অন্ধকার দিয়ে আলো ঢাকা যায় না।
শরীর বন্দি করা যায়, মুক্তমনকে বন্দি করা যায় না।
আমার চারজন আলোকিত সহযোদ্ধা কলম-সৈনিক বন্ধুকে
দাঁড় করানো হয়েছে অন্ধকার গহ্বরে।
ওদের নির্দোষ, অসহায় মুখগুলি কেবল
ভাসে আমার দু’চোখে
আর ততোধিক অসহায় নদীতে ভেসে যায় চোখ।
লজ্জায়, বেদনায়, ক্ষোভে মুমূর্ষু আমি।

ওদের নিরপরাধ মুখগুলিতে আমি আমাকেও দেখতে পাই।
ওরা আমার মতন, আমি ওদের মতন।
একই মানসিকতার মানুষ আমরা।
একই উদ্দেশ্যে কলম ধরেছি আমরা।
জ্ঞান-বিজ্ঞান-বিবেক ও পৌরাণিক গ্রন্থের কল্যাণে
পৈত্রিক অন্ধবিশ্বাসের গণ্ডি পেরিয়ে এসেছি আমরা।

সীমাহীন অন্ধকারমুক্ত হয়ে আমরা স্বার্থপরের মতন
শুধু নিজেরাই আলোকিত জগতে বসে থাকতে পারিনি।
সকল মানুষকে মুক্তির কথা বলার
যুক্তির কথা বলার, মানবতার কথা বলার
নৈতিক দায়ভার আমরা নিজেরাই নিজেদের স্কন্ধে তুলে নিয়েছিলাম।

দিনরাত ভয়ানক মৌলবাদী, মানবতাবিরোধীদের অশ্লীল গালি মৃত্যুহুমকি
তুচ্ছ করে নিজেদের শ্রম, মেধা, সময় ব্যয় করে
কোনও পারিশ্রমিকের আশা না করেই
যে যার সাধ্যমত লিখেছি; অজ্ঞতামুক্ত অন্ধকারমুক্ত মানবসমাজ গড়ার আশায়।
অন্ধদের সহ্য হয় না আলো।
ওরা ৮৪জন কলম যোদ্ধার তালিকা তৈরি করেছে।
তাদের তুষ্ট করতে সরকার ধরেছে চারজনকে,
জনপদ বিধ্বংসী মরণাস্ত্র কম্পিউটার সহকারে।
যে কম্পিউটারে তারা লিখতো
যুক্তির কথা, মুক্তির কথা, মানবতার কথা, সাহিত্যের কথা, শিল্পের কথা।
মহান সরকার তাদের নাম ও ছবি ছাপিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।
চিরতরে ঠেলে দিয়েছন তাদের ও তাদের পরিবারের জীবনকে হুমকির মুখে।
জঙ্গিদের পোষণ-তোষণের নেকদায়িত্ব পালন করলেন সরকার।
তাদের হাতে সঁপে দিলেন নিরীহ কলম-সৈনিকদের জীবন।

ধর্মের হাস্যকর বীভৎসতার কথা বললে
এই সভ্যযুগের সভ্য সমাজেও ব্লাসফেমির দাবি উঠে!
হ্যাঁ। কারণ ধর্ম ততোটাই বীভৎস। বরং আরও বেশি সীমাহীন তার নগ্নতা।
তবে এই বীভৎস পুস্তকগুলি যারা রচনা করেছে
তাদের কেন ব্লাসফেমি হয় না?
কেন হয় না সেই ধ্বংসাত্মক বইগুলি নিষিদ্ধ?

যুদ্ধাপরাধী, খুনি, লুণ্ঠক, এসিড নিক্ষেপকারী
সকল অমানবিক দ্বিপদী জন্তু বাংলার মাটিতে
বুক ফুলিয়ে মহানন্দে জীবন উপভোগ করছে।
বিপন্ন শুধু মানবতাবাদীদের জীবন।

এই দুর্বার বেদনা, এই ভীষণ লজ্জা রাখার
জায়গা বাংলার মাটিতে নেই।
তা হলে হয়ত বেচারি বেদনা এবং লজ্জারও ব্লাসফেমি হবে।