ্ঞান দাও। কায়মনোবাক্যে একটা বাক্যই কেবল অধ্যয়ন করেছিলাম সেইবার পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে। অংক পরীক্ষার খাতার উপর শুরুতে বড় বড় অক্ষরে লিখে দিয়েছিলাম, হে প্রভু জ্ঞান দাও। ফলাফল হয়েছিল হৃদয়-বিদারক। পরীক্ষার ফলাফলের পরের ফলাফল হয়েছিল ততোধিক হৃদয়-বিদারক।

যদি এমন হয়, বসন্তকাল পেরিয়ে যাচ্ছে তবু কোকিল ডাকছে না। মানে বিবাহের বয়েস চলে যাচ্ছে কিন্তু বিবাহ হচ্ছে না। তখন কী করবেন? হতাশার চাদরে ঢাকবেন না নিজেকে। সাতদিনে বিবাহ হইবার তাবিজ নিন। গলায় বা হাতে পরুন। শুষ্ক মরুতেও বসন্ত চলে আসবে ফুরফুর করে। কোকিল ডাকবে, ফুলে ফলে ভরে যাবে আঙিনা।

আরও কিছু অত্যাধুনিক পড়া আছে উন্নত-বিশ্বে। যেগুলো সম্পর্কে জানবার সৌভাগ্য আমার দেশে থাকা অবস্থায় হয়নি। আমেরিকায় আসায় পর নিত্যনৈমিত্তিক দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের পীর, মৌ-লোভী, হুজুরেরা উন্নত, আধুনিক দেশে এসে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করেছেন। ব্যবসা তাদের জমজমাট। এই ব্যবসা, দোয়া মাহফিল, মিলাদ পড়ানো, ফ্রীতে ফতোয়া দেওয়া ইত্যাদি মানবিক কর্মকাণ্ড করে তাদের একেকজনের কয়েকটা করে বাড়ি এই বিধর্মীদের দেশে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে ইনশাল্লাহ।
পুরুষদের জন্য গেঞ্জি-পড়া, অন্তর্বাস পড়া। মহিলাদের জন্য সকল প্রকার অন্তর্বাস সহ, ব্লাউজ-পড়া, কামিজ পড়া, সায়া পড়া, বোরকা পড়া, কানের দুল পড়া, চুড়ি পড়া, আংটি পড়া, নোলক পড়া ইত্যাদি। বেপর্দা বেদ্বীন দেশগুলোতে এসে অনেক বাঙালি রমণীর চরিত্রও বিদেশিনীদের মত বিগড়ে যায়। তাদের চোখ ও মন সীমা লঙ্ঘন করে। চোখ ও মনের মাধ্যমে তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। পড়ানো পোষাক-পরিচ্ছদ ও গয়না পরিধান করলে শয়তানের কুপ্ররোচনায় প্ররোচিত হওয়ার আশংকা নেই। তাই এখানকার অনেক স্বামীই নিশ্চিন্ত, দ্বীনী দাম্পত্যের জন্য স্ত্রীর ব্যবহারের প্রায় সমস্ত জিনিসই পড়িয়ে আনেন। এতে করে স্ত্রীরা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাজতে ব্রতী হয়। পুরুষের কাপড়চোপড় পড়ানো হয় শুধুমাত্র রোগমুক্তির জন্য। কারণ তাদের সীমা-পরিসীমা নেই লঙ্ঘনের জন্য। একবার আমার এক আত্মীয়ের অসুখ হয়েছিল। তার গেঞ্জি ও অন্তর্বাস পড়িয়ে এনে তাকে পরিধান করানোর সাথে সাথেই সে সুস্থ হয়ে উঠতে লাগল। পাশাপাশি অবশ্যি উন্নতমানের চিকিৎসাও তার করানো হয়েছিল। তবে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো অবদান নেই তা বলাই বাহুল্য। সকল কৃতিত্ব অনিবার্যভাবে গেছে অন্তর্বাস পড়া ও পড়কের উপর। তার পসার বেড়েছে ব্যাপক হারে।

সিদ্ধ পুরুষদের পানি-পড়া বা নিরালায় অন্ধকার-কক্ষে বিশেষ ধরনের আশীর্বাদে অনেক জন্ম-বন্ধ্যা নারীকেই আমরা সন্তানবতী হয়ে সন্তান লাভ করতে দেখেছি। কারণ সিদ্ধ পুরুষদের ফুঁৎকার কিংবা হাতের স্পর্শেও শুক্রাণু থাকে। নইলে সাধারণ মানুষ ও সিদ্ধ পুরুষে পার্থক্য কোথায়? কিন্তু পবিত্র জমজমের পানিতে যে শুক্রাণু আছে এটা কেউ জানতো না আগে।এই অলৌকিক কুদরত আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। আবিষ্কার করেছে আমার এক হিন্দু বান্ধবী। ঘটনা আমার চোখে দেখা। আমার এক হিন্দু বান্ধবীর বাচ্চা হচ্ছিল না বহু বছর। সে কারো কাছে শুনেছে যে, খাস দিলে জমজমের পানি পান করবার সময় আল্লার কাছে যা প্রার্থনা করা হয় আল্লা তা-ই দান করেন মুক্তহস্তে। সে একজনের কাছ থেকে জমজমের পানি সংগ্রহ করে, ক্ষণিকের তরে কপালের সিঁদুর মুছে, হাতের শাখা খুলে কেবলা-মুখী হয়ে বিছমিল্লাহ বলে খাস দিলে সেই পবিত্র পানি পান করার সময় বলল, হে আল্লা সন্তান দাও। আল্লা সাথে সাথেই দিয়ে দিলেন শুক্রাণু। সে গর্ভবতী হয়ে পড়ল।সে অনেকদিন যাবত সন্তান লাভ করার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন ছিল। তবে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে কোনোই অবদান নেই তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সে তখনই নিয়ত করে ফেলল, ছহী-ছালামতে যদি সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হয় তবে সে একজন খাস মুমিন, অথচ পবিত্র হজ্জে যেতে সংগতিহীন বান্দাকে পবিত্র হজ্জব্রত পালন করতে সকল ব্যয়ভার অতি সানন্দ-চিত্তে বহন করবে, এবং বিশাল এক কনটেইনার পবিত্র জমজমের পানি আনাবে তার মাধ্যমে। যা পান করে যেকোনো বন্ধ্যা রমণী তার মত মা হবার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। যথা সময়ে তার সন্তান ছহী-ছালামতে ভূমিষ্ঠ হলো। সে তার নিয়ত পালন করলো অক্ষরে অক্ষরে। একজন দীন দ্বীনী ব্যক্তিকে পবিত্র হজ্জে পাঠালো সম্পূর্ণ তার নিজের খরচে। জমজমের পানিও আনিয়েছে, বিতরণ করছে বন্ধ্যাদের মধ্যে। তবে হৃদয়-বিদারক ব্যাপার হচ্ছে, ইছলামের ও জমজম কুয়ার পানির এতো বড় সুফল ভোগের পরও সেই নাফরমান আজও ইছলাম গ্রহণ করেনি। আফছোছ!
একটা প্রশ্ন আমার দুষ্টু মনে উঁকি দেয়। তা হচ্ছে, সিদ্ধ পুরুষদের আশীর্বাদ বা জমজমের পানি পান করার মাধ্যমে যে সকল শিশু জন্ম লাভ করে তাদের জন্মদাতা আসলে কে?