যে ৭ টি অতিগুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে এই ধারাবাহিক পোস্টটি শুরু করেছিলাম সেগুলোঃ
১) সর্বগ্রাসী দুর্নীতি
২) পদ্মা সেতুর নিজস্ব (দেশীয়…)অর্থায়ন
৩) তীব্র যানজট (বিভাগীয় বা কিছু কিছু জেলা সদরগুলোতে…)
৪) বেকারত্ব
৫) দারিদ্রতা
৬) জনসংখ্যা সমস্যা এবং,
৭) সন্ত্রাস এবং বিপথগামী ছাত্র ও যুব রাজনীতি।

আজকের সমাধান হচ্ছে দুটি অতিগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ২) পদ্মা সেতুর নিজস্ব অর্থায়ন এবং ৩) তীব্র যানজট (বিভাগীয় বা কিছু কিছু জেলা সদরগুলোতে…) নিয়ে; এইখানে উল্লেখ্য প্রথম পর্বে ১) সর্বগ্রাসী দুর্নীতি নিয়ে একান্ত নিজস্ব ভাবনা উপস্থাপন করা হয়েছিল।

২) পদ্মা সেতুর নিজস্ব অর্থায়নঃ
এইসব বিষয়ে এত কথা হয়েছে যে আমি কোন সমালোচনায় গিয়ে বিরক্তির কারণ হতে চাই না, তাই সরাসরি আমার প্রস্তাব উপস্থাপন করব। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করলে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা সরকার কীভাবে সামলাবে যখন ভিশন ২০২০ বা এমডিজিকে সামনে রেখে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (ADP or, Annual Development Programme) ক্রমবর্ধমান হওয়া বাঞ্ছনীয়? এই প্রশ্ন এবং অতিকায় সমস্যা নিয়েই ভাবনার শুরু। বার্ষিক উন্নয়ন যেন ব্যাহত না হয় তাই একটা বিকল্প উপায় বের করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রাখতেই এই ভাবনা। ভাবনাটি এমন-
৭ টি বিভাগের বিভাগীয় সদরের সন্নিকটে ৭ টি উপশহর গড়ে তোলতে হবে। এইসব উপশহরের (প্রতিটির) আয়তন হবে ২ কিমি গুণন ১ কিমি অর্থাৎ ২ বর্গকিলোমিটার, যার পরিমাণ প্রায় ৪৯৪ একর বা ১,৪৯৪ বিঘা অথবা ২৯,৮৮০ কাঠা।

উপশহরগুলোর নামকরণ হবে যথাক্রমেঃ
বিভাগের নাম——— উপশহরগুলোর নাম
১) ঢাকা বিভাগ———বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ উপশহর
২) চট্টগ্রাম বিভাগ —– বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন উপশহর
৩) রাজশাহী বিভাগ — বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান উপশহর
৪) খুলনা বিভাগ——– বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ উপশহর
৫) সিলেট বিভাগ —— বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ হামিদুর রহমান উপশহর
৬) বরিশাল বিভাগ —– বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর উপশহর
৭) রংপুর বিভাগ ——- বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল উপশহর

আর এইসব উপশহরের মোট ২ বর্গকিমি জমির বিভাজন হবে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এইভাবে-

তালিকায় দেখা যাচ্ছে প্রতি বিভাগে আবাসিক প্লটের মোট সংখ্যা ২,৫৩৯ টি যেখানে ১৮১৪ টি ৫ কাঠার এবং বাকি ৭২৫ টি ১০ কাঠার (এমন বিভাজন সরকারের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অন্যভাবেও করা যেতে পারে!); এখন প্রশ্ন হতে পারে এত বিপুল পরিমাণ প্লট কাদের কাছে সরকার বরাদ্দ দিবে আর এইখান থেকে অর্থ উপার্জন বা উন্নয়ন কর্মসূচীতে অবদান কীভাবে হবে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে দুইটি প্রাসঙ্গিক ঘটনার আলোকপাত করব-

ক) আর্মি হাউজিং স্কিম বা এএইচএস (AHS) হতে যাচ্ছিল যেখানে সরকার সকল সামরিক কর্মকর্তাদেরকে (আর্মি অফিসার) প্লট বরাদ্ধ দিবে; বাইরে থেকে আমরা সবাই (বা অনেকে) জানি অথবা মনেকরি এইসব সরকার সামরিক অফিসারদের ফ্রি দেয়, ধারনাটি ভুল। অফিসারেরা বরাদ্দকৃত প্লটসমূহ কাঠা কিস্তিতে নিজের উপার্জিত আয় থেকে কেনার কথা ছিল।

খ) বাংলাদেশের সরকার ও জনগন সর্বদা আমাদের প্রবাসীদের পাঠানোর রেমিটেন্সের প্রশংসা করি আমরা কি তাদের এত বিশাল ত্যাগ ও তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্যেও কোন প্রকার কোন স্বীকৃতি বা পুরস্কার দিয়েছি? বা রাষ্ট্র দিয়েছে? না দেয় নি। অথচ তাদের পাঠানো রেমিটেন্সই আমাদের বার্ষিক মোট প্রবৃদ্ধির একটা বড় অংশ দখল করে আছে। অথচ আজ পর্যন্ত তাদের জন্যে কোন পরিকল্পিত কোন প্রকার পদক্ষেপ কোন সরকারই নেয়নি। সরকারি হিসেব মতে বাংলাদেশের প্রবাসী মানুষের সংখ্যা ৮০ লক্ষাধিক আর বেসরকারিভাবে এই সংখ্যাকে ১ কোটিরও বেশী বলা হয়। এইসব প্রবাসীর মধ্যে সরকার বা উপশহরগুলোর নির্মাণ কর্তৃপক্ষ লটারির মাধ্যমে বিভাগ অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ দিবে।

অর্থাৎ ১ কোটি প্রবাসীর মধ্য থেকে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ আগ্রহী ক্রেতাকে পাওয়া তেমন কোন কষ্টসাধ্য ব্যাপার বা অসম্ভব কিছু হবে না। আবার সরকারের পক্ষে বিভাগীয় সদরগুলোর ২৫ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে এমন জায়গা অধিগ্রহণ করাও তেমন কোন কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয় ( আমার জানামতে ঢাকার অদূরে সাভারের বিশ্বরোডের পাশেই ৭৫০ বিঘা জমি ব্যক্তিমালিকানায় বিক্রয় হচ্ছে…); প্রতিটি বিভাগের উপশহরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নির্মাণ ব্যায় হবে সর্বোচ্চ ২,০০০ কোটি টাকা এবং আয় হবে ৫০০০ কোটি টাকার মত অর্থাৎ সরকার শিক্ষাখাত, চিকিৎসা খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করতে পারবে ৭ বিভাগ কেন্দ্রিক যার পরিমাণ চলতি অর্থ বছর সহ আগামী ৩ অর্থ বছরের পদ্মা সেতুর জন্যে বরাদ্দকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের দ্বিগুণের কাছাকাছি। (এইখানে প্রকল্পের ব্যয় ও আয় সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রাসঙ্গিক কারণেই গোপন রাখা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে এই রূপরেখা চূড়ান্ত করতে হবে…)


আমাদের গর্বের ৭ বীরশ্রেষ্ঠ

এইবার দেখুন এই উপশহরগুলোকে ঘিরে কি পরিমাণ বহুমাত্রিক উন্নয়ন হবে বা করা সম্ভব। তালিকার দিকে দেখলে বুঝা যাচ্ছে যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয়, মহা-বিদ্যালয়, বিশ্ব বিদ্যালয়, তথ্যও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, পার্ক, লেক, কমার্শিয়াল স্থাপনা, হসপিটাল, মুক্তিযুদ্ধ যাদুগর এমন ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব এবং এর জন্য সরকারকে অন্য কোন বাজেট করতে হবে না। সব অর্থের সংকুলানই হবে এইসব প্রজেক্টের বিক্রিত আবাসিক এবং বাণিজ্যিক জমি/প্লট থেকে। এই বিষয় নিয়ে আমি পূর্বে অন্য ব্লগে বিচ্ছিন্নভাবে আরেকটা বিচ্ছিন্ন পোস্ট দিয়েছিলাম ঐখানে আমি প্রকল্পগুলোকে সফল করতে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা বলেছিলাম। উদ্যোগটির উপর ব্যপক আলোচনা, সমালোচনা&, পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আরও ফলপ্রসূ এবং কার্যকর একটা পরিকল্পনা উপহার দিবে আশাকরি।

৩) তীব্র যানজটঃ (বিভাগীয় বা কিছু কিছু জেলা সদরগুলোতে…)

কত শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয় কত জ্বালানী পুড়ে আরও কতরকম ক্ষতি হয় এমন আওলচনায় না গিয়ে সরাসরি আজকের প্রস্তাবে যাব কেননা কম বেশী ওইসব আমরা সবাই জানি। যানজট নিরসনের সবচে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে বিরতিহীনভাবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কোন রাস্তার সংযোগস্থলে চলতে দেয়া। তা কীভাবে করা সম্ভব? অনেকভাবেই করা যায়। একটা চার রাস্তার সংযোগস্থলের সমস্যা কতভাবে সমাধান করা যায় দেখব। প্রথমে বিশ্বে বহুল প্রচলিত কিছু যানজটের সমাধানের চিত্র দেখি।

চিত্রঃ The High Five in Dallas, Texas, United States: an example of interchange design. This is a complicated five-level stack interchange due to the proximity of frontage roads.

এইবার কয়েকপ্রকারের চৌরাস্তার সিগন্যালবিহীন যান চলাচলের কিছু শৈল্পিক এবং কার্যকর সমাধান দেখিঃ
a) Cloverleaf interchange:

চিত্রঃ A typical cloverleaf interchange located near Columbus, Ohio, United States, taken in March 1995.

চিত্রঃ A typical cloverleaf interchange এর রেখাচিত্র

b) Stack interchange:

চিত্রঃ A multi-level stack interchange inShanghai, China.

চিত্রঃ Four-level stack এর রেখাচিত্র
c) Turbine interchange:

চিত্রঃ Turbine interchange এর রেখাচিত্র
d) Roundabout interchange

চিত্রঃ Roundabout interchange এর রেখাচিত্র
e) Hybrid interchanges:

চিত্রঃ Hybrid interchange near Rotterdam, Netherlands.
এবং

চিত্রঃ Two-level cloverstack এর রেখা চিত্র

এমন আরও অনেক অনেক সমাধান আমরা দুনিয়াজুড়ে দেখি, উইকিপিডিয়ায় এমন অনেক সমাধানের সুন্দর সচিত্র বর্ণনা আছে। কিছুদিন আগে জিনিয়াস মাস ট্রানজিট সল্যুশন নামের একটা সমাধান চোখে পরে তা অনেকটা এইরকমঃ

উপরোক্ত সবকটি সমাধানই বর্তমানে ঢাকা শহরের কোন ব্যস্ততম চৌরাস্তায় প্রয়োগ করা অসম্ভব কেননা সে পরিমাণ জায়গা এবং কন্সট্রাকশনের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি ব্যস্ততম ঢাকা শহরে নেই। বড়জোর কিছু ফ্লাইওভার নিরমানের মত পরিবেশ বিদ্যমান। এখন আজ এমন একটা সমাধান উপস্থাপন করতে যাচ্ছি যা ঢাকা শহরে সদ্য নির্মিত কয়েকটি ফ্লাইওভারের মতই সহজে নির্মাণযোগ্য। আমার সমাধানটি এমন-

যানজট নিরসনে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের (প্রস্তাবিত…) পক্ষ থেকে আমার নিজস্ব সমাধান

একটু লক্ষ্য করলে সবাই বুঝতে পারবেন কীভাবে একটা চৌরাস্তার মোড়ের চার দিক থেকে আসা মোট ১২ গতিপথের গাড়িকে কোন সিগন্যাল ব্যতিরেকে চলতে দিতে পারছি। এর জন্য মাত্র দুটি ইউ-লুপ (U-Loop) এবং এক জোড়া টানেল বা ছোট্ট ফ্লাইওভারের ব্যবহার করেছি। একদিক থেকে আসা গাড়ি সম্ভাব্য অপর বাকি ৩ দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যেমন চিত্রে দেখানো ABC একপথের গাড়ি যা সম্ভাব্য বাকি তিন দিকেই যেতে পারে কোন বাধা ছাড়াই। এখন লাল রঙ্গে দেখানো এই ABC টাইপ গাড়ি ত্রয় কোন প্রকার বাধা ছাড়াই বাকি তিনটি পথে যেতে পারছে। এইখানে উল্লেখ্য সবচে বেশী ব্যবহৃত যে পথদ্বয় ঐ পথেই ইউ-লুপগুলো বসবে। (দক্ষ ড্রাফ্‌টসম্যানের অভাবে এবং চাকুরীর ব্যস্ততার কারণে আমি চিত্রটি অপেক্ষাকৃত ভালভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে;তাই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি…); আশাকরি সকলের গঠনমুলক সমালোচনা এবং সহযোগিতা প্রস্তাবদ্বয়কে চূড়ান্ত একটা উদ্যোগে পরিণত করতে পারব।

এই কাজটি আরও গুছিয়ে সবার সামনে উপস্থাপন করতে পারলে ভাল হত কিন্তু সময়ের অভাবে কখনই এটাকে পরিপূর্ণরুপ ঘরে বসে একা দেয়া সম্ভব নয় আপাতত তাই আমি অনলাইনে সবার সামনে উপস্থাপন করলাম যাতে করে জনকল্যাণে কেউ এই ভাবনাটিকে পরিপূর্ণরুপ দিতে এগিয়ে আসেন।

নোটঃ আগামী পর্বে আমার গবেষণায় প্রাপ্ত ভাবনাসমূহ থাকবে ‘৪) বেকারত্ব’ ও ‘৫) দারিদ্রতা ‘ বিষয়দ্বয় নিয়ে।

প্রাসঙ্গিক পূর্বের পোস্টগুলোঃ
১) “বঙ্গবন্ধুর ইউটোপিয়া ‘বাংলাদেশ’ গঠনে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের অনিবার্যতা”-একটি প্রস্তাব ও সম্ভাবনা
২) “‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’ অতঃপর দেশের সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলীর সমাধান (১ম পর্ব)