এ দেশে কেউ সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু নয়। সবাই দেশের নাগরিক এবং প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের তথা সরকারের দায়িত্ব। এইসব উদ্ভূত শব্দের মাধ্যমে কেউ কেউ রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে বলে আমি ধারণা করছি। সেই সাথে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আপনারা বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন।

‘সংখ্যালঘু’ একটি সাম্প্রদায়িক শব্দ। এই শব্দটি না বলে/লিখে বরং একটু সহজ দৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যাবে আসলে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ এবং মানুষ। সমস্যাটা হচ্ছে আমরা বেশির ভাগ কোনো দল/গোত্র/পরিবার/ধর্ম/জাতিকে আগেই নিজেকে স্থাপণ করে নিয়েছি বলে কোনো মানুষ আক্রান্ত হলে তাকে সংখ্যালঘু/মুসলমান/বাঙালি/আস্তিক/নাস্তিক/বিধর্মী/পুলিশ ইত্যাদি বলে থাকি। যা মানবতার জন্য ভীষণ অবমাননাকর। এজন্যই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর ‘কাণ্ডারী হুশিয়ার’ কবিতায় বলেছেন-
‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞেসে কোন জন?
কান্ডারী! বল,ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র!’

দেশে বরাবরের মতো এবারো নির্বাচন পরবর্তি সহিংষুতার বড়ো ক্ষেত্র হিশেবে চিহ্নিত হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাঙালিদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার মতো পাশবিক কর্ম। এই কাজ কারা করছে সে বিষয়ে আমরা স্পষ্ট না হলেও এতোটুকু বুঝতে পারি যে এটা নির্বাচন ও ক্ষমতা কাড়াকাড়ির ফসল এবং সেই সাথে দেশের জনমনে ভীতির সঞ্চার করার জন্য সহজলভ্য এই অস্ত্র ব্যবহার করছে আমাদের দেশের রাজনৈতিক লোকজন।

যাহোক, আমি নিরীহ মানুষ। রাজনীতির ‘র’ও বুঝি না এবং সে বিষয়ে উর্বর মস্তিষ্কজাত কিছু আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টাও করছি না। এখানে কেবল বাঙালিকে এতোটুকু মনে করিয়ে দেয়ার তাগিদ বোধ থেকে লিখছি যে, আমাদের(বাঙলাদেশের ভূখণ্ডের) পুরোনো ইতিহাসে দেখা যায় এখানে আর্য্য-অনার্য্য পরবর্তিতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠি পারস্পারিক সহাবস্থানে কোনো ধরনের জাতিগত সংঘাত ছাড়াই বসবাস করতো। কিন্তু ১৯০৫ থেকে সে অবস্থার ক্রম অবনতির ফলে আজকের পরিণতি। এটা আমাদের বুদ্ধিজীবী মহল বেশ ভালো ভাবেই জানেন বলে আমার ধারনা। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণ হেতু তাঁদের মুখে কুলুপ আঁটা। আশাকরি, তাঁদের মুখের লাগাম শিঘ্রই খুলবে এবং এই বিষয়ে লিখে আমাদের সচেতন করে তুলবেন।

আবারো সবাইকে সচেতন করে বলছি, ‘সংখ্যালঘু’ একটি সাম্প্রদায়িক শব্দ। আপনি যতোবার এই শব্দ উচ্চারণ করবেন ততোবার ঐ মানুষগুলোকে অবমাননা করবেন এবং সাম্প্রদায়িক মানসিকতার ব্যক্তিদের সহয়তা করবেন অবচেতনে। আসলে সবাই এই দেশের নাগরিক এবং প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের তথা সরকারের দায়িত্ব বলে জানি। সেই স্বল্প জানা থেকে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত এই সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্নদের কাছ থেকে দেশের মানুষকে তথা দেশকে বাঁচান। নাহলে দেশ থেকে কলহ/সংঘাত নির্মূল করা সম্ভব হবে না এবং আমাদের সমস্ত রূপকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: যেকোনো মৌলবাদীতার মতো সাম্প্রদায়িকতা বর্জনীয়। উগ্রবাদীতা কোনো ভালো ফল আনায়ন করতে পারে না, সেটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। আশাকরি, বাঙালি সেটা বুঝতে পারবে এবং একদিন সমস্ত সংঘর্ষ বিলুপ্ত হয়ে শান্তিপূর্ণ হবে পৃথিবী।