কুমীরের সাথে পিরিতি।

আকাশ মালিক।

আমাদের সমাজের কল্যাণকামী যে সব মৌলানা সাহেবান খাল কাটিয়া বেনোজল আনিয়াছিলেন, তাঁহারা যদি ভবিষ্যৎদর্শী হইতেন, তাহা হইলে দেখিতে পাইতেন বেনোজলের সাথে সাথে ঘরের পুকুরের জলও সব বাহির হইয়া গিয়াছে। উপরন্তু সেই খাল বাহিয়া কুসংস্কারের অজস্র কুমির আসিয়া ভিড় করিয়াছে। মৌলানা মৌলবী সাহেবকে সওয়া যায়, মোল্লা ও চক্ষুকর্ণ বুজিয়া সহিতে পারি, কিন্তু কাঠমোল্লার অত্যাচার অসহ্য হইয়া উঠিয়াছে। ইহাদের ফতুয়া-ভরা ফতোয়া, বিবি তালাক ও কুফরির ফতোয়া তো ইহাদের জাম্বিল হাতড়াইলে দুই দশ গন্ডা পাওয়া যাইবে। এই ফতুয়াধারী ফতোয়াবাজদের হাত হইতে গরীবদের বাঁচাইতে যদি কেহ পারে তো সে তরুণ’। – কবি নজরুল।

নজরুলের এই কথাটা বলার পর পদ্মা, মেঘনা যমুনায় অনেক জল গড়িয়েছে, ইতিহাসে অনেক অনেক নতুন নতুন অধ্যায় সংযোজন হয়েছে, পৃথিবী বদলেছে, বিবর্তন ঘটেছে বিশ্বভ্রম্মান্ডের সর্বত্র। নজরুলের সে বেনোজলে ভেসে আসা কুমীরের কি আদৌ পরিবর্তন হয়েছে? আজ এতোদিন পরে নজরুল ফিরে এসে কি তার সেই মোল্লার বিরুদ্ধে, ফতোয়ার বিরুদ্ধে কথাগুলো বলতে পারতেন? লক্ষ কোটি জীবন বিসর্জন, মান-সম্ভ্রম ইজ্জত দিয়ে একটি দেশ স্বাধীন করা গেল, কিন্তু বেনে ভেসে আসা কুমীরকে তাড়ানো গেলোনা। আমাদের পূর্বপুরুষদের মাটি চাপা দেয়া কুমীর, সম্পদ ও ক্ষমতা লোভী নষ্ট ভ্রষ্টদের সৃষ্ট উপযুক্ত পরিবেশে কচ্ছপের বাচ্চার মত মাটি ফুড়ে বেরিয়ে আসলো। নষ্টরা কুমীরের বংশবৃদ্ধির সকল আয়োজন করে চললেন বিয়াল্লিশটি বছর ধরে। বিয়াল্লিশ বছরে তারা বংশ বিস্তার করে যখন ছড়িয়ে পড়লো, দেশের খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর, ডোবা সকল জলাশয়ে তখন আমাদের চক্ষে শর্ষে ফুল, কপালে ভাঁজ, মাথায় হাত। এ কী হলো, এমন তো হওয়ার কথা ছিলনা।

নজরুল এ কুমীরকে তাড়ানোর তাগিদ দিয়ে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আহবান করেছিলেন। বলেছিলেন-‘ এই ঘরো যুদ্ধ ভাইয়ের সহিত, আত্মীয়ের সহিত যুদ্ধই সর্বাপেক্ষা বেদনাদায়ক। তবু উপায় নাই। যত বড় আত্মীয়ই হোক, তাহার যক্ষ্মা বা কুষ্ঠ হইলে তাহাকে অন্যত্র না সরাইয়া উপায় নাই। যে হাত বাঘে চিবাইয়া খাইয়াছে তাহাকে কাটিয়া ফেলিয়া দেওয়া ছাড়া প্রাণ রক্ষার উপায় নাই’।

আজ কুমীরের শক্তি দেখে কুমীর প্রেমিকদের গালে হাত, নির্বোধ-বোকার মত হা করে তাকিয়ে বলে- ‘এ কী হলো, এমন তো হওয়ার কথা ছিলনা’। সংবিধানে বিসমিল্লাহ জুড়ে দিয়ে, রাষ্ট্রের মাথায় টুপি পরানো হলো। অর্থাৎ নাকে খত পায়ে মল, দাসত্বের প্রথম শর্তাবলি পূরণ হলো। বলা হলো কুমীরের তেরোটা দাবীই প্রায় মেনে নেয়া হয়েছে, এমন কি অনেক দাবী না চাওয়াতেই নিজের খায়েশে পূরণ করা হয়েছে আগেই। এ যেন কুমীরের কাছে নিজের সন্তান বন্ধক দেয়া কিংবা যেছে যেছে প্রেম বিলানো। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এ প্রেমকে আমরা বলি, যাছিয়া যাছিয়া নিজের কাপড়ে হাঙ্গা বসা। ল্যাঙ্গের সাথে হাঙ্গার সখ এতই তীব্র হলো যে নিজের সন্তানকে ত্যাজ্যপুত্র করে অস্বীকার করা হলো তার অস্তিত্ব, বন্দী করা হলো তাকে অন্যায়ভাবে। ঘি ছাড়াই শুরু হলো রাধিকানৃত্য। বলা হলো- নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা বেলেল্লাপনা আমরাও ভালা পাইনা। এ হলো ঘোমটা পরে নাচতে নামা। নামতে নামতে আকণ্ঠ জলে নেমে কুমীরের সাথে পিরিতি। পিরিতের বাসর রাতে কী ঘটেছিল, সারা দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছে আপন চক্ষে। তিন দল কুমীরের মেলা বসেছিল শাপলা চত্বর আর মতিঝিলে। এক দল কুমীরের সপ্ন ছিল ৬ মে ২০১৩, রাত পোহালেই মানুষ দেখবে বাংলার খলিফা আমিরুল মোমেনিন পদে শাফি সাহেব, আর মখমল চাদর পরা প্রধান মন্ত্রীর আসনে হেলান দিয়ে বসে আছেন হুজুর বাবুনগরী। আরেকদল সপ্ন দেখেছিল ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের। উচ্ছিষ্টভোগী তৃতীয় দল কল্পনা করেছিল প্রেসিডেন্টের আসনে গোলাম আজম আর প্রধান মন্ত্রী পদে চন্দ্রারোহী সাঈদীকে। ৪৮ ঘণ্টার ডেডলাইন, রাজধানী অবরোধের সময় তারিখ সবই পরিকল্পনা মোতাবেক ছিল। কিন্তু এবার বেহুলা আর ভুল করলোনা সে সারা রাত জেগেই রইলো। সেই ভয়ংকর রাতের কিছু সাক্ষী এখানে উপস্থাপিত করে বিচার বিশ্লেষণের ভার পাঠকদের হাতেই ছেড়ে দেবো। প্রথমেই সেই পিরিতের অসংখ্য কুমীর যারা আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, বেডরুম থেকে সংসদ পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার একটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেই-

বাংলাদেশে মুসলমান গনহত্যা-

দেশের সম্পদ বৃক্ষ নিধনে কুমীর ছানারা-

যে ভাবে খালি করা হলো শাপলা চত্বর- কাদির কল্লোল

Last minute call changes it all
Daily Star.

সাংবাদিকদের চোখে দেখা সেই রাত- ekattor.tv

অপারেশন শাপলা, মতিঝিল ৬ মে ২০১৩- হেফাজতি তান্ডবের অনুসন্ধানী ভিডিও-