বড় বেশি ভালোবাসি মা তোকে।

কিন্তু বড়ই নির্বীর্য এই ভালোবাসা।

নইলে দেশের স্থপতিকে সপরিবার হত্যা করা হয় আর কোনো প্রতিবাদ করি না আমরা! আইন করে তার হত্যার বিচার নিষিদ্ধ করার মতো বর্বরতা দেখানো হয় অথচ আমরা চুপ করে থাকি! বুটের তলায় সবুজের সব নিশানা মুছে জলপাই রঙের অন্ধকার দাবড়ে যায় আর আমরা হাত কচলাই! মরুবাসী বর্বরতার মানবিক চর্চা হয় ছদ্মবিজ্ঞানের প্রতিক্রিয়াশীলতার তলায়, আর চোখ ফিরিয়ে রাখি আমরা! কিন্তু সবচে’ দুঃখজনক ব্যাপার হলো, যখন দেশের জন্মকালীন অমানবিক অমেয় অতুল বর্বরতার হোতারা দেশের সংসদে সসম্মানে বসে থাকে, গাড়িতে লালসবুজের পতাকা উড়িয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের মুখের ওপর ধোঁয়া ছেড়ে বেরিয়ে যায়, জঙ্গীবাদের বীজতলা বপন করে বলে দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই, মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়, আর অবহেলায়, ক্ষোভে তুই চোখ মুছিস ছেঁড়া কাপড়ে।

পাশার দান কিন্তু পাল্টায়।

আবারো ক্ষমতায় আসে নতুন সরকার, বিচারের দাবি শিরোধার্য করে।

বিচারালায় হয় নতুন, নতুন মানুষ নিয়োগ দেয়া হয় নতুনতর দায়িত্বে।

বুক বাঁধি নির্লজ্জ আশায়। আসিতেছে শুভ দিন?

কতো দেশি-বিদেশি চাপ, কতো টাকা-রাজনীতির নোংরা খেলা, কতো শক্তিপরাশক্তির বোমাবকাবাজি, সব তুচ্ছ করে তরুণজনতা ক্ষোভ প্রদর্শন করে, মারা যায় আচমকা কোপ খেয়ে বা বোমা, দেশের অবস্থা টালমাটাল করতে কতো মুদ্রারাক্ষস আর কতো হিংস্র দানবের নখের কতো যে আঁচড়! সাথে সন্দেহপিশাচ ও খুঁতখোঁজারুদের বাঁকা হাসি আর কথার খোঁচা!

অন্তত এই কাজটার জন্যে বুকের ভেতর থেকে গভীর গভীরতর ধন্যবাদ পাবেন মহাজোট সরকার, পাবেন শেখের বেটি শেখ হাসিনা, পাবেন কিছুটা বিচারক ও আরক্ষারক্ষীরাও। আর বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদবো আকুল হয়ে আমার সব ভাইবোনদের, যারা তোর কষ্ট দূর করতে পাশে ছিলো। মনে রাখিস মা, আমাদের অনেক কিছু নেই, কিন্তু বুকের ভালোবাসা আর ঘৃণার অনন্য শক্তি কেউ যেন তুচ্ছজ্ঞান না-করে। তুই তো জানিস মা, আমাদের পতাকার মাঝখানটা হৃদয়ের ভালোবাসার সূর্য আর রক্ত দিয়ে তৈরি। সেই ভালোবাসা আবারো তোকে দিলাম।

আজ যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির সাথে বাংলাদেশ নতুন দিনে, নতুন যুগে, নতুন জগতে প্রবেশ করলো। অনেক দুঃখ পেয়েছি মা এই বছরটায়, আশা করি বিজয় দিবসটা এবার নতুন আলোয় অন্যরকম একটা ভোর দেখবে।

কী শোভা কী ছায়া গো,

কী স্নেহ কী মায়া গো

পাশে আছি মা, পাশে আছি। তুই ঘুমা শান্তিতে। আমাদের যুদ্ধ চলছে, চলবেই।

জয় বাংলা।