লিখেছেন – পৃথু স্যান্যাল

আইজ সারাদেশে আলোচনার গরম বিষয় নাস্তিক আর আস্তিক। কোন এক গোলাপি বেগম ফতোয়া দেন অমুক নাস্তিক তমুক নাস্তিক। বিষয়টা এমনভাবে মার্কেট পাইছে আজ এক রিকশাওয়ালা আমাকে জিগাইয়া বইল ভাই নাস্তিক ধর্মের নবী কেডা? আমি আর কি কমু? মনে মনে কইলাম গোলাপু আপা। আবার এমন লোকেরা কিন্তু নাস্তিকের ফাসি চায়।

যাই হোক, পেচাল তা না, পেচাল হইল আমি নাস্তিক থাইকা আস্তিক হইবার চাই সহজ ভাষায় ধার্মিক হইবার চাই। কিন্তু সমস্যা দাড়াইছে ধর্ম নির্বাচন নিয়া কোন ধর্মটারে বাইছা লমু তা কিছুতেই ঠিক করবার পারতাছিনা। এমন একটা ধর্ম বাইছা নিবার চাইতাছি যা সত্যিকার অর্থেই সঠিক। কিন্তু কোনভাবেই সঠিক ধর্মডারে খুইজা পাইতাছিনা। ধর্মের সঠিকতা বা বিষুদ্ধতা যাচাইয়ের কোন মানদন্ডও খুজে পাইতাছি না, পরছি ভারি গেড়াকলে।

কোন ধর্মই আমারে স্বাধীনমত তার মতামতকে বাইছা নিবার সুযোগ দিতাছে না সব ধর্মই আমারে কয়তাইছে তুমি শালা মুর্খ, আছ গোমড়াহিতে লিপ্ত, হগল গ্রন্থই কইতাছে আমারটাই একমাত্র সঠিক ও ঈস্বর প্রদত্ত। কোন কিতাব বা শাস্ত্রই কইতাছে না যে হের নিজ ধর্মের মাঝে কিছু ভুল থাকবার পারে, অন্যগুলারে যাচাই কইরা নিবার কোন অপশন দিতাছেনা। ফলে আমি আবুলের মাথা ঘুরাইয়া মরার মত অবস্থা।

মাথা ঠান্ডা কইরা ধার্মিক হওনেই লাগব (না হইলে আজ বাংলাদেশে জান বাচানির কোন উপায় নাই) এই পন কইরা গেলাম এক হিন্দু ধার্মিক পুরুহিতের (আসলে হিন্দু শাস্ত্র) কাছে। হেয় কইল দাদা তোমার গোত্র কি? বর্নই বা কি? আমি কইলাম এইসব কি কন? উত্তরে যা বুঝলাম মালাউনের ঘরে জন্ম না নিলে মালাউন হওয়ার কোন উপায় নাই, একমাত্র জন্মসুত্রেই এই ধর্মের ধার্মিক হওয়া যায়। তাই এই ধর্মের আশা বাদ দিলাম কারন ঈশ্বর যদি সত্যিই এই ধর্মডারে দিয়া থাকেন তাইলে আমারও এই ধর্মে প্রবেশের রাস্তা থাকত। কারন আমি তো আর আমার জন্মের লাগি দায়ী হইবার পারিনা। আমার জন্মের লাগি হয় আমার বাপ মা নয় ঈশ্বর দায়ী, এদের কারনে আমি কেন পাপের ভাগী হইব?

আইজ আমি ধার্মিক হইবার নাছোড়বান্দা টাইপ পন করছি একটা ধর্ম আজ বাইছা লমুই। তাই এইবার গেলাম বৌদ্ধ ধর্মের কাছে। মাগার হেরা দেহি ঈশ্বরের অস্তিত্বই স্বীকার করেনা। পরলাম মহা ফ্যাসাদে।আমারে খালি ধার্মিক হইলেই হইব না আস্তিক হওয়ন লাগব। তাই এইডাও বাদ।

গেলাম খ্রীস্টানের কাছে, শালার এমন গাজাখুরী গল্প পইরা পাগলেও হাসতে থাকব। কয় রংধনু নাকি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার চিহ্ন। আর এই চিহ্নের রহস্য সামান্য মানুষে বাইর কইরা ফালাইছে? না এই ধর্মডারে গ্রহন করা যায়না, বাদ দিলাম এইডারেও। তাইলে আমার ধার্মিক হওয়নের কি হইব?

অনেক ভাইবা চিন্তা কইরা গেলাম ইসলামের কাছে, মানবতার সমাধান এই ধর্মে ছাড়া আর কোন ধর্মে নাই বলে জন্মের পর থাইকাই শুইনা আইতাছি। যাই হোক গিয়া দেখি আমার সাথে গোড়াতেই গলদ, আমি একটু সন্দেহ প্রবন কি না!! তাই পইলাই গেলাম আইটকা। প্রথমই সুরা বাকারার প্রথম আয়াতেই দেহি লেহা

” আলিফ লাম মীম, যা লিকাল কিতাবু লা রাইবা ফি হি হুদাল্লিল মুত্তাকিন”

অর্থঃ এই সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নাই যা রবের কাছ থেকে এসেছে মুত্তাকীদের হেদায়াত সরূপ।

এইহানেই আইটকা গেলাম, পর্থম কথা আমি একটা সংসয়বাদী মানুষ, আমি সবখানেই সন্দেহ করি। এই কিতাবে কেন সন্দেহ থাকবে না তা বুঝতে পারিনাই। দুই নম্বর কথা এই কিতাব মুত্তাকীদের হেদায়াত স্বরুপ, নিজেরে প্রশ্ন করিলাম আমি কি মুত্তাকী? তা কেমনে হইব? আমি তো নাস্তিক, নাস্তিক কি মুত্তাকি হইবার পারে? তাইলে কোরান কিভাবে আমাকে হেদায়াত করবে? এইবার মাথা ঘুরাইতে ঘুরাইতে চোউখ এক্কেবারে আন্ধা হইয়া গেছে। তাই আজকের মত ধার্মিক হইবার মিশন বন্ধ করিলাম।

কিন্তু যে কোন মূল্যেই হউক আমারে আস্তিক হওয়নেই লাগব , নাইলে এইদেশে আর বাচার অধিকার নাই । বড়ই আপসোস হইতাছে কেন যে বিজ্ঞান পড়িতে গেলাম, কেন যে বাস্তব প্রমানে অভ্যস্ত হইতে গেলাম? তাইলে তো আইজ আর জান লইয়া চিন্তা করোন লাগত না। সব্বাইরে কই আমার ধার্মিক হইবার মিশন চলতে থাকবে। কাইল আবার শুরু করিব।