গনতন্ত্র হলো একটি মূল্যবোধের সিস্টেম, গনতন্ত্র একগুচ্ছ আইনকানুন নয়। কোন দেশের বৃহদাংশ জনগন যদি এই মূল্যবোধের সিস্টেম এর সারাংশ নিজেদের মধ্যে অন্তস্থ না করতে পারে তবে কোন শতশত আইনকানুনও দেশের গনতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারে না। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে যখন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি একের পর এক স্বাধীনতা পেতে থাকলো তখন অনেক দেশেই দারুন সব গনতন্ত্রের সংবিধান প্রনয়ন করা হয়েছিলো। কিন্তু খুব কম দেশই এই গনতন্ত্র ধরে রাখতে পেরেছিলো স্বাধীনতার পরে। দেশে গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাবে দ্রুতই অগনতান্ত্রিক শক্তি পাকাপোক্তভাবে গেড়ে বসেছিলো। অন্যদিকে সবচেয়ে পুরাতন ও বিরতিহীনভাবে চলা গনতন্ত্রের দাবীদার ইংল্যান্ড তিনশ বছরের বেশীসময় ধরে নির্দিষ্ট লিখিত সংবিধান ছাড়াই চলেছে কারন সেখানকার জনগনের বৃহদাংশ, জনপ্রতিনিধিদের শাসনকে রাজার শাসনের চেয়ে অনেক শ্রেয়তর মনে করেছে। আমেরিকার ১৭৮৭ সালে লিপিবদ্ধ সংবিধানকে গনতন্ত্রের ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক ধরা হয় কিন্তু অনেকেই এটা উপলদ্ধি করেন না যে আমেরিকার গনতন্ত্রের আসল রক্ষাকবচ মূল সংবিধান নয় বরং Bill of Rights বা অধিকারনামা যেখানে সংবিধানের প্রথম দশটি সংশোধনীকে একত্র করা হয়েছে। এই অধিকারনামাতে স্পষ্টভাষায় উল্লেখ করা আছে মানুষের কতগুলি অলংঘনীয় অধিকার, যেমন বাকস্বাধীনতা, রাজনীতি করার অধিকার, মুক্ত সংবাদমাধ্যম, সংগঠনের অধিকার, অস্ত্র রাখার অধিকার, ওয়ারেন্টছাড়া সার্চ এবং গ্রেফতার থেকে রক্ষার অধিকার, ব্যাক্তি সম্পদের অধিকার ইত্যাদি। গত দুইশ বছরে বার বার রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যাক্তিজীবনের বিভিন্ন ঘটনার সাথে সংবিধানের সংঘর্ষ নিয়ে বিভিন্ন ইস্যু মীমাংসা হবার জন্যে বিভিন্ন আদালতের স্তর পেরিয়ে সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত পৌছেচে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিরোধ মীমাংসার চূড়ান্ত অথরিটি নেয়া হয়েছে Bill of Rights কে।

গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশের জনগন বার বার দেখিয়েছে যে তারা তৃতীয় বিশ্বের অনেকে দেশের মানুষের চেয়ে অনেক বেশী গনতন্ত্র সচেতন। কিন্তু আমরা ক্ষমতার গনতন্ত্র নিয়ে যতটা সোচ্চার গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে ততটা নয়। বিশেষ করে অনেক অনূদার (illiberal) সমাজের মতো আমাদের মধ্যে আমাদের মধ্যেও প্রবনতা রয়েছে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সমাধান খোজার। আমরা মনে করি সমাজ থেকে সবরকমের অপছন্দনীয় বিশ্বাস কিংবা কার্যকলাপ দূর করার ওয়ান-স্টপ পথ হলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ। আমরা ভাবি আইন করলেই মানুষের মধ্য হতে সবরকমের কালিমা দূর হবে এবং বার বার এই পথেই সমাধান খুজি। আমরা এটা উপলদ্ধি করি না যে এর মাধ্যমে আইনকানুনই বারবার খেলো হয়ে যায় এবং গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ দিনে দিনে ক্ষীনকায় হয়ে যায়।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার স্বাধীনতা

বাংলাদেশের ১৯৭২ এর সংবিধান গনতন্ত্রের নানান আদর্শের কথায় পরিপূর্ণ একটি শাসনতন্ত্র। কিন্তু সংবিধানের সাফল্য তার কার্যকারীতায় আর এই কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সংবিধান প্রথম থেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে এই সংবিধান realistic এর চেয়ে idealistic ই বেশী। আমাদের ১৯৭২ এর সংবিধানে অনেকগুলিই সীমাবদ্ধতা আছে, বিশেষ করে ক্ষমতার চেক এবং ব্যালেন্স এর ক্ষেত্রে। অবিবেচনাপ্রসূত প্রাথমিক ভুলগুলির একটি ছিলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। আমি এখন মুক্তিযু্দ্ধের চেতনা, দ্বিজাতি-তত্বের অবসান এসব নিয়ে বড়ো তত্ব কথা শুরু করতে চাই না। আমি কেবল পাঠকদের দুটি পয়েন্ট বিশেষভাবে মনে করিয়ে দিতে চাই। প্রথমত, রাজনীতি করার অধিকার গনতন্ত্রে একদম প্রাথমিক অধিকারগুলির অন্যতম। রাজনীতি করার অধিকার মানে নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী রাজনীতি করার অধিকার। যদি যথেষ্ট পরিমানে লোকজন মনে করে যে মানুষের তৈরী আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনার চেয়ে ধর্মপুস্তকে দেয়া স্রষ্টার আইন দিয়ে দেশ চালানো উত্তম, তবে তারা সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে সংগঠন করে রাজনীতি করতেই পারে। যদি কিছু লোক মনে করে যে ব্যাক্তিসম্পদ ও ধনিকশ্রেণীকে উৎখাত করে প্রলেতারিয়েতের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বৈজ্ঞানিকভাবে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করা সম্ভব, তবে সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে তারা রাজনীতি করতেই পারে। গনতন্ত্র মানুষের উপর কোন বিশ্বাস চাপিয়ে দিতে পারে না, স্বয়ং গনতন্ত্রে বিশ্বাসকেও না। গনতন্ত্রে অগনতান্ত্রিক বিশ্বাস পোষন করার এবং সেই বিশ্বাস অনুযায়ী রাজনীতি করার অধিকার আছে।

রাজনীতির অধিকার মানেই ইচ্ছেমতো রাজনীতি করা নয়। যেমন আপনি যদি অন্যজাতি বা ধর্মের প্রতি তীব্র বিদ্বেষমূলক বিশ্বাস পোষন করেন, কিংবা দেশের অখন্ডতায় অবিশ্বাসী হন, তবে সেই বিশ্বাসকে ব্যাক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি সেটা নিয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে চান, তবে অনেক গনতন্ত্রই আপনার সেই অধিকার অস্বীকার করবে। আবার পৃথিবীতে অনেক গনতন্ত্রে বিদ্বেষমূলক কিংবা দেশের অখন্ডতা-বিরোধী রাজনীতি করাতেও বাধা দেয় না।আমরা সেটি কিছুক্ষন পরেই দেখবো।
এখন প্রশ্ন হলো প্রচলিত ধর্মগুলি কি বিদ্বেষমূলক? ধর্মবিরোধী কিংবা অন্যধর্মবিশ্বাসীরা কোন একটি বৃহৎ প্রচলিত ধর্মকে যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিকভাবে যতই বিদ্বেষমূলক মনে করুক না কেনো, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তির জন্যে পৃথিবীর কোন দেশেই বৃহৎ প্রচলিত ধর্মগুলিকে বিদ্বেষমূলক বিশ্বাস বলে চিহ্নিত করা হয় নি।

এখন আসছি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে দ্বিতীয় পয়েন্টটিতে। পৃথিবীর কোন গনতান্ত্রিক দেশেই ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করার অধিকার নিষিদ্ধ করা হয় নি। সেকুলার ভারতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আছে, মুসলিম, হিন্দু সবরকমই। নাম ও বিশ্বাসের দিক দিয়ে “শিবসেনা” কিংবা “হিজবুল্লাহ” এর মধ্যে কতটা পার্থক্য? ঐতিহ্যবাহী গনতন্ত্র বৃটেনেও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আছে। সেকুলার রিপাবলিক বলে খ্যাতনামা ফ্রান্সেও ক্রীশ্চিয়ান ডেমোক্র‍্যাটিক পার্টি’র মতো স্পষ্ট ধর্মীয় দল আছে। আর ল্যান্ড ওফ দ্যা ফ্রী বলে পরিচিত আমেরিকায় তো কোনরকমের রাজনীতির উপরেই নিষেধাজ্ঞা নেই। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিস্ট পার্টি প্রকাশ্যেই রাজনীতি করে আসছে ১৯১৯ সাল থেকেই, এমনকি শীতলযুদ্ধের তুংগ সময়টিতেও। তথাকথিত ‘ইহুদী নিয়ন্ত্রিত’ আমেরিকায় এখনো অনেক রকম নাৎসী, নব্য-নাৎসী পার্টি আছে যারা স্বস্তিকা চিহ্ন আর হিটলারের ছবি নিয়ে প্রকাশ্যে র‍্যালী করে। আমেরিকায় এমনকি রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা বিরোধী পার্টিও রাজনীতি করতে পারে। সারা পেলিনের স্বামী আলাস্কা ইনডিপেন্ডন্স পার্টি নামের একটি দলের সদস্য ছিলেন।

কথা উঠতে পারে যে অন্য দেশে নেই তো কি হয়েছে, আমাদের দেশের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে ধর্মীয় রাজনীতি আমরা নিষিদ্ধ করতেই পারি। কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশই বিশেষভাবে আলাদা নয়। পৃথিবীর সর্বত্র মানুষের মৌলিক চিন্তা-চাহিদা অনেকটা একরকমেরই। পৃথিবীর কোন গনতন্ত্রেই যখন ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় নি তখন আমাদের সংবিধান প্রণেতাদের বোঝা উচিৎ ছিলো যে এই অধিকারের সাথে মানুষের মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার আর প্রবনতা জড়িয়ে আছে। এই অধিকার বিপন্ন হলে গনতন্ত্রই বিপন্ন হতে পারে, বিশেষ করে যেসব দেশে মানুষের মধ্যে ধর্মানুভুতি প্রবল।

জামাতের রাজনৈতিক অধিকার

স্বাধীন বাংলাদেশে জামাতে ইসলামী নামের দলটির রাজনীতি করার অধিকার তো দূরের কথা, অস্তিত্বের অধিকার থাকা উচিৎ নয়। এর কারন জামাতে ইসলামী ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো এবং বাংলাদেশ আক্রমনকারী বহি:শত্রুর সাথে সক্রিয় সহযোগিতা করেছে। সবচেয়ে বড়ো কথা শত্রুর সাথে হাত মিলিয়ে জামাত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজ জাতির বিরুদ্ধে ভয়ংকর মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত যেকোন সংগঠনকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা যেকোন গনতান্ত্রিক দেশেরই সাধারন রাষ্ট্রীয় পলিসি। আমেরিকায় সন্ত্রাস ও বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত কিংবা সহায়তা দেবার জন্যে দেশী-বিদেশী অনেক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে। জার্মানীর নাৎসী পার্টি কিংবা ইটালীর ফ্যাসিস্ট পার্টি স্ব স্ব দেশে পুরোপুরি নিষিদ্ধ নিজ ও অন্য দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে।

তবে গনতন্ত্রে অপরাধের জন্যে দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা যত সহজ, শুধু মতাদর্শের জন্যে নিষিদ্ধ করা ততটাই কঠিন। কারন মতাদর্শের স্বাধীনতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে চিন্তা আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, যা গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের একদম মৌলিক স্তম্ভগুলির একটি। জার্মানীতে নাৎসী পার্টি ও নাৎসী মতবাদ নিষিদ্ধ হয়েছে কিন্তু নাৎসী মতবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল রাজনৈতিক মতবাদ নিষিদ্ধ করা যায় নি। যতক্ষন না কোন দল স্পষ্ট নাৎসীবাদকে নিজ আদর্শ হিসেবে প্রচার করে, কোন হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয় কিংবা ইহুদী বিদ্বেষ প্রকাশ করে অথবা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন গনহত্যাকে অস্বীকার করে ততক্ষন কোন উগ্রদক্ষিন পার্টিকে নিষিদ্ধ করা জার্মান আইনে সম্ভব নয়। জার্মানীতে অনেক উগ্রদক্ষিন দল আছে যারা প্রকাশ্যেই নাৎসীবাদের প্রতি বিভিন্নভাবে সহানূভুতি প্রকাশ করে। সবচেয়ে বড়ো নব্য-নাৎসী দল বলে পরিচিত ন্যাশনাল ডেমোক্র‍্যাটিক পার্টি’র (NPD) এমনকি জার্মানীর কয়েকটি প্রাদেশিক পার্লামেন্টে ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিও আছে। ইটালীতে অনেক নব্য-ফ্যাসীবাদী দল আছে যারা মুসোলিনী আর ফ্যাসিজমের প্রতি সহানুভুতিশীল।

১৯৭১ এ দলের ভূমিকা ও কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে জামাতকে অনায়াসে নিষিদ্ধ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ও এর পরে জামাত, মুসলীম লীগ সহ আরো কয়েকটি দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো ও। ১৯৭৫ এর পরে একের পর এক সরকারের সময়ে ধাপে ধাপে জামাত ও তার ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধী নেতাকর্মীদের দেশের রাজনীতিতে পূন:র্বাসন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম কলংক। এতোদিন পরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সাথে সাথে জামাত সংগঠনকেও নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করা ছিলো দেশের বড়ো একটি জনগোষ্ঠীর আকাংখা। সেই প্রক্রিয়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার মূল দিক নির্দেশনাই হওয়া উচিৎ ১৯৭১ এ জামাতের ভূমিকা।

হাই কোর্টের রায়ে জামাতকে নির্বাচনে অংশগ্রহনের অযোগ্য ঘোষনা করা হয়েছে। কিন্তু যে যুক্তির মাধ্যমে কোর্ট জামাতকে নির্বাচনে অংশগ্রহনে বাধা দেয়া হচ্ছে সেই যুক্তির দূর্বলতা শুধু কোর্টকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, রাষ্ট্রের সংবিধান ও তার আওতা নিয়েই বড়ো প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। ডেইলী স্টারের অগাস্ট ৩ এর সম্পাদকীয় অনুযায়ী জামাতের নিবন্ধন বাতিলের কারন হিসেবে দেখানো হয়েছে, “ Though the party rewrote its constitution earlier, it fails to recognise democracy and parliament as the highest body responsible for enactment of laws…….. JI’s refusal to conform to the Representation of the People Order (RPO) which was changed by the EC in 2008 set the stage for this outcome. Furthermore, the charter has discriminatory provisions that disallow women and non-Muslims to ever become the party chief. Such clauses are in direct contravention to the constitution that holds specific views against discrimination based on religion and gender.” সংক্ষেপ করে কারনসমূহ হলো, ” এক. দলের গঠনতন্ত্র যদি সংবিধান পরিপন্থী হয়। দুই. গঠনতন্ত্রে কোনো বিশেষ ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, ভাষা বা লিঙ্গভেদে কোনো বৈষম্য প্রতীয়মান হয়। তিন. নাম, পতাকা, চিহ্ন বা অন্য কোনো কর্মকাণ্ড দ্বারা সাম্প্রদায়িক ঐক্য বিনষ্ট হওয়া কিংবা দেশকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চার. দলের গঠনতন্ত্রে দেশের ভৌগোলিক সীমার বাইরে কোনো দপ্তর, শাখা বা কমিটি গঠন এবং পরিচালনার বিধান থাকে।” (1)

সংবিধান কোন ঐশীবাণী নয়

যেকোন দেশের সংবিধান স্বয়ং ইশ্বরের নিজমুখের কথা নয় যেটা মুসা নবী তুর পাহাড়ের চূড়া থেকে পাথরে খোদাই করে নিয়ে এসেছেন। এটা আমাদের মতই মানুষের লেখা একটি বিধান যা আমাদের সম্মতিতেই প্রতিষ্ঠিত এবং পরিমার্জনীয়। গনতন্ত্রে নাগরিকেরা স্বয়ং ইশ্বরের বাণীর বিরোধিতা, দ্বিমত প্রকাশ করতে পারে, সংবিধান তো কোন ছাড়। মানুষ সংবিধানের বিশেষ বিশেষ দিকগুলি কিংবা পুরোটারই বিরোধিতা করতে পারে এবং সেই বিরোধিতার ভিত্তিতে রাজনীতিও করতে পারে। এটা গনতন্ত্রে মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার। এজিনিষটি এতো সহজ ও স্বাভাবিক যে এর পরও ‘সংবিধান বিরোধিতা করার অধিকার কারও নেই’ এধরনের কথা শুনতে খুব অস্বাভাবিক লাগে।

এখন, এই সময়ে, জাস্টিস খায়রুল হকের মতানুসারে, তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান বিরোধী। বিভিন্ন জরীপে দেখা গিয়েছে যে দেশের ৭০-৯০% লোক তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চায়। এই দাবীতে প্রধান বিরোধী দলসহ কয়েকটি দল রাজনীতি ও আন্দোলনও করছে। তাহলে এই দলগুলি ও তার সমর্থকেরা কি সংবিধান বিরোধী অপরাধ করছে। ১৯৯৬ সালে বিরোধীদলের তত্বাবধায়কের দাবীর বিরুদ্ধে তখনকার সরকার যখন সংবিধানের দোহাই দিতো তখন বিরোধী দলের অনেকে এই দোহাই কে ব্যংগ করতো ‘সং এর বিধান’ বলে। যেকোন সময়ে সংবিধানের বিভিন্ন বিধান নিয়ে মানুষ বিরোধিতা প্রকাশ করতে পারে এবং সেই ভিত্তিতে রাজনীতি করতে পারে। রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে তাদের প্ল্যাটফর্ম ঘোষনায় প্রকাশ্যে বলটে পারে যে যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তারা সংবিধানের বিভিন্ন দিক পরিবর্তন করবে কিংবা নতুন সংবিধান প্রণয়নের ব্যবস্থা করবে। সংবিধান মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্বর, যথেষ্ট মানুষের স্বর পাল্টানোর সাথে সাথে সংবিধানও পাল্টে যেতে হয়।

নাগরিকেরা এমনকি সংবিধানের মৌলিক আদর্শগুলিকেও প্রশ্ন করতে পারে। আমাদের সংবিধান প্রনেতারা, তাদের অপরিসীম প্রজ্ঞায়, সমাজতন্ত্রকে জাতীয় সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি করেছিলেন। সামাজিক ন্যায়বিচার, সুষম বন্টন এরকম কোন ফাপা কথা বার্তা নয় একেবারে পিওর এবং সিম্পল সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মূলনীতি হিসেবে ছিলো গনতন্ত্রের পাশাপাশিই। আমি এখন সমাজতন্ত্রের দোষগুন আলোচনায় যাবো না তবে এতটুকু উল্লেখ করবো যে ১৯৭২ সালেই হোক কিংবা ২০১৩ সালেই হোক, এখন পর্যন্ত এমন কোন রাষ্ট্র পৃথিবীতে উদ্ভব হয় নি যেটা একই সাথে সমাজতান্ত্রিক আর গনতান্ত্রিক। সমাজতন্ত্র গনতান্ত্রিক নয়। ভারতেও এমনকি সংবিধান প্রনয়নের সময়ে সমাজতন্ত্রকে মূলনীতি রাখা হয় নি, ১৯৪৯ সালের সংবিধানে ভারতকে বলা হয়েছিলো সার্বভৌম গনতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। ১৯৭৬ সালে এমার্জেন্সীর সময়ে সমাজতান্ত্রিক সেকুলার শব্দদুটি ঢুকিয়ে দেয়া হয় সার্বভৌম আর গনতান্ত্রিক এর মাঝে।

১৯৭২ সালেই নিশ্চই বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমানে নাগরিক ছিলো যারা সমাজতন্ত্র বিরোধী। আজকে এই সমাজতন্ত্র বিরোধীতার অনুপাত নিশ্চই আরো অনেক বেড়েছে। এই লোকগুলি কি সবাই সংবিধান বিরোধী অপরাধী? এখনকার সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযুক্ত আছে এবং অনেকে এর বিরোধিতা করছে। এরাও কি সংবিধান বিরোধী অপরাধী। এখন আমেরিকায় সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী, যেখানে নাগরিকদের অস্ত্র রাখার অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। অনেকেই বলছে সংবিধানের এই ধারা আজকের যুগে অচল। একারনে তাদেরকে তো কেউ অ্যান্টি-কনসটিটিউশন বলছে না।

জামাত এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর বেশীরভাগই বিশ্বাস করে যে স্রষ্টার দেয়া বিধান মানুষের রচিত বিধানের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর। আমি এখন এইবিধান গুলি’র কোনটাই আদৌ স্রষ্টা বা কোন গায়েবী শক্তির দেয়া কি না এই বিতর্কে যাচ্ছি না। কিন্তু ধর্মীয় দলগুলি বিশ্বাস করে যে চূড়ান্ত সার্বভৌমত্ব ইশ্বরের কাছে। এটা শুধু গোড়া মুসলিমদের বিশ্বাসই না। গোড়া খ্রীস্টান কিংবা ইহুদী বা অন্য ধর্মের অনেকেই তা বিশ্বাস করে। God made countries, God makes kings, and the rules by which they govern (Chariots of Fire ছবির সংলাপ) এই রকমের বিশ্বাস আছে অধিকাংশ ধর্মপ্রান লোকদেরই। তারা এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমবেত হতে পারে, রাজনীতিও করতে পারে। এই বিশ্বাসের দলগুলিকে মানুষের সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে বলা হলো কমিউনিস্ট দলগুলোকে পুজিবাদ আর মুক্তবাজার অর্থনীতির শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে বলার সমতুল্য। গনতন্ত্র কোন মানুষ বা দলের উপরে একটি বিশ্বাস চাপিয়ে দিতে পারে না, সেই বিশ্বাস যুক্তিসম্মত হলেও।

আজকে যদি দেশের জনগনের কাছে প্রশ্ন করা হয় কোনটি উপরে, সংবিধান না কোরান, এর উত্তর কি হতে পারে বলে মনে হয়? এরকম প্রশ্ন করার সুযোগ এই কোর্টই করে দিয়েছে। জামাত এখন সকল ইসলামী দলগুলোর কাছে আরো বলার সুযোগ পেয়েছে যে আল্লাহ’র সার্বভৌমত্বের শ্রেষ্ঠতা ধারন করার জন্যে আজকে জামাতের উপরে খড়গ নেমে এসেছে, দুদিন পরে বাকী সবার উপরেই সেটা আসবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ৯০

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ৯০ সি (১) বলছে যে, কোন রাজনৈতিক দলের নিজস্ব বিধিমালা যদি জাতি, ধর্ম, ভাষা কিংবা লিংগভেদে বৈষম্য করে থাকে তবে সেদল নিবন্ধনের অযোগ্য হবে। একটি রাজনৈতিক দল হলো একটি এক্সক্লুসিভ প্ল্যাটফর্ম যেখানে কিছু লোক একত্র হয় কিছু কমন আদর্শ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে। এই আদর্শগুলি উদার হতে পারে কিংবা অনুদারও হতে পারে কিন্তু আসল কথা হলো রাজনৈতিক দল কোন পাবলিক প্ল্যাটফর্ম নয়। রাজনৈতিক দলগুলি নিজস্ব মানদন্ড আরোপ করতে পারে যার ভিত্তিতে কারা কারা সেই দলে যুক্ত হতে পারবেন সেটা নির্ধারিত হবে। ইসলামী দলগুলোকে অন্যধর্মের কিংবা ধর্মবিহীন মানুষকে সদস্য ও নেতৃত্বের সুযোগ দেয়ার জন্যে বাধ্য করা কিভাবে সম্ভব? একটি ক্রিশ্চিয়ান পার্টি অবশ্যই যারা যীশুখৃষ্টকে ইশ্বরপুত্র স্বীকার করে না তাদেরকে সদস্য না করার অধিকার রাখে। একটি নারীবাদী রাজনৈতিক দল পুরুষ নেতৃত্ব নিষিদ্ধ করতে পারে। একটি আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক দল, দলের নেতার স্থান নিজস্ব জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে। একটি বাংলাদেশী রাজনৈতিক দল বাংলা বলতে পারে না এমন কাউকে সদস্য করতে অস্বীকার করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলির কোনো বিদেশী দলের সহযোগী কিংবা অনুজ সংগঠন না হওয়ার বিধানটি যুক্তিসম্মত। একটি রাষ্ট্রের পূর্ণ অধিকার আছে কোন নাগরিক বা সংগঠনের দ্বিমুখী বিশ্বস্ততাকে মেনে না নেয়ার। অনেক দেশই নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্ব মেনে নেয় না। রাষ্ট্রের রাজনীতি ও আভ্যন্তরীন বিষয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপ ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা একান্তই স্বাভাবিক। জামাত যদি কোন বিদেশী দলের সহযোগী সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হয় তবে তাকে রাজনীতিতে বাধা দেয়াও স্বাভাবিক।

সত্তর, আশী কিংবা নব্বই দশকেও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি এবং অন্যান্য অনেক বাম দলগুলি তাদের আর্ন্তজাতিক কানেকশনের কথা প্রকাশ্যে গর্বভরেই বলতো। তারা দাবী করতো যে তারা বিশ্বব্যাপী আর্ন্তজাতিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনেরই অংশ। নিয়মিত কয়েক বছর অন্তর অন্তর মস্কো কিংবা পিকিং এ আর্ন্তজাতিক সম্মেলন হতো এবং সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি যেতো। এসব দলগুলো যে সোভিয়েত কিংবা চাইনিজ সরকার থেকে অর্থ এবং অন্যান্য আনুকুল্য পেতো এটা তো ছিলো ওপেন সিক্রেট। দলগুলি এমনকি নিজেদের নামের পাশে ব্র‍্যাকেটে লিখতো মস্কো কিংবা পিকিং এর কথা। এই দলগুলি এখন কতটা বিদেশী প্রভাবিত এটা আমি জানি না। তবে তাদের অতীত ইতিহাসের প্রেক্ষিতে এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এর আলোকে এইসব দলগুলির এখন thorough investigation হওয়া নিশ্চই দরকার। সেইসাথে এটিও তদন্ত করা দরকার বামপন্থী দলগুলির আদর্শ সংবিধানের সাথে কতটা সামন্জস্যপূর্ন। তারা কি মার্ক্সবাদের বিশ্বাস করে? মার্ক্সবাদ কি গনতান্ত্রিক? এই দলগুলি কোন পন্থায় সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চায়? তারা কি প্রলেতারিয়েতের একনায়কতন্ত্রকে অপরিহার্য মনে করে? এই দলগুলি কি ব্যাক্তিসম্পদের অধিকারে বিশ্বাস করে? আমাদের সংবিধানে ব্যাক্তিসম্পদ গড়ার অধিকার স্পষ্টভাবে রয়েছে।

সঠিক উপায় আর বেঠিক উপায়

বলা হয়ে থাকে যেকোন কিছু করার জন্যে একটি Right Way আছে আর অনেক Wrong Way আছে। আগেই বলেছি যে জামাতকে নিষিদ্ধ সংগঠন ঘোষনা করার মতো যথেষ্ট মালমশলা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত আছে। যুদ্ধাপরাধ এবং স্বাধীনতা বিরোধিতার দায়ে সংগঠনটিকে অনায়াসে নিষিদ্ধ করা যায়। এর জন্যে দরকার কেবল কোর্টে রিট দায়ের এবং ১৯৭১ এ জামাতের অপরাধ সংশ্লিষ্টতার জন্যে প্রমান দাখিল করা। ব্যাক্তির চাইতে প্রতিষ্ঠানকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করা অনেক সহজ। কারন এখানে শুধু দেখাতে হয় যে প্রতিষ্টানের যথেষ্ট পরিমানে সদস্য বিভিন্ন অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলো। অনেক সময়েই বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যাক্তিকে যুদ্ধাপরাধের সাথে সরাসরি যুক্ত করা কঠিন হয় কারন তারা যুক্তি দেখায় যে বিশেষ ঘটনাটির চেইন ওফ কমান্ডে তারা ছিলো না। যেহেতু যুদ্ধের সময়েও অপরাধীরা কাগজপত্রে প্রমান না রেখে যাওয়ার ব্যপারে বিশেষ সচেতন থাকে সেহেতু ব্যাক্তিসংশ্লিষ্টতার দালিলিক প্রমান অনেক সময়েই পাওয়া কঠিন হয়। কিন্তু কোন সংগঠনের উচ্চপদস্থ আর নিম্নপদস্থ যেকোন রকমের যথেষ্ট পরিমানে সদস্য অপরাধে যুক্ত থাকার আলামত পেলেই প্রতিষ্ঠানটি নিষিদ্ধ ঘোষনার সুযোগ চলে আসে।

জামাতকে অপরাধের কারনে নিষিদ্ধের পথে না যেয়ে সংবিধান ও গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের পথ ধরে নিবন্ধন বাতিলের পথে যেয়ে কোর্ট ও সরকার দেশের রাজনীতি ও গনতন্ত্রের অপরিমেয় ক্ষতি করেছে। দেশের সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে কাউকে তাদের রাজনৈতিক তথা গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বিরত রাখার কোনো সুযোগ সংবিধানে নেই। এইরকম টেকনিক্যাল কারন দেখিয়ে রাজনীতি করার মতো মৌলিক অধিকার হরন করা খুবই খারাপ একটি প্রিসিডেন্স তৈরী করছে। এই পদক্ষেপ কেবল গনতন্ত্র আর সংবিধানকেই মুখোমুখি দাড় করায় নি, এটি সংবিধান আর ধর্মকেও সাংঘর্ষিক করেছে। এই সংঘর্ষের ফায়দা তোলার জন্যে জামাত এবং তার সহযোগী দলগুলো এরই মধ্যে তুমুল প্রচারণা শুরু করেছে।

রিটআবেদনকারীদের পক্ষে উকিলেরা এমনকি এই যুক্তি দেখাচ্ছে, যে গঠনতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল নিবন্ধনের অযোগ্য। তাই নিবন্ধনের পর ওই গঠনতন্ত্র সংশোধনের সুযোগ নেই। অর্থাৎ একবার আদেশ দেবার পরে সেটা সংশোধন করারও কোনো সুযোগ দেয়া যাবে না।

গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের মতো টেকনিক্যাল আইন দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ না নিতে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ অনেক সময়েই নেয়া হতো তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন অগনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। সামান্য অদল বদল করলে এইরকম আইন মারফত প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই বাদ দেয়া যায়। সম্ভবত দেশের জামাতবিরোধী ও সেক্যুলার দলগুলি নিশ্চিত হয়েছে যে তারা ক্ষমতা থেকে অচিরেই সড়ছে না। নাহলে এরকম আত্মঘাতি পদক্ষেপ নেয়ার কারন বের করা কঠিন। এই রকম অবিবেচক পদক্ষেপগুলি তাদের জ্ঞাত অথবা অজ্ঞাতসারেই শত্রুপক্ষের হাতে একের পর এক অস্ত্র তুলে দিচ্ছে যেটার একসময়ে তাদের দিকেই লক্ষ্য হতে পারে।

বাংলাদেশে সংবিধানের মূল্য দুইতৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। দুইতৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায়। ক্ষমতায় থাকার সময়ে দুইতৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পদক্ষেপগুলি কখনোই চ্যালেন্জের সম্মুখীন হয় না। সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে যে সংবিধানের মূলনীতির বিরুদ্ধ কোন আইন প্রনয়ন করা যাবে না। কিন্তু একের পর এক এমেন্ডমেন্ট মূলনীতিগুলিকে কাচকলা দেখিয়ে বিনা চ্যালেন্জে সংবিধিবদ্ধ হয়েছে। কেবল মাত্র সরকার পরিবর্তন হলেই এই সব এমেন্ডমেন্ট এর প্রতি বিরুদ্ধ সরকারের দৃষ্টি পড়েছে।

দুইতৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিয়মটি সুপ্রাচীনকাল থেকেই গনতন্ত্রে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো জনগনের তড়িৎ আবেগ থেকে রক্ষার জন্যে। জনতার এক বৃহৎ অংশ একমত হলেই মূল বিধান পাল্টানো যেতো। কিন্তু বাংলাদেশে শাসকদলের উপূর্যপুরি ব্যর্থতায় এখন দুইতৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অত্যন্ত সস্তা হয়ে গেছে। এই সস্তা সংখ্যাগরিষ্ঠতার সময়ে গনতন্ত্র রক্ষা আর তার ধারাবাহিকতার জন্যে সংবিধান আর আইনের অত্যেন্ত বিবেচনাপ্রসূত ব্যবহার প্রয়োজন।

(1) Prothom Alo, 5th August, 2013.

এই লেখাটির পরিবর্তীত আকারে ইংরেজীতে প্রকাশিত হয়েছিলো ALAL O DULAL ব্লগে ২/৮/১৩ তে।
http://alalodulal.org/2013/08/02/constitutionalism-run-amuck/