পৃথিবীর প্রাচীনতম কোন বিশ্বাস যদি আমি অস্বীকার করি। তাহলে প্রাচীন বিশ্বাসের অবমাননা হয়। আমি যদি আমার বুদ্ধি বিবেচনা ব্যবহার করে কোন প্রশ্ন তুলি তাহলে ধর্ম অবমাননা হয়। আমি যদি বিজ্ঞানের সাহায্যে কোন বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করি তাহলে ধর্ম অবমাননা হয়। একজন ব্যক্তি আমি কথার জন্য কি করে কোটি কোটি বিশ্বাসি মানুষের অবমাননা হতে পারে? আমি যদি ভারতীয় নাগরিকদের গালি দেই। তাহলে ১০০কোটি ভারতীয় কষ্ট পাবে । একশ কোটি ভারতীয়কে কষ্ট দেয়ার জন্য কি আমাকে শাস্তি পেতে হবে? অবশ্যই পেতে হবে না। কারন আমি কি বললাম এটা কেউ পাত্তাই দিবে না। কারন আমার মতো ব্যক্তি চাইলেই আমার চিন্তা,দর্শন,যুক্তি পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ নই। এবং এটার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবার কোন সম্ভাবনা নাই।

বাংলা ভাষায় একটা ব্লগ লিখলে কেবল বাংলা ভাষাভাষীরা কেবল তা পড়তে পারবে। আর পৃথিবীর মানুষের মাঝে কত শতাংশ বাঙ্গালী? আর এই বাঙ্গালীর মাঝে কত শতাংশ একটা নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীর? এবার আসি এই বাংলাদেশে কত জন মানুষের কম্পিউটার ব্যবহার করতে জানে?যত জন মানুষ কম্পিউটার জানে তার মাঝে কত জন মানুষের কাছে ইন্টারনেট আছে?আর ইন্টারনেট আছে এমন কতজন মানুষ ব্লগ পড়েন? বাংলাদেশে দের দুই ডজন বাংলা ব্লগ আছে। ব্লগ পড়া মানুষদের মাঝে কতজন সব গুলো ব্লগে নিয়মিত চোখ রাখতে পারেন? ব্যক্তিগত আমার একটা ব্লগ আছে এক বছরে ৫জনের বেশি মানুষকে পড়াতে পারি নাই।

ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুসারে নাকি ৪০ দিন পর পর বগলের/গোপন লোম পরিষ্কারের বিধান আছে।এখন এই বিধান কতজন মানুষ পালন করে তা দেখা নিশ্চয় হেফাজতে ইসলামের কাজ? এখন থেকে তাহলে ইসলাম রক্ষার জন্য কি সবার জিপার খুলে চেক করতে শুরু করবে? ব্যক্তিগত ব্লগে কে কি লিখে এটা যদি স্পাই গিরি করে বের করে পত্রিকায় ছাপানো হয় তাহলে প্রতিটি মানুষের জিপারের খবরও ছাপানো উচিত? এই বিধানকে যারা তোয়াক্কা করবে না তাদের বিরুদ্ধে দৈনিক পশ্চাৎদেশ পত্রিকা ” শুক্রবারে নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল” এমন হেডলাইন কি হবে না?

এই বাংলাদেশে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হয়। ধর্ষনের পরে হত্যাও হয়। দেশের ৯০ ভাগ যদি মুসলমান হয় তাহলে ধর্ষকের ৯০ ভাগ মুসলমান । একজন লোক ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে ধর্ষণের মতো কাজ করতে পারে। কিন্তু এমন কি নজির আছে যে মুসলমানরা তাকে ধর্ম চ্যুত করেছে এই কাজের জন্য? অথবা ধর্মীয় মোল্লারা রাজপথে নেমে এসেছে? একজন মুসলমান ধর্ষন করলো এতে কি সারা পৃথিবীর মানুষের অবমাননা হলো না? কিন্তু এই অবমাননার বিরুদ্ধে তো হেফাজতে ইসলামের মতো কোন ধর্মীয় সংগঠনকে সোচ্চার হতে দেখলাম না?

ইসলাম ধর্মে সুদ কে হারাম করা হয়েছে। কিন্তু এই দেশে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ এই সুধের সাথে আছে। এতে কি মুসলমানদের ধর্মের অবমাননা হয় না? প্রতিদিন ঘুষ নিচ্ছে হাজার হাজার মুসলমান, কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কি কোন ধর্মীয় আন্দোলন হয়েছে? প্রতিদিন দুর্নীতিতে আমরা চ্যাম্পিয়ান হচ্ছি। ৯০% মুসলমানদের দেশে ৯০% দুর্নীতিবাজ মুসলমান। এই দেশে মসজিদ মন্দিরে যে সব ধনীরা অর্থ দিয়ে থাকে তাদের অর্থের উৎস কি ? কত শতাংশ বৈধ উপায়ে এই টাকা আসল এসব কি হেফাজতে ইসলাম দেখেছে? এই দেশে রাতারাতি ধনি হয়ে যাওয়ার মতো কোন আলাদীনের চেরাগের ব্যবস্থা কি আছে? কিন্তু যারা এত দ্রুত ধন দৌলতের মালিক হচ্ছেন। গ্রামে গঞ্জে নতুন মসজিদ মন্দির তৈরী করছেন কোন ধার্মিক কি এই টাকা নিতে কখনো অস্বীকার করেছে? এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে এই দেশের মুসলমানরা ঘুষখোর,মুসলমানরা সুদখোর,মুসলমানরা ধর্ষক। তাহলে তেড়ে আসবেন। ধর্মানুভূতিতে আঘাতের জন্য কল্লা নামাতে চাইবেন।

ধর্মের নাম নিয়ে রাজপথে যত লোক নেমে আসেন তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই আসেন। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনার তার নিশ্চিত প্রমাণ। ৭১ সালে দুই পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়। দুইটিই মুসলমান দেশ। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনৈতিকতার কারনে বাংলা ভাষী মানুষদের মুসলমান থেকে খারিজ করে আওয়ামীলীগ,বিধর্মী,নাস্তিক,হিন্দু,মালাউন বলা হলো। যুদ্ধে জিতবার অস্ত্রের পাশাপাশি আরো যত রকম নোঙরা কৌশল আছে সবই পাকিস্তানিরা করেছে।এবং সব নোঙরামিতেই ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছিল।লুঙ্গি খুলে মুসলমানিত্ব পরীক্ষা করেছে। যত রকম বিভ্রান্তি আছে তা ধর্মের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। কিন্তু আমরা এখন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। এই চার দশক পরেও যারা ধর্মের নোঙরা ব্যবহার করছেন,ধর্মের রাজনীতি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন, পরিণাম তাদেরও খারাপ হবে।

অনেক খবরের ভিড়ে এই খবরটি হয়তো নজর এড়িয়ে যেতে পারে। আমাকে একজন ম্যাসেজ করে লিংক দিল।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও ৮ ব্লগারের বিরুদ্ধে মামলার ব্যর্থ চেষ্টা

কলমের প্রতিবাদ কলম দিয়ে করতে হয়। কি বোর্ডের প্রতিবাদ কি বোর্ড দিয়ে। কিন্তু ধর্মীয় মৌলবাদীরা অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে।আমাদের মুখ বোবা করে দিতে চায়।

ধর্মীয় মৌলবাদীদের কাছে যতবারই নতি স্বীকার করেছে সরকার ততবারই তারা ঘাড়ে চড়ে বসেছে। তসলিমাকে দেশ ত্যাগ করাতে সমর্থ হওয়ার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হুমায়ুন আজাদকে আঘাত করার বিচার হয়নি এর পরিণতিতে রাজীব হত্যা সহ দুইজন ব্লগার জঙ্গিদের আক্রমনের শিকার হয়েছে। চট্টগ্রামে যেতে প্রজন্ম চত্ত্বরকে সমাবেশ করতে দেয়নি, তারা আরো সাহস পেয়ে গেছে ৬ এপ্রিল তারা ঢাকা অভিমুখে আসবার হুমকি দিয়েছে। সরকার ব্লগারদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করেছে,ইউটিউব বন্ধ করেছে তারা প্রশ্রয় পেয়ে এখন মামলা করতে কোর্টে যাচ্ছে। সরকার দিন দিন তাদের আস্কারা দিয়ে গেছে এখনো দিয়ে যাচ্ছে।