কিছু দিন আগে মুক্তমনায় বিপ্লব পাল একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলেন ‘নাস্তিকতা মানুষের মনের স্বাভাবিক অবস্থা। আস্তিকতা হচ্ছে মনের বিকৃত অবস্থা। প্রতিটা শিশু যখন জন্মায় সে আল্লা, ঈশ্বর-হিন্দু মুসলমান কিছুই জানে না। প্রতিটি শিশুই নাস্তিক।` এর প্রত্যুত্তরে একাধিক মন্তব্যে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে । এটা সত্যি যে আস্তিকতা ও ভাষা কৃত্রিমভাবে মানুষকে শেখানো হয় । কিছু অনুভূতিসূচক (ক্রোধ, কাম, ক্ষুধা, আনন্দ, বেদনা ইত্যাদিসূচক) ইণ্টুইটিভ আওয়াজ (কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে হাসি-কান্নায় পরিণত, কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে এই স্বর থেকে সঙ্গীতের জন্ম) এবং অঙ্গসঞ্চালন (কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে যা নৃত্যে পরিণত) হচ্ছে প্রাণীর ভাব প্রকাশের সবচেয়ে সহজাত মাধ্যম । উন্নত প্রাণী হিসেবে মানুষ উন্নত বিবর্তিত ভাষার সৃষ্টি করেছে । মানুষ বিবর্তিত ধর্মীয় সমাজব্যবস্থারও জন্ম দিয়েছে । তবে মানুষের সব সভ্যতায় ধর্মের সৃষ্টি হয়নি, যেমন উত্তর এশিয়া, উত্তর-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার উত্তরাঞ্চল । ধর্ম ও ঈশ্বর যদি স্বাভাবিক হতো তবে মানুষকে ধর্মপথে চালিত করবার জন্য এতো কাঠ-খড় পোড়াতে হতো না, ধর্মে এতো কৃত্রিম আচার-অনুষ্ঠান ও স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ ও তথাকথিত রক্ষণশীলতা থাকতো না, নারীত্বের অবমাননা ও সমাজপতিদের রক্তচক্ষু থাকত না । বরং ধর্ম হতো অনেকবেশি সহজাত (তাই আদিবাসীদের ধর্মগুলো অসম্পূর্ণ হলেও সহজাত প্রকৃতিঘেঁষা)। কিন্তু প্রচলিত বড় ধর্মগুলোর সহজাত আচরণের বিরোধিতা ও রক্তচক্ষু দেখেই বোঝা যায় এগুলো কোনটাই প্রকৃতির সহজাত বৈশিষ্টসম্পন্ন নয় (বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধের কথা বাদই দিলাম)। তাই নাস্তিকতা মানুষের মনের স্বাভাবিক অবস্থা একথা আমরা স্বীকার করে নিতে পারি । কিন্তু বাংলা ‘নাস্তিকতা` শব্দটির ব্যবহার ব্যপকার্থে । ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত সমাজগুলো মতে সাধারণত: যে ব্যক্তি কোন ধর্মে বিশ্বাসী নন তিনিই ‘নাস্তিক` বলে বিবেচিত হন । কিন্তু ব্যক্তিভেদে এই বিশ্বাস-অবিশ্বাস বিষয়টি অনেক জটিল । কেউ আছেন যাঁরা প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে এবং প্রচলিত ধর্মগ্রন্থবর্ণিত ঈশ্বরে বিশ্বাসী নন, কিন্তু আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী, অর্থাত্ বস্তুবাদী নন, এঁদেরকে ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী বলা হয় (Spiritual But Not Religious – SBNR) । যাঁরা মনে করেন কোন ঐশ্বরিক শক্তি আছে কি নেই সে বিষয়ে কখনোই জানা সম্ভব নয় তাঁদের বলা হয় গোঁড়া অজ্ঞেয়বাদী (Strict Agnostic)। যাঁরা মনে করেন কোন ঐশ্বরিক শক্তি আছে কি নেই সে বিষয়ে কখনোই জানা সম্ভব নয় কিন্তু ধর্মপালন করেন এঁদেরকে আস্তিক অজ্ঞেয়বাদী (Agnostic Theist) বলা হয় । ঈশ্বর থাকুক কিংবা না থাকুক এতে কিছুই এসে যায় না এঁদের বলা হয় অ্যাপাথিস্ট (Apatheist) । যাঁরা কোন অলৌকিকতা ও আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী নন এবং যে কোন প্রশ্নে বিজ্ঞানপন্থী ও যুক্তিবাদী তাঁরা হচ্ছেন বস্তুবাদী (Materialist)। মূলত বস্তুবাদী চিন্তা-ভাবনাই আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের উত্স্য । বস্তুবাদীরাই বিজ্ঞান ও যুক্তির সবচেয়ে বড় সমর্থক । সেক্ষেত্রে মানুষের মনের সবচেয়ে স্বাভাবিক অবস্থা কি ? বস্তুবাদী ? আপাত: দৃষ্টিতে বিশ্ব জগতের সাথে সম্পর্ক যুক্ত করলে বস্তুবাদী অবস্থাকেই সবচেয়ে স্বাভাবিক অবস্থা হিসেবে মনে হয় । কিন্তু বস্তুবাদকে আধ্যাত্মবাদে পরিণত করা সহজ নয় অথবা অসম্ভব । সম্ভবত: ২০০৫ সালের দিকে ইংল্যাণ্ডের এক বিজ্ঞানী দেখিয়েছিলেন যে মানুষের মনের ক্রম:বিবর্তিত হওয়ার ক্ষমতা আস্তিকতাবাদের জন্ম দিয়েছে । সেক্ষেত্রে আমার মনে একটি প্রশ্ন জাগে যে মানুষের মনের স্বাভাবিক অবস্থা বস্তুবাদী নয়, বরং অজ্ঞেয়বাদী, যদিও এটি যুক্তির মাধ্যমে সংশোধনযোগ্য ধারণা ।

পশ্চিম ইউরোপে ধর্মে অবিশ্বাসীদের বিপুল জনসংখ্যাধিক্যের অনেকগুলো কারণের অন্যতম হচ্ছে পরিবারপ্রথার গুরুত্ব কমে যাওয়া । ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ধর্মবিহীনতার একটি বড় উত্স্য । মানুষের ধর্মবিশ্বাসের সর্ববৃহত্ উত্স্য তার পরিবার ও সমাজ । প্রাক্তন কমিউনিস্ট শাসিত পূর্ব ইউরোপের চেয়ে পশ্চিম ইউরোপে মেটিরিয়ালিস্ট এবং অ্যাগ্নস্টিকদের শতকরা হার বেশি । উল্লেখ্য কমিউনিস্ট দেশগুলোতে সরকারী প্রচার মাধ্যম ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নাস্তিকতা প্রচার করা হয়, যার কারণে আর্থ-সামাজিক ভাবে এবং বাক ও ব্যক্তিস্বাধিনতার দিক দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের সমতুল্য না হওয়া সত্ত্বেও প্রাক্তন কমিউনিস্ট দেশগুলোতে একটি বড় ধর্মবিহীন জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে । তবে পূর্ব এশিয়াতে আগে থেকেই একটি বড় ধর্মবিহীন জনগোষ্ঠী ছিলো । ইউরোব্যারোমিটার পোল ২০১০, ইউরোব্যারোমিটার পোল ২০০৫, উইকিপিডিয়া, সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক, গ্যালাপ পোল ২০০৯, গ্যালাপ পোল ২০০৮, পিউ রিসার্চ সেণ্টার সহ বিভিন্ন উত্স্য থেকে পাওয়া তথ্যে (পরষ্পর বিরোধিতা সত্ত্বেও) ধারণা করা যায় পৃথিবীতে শিক্ষার হার ও মাথাপিছু গড় ক্রয়ক্ষমতা যে দেশগুলোতে বেশি এবং Human Development Index (HDI) উঁচু পর্যায়ে সেসব দেশে ধর্মের প্রভাব সবচেয়ে কম । এছাড়া ধর্মীয় প্রভাব কমার ক্ষেত্রে অন্য বড় কারণগুলো হচ্ছে অবাধ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, বাকস্বাধিনতা, আধুনিক শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তি ও মিডিয়ার প্রসার । এখানেই ভূতপূর্ব কমিউনিস্ট শাসিত পূর্ব ইউরোপের চেয়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও বাকস্বাধিনতাপন্থী উন্নত অর্থনীতি ও উচ্চ HDI অধিকারী পশ্চিম ইউরোপের পার্থক্য ।

বিশ্বের সর্বাধিক অধার্মিক ও ধর্মবিহীন মানুষের বসবাস চায়নাতে । সবচেয়ে বেশি বস্তুবাদী, আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক, নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী ও অজ্ঞেয়বাদী মানুষের সংখ্যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে । সবচেয়ে বেশি ঈশ্বর ও আধ্যাত্মবিশ্বাসী ও ধর্মানুসারী মানুষের সংখ্যা ভারতে । মহাদেশ হিসেবে ইউরোপ অধার্মিক ও ধর্মবিহীন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ । এশিয়াতে নিরঙ্কুশ না হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি অধার্মিক ও ধর্মবহীন জনগোষ্ঠীর বাস । বস্তুবাদী জনগোষ্ঠীর সর্ববৃহত্ বাস এশিয়াতে হলেও জনসংখ্যার শতকরা অনুপাতে ইউরোপে সর্বাধিক । ধার্মিক ও আধ্যাত্মবিশ্বাসী জনগোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা অনুপাতে আফ্রিকায় সর্বাধিক কিন্তু সংখ্যার বিচারে এশিয়ায় সর্বাধিক ।

অনেক রাষ্ট্রে অবিশ্বাসীদের কে আলাদা ভাবে গণনা করা হয় না, বিশেষত: মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রে কিংবা ভারতের মতো তথাকথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষ` রাষ্ট্রে । আবার অনেক রাষ্ট্রে ছোট্ট শিশুদেরকেও পরিবারের সাথে নির্দিষ্ট ধর্মীয় পরিচয়ের ভেতর গণনা করা হচ্ছে এবং ১৮ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত আত্মস্বীকৃত অবিশ্বাসীদেরও নাস্তিক হিসেবে স্বীকৃতি মিলছে না । তাই বলা যায় অনেক রাষ্ট্রে ধর্মীয় জনসংখ্যা অতিরঞ্জিতভাবে দেখানো হচ্ছে এবং পৃথিবীর মোট জনসংখ্যায় নাস্তিক জনসংখ্যা যা দেখানো হচ্ছে বাস্তবে তা অনেক বেশি । এক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলো অনেক সঠিকভাবে দেখাচ্ছে । তবে পশ্চিমের মানুষদের ভেতর এবং বিভিন্ন দেশের ইহুদী ও শিক্ষিত হিন্দুদের অনেকের মধ্যে একটি প্রবণতা আছে, অবিশ্বাসী হলেও পরিবারের ঐতিহ্যগত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নামকে নিজের পরিচয় হিসেবে ব্যবহার করা । আজেরবাইজান, আল্বানিয়া এবং কাজাখস্তান আরও কিছু অঞ্চলের ‘মুসলিম`-দের মধ্যেও এটা দেখা যায় । অনেক মুসলিম দেশেই নাগরিকদেরকে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসকে বাধ্যতামূলকভাবে ঘোষণা দিতে হয় যেখানে ‘নাস্তিক` বলে কোন পরিচিতির সরকারী স্বীকৃতি নেই, ‘ইসলামী` রাষ্ট্রগুলোতে তো বটেই এমনকি ইন্দোনেশিয়ার মতো রাষ্ট্রেও এটা প্রচলিত ! ভারত ও বাংলাদেশে যদিও বাধ্যতামূলকভাবে কাউকে ধর্মীয় পরিচয় ঘোষণা দিতে হয় না, কিন্তু সরকারীভাবে কোন এথিস্ট পপুলেশন দেখানো হয় না (ট্যাবু) । ভারতে সব অমোঙ্গোলয়েড আদিবাসী ও সব ধরণের অচ্ছুতদের ‘হিন্দু` হিসেবে দেখানো হয় এবং মুসলিম জনসংখ্যা বাস্তবের চেয়ে অনেক কম দেখানো হয়, অবিশ্বাসী ও সেক্যুলার জনসংখ্যা দেখানো হয় না, মনে হয় ভারতের সব মানুষই কোন না কোন ধর্মের অনুসারী, তাও প্রধানত: ‘হিন্দু` (মনুবাদী ব্রাহ্মণ্যবাদী) !

বিশ্ব ধর্মীয় জনসংখ্যা (পিউ রিসার্চ সেণ্টার, ২০১২):
খ্রিশ্চ্যান ৩১.০৫%*
মুসলিম ২৩.২%*
ধর্মবিহীন ১৬.৩%†
হিন্দু ১৫%*
বৌদ্ধ ৭.১%*
লোকধর্মসমূহের অনুসারী ৫.৯%*
অন্যান্য ধর্ম ও কাল্ট –সমূহের অনুসারী ০.৮%*
জুডাইস্ট ০.২%*
* ধর্মানুসারী এবং ধর্মপরিচয়ে পরিচিত কিন্তু অধার্মিক কিংবা নাস্তিক – এদের মিলিত সংখ্যা ।
† বস্তুবাদী, নাস্তিক অজ্ঞেয়বাদী ও ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী – এদের মিলিত সংখ্যা ।

অধার্মিক জনসংখ্যা (অধার্মিক ধর্মবিশ্বাসী, আস্তিক অজ্ঞেয়বাদী ও ধর্মবিহীনদের মিলিত জনসংখ্যা) ৩৬% (উইকিপিডিয়া, ২০১২)
অধার্মিক জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ এমন রাষ্ট্রগুলোর তালিকা নিচে দেয়া হলো । এখানে মাথাপিছু গড় ক্রয়ক্ষমতা কম এবং Human Development Index (HDI) উঁচু নয় এরকম দেশও রয়েছে । অধার্মিক বলতে বস্তুবাদী, অজ্ঞেয়বাদী, ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী, ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক – এঁদের সকলকেই গণনা করা হয়েছে ।
যেসব রাষ্ট্রে অধার্মিক জনগোষ্ঠী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ:
null
(১) = (২) + আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক + নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী
(২)=(৩)+(৪)+(৫)
(১) অধার্মিক জনসংখ্যা : ধার্মিকতার অভাব (Lack Of Religiosity) রয়েছে এমন জনসংখ্যা । ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মপালন – যুগপত্ যাঁরা ধারণ ও প্রতিপালন করেন তাঁদের ‘ধার্মিক` হিসেবে ধরে বাকি আর যাঁরা রয়েছেন তাঁদের সকলকে ‘অধার্মিক` হিসেবে ধরা হয়েছে । বস্তুবাদী, আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক, নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী, ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী, অজ্ঞেয়বাদী – এঁদের সকলকেই অধার্মিক গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছে ।
আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক : যাঁরা ঐতিহ্যগত কারণে ধর্মীয় পরিচয়ে বিশ্বাসী কিন্তু ধর্মকে জীবনের খুব প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দেন না ও ধর্মকর্মে কখনো গুরুত্ব দেন না ।
নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী : কিছু ব্যক্তি আছেন যাঁরা ঐতিহ্যগত কারণে ধর্মীয় পরিচয়ে বিশ্বাসী কিন্তু ধর্মে বিশ্বাসী নন ।
(২) ধর্মবিহীন জনসংখ্যা (Irreligious Population) : বস্তুবাদী, অজ্ঞেয়বাদী ও ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী – এঁদের সকলকে এই গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছে ।
(৩) ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী (SBNR – Spiritual But Not Religious): প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে এবং প্রচলিত ধর্মগ্রন্থবর্ণিত ঈশ্বরে বিশ্বাসী নন, কিন্তু আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী, অর্থাত্ বস্তুবাদী নন ।
(৪) নাস্তিক অজ্ঞেয়বাদী (Agnostic Atheists) : যাঁরা ঈশ্বরে সন্দেহবাদী কিংবা ঈশ্বরকে কখনোই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় মনে করেন কিংবা ঈশ্বরে বিশ্বাস-অবিশ্বাস কোনটাই নেই – এঁদের সকলকে এই গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছে ।
(৫) বস্তুবাদী (Materialists) : যাঁরা কোন অলৌকিকতা ও আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী নন এবং যে কোন প্রশ্নে বিজ্ঞানপন্থী ও যুক্তিবাদী ।
ইউরোপীয় দেশগুলোর তথ্যসূত্র: ইউরোব্যারোমিটার পোল ২০১০ ও ২০০৫, সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক, গ্যালাপ পোল ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ । ইউরোব্যারোমিটার পোল-এর জরিপ সঠিকতার সবচেয়ে নিকটবর্তী এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে একে গুরুত্ব দেয়া হয় ।
অন্যান্য দেশগুলোর তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক, গ্যালাপ পোল ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ ।
ফাঁকা ঘর (Cell)-গুলোর তথ্য-উপাত্ত আমার কাছে নেই ।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত দেশসমূহ যেখানে অধার্মিক জনসংখ্যা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ:
null
** প্রাক্তন পূর্ব জার্মান ভূখণ্ডে ৫২% বস্তুবাদী (ইউরোব্যারোমিটার পোল ২০০৫) ।
(১) = (২) + আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক + নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী
(২)=(৩)+(৪)+(৫)
(১) অধার্মিক জনসংখ্যা : ধার্মিকতার অভাব (Lack Of Religiosity) রয়েছে এমন জনসংখ্যা । ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মপালন – যুগপত্ যাঁরা ধারণ ও প্রতিপালন করেন তাঁদের ‘ধার্মিক` হিসেবে ধরে বাকি আর যাঁরা রয়েছেন তাঁদের সকলকে ‘অধার্মিক` হিসেবে ধরা হয়েছে । বস্তুবাদী, আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক, নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী, ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী, অজ্ঞেয়বাদী – এঁদের সকলকেই অধার্মিক গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছে ।
আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক : যাঁরা ঐতিহ্যগত কারণে ধর্মীয় পরিচয়ে বিশ্বাসী কিন্তু ধর্মকে জীবনের খুব প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দেন না ও ধর্মকর্মে কখনো গুরুত্ব দেন না ।
নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী : কিছু ব্যক্তি আছেন যাঁরা ঐতিহ্যগত কারণে ধর্মীয় পরিচয়ে বিশ্বাসী কিন্তু ধর্মে বিশ্বাসী নন ।
(২) ধর্মবিহীন জনসংখ্যা (Irreligious Population) : বস্তুবাদী, অজ্ঞেয়বাদী ও ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী – এঁদের সকলকে এই গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছে ।
(৩) ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী (SBNR – Spiritual But Not Religious): প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে এবং প্রচলিত ধর্মগ্রন্থবর্ণিত ঈশ্বরে বিশ্বাসী নন, কিন্তু আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী, অর্থাত্ বস্তুবাদী নন ।
(৪) নাস্তিক অজ্ঞেয়বাদী (Agnostic Atheists) : যাঁরা ঈশ্বরে সন্দেহবাদী কিংবা ঈশ্বরকে কখনোই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় মনে করেন কিংবা ঈশ্বরে বিশ্বাস-অবিশ্বাস কোনটাই নেই – এঁদের সকলকে এই গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছে ।
(৫)বস্তুবাদী (Materialists) : যাঁরা কোন অলৌকিকতা ও আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী নন এবং যে কোন প্রশ্নে বিজ্ঞানপন্থী ও যুক্তিবাদী ।
তথ্যসূত্র: ইউরোব্যারোমিটার পোল ২০১০ ও ২০০৫, সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক, গ্যালাপ পোল ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ । ইউরোব্যারোমিটার পোল-এর জরিপ সঠিকতার সবচেয়ে নিকটবর্তী এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে একে গুরুত্ব দেয়া হয় ।
যেসব রাষ্ট্রে অধার্মিক জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় কিন্তু সম্মিলিতভাবে একক কোন ধর্মের অনুসারীদের চেয়ে বড়:
null
(১) = (২) + আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক + নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী
(২)=(৩)+(৪)+(৫)
(১) অধার্মিক জনসংখ্যা : ধার্মিকতার অভাব (Lack Of Religiosity) রয়েছে এমন জনসংখ্যা । ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মপালন – যুগপত্ যাঁরা ধারণ ও প্রতিপালন করেন তাঁদের ‘ধার্মিক` হিসেবে ধরে বাকি আর যাঁরা রয়েছেন তাঁদের সকলকে ‘অধার্মিক` হিসেবে ধরা হয়েছে । বস্তুবাদী, আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক, নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী, ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী, অজ্ঞেয়বাদী – এঁদের সকলকেই অধার্মিক গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছে ।
আস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী অধার্মিক : যাঁরা ঐতিহ্যগত কারণে ধর্মীয় পরিচয়ে বিশ্বাসী কিন্তু ধর্মকে জীবনের খুব প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দেন না ও ধর্মকর্মে কখনো গুরুত্ব দেন না ।
নাস্তিক ধর্মপরিচয়বাদী : কিছু ব্যক্তি আছেন যাঁরা ঐতিহ্যগত কারণে ধর্মীয় পরিচয়ে বিশ্বাসী কিন্তু ধর্মে বিশ্বাসী নন ।
আস্তিক অজ্ঞেয়বাদী : যাঁরা ঈশ্বরে সন্দেহবাদী কিংবা ঈশ্বরকে কখনোই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় মনে করেন কিন্তু ধর্মপালন করেন ।
(২) ধর্মবিহীন জনসংখ্যা (Irreligious Population) : বস্তুবাদী, নাস্তিক অজ্ঞেয়বাদী ও ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী – এঁদের সকলকে এই গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছে ।
(৩) ধর্মবিহীন আধ্যাত্মবাদী (SBNR – Spiritual But Not Religious): প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে এবং প্রচলিত ধর্মগ্রন্থবর্ণিত ঈশ্বরে বিশ্বাসী নন, কিন্তু আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী, অর্থাত্ বস্তুবাদী নন ।
(৪) নাস্তিক অজ্ঞেয়বাদী (Agnostic Atheists) : যাঁরা ঈশ্বরে সন্দেহবাদী কিংবা ঈশ্বরকে কখনোই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় মনে করেন কিংবা ঈশ্বরে বিশ্বাস-অবিশ্বাস কোনটাই নেই এবং কোন ধর্মের অনুসারী নন – এঁদের সকলকে এই গোষ্ঠীতে ধরা হয়েছে ।
(৫)বস্তুবাদী (Materialists) : যাঁরা কোন অলৌকিকতা ও আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী নন এবং যে কোন প্রশ্নে বিজ্ঞানপন্থী ও যুক্তিবাদী ।
তথ্যসূত্র: গ্যালাপ পোল ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ এবং উইকিপিডিয়া । ইউরোব্যারোমিটার পোল-এর জরিপ সঠিকতার সবচেয়ে নিকটবর্তী এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে একে গুরুত্ব দেয়া হয় ।
অন্যান্য দেশগুলোর তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক, গ্যালাপ পোল ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ ।
ফাঁকা ঘর (Cell)-গুলোর তথ্য-উপাত্ত আমার কাছে নেই ।

সংখ্যালঘু হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অধার্মিক জনগোষ্ঠী বাস করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে । বিশেষ করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গদের ভেতর অধার্মিকতা উচ্চ সংখ্যক (সম্ভবত: শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের ভেতর এবং মাছাপিছু গড় ক্রয়ক্ষমতায় সবচেয়ে ওপরে অবস্থান করা নিউ ইংল্যাণ্ডের স্টেটগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ) ।
ইউ.এস.এ. (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র): অধার্মিক ২০%-৩৭.৩%, যার ভেতর ধর্মবিহীন জনসংখ্যা ২০%-এর মতো ।

অধার্মিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন দেশসমূহ (সঠিক তথ্য-উপাত্ত না থাকায় ছকভুক্ত করা হয়নি): গার্ণ্জি (চ্যানেল আইল্যাণ্ডজ), গ্রিন্ল্যাণ্ড, জার্জি (চ্যানেল আইল্যাণ্ডজ), ফকল্যাণ্ড আইল্যাণ্ডজ, ফ্যারো আইল্যাণ্ডজ, সিঙ্গাপোর । এর বাইরেও অন্য দেশ থাকতে পারে ।
একাধিক জরিপে আস্তিক-নাস্তিক প্রশ্নে যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা নিম্নরূপ:
(০১) উচ্চ আই.কিউ. (I.Q.) অধিকারী ব্যক্তিদের ভেতর তুলনামূলকভাবে নাস্তিকতা বেশি দেখা যায় ।
(০২) কম আই.কিউ. অধিকারী ব্যক্তিদের ভেতর ধর্মান্ধতা বেশি দেখা যায় ।
(০৩) বেশি আই.কিউ. গড়ের জনগোষ্ঠীগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম আই.কিউ. গড়ের জনগোষ্ঠীগুলোর তুলনায় ধার্মিকতা কম হয় ।
(০৪) অর্থনৈতিক ভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীগুলোতে সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠীগুলোর তুলনায় ধর্মীয় উন্মাদনা বেশি হয় ।
(০৫) আধুনিক উচ্চশিক্ষিতদের ভেতর কমশিক্ষিত/অশিক্ষিত –দের তুলনায় ধার্মিকতা কম হয় ।
(০৬) বিজ্ঞান শিক্ষিত ও বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের ভেতর বস্তুবাদিতা বেশি দেখা যায় ।
(০৭) মোঙ্গোলয়েড ও শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কালো ও বাদামি বর্ণের জনগোষ্ঠীগুলোতে ধর্মবিশ্বাস বেশি দেখা যায় ।***
(০৮) ইতিহাসের অন্ধকার যুগেও নর্ডিক (উত্তর ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ)–দের ভেতর যুক্তিবাদী হওয়ার প্রবণতা এবং পীতাঙ্গ (নর্দার্ণ মোঙ্গোলয়েড)–দের ভেতর অ্যাপোথীস্ট (ধর্মে অনুত্সাহী) হওয়ার প্রবণতা অন্য জনগোষ্ঠীগুলোর তুলনায় বেশি দেখা গেছে ।
(০৯) গড়পরতা পুরুষদের ভেতর যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর প্রবণতা গড়পরতা নারীদের চেয়ে বেশি দেখা যায় ।****
(১০) ধার্মিকতাপ্রধান দেশের চেয়ে অধার্মিকতাপ্রধান দেশগুলোতে দুনীর্তি কম হয় এবং সুশাসন ও যুক্তিপূর্ণ ন্যায়বিচার প্রচলিত করার জন্য মানুষের আগ্রহও বেশি থাকে ।
*** সম্ভবত: ঐতিহাসিক পশ্চাদ্পদতার কারণে (নিজস্ব অভিমত) ।
(১১) উন্নত দেশগুলোসহ সমস্ত পৃথিবীতেই বিগত প্রতি দশকের নতুন প্রজন্মগুলোতে তার পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোর তুলনায় অধার্মিকতা ও নাস্তিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
**** সম্ভবত: ভূতপূর্ব যুগে বেশির ভাগ সমাজে নারী শিক্ষার প্রচলন কম থাকার কারণে (নিজস্ব অভিমত) ।
পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মগুলোতে মানুষের যুক্তিবোধ (Rationality) ও বিবেকবোধ (Conscience) ছোটবেলা থেকেই নষ্ট করে দেয়া হয় । আসলে যুক্তিবোধ ও বিবেকবোধের অভাবকে ধর্ম দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয় । ধর্ম টিকে থাকার এটি একটি প্রধান অবলম্বন । একারণে ধার্মিকতাপ্রধান সমাজের মানুষের ভেতর ধীশক্তি (Intelligence) ও সহজাত নীতিবোধ কম থাকে (Conscience) । এসব দেশে শুধু রাষ্ট্রযন্ত্র নয় বরং সাধরণ মানুষও সুযোগ পেলে দুর্নীতি করে । অন্যদিকে ধীশক্তিসম্পন্ন মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধবোধ বেশি থাকে এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধসম্পন্ন মানুষের বিবেকবোধ বেশি থাকে ।
পৃথিবীতে বিগত প্রতি দশককে হিসেবে নিয়ে দেখা যাবে তার পূর্ববর্তী দশকগুলোর প্রজন্মগুলোর তুলনায় ঐ দশক ও তার পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে অধার্মিকতা ও বস্তুবাদিতা বৃদিধ পেয়েছে । যেমন ১৯৭০ দশক কিংবা ১৯৯০ দশককে টাইমলাইন ধরে এর পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোর তুলনায় এর পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে অধার্মিকতা ও নাস্তিকতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে । মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে যদিও মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় তার কারণ অমুসলিমদের দেশত্যাগ । কিন্তু এখানে শুভঙ্করীর ফাঁকি হচ্ছে সত্যিকারভাবে মুসলিম সমাজে অধার্মিকতা ও নাস্তিকতা কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে তা দেখানো হয় না ।