২০০৮ এর নির্বাচনের আগের রাতে কথা হচ্ছিল এক ফুচকা বিক্রেতার সাথে।নীচু স্বরে সে আমাকে বলল,”ভাই এবার তো জোয়ার উঠে গ্যাছে”।
বললাম”কিসের জোয়ার”। আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল”নৌকা নৌকা”।পরদিন ঠিকই নৌকার জোয়ার দেখেছিলাম।
তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন।আগামী ৫ তারিখের নির্বাচন নিয়ে গণতন্ত্রপ্রেমীরা শঙ্কিত।গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত,গণতন্ত্র মানে সর্বোকৃষ্ট শাসন।সেই সাধের গণতন্ত্রকে ঢিল মেরে চিলে কোটায় তুলো দেয়া হচ্ছে।শঙ্কা তো জাগবেই।

২০০৮ এ ফিরে যায়।সেবার মানুষ ব্যাপক হারে লীগকে ভোট দিয়েছিল।প্রশ্ন হল কেন দিয়েছিল?সহজ করে বললে বিম্পি জামাতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি পেতে, অনেকে মনেকরে লীগের মিষ্টি কথায় গলে গিয়ে।তবে মিষ্টি কথায় যে চিড়ি ভেজেনা না তার প্রমাণ ৫টি সিটি করপোরশনে লীগের হার।গণকন্ত্রপ্রেমীদের ভাষায় এর মাধ্যমে, লীগের দুর্নিতি,অপশাসনের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে জনগণ।তবে সন্দেহবাদীদের ভাষায়, জনণগ বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এ চিড়িয়া সে চিড়িয়া না।

অঘোম গণতন্ত্রের যেহেতু কোন বিকল্প নেই,তাই আমাদেরকে গণতান্ত্রিক হতেই হবে। এখন সবাই গণতান্ত্রিক হয়ে গিয়ে, যদি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করা হয়,তাহলে ফলাফল কি হবে?আমি নিশ্চিত বিম্পি জামাত ৯০ ভাগ সিট নিয়ে জিতবে।প্রশ্ন হল কেন জিতবে?
আমার পরিচিত সেই ফুচকা বিক্রেতার সশব্দ জবাব,”ভাই,এই সরকার সাঈদি সাহেবের মত লোকরে ফাঁসি দিসে!!! হাজারে হাজারে আলেম মারছে।”
লীগের সীমাহীন দুর্নিতি, পদ্মা কেলেঙ্কারী,শেয়ার কেলেঙ্কারী এসব যেন কোন ব্যাপারই না।

অবস্থা দৃষ্টে এটাও বোঝা যায় ক্ষমতায় থেকে গেল,লীগের এসমস্ত আর্থিক কেলেঙ্কারী অব্যাহত থাকবে।
কেলেঙ্কারীতে ডুবন্ত থাকার পরও এই সরকারের সাফল্যের নানা ফিরিস্তিও আছে। সেসব এড়িয়ে গিয়েও ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আগের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল।নেই ৬৪ জেলায় একসঙ্গে বোমা পড়ার শঙ্কা।তবে গণতন্ত্র যাবার শঙ্কা তো আছে।

তাই বলতেই হবে এই সরকার ব্যার্থ। এখন বলাই যায় এই সরকারের কেলেঙ্কারীর তো কমতি নেই, সঙ্গে জনগণ ভোটও দেবে না, তারপরও সন্দেহবাজদের বিম্পি জামাতে এত এলার্জি কেন? কি এমন ক্ষতি হবে যদি আমাদের যুবরাজ এসে দেশের হাল ধরেন?তাই তো ক্ষতি কি?
সন্দেহবাদীদের ধারণা তাতে যুদ্ধাপরাধীদের পাখনা গজাবে।রোমান্টিক গণতন্ত্রীদের সান্তনাবাণী, পাবলিক সেন্টিমেন্টের তেতো বড়ি খাওয়ার রিক্স বিম্পি নিতে চাইবে না।তবে বাস্তবাদী গণতন্ত্রপ্রেমীদের এক কথা,তবে কি গণতন্ত্র বিসর্জন দেবো?তাইতো গণতন্ত্রতো আর বিসর্জন দেওয়া যায় না।ধরা যাক গণতন্ত্রের বিসর্জন হলো না,আমাদের যুবরাজ এসে শক্তহাতে দেশের হাল ধরলেন।কি হতে পারে তখন?

আমাদের যুবরাজ এক সময় তুখোর ভাষা সৈনিক গোলাম আযমকে করমর্দনরত অবস্থায় বলেছিলেন,মোরা একটি বৃন্তে দুটি ফুল।সেই গোলাম আযম আমৃত্যু জেলের ভাত খাবে,আর যুবরাজ শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখবেন! যুবরাজের হাত কি এতই দুর্বল?

লক্ষ লক্ষ হৃদয়কে জাগিয়ে তোলা এক কণ্ঠবাজ ফাঁসির কুঠোরিতে রাত কাটাবে আর তৌহিদি জনতা শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে,এমন তো হতে পারে না।
এই তৌহিদি জনতা তথা শিবির কি জিনিস,তা এদেশের গ্রামাঞ্চালে যারা এখন রাত কাটাচ্ছে তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।আম্রিকা বা ঢাকা শহরে বসে যারা পেপার,অনলাইন বা টিভিতে গণতন্ত্রের রোমান্টিকতা ছড়াচ্ছেন,তারা কখনও বুঝবে না এদেশে সংখ্যালঘু হয়ে জন্মানোর কি জ্বালা।গণতন্ত্র এখানে তার নেংটি শক্ত হাতে চেপে ধরে রাখে। আর এই গণতন্ত্রের সঞ্জিবনী সুধা পান করে ক্ষমতায় যেতে পারলে শিবির রূপী হয়েনারা কি কি করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

তবে যতো যাই বলা হোক না কেন,জনগণ লীগকে ভোট দেবে না কারণ তারা পাবলিকের চাহিদা বোঝে নি।মিষ্টি কথায় যে নেশা ধরে না,নেশা ধরে ধর্মীয় আফিমে। বিম্পি জামাত এটা ভালই বোঝে।তাই আফিম বিতরণে তাদের কোন ক্লান্তি নেই।
দুটো কারণে এদেশের অধিকাংশ মানুষ(সাধরণ স্বল্পশিক্ষিত যুবক, কৃষক,দোকানি, ব্যাবসায়ী,দিনমজুর, ভ্যানচালক,ইট ভাটার শ্রমিক,বাস শ্রমিক যারা গ্রামাঞ্চালে বা থানা শহরে বাস করে) লীগকে ভোট দেবে না।

৫ই মে আলেম ওলেমাদের হত্যা করা,আর দেশের শীর্ষ ধর্মীয় নেতাদের যুদ্ধাপরাধী আপবাদ দিয়ে ফাঁসি দেওয়া।শিক্ষিত শ্রেণী,জ্ঞানীক শ্রেণী,চালাক শ্রেণী এই অধিকাংশ লোকের মধ্যে পড়ে না।আগে উল্লেখিত এই অধিকাংশ শ্রেণী বিম্পি জামাতকে ভোট দেবে, শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে,আর তাতেই রক্ষা পাবে গণতন্ত্র।মিষ্টি কথার বিপরীতে আরও মিষ্টি কথার গণতন্ত্র এখানে অচল।

গণতন্ত্রের প্রতি খেদটা একারণেই।এদেশে গণতন্ত্র আসলে সময় এককে স্থানীয় ধর্মের শাসন।