রেশমা এক অসম -সাহসী নারীর নাম, রেশমা এক বিপুল প্রাণ-শক্তিতে ভরপুর বাঙালি বীরের নাম, রেশমা এক মরণজয়ী মানুষের নাম ! ২৪ শে এপ্রিল যে মানুষরুপী পিশাচ গার্মেন্টস মালিকরা রেশমার মত হাজার হাজার নিরীহ শ্রমিককে এক মৃত্যুকূপে ঠেলে দিয়েছিল – রেশমা তাদের গালে এক মহা চপেটাঘাত মেরে বিজয়ীর বেশে সেই “রাক্ষস প্লাজার” ধ্বংসস্তুপ থেকে বের হয়ে এল একদল মহা- হৃদয়বান মানুষের সহায়তায় ! যেদিন রাক্ষস প্লাজা ধসে পড়ল – ভাগ্যের জোরেই অথবা বুদ্ধির জোরেই হোক রেশমা প্রাণে বেঁচে গেল ! কিন্তু আটকে পড়ল সেই ভয়ঙ্কর মৃত্যুপুরীতে – সে বাঁচার জন্য প্রাণপণ চিৎকার করলো – কিন্তু সেই অন্ধকার গহবর থেকে তার আর্তনাদ বাইরের জনসমুদ্রে এসে তরঙ্গায়িত হলো না ! তবু সে নিরাশ হলো না – বাঁচার আশা ছাড়ল না !- মরণের সাথে যুদ্ধে নামল ! কোথা থেকে পেল রেশমার মত এক সাধারণ বালিকা এমন অসম সাহস – যে যুদ্ধ করবে মৃত্যুর সাথে !!!!!

আমাদের এই পোড়া দেশে রেশমার মত মেয়েদের জন্মের পর থেকেই প্রতিক্ষণ, প্রতিদিন যুদ্ধ করে করেই টিকে থাকতে হয় – প্রতিনিয়ত তাদের যুদ্ধ করতে হয় ক্ষুধার সাথে – দারিদ্রের সাথে, তাদের যুদ্ধ করতে হয় সমাজের অজস্র অন্যায় আর অবিচারের সাথে ! তাদের যুদ্ধ করতে হয় রক্তচোষা ধন-লোভীদের রক্তচক্ষুর সাথে ! এমনি করে জীবনভর যুদ্ধ করে করেই রেশমা বোধ হয় হয়ে উঠেছে অসম সাহসী ! আর এই জীবন থেকে শেখা এই সাহসের উপর ভর করেই মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও এই বালিকা দমল না ! আশায় বুক বেঁধে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে শুরু করলো ! সহকর্মীদের পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট খাবার আর মরন্কুপের দেয়ালের ফাটল দিয়ে ছুঁয়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জল পান করে প্রাণপণ চেষ্টা শুরু করলো নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে ! একদিন …দুদিন …তিনদিন করে পুরো সতের দিন – তবু রেশমা আশা ছাড়ে নি – হয়ত এই অন্ধকার কূপ থেকে বের হবার একটা পথ বের হবে – হয়ত বাঁচার একটা উপায় মিলবে ! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি রেশমার সাহস আর আশা জয়ী হলো ! মৃত্যু পরাভব মানলো রেশমার কাছে !!!!!!!!!!!

কামনা করি হৃদয়ের গভীর থেকে এই মরণজয়ী বালিকা শীঘ্রই সম্পূর্ণ সুস্হ হয়ে উঠুক ! মরণের সাথে তাঁর এই অকুতভয় যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁর আত্মশক্তিকে আরো বলিয়ান করুক ! আর তাঁর এই দুর্বিনীত আত্মশক্তি হোক তাঁর আগামী দিনের পথ চলার পাথেয়
! কামনা করি তাঁর সেই সাহস আর অদম্য জীবনীশক্তি এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিবাদের ভাষা হয়ে সমাজের সব অন্যায়, অবিচার আর অন্ধত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে !

আশা করি মৃত্যুঞ্জয়ী রেশমার এই জীবনগাঁথা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ জানবে – কামনা করি তাঁর এই মরণজয়ী প্রাণ-শক্তির চেতনা প্রতিটি মানুষের অন্তরে সঞ্চারিত হবে !

আমাদের বীর সন্তানেরা যারা পরম মমতায় আর অসীম সতর্কতায় রেশমাকে মরনকূপ থেকে উদ্ধার করলো তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ স্যালুট, আর রেশমা – তোমার তরে আমার হাজার সালাম !!!! সবশেষে অন্তর থেকে কামনা করি তুমি দীর্ঘজীবি হও !!