[নাস্তিক শব্দটা আজকে এদেশে পরিণত হয়েছে একটা জনপ্রিয় গালিতে। নাস্তিকদের সম্পর্কে প্রচলিত কিছু অতিকথন ব্যবহার করেই ধর্ম ব্যবসায়ী আর মৌলবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনকে বিষিয়ে তুলছে। অথচ অবিশ্বাসের দর্শন সম্পর্কে সঠিক ধারণা নাস্তিকতাকে এক প্রশংসনীয় জীবনদর্শন হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে পারত আজকের বাংলাদেশে। এ ব্যাপারে গণসচেতনতা এবং মুক্ত আলাপ আলোচনাই নাস্তিকদের সম্পর্কে ভীতি আর বিরূপ মনোভাব দূর করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। লস এঞ্জেলেস টাইমসে ২০০৬ সালে খ্যাতিমান লেখক এবং নিউরো সাইন্টিস্ট স্যাম হ্যারিস প্রকাশ করেছিলেন নাস্তিকদের সম্পর্কে ১০ টা প্রচলিত অতিকথন এবং তাদের খন্ডন। এরকম ছোট ছোট লেখা নাস্তিকতার স্বরূপ সম্বন্ধে মানুষকে অল্প সময়ের মধ্যে ভালোভাবেই অবহিত করতে পারে। এগুলোর প্রচারের মাধ্যমেই কাজটা শুরু করা যাক না! আর্টিকেলটার অনুবাদ এর আগেও প্রকাশ হয়েছে কিনা মুক্তমণায় আমার জানা নেই। যদি পূণঃপোস্ট হয়ে থাকে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। – অনুবাদক]

বেশ কয়েকটা ভোটগ্রহন থেকে দেখা যাচ্ছে যে নাস্তিকতা শব্দটা যুক্তরাষ্ট্রে এমন এক অসাধারন কলঙ্ক অর্জন করেছে যে একজন নাস্তিক হওয়া এখানে এখন রাজনৈতিক পেশার ক্ষেত্রে এক নিখাদ প্রতিবন্ধকতা (যেভাবে একজন কৃষ্ণবর্ণ, মুসলিম বা সমকামীও না)।  সাম্প্রতিক নিউজউইকের ভোটগ্রহন অনুযায়ী, শুধুমাত্র ৩৭% আমেরিকান সবদিক থেকে যোগ্য একজন নাস্তিককে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভোট দেবেন।

নাস্তিকদেরকে প্রায়সই অসহিষ্ণু, নীতিবিবর্জিত, বিষাদ্গ্রস্ত, প্রকৃতির সৌন্দর্য্য সম্পর্কে অন্ধ আর অতিপ্রাকৃতের ব্যাপারে গোঁড়াভাবে প্রমাণ নিয়ে আবদ্ধ বলে কল্পনা করা হয় ।

এমনকি জন লক, এনলাইটমেন্টের অন্যতম একজন মহান জনক, বিশ্বাস করতেন যে নাস্তিকতা “কোনভাবেই সহ্য করা উচিত নয়” কারণ, তিনি বলেছিলেন, “অঙ্গীকার, চুক্তিপত্র আর স্বপথ, যেগুলো মানব সমাজের বন্ধনী স্বরূপ, সেগুলো একজন নাস্তিকের উপর কোন নিয়ন্ত্রন বিস্তার করতে পারে না।“

এটা ৩০০ বছরেরও বেশি সময় আগের কথা। কিন্তু আজকের যুক্তরাষ্ট্রে, খুব সামান্যই পরিবর্তন ঘটেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে জনসংখ্যার ৮৭% দাবী করে ঈশ্বরের অস্তিত্বে “কখনই সন্দেহ করা উচিত নয়”। ১০% এরও কম নিজেদেরকে নাস্তিক বলে গণ্য করে – আর দেখে মনে হচ্ছে তাদের সুনামের অবনতি ঘটছে।

যেহেতু ধরে নিতে পারি যে আমরা জানি যেকোন সমাজে নাস্তিকরা প্রায়শই সবচেয়ে মেধাবী আর বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেই বিরাজমান, সেহেতু দেখা যাচ্ছে যে এই অতিকথনগুলোকে খন্ডন করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, যেগুলো তাদেরকে জাতীগত বিতর্কে একটা বড় ভূমিকা পালন করতে বাঁধা দেয়।

১। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে জীবনের কোন অর্থ নেই।

অন্যদিক থেকে বলতে গেলে, ধার্মিক মানুষেরা প্রায়ই উদ্বিগ্ন বোধ করেন যে জীবন অর্থহীন আর কল্পনা করেন যে সেটা থেকে উদ্ধার পাবার একমাত্র উপায় হলো মৃত্যু পরবর্তি চিরকালীন সুখ। জীবন যে দামী সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত নাস্তিকরা।  সত্যিকারভাবে এবং পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার মধ্যেই জীবনের অর্থ পরিপূর্ণতা পায়। যাদেকে আমরা ভালোবাসি তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা এখন আরও অর্থবহ; তাঁদের চিরকাল বেঁচে থাকতে হবে না একে অর্থবহ করার জন্য।  নাস্তিকরা এই অর্থহীনতার ভীতিকে …কি বলব…অর্থহীনই মনে করে।

২। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বড় অপরাধের জন্য নাস্তিকরাই দায়ী।

ঈশ্বরবিশ্বাসী মানুষেরা প্রায়শই দাবী করে থাকেন যে হিটলার, স্টালিন, মাও আর পল পট -এর অপরাধগুলো অবিশ্বাস থেকেই অনিবার্যভাবে প্রসূত। ফ্যাসিজম আর কমিউনজমের সমস্যা কিন্তু এটা না যে এরা ধর্মের ব্যাপারে অতিশয় সমালোচনামুখর। সমস্যাটা হলো এরা অনেকটা ধর্মের মতন।  এসব শাসনব্যবস্থা একেবারে ভেতর থেকে গোঁড়ামিপূর্ণ আর সাধারণতই কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধার সৃষ্টি করে যেটা ধর্মের প্রথাগত বীরপূজার থেকে কোন পার্থক্য নেই। অউশউইটজ, গুলাগ আর বধ্যভূমিগুলো মানুষ ধর্মীয় গোড়ামি পরিত্যাগ করলে কি হয় তার উদাহরণ নয়; এগুলো হলো রাজনৈতিক, বর্ণবাদী, আর জাতীয়তাবাদী গোঁড়ামির রণমূর্তি ধারণ করে সন্ত্রাসে লিপ্ত হবার উদাহরণ। মানব ইতিহাসে এমন কোন সমাজ নেই যেটা তার মানুষেরা যুক্তিবাদী হবার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

৩। নাস্তিকেরা গোঁড়া

ইহুদী, ক্রিশ্চান এবং মুসলিমরা দাবী করেন যে তাঁদের ধর্মগ্রন্থ মানুষের চাহিদার ব্যাপারে এতটাই ভবিষ্যদদর্শী যে সেগুলো একমাত্র একজন সর্বজ্ঞানী ঈশ্বরের সরাসরি নির্দেশনায়ই লিখিত হওয়া সম্ভব। একজন নাস্তিক হচ্ছেন সাদামাটাভাবে একজন মানুষ যে এই দাবীটা নিয়ে মনোযোগের সাথে ভাবনাচিন্তা করেছেন, গ্রন্থগুলো পড়েছেন এবং এই দাবীকে হাস্যকর হিসেবে খুঁজে পেয়েছেন। সত্যতা প্রতিপাদন করা যায় না এমন ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করতে কাউকেই কোনকিছু বিশ্বাস করতে হবে না, বা গোঁড়া হতে হবে না। প্রোগ্রামার স্টিফেন এফ রবার্টস একবার বলেছিলেনঃ “আমি তর্ক করে বলব যে আমরা দুজনেই নাস্তিক। আমি শুধু তোমার থেকে একজন ঈশ্বর কম বিশ্বাস করি। যখন তুমি বুঝবে যে কেন তুমি অন্যসব সম্ভাব্য ঈশ্বরদের খারিজ কর, তুমি বুঝবে আমি কেন তোমারটাকে খারিজ করি।

৪। নাস্তিকেরা মনে করে এই মহাবিশ্বের সবকিছু বোধগম্য কোন কারণ ছাড়া উৎপন্ন হয়েছে

কেউ জানেনা মহাবিশ্বের কিভাবে উৎপত্তি হয়েছে। বস্তুতপক্ষে, এই ব্যাপারটা পুরোপরি পরিস্কার নয় যে আমরা মহাবিশ্বের প্রারম্ভ বা সৃষ্টি নিয়ে সঙ্গতিপূর্ণভাবে কোন কথাই বলতে পারি কিনা, কারণ এসমস্ত ভাবনাগুলো সময়ের ধারণার সাহায্য নেয়, আর এখানে আমরা কথা বলছি স্থান-কালেরই উৎপত্তি নিয়ে।

নাস্তিকরা বিশ্বাস করে সবকিছু কোন কারণ ছাড়া ঘটে গেছে – এই ধারণাটা নিয়মিতভাবে ডারউনের বিবর্তনবাদের সমালোচনায় ছুঁড়ে দেওয়া হয়।  যেটা রিচার্ড ডকিন্স তাঁর চমকপ্রদ বই ‘দ্য গড ডিলিউজন,’ এ ব্যাখ্যা করেছেন। এটা বিবর্তনবাদের তত্ত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা দেয়। যদিও আমরা নির্ভুলভাবে জানিনা পৃথিবীর আদি রসায়ন কিভাবে জীববিদ্যার জন্মদান করেছিল, আমরা জানি যে বৈচিত্র্য আর জটিলতা আমরা প্রাণী জগতে দেখি তা ভাগ্যের জোরে উৎপন্ন হয়নি। বিবর্তন হচ্ছে ভাগ্যক্রমে ঘটা মিউটেশন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটি মিশ্রন। ডারউইন “প্রাকৃতিক নির্বাচন” এই শব্দসমষ্টি পেয়েছিলেন গৃহপালিত পশুর প্রজননকারীদের “কৃত্রিম নির্বাচন” এর সাথে সাদৃশ্য থেকে। উভয় ক্ষেত্রে, নির্বাচন প্রজাতি সৃষ্টিতে এক উচু মাত্রার নন-র‍্যানডম প্রভাব প্রয়োগ করে।

নাস্তিকতার সাথে বিজ্ঞানের কোন সম্পর্ক নেই।

যদিও ঈশ্বরে বিশ্বাস করেও বিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব –যেটা কিছু বিজ্ঞানী সামলাতে পারেন দেখা যায় – এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন নেই যে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা ধর্মীয় বিশ্বাসকে সমর্থনের বদলে একে ক্ষয়প্রাপ্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারণকে উদাহরণ হিসেবে নেয়া যাকঃ বেশিরভাগ ভোটে দেখা যায় যে প্রায় ৯০% একজন ব্যক্তিগত ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন; কিন্তু জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর ৯৩% সদস্য তা করেন না। এটা নির্দেশ করে যে কিছু চিন্তার ধরন আছে যা বিজ্ঞানের থেকে ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে কম সমমনোভাবাপন্ন।

৬। নাস্তিকেরা উদ্ধত।

বিজ্ঞানীরা যখন কোন কিছু সম্বন্ধে জানেন না – যেমন মহাবিশ্বের সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিলো অথবা কিভাবে প্রথম ‘নিজের কপি তৈরি করতে সক্ষম’ অণুর সৃষ্টি হয়েছিল – তা তারা স্বীকার করেন। কোন কিছু না জেনে তা জানার ভান করা বিজ্ঞানে এক সুগভীর বাধা। অথচ সেটাই হলো বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করা ধর্মের জীবনীশক্তির উৎস। ধর্মোপদেশের একটা প্রাসাদসম বিড়ম্বনা হলো যে বিশ্বাসীরা নিজেদেরকে বিনয়ের জন্য কতবার নিজেদের প্রশংসা করে থাকেন, আবার একইসাথে মহাকাশবিদ্যা, রসায়ন আর জীববিজ্ঞানের এমনসব তথ্য জানেন বলে দাবী করেন যা কোন বিজ্ঞানীরাই জানে না। মহাবিশ্বের প্রকৃতি এবং তা-তে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন বিবেচনা করার সময়, নাস্তিকেরা তাদের মতামত বিজ্ঞানের কাছ থেকে নেন। এটা ঔদ্ধত্য নয়; এটা বুদ্ধিবৃত্তিক সততা।

৭। নাস্তিকেরা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভে অক্ষম।

এমন কোন কিছু নেই যা একজন নাস্তিককে ভালোবাসা, পরমানন্দ, মগ্নতা, আর সম্ভ্রমের অভিজ্ঞতা লাভ করা থেকে বঞ্চিত করে। নাস্তিকেরা এইসব অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিতে পারে এবং নিয়মিতভাবে সেগুলো খুজতে পারে। নাস্তিকেরা যা করে না তা হলো এসব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বাস্তবতার প্রকৃতি সম্পর্কে অসত্য (এবং অসমর্থনীয়) কোনকিছু দাবী করা। এতে কোন প্রশ্ন নেই যে কোন কোন খ্রীষ্ট ধর্মালম্বী বাইবেল পড়ে এবং যীশুর কাছে প্রার্থনা করে নিজেদের জীবনকে আরও ভালোর দিকে রূপান্তরিত করতে পেরেছেন।  এটা কি প্রমাণ করে? এটা প্রমাণ করে নির্দিষ্ট কিছু মনোসংযোগ সংক্রান্ত নিয়মানুবর্তিতা এবং আচরণ প্রকৃতি মানব মনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। খৃষ্টানদের এইসব ইতিবাচক অভিজ্ঞতা কি এটাই বলে যে যীশুখৃষ্ট মানব জাতীর একমাত্র ত্রাতা? এর ধারে কাছেও না – কারণ হিন্দুরা, বৌদ্ধরা, মুসলিমরা এবং এমনকি নাস্তিকরাও নিয়মিতভাবে এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয়েছেন।

বস্তুতপক্ষে, এমনকি যীশু দাঁড়ি যে রাখত সে ব্যাপারেই এ পৃথিবীতে একজন খৃষ্টান নেই যে নিশ্চিত হতে পারে, কুমারী গর্ভে জন্ম আর মৃত্যুর পর প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে তো আরও কম। এগুলো সেই রকমের দাবী না যা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা সত্যায়িত করতে পারে।

৮। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে যে মানব জীবন এবং মানব উপলব্ধির বাইরে আর কিছুই নেই।

নাস্তিকরা মানব উপলব্ধির সীমাবদ্ধতা বিনা বাধায় স্বীকার করে নিতে পারেন যেভাবে ধার্মিক ব্যক্তিরা পারেন না। এটা স্পষ্টত প্রতীয়মান যে আমরা মহাবিশ্বকে পুরোপরিভাবে বুঝি না; কিন্তু এটা আরও স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে না বাইবেল না কোরান এ সম্পর্কে আমাদের শ্রেষ্ঠ উপলব্ধি প্রতিফলিত করে। আমরা জানি না মহাবিশ্বের অন্য কোথাও জটিল জীব বসবাস করে কিনা, কিন্তু করতে পারে। যদি করে, তাহলে সেইসব জীবের প্রাকৃতিক নিয়ম সম্পর্কে উপলব্ধি আমাদের উপলব্ধিকে অনেকগুনে ছাড়িয়ে যেতে পারে। নাস্তিকরা বিনা বাধায় এইসব চিন্তাভাবনা করতে পারে। তারা এটাও স্বীকার করে যে যদি প্রতিভাবান মহাজাগতিক প্রাণীরা থেকে থাকে, বাইবেল আর কোরানের ভেতর যা আছে তা তাদের মনে মানব নাস্তিকদের থেকেও কম রেখাপাত করবে।

নাস্তিকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বলতে হয়, পৃথিবীর ধর্মগুলো মহাবিশ্বের আসল সৌন্দর্য্য আর বিশালতাকে পুরোপুরিভাবে গুরুত্বহীন করে দেয়। এরকম পর্যবেক্ষন করার জন্য কাউকে অপ্রতুল প্রমানের উপর ভিত্তি করে কোন কিছুকে স্বীকার করতে হবে না।

৯। ধর্ম যে সমাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী সে বাস্তবতাটা নাস্তিকরা উপেক্ষা করে।

যারা ধর্মের ভালো প্রভাবের উপর জোর দেন তারা কখনই উপলব্ধি করেন না যে সেসব প্রভাব কোন ধর্মীয় মতবাদের সত্যতাকে প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। এই জন্য আমাদের “ইচ্ছামত-চিন্তা” আর “আত্ম-প্রতারণা” –এর মত শব্দ রয়েছে। সান্তনাদায়ী বিভ্রান্তি আর সত্যের মধ্যে এক গভীর পার্থক্য আছে।

যেকোন ক্ষেত্রে, ধর্মের ভালো প্রভাব সম্বন্ধে নিশ্চিতভাবে বিতর্ক করা যায়।  বেশীরভাগ ক্ষেত্রে, এটাই প্রতীয়মান হয় যে ধর্ম মানুষকে ভালো ব্যবহার করার ব্যাপার বাজে কারণ দেয়, যেখানে ভালো কারণ আসলেই রয়েছে।  নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, কোনটা বেশী নৈতিক, গরীবকে তার দূঃখকষ্টের জন্য সাহায্য করা, নাকি এই কারণে সাহায্য করা যে আপনি মনে করেন মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আপনাকে তা করতে বলেছেন, করলে তিনি পুরস্কৃত করবেন অথবা না করলে শাস্তি দেবেন?

১০। নাস্তিকতা নৈতিকতার কোন ভিত্তি প্রদান করেনা।

যদি কোন ব্যক্তি এর মধ্যেই বুঝে না গিয়ে থাকে যে নিষ্ঠুরতা খারাপ কাজ, সে সেটা বাইবেল বা কোরান পড়ে আবিস্কার করতে পারবে না –কারণ এইসব বই নিষ্ঠুরতাকে উদযাপন করতে করতে ফেটে পড়ছে, মানবিক এবং স্বর্গীয় উভয় প্রকারই। আমরা ধর্ম থেকে আমাদের নৈতিকতা পাই না। আমাদের পবিত্র গ্রন্থ কোনটা ভালো তা আমরা নৈতিক স্বজ্ঞার আশ্রয় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিই, যেটা (কিছু স্তর পর্যন্ত) আমাদের মধ্যে জৈবিকভাবে প্রোথিত আর যেটা হাজার বছর ধরে মানব সুখের কারণ এবং সম্ভাব্যতার ব্যাপারে চিন্তাভাবনার মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে এসেছে।

বছরের পর বছর ধরে আমরা নৈতিকতার ব্যাপারে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছি, কোরান আর বাইবেল আরও নিবিড়ভাবে পড়ার মাধ্যমে আমরা এই অগ্রগতি সাধন করিনি। উভয় গ্রন্থই দাসপ্রথাকে মার্জনা করেছে – আর তারপরো প্রত্যেক সভ্য মানুষ স্বীকার করেন যে ক্রীতদাসপ্রথা  নিদারুনভাবে ঘৃণ্য ও বিভীষিকাময় এক প্রথা। ধর্মগ্রন্থে যা কিছু ভালো আছে – সোনালী নিয়মের মত – সেটাকে পরিমাপ করা যাবে তার নৈতিক প্রজ্ঞার ভিত্তিতে, সেটা মহাবিশ্বের স্রষ্টা হতে প্রাপ্ত তা বিশ্বাস না করেই।

(স্যাম হ্যারিস, লস এঞ্জেলেস টাইমস, ২০০৬)