জ্যাকব জুমা। ইনি সাউথ আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট। ম্যান্ডেলার উত্তরাসূরী। এক সাথে রুবেন দ্বীপে জেল খেটেছেন এককালে। তবে মোটে ১০ বছর।

ভদ্রলোকের বৈধ স্ত্রীর সংখ্যা ছয়। অসংখ্য প্রেমিকা। শেষ বিয়ে করেছেন গত বছর । সরকার থেকে দেড় মিলিয়ান খরচ হয় তার বৌদের ভরন পোষনে। বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ২০ টি সন্তান। আফ্রিকার পুরুষতন্ত্রে এসব “চলে”- এতটাই চলে আফ্রিকার “প্রগ্রেসিভ” কমিনিউস্ট পার্টি, উমেন লিগ এবং শ্রমিক সংগঠন গুলির সমর্থন তার পেছনে।
6th marriage of Jacob Zuma-celebrating with his four existing wives
অবশ্য এখানেই তার গুনের শেষ না। অসংখ্য বার দুর্নীতির সাথে তার নাম জড়িয়েছে। নিজের আপ্ত সহায়ক ২৪ মাস জেলে খেটেও এসেছে। ২০০৫ সালে এ এন সির এক নেত্রীই তার বিরুদ্ধে ধর্ষনের চার্জ এনে ছিল যা তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে ছাড়িয়েছেন।

ইনি ইভ্যাঞ্জেলিক খ্রীষ্ঠান-মনে করেন, যীশুর আদেশ বলেই তিনি প্রেসিডেন্ট। সমকামিতা? ছি ছি-ওসব তিনি “শয়তানের” হাত বলে মনে করেন। আর বহুবিবাহ? করতেই হবে। নইলে নাকি আফ্রিকানদের নিজস্ব সংস্কৃতি রসাতলে যাবে ।

ইনিই হচ্ছেন ম্যান্ডেলার উত্তরাধিকারি। আপাতত।

নেলসন ম্যান্ডেলা সফল নেতা মানতে কষ্ট হচ্ছে। নেহেরু অন্তত হিন্দুদের বহুবিবাহ আটকে ছিলেন। তবে মুসলিমদের জন্য সে চেষ্টা করেন নি। আর যাইহোক ভারতীয়ত্বের দোহাই দিয়ে নেহেরু বহুবিবাহ চালু রাখেন নি।

যত জানছি, তত মনে হচ্ছে ম্যান্ডেলা বড্ড বেশি কম্প্রোমাইজ করেছেন। যার ফলে আজকে দক্ষিন আফ্রিকা মোটেও বলার মত কোন দেশ না। আফ্রিকান ন্যাশানাল কংগ্রেস-নিপীড়িত মানুষের মুক্তিসূর্য্য মোটেও না । শুধু শাসক শ্রেনীর রং সাদা থেকে কালো হয়েছে। এই পার্টিটাও ভারতের কংগ্রেসের মতন “ক্ষমতার গুড়” খাওয়ার পিঁপড়েতে ভর্তি। এককালে স্বাধীনতার লড়াই লড়েছিল। এখন সব নেতারা আখের গোছাতে লড়েন। তবুও কংগ্রেসে নেহেরুর মতন নেতৃত্ব এসেছে যিনি বহুবিবাহ আটকেছেন। জমিদারি, রাজন্যবর্গদের তুলেছেন। জাতীয় শিল্প এবং শিক্ষা নীতি প্রনয়ন করেছেন।

ম্যান্ডেলা তার দেশকে সেটুকুও দিতে পারেন নি। ১৯৯৪ সালের জমি পুনর্বন্টন আইন খুব সফল হয়নি। নিরক্ষরতা দূরীকরনে চেষ্টা করেছেন। কিন্ত সাফল্য আসেনি-সেটা নিজে স্বীকার ও করেছেন। শিল্প ক্ষেত্রে দক্ষিন আফ্রিকা ব্যর্থ তার আমলে। কারন ব্যর্থ আইন শৃঙ্খলার ভয়ে নতুন কোন বিনিয়োগ হয় নি। গুন্ডামোটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার পার্টিই করেছে এবং তিনি ক্ষমাসুন্দর চোখে বিদেশ ভ্রুমনে ব্যস্ত ছিলেন।

ব্যাক্তি ম্যান্ডেলাকে সেলাম। যাকে বছরে মাত্র একটা চিঠি লেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, চার বছর কোন নিউজ পেপার পড়তে দেওয়া হয় নি, বই ছুঁতে দেওয়া হয় নি-তার পরেও তার অটুট মনোবল এবং প্রতিশোধ স্পৃহা বর্জিত নেতৃত্ব, ম্যান্ডেলার নামটিকে গত শতকের সব থেকে বন্দিত আধ্যাত্মিক রাজনৈতিক নেতা বানিয়েছে।

কিন্ত রাষ্ট্রনেতা ম্যান্ডেলা? আমার ব্যক্তিগত বিচারে তিনি ব্যর্থ। জ্যাকব জুমা তার জ্বলন্ত প্রমান।

আবেগের জলে ভাসার আগে , মাটির জমি পরীক্ষা করা শ্রেয়। সেই জলে মাটি নরম হয়ে বসে যেতে পারে ।