বাংলাদেশের ধর্মবেত্তা মোল্লা/হুজুর/ওলামা/মাশায়েখ/আলেম/ইমাম ইত্যকার পদবীর পেশাজীবিদের তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবার সময় হয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের ওপর নির্ভরে করে থাকেন আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতা সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা’র জন্য। শিক্ষা’র আলো বঞ্চিত এই জনপদে নিরন্তর জীবনযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত জনগন এই পেশাজীবিদের জ্ঞাণ করেন অন্তরের কাছের মানুষ হিসেবে। আমাদের কাছে ভুল হলেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির আঁশপাঁশ দিয়ে জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের গ্রাম, শহর, জনপদ, সমাজব্যবস্থার প্রতিটি বাঁক। আর এই ব্যবস্থাটির সম্মুখভাগে কর্মরত ধর্মপেশাজীবিদের গুরুত্ব আমরা কখনোই ভেবে দেখি না।

গতো পনেরো দিনে বাংলাদেশের ভেতরে সচেতনতার যে বিষ্ফোরণ ঘটতে দেখেছি আমরা, তাতে ভিলেন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এই ধর্মপেশাজীবি শ্রেণীটি। ইসলাম ‘রক্ষার’ স্ব-আরোপিত গুরুদায়িত্ব তারা হাতে তুলে নিয়েছেন ‘অরাজনৈতিক’ ছদ্মাবরণে। হেফাজতে ইসলাম, ওলামাশায়েখ পরিষদ ইত্যাদি ভূঁইফোড় সংগঠনের ব্যানারে তাদের একটাই দাবি, নাস্তিকদের গুষ্টি কিলাতে হবেই হবে। নয়তো তারা খেলবেন না। সরকারও ভয়ে আধমরা হয়ে একটা উঁচু-পা-বিশিষ্ট কমিটি পর্যন্ত ফেঁদে বসেছেন।

কিন্তু সমস্যার কথা হলো, এই মোল্লাহুজুরমাশায়েখওলামাইমামাদের এতো গরজ কেন ইসলাম ‘রক্ষার’। আফটার অল, তেনারা আমাদের পাঁচোক্ত নমাজ, ওযুগোছলের তরিকা, পেচ্ছাবের পর বস্ত্র পবিত্র রাখবার মাছায়েলা, কিংবা বাৎসরিক উপবাস উৎসবের সময় মুখে গন্ধ বৃদ্ধির নানান শলা দিয়ে আমাদের পরকালের রাস্তা সোজা রাখবার যে পেশা তাদের পেটে অন্ন দেয়, সেই পরকালটা কিন্তু তাদের ক্লায়েন্ট, মানে ম্যাঙ্গো পিপলেরই।

নাছতিকদের ফেরেবে পড়ে পরকাল উড়ে যেত বসলে ৯০ ভাগ মুছলিম যেখানে হৃদয় বিদারক আর্তনাদ করে উঠবার কথা, সেখানে আজিব বিষয় হলো গিয়ে, জনগন চুপ, কিন্তু আমাদের পেশাদার ধর্মবেত্তাদের হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গায় কান পাতা দায়।

তাদের নিয়মিত প্রেসের সামনে আসতে দেখলাম, সফেদ ফিনফিনে পাঞ্জাবী পড়ে তারা একেকদিন একেকরকম হুমকি দিতে থাকলেন, আমরাও শোনামাত্র ভেতরে ভেতরে সিঁটিয়ে গেলাম আতঙ্কে, এই বুঝি ৯০ ভাগ জনগন রাস্তায় নেমে আসলো, শাহবাগের সকল নাছতিক মুরতাদের গায়েবানা জানাজা মৃত্যুর আগেই আমরা পড়ে ফেললাম দুঃস্বপ্ন দেখতে দেখতে।

সেটার যদিও দরকার পড়ে নাই, ড্রেন নিবাসী আমাদের গুলাবী শিঙ্গাপুর চক্কর দিয়ে এসে একাই দশ কোটি মুছলিমের প্রতিনিধি হয়ে গেলেন। নাভি দেখানো ফিনফিনে শিফন পড়ে, প্লাক করা ভুরু নাচিয়ে তিনি দেশের সকল মুক্তিকামী আন্দোলনকারীকে এক নিঃশ্বাসে নাছতিকের খাতায় নসিব করে দিলেন। বলেন আলহামদুলিল্লাহ!

ফিরে আসি আমাদের পেশাদার ধর্মবেত্তাদের কথায়। তাদের পেছনে হয়তো কলকাঠি নাড়ে জামাতী লোকজন, পঞ্চাশ কোটি টাকা জাতীয় খবর আমরা শুনতে পাই বাতাসের কাছে, বিবিসি সকাশে তারা বেকুবের মতো স্বীকারও করে বসেন যে আসলে নাছতিকদের কিছুই তারা পড়ে দেখেন নাই, গেলমানের মুখে যতটুকু শোনবার, তাতেই কাম হইয়ে গেছে, মানে সঅঅঅব নাছতিক, এইটা মাল্লুম হয়ে গেইছে তাদের। এই গেলমানগুলি আবার মাহমুদুরের স্বরেই চিঁ চিঁ করে।

বাংলাদেশের পাবলিকের এখন দুইটা মিশ্র অনুভূতি কাজ করার কথা, নাম্বার ওয়ান… এই মুল্লাউলেমাশায়েখহুজুর জাতীয় পরকালের দিশারীদের আদৌ কি আর বিশ্বাস করা উচিত? মানে যাদের মুখ দিয়ে আমরা পেয়ারা মুহম্মদের নানাবিধ গুণগান শুনি, সেই গান আসলে কার স্বার্থে বাজানো হয়, এই প্রশ্ন কি আমাদের টেকনাফ-টু-তেঁতুলিয়া তক্‌ ছড়িয়ে থাকা অগনিত পরকাল পিয়াসী মুছলিম ভায়েরা করবেন? তাদের কি সেই প্রশ্নগুলি করবার চোখ ফুটেছে? মানে যাদের কাছে ভরসা করে পরকালশিক্ষার দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা যে বিক্রি হয়ে গেলো জামাতের কাছে, তার জন্য কি মোল্লাউলেমাশায়েখদের কোন শাস্তি প্রাপ্য নয়?

দ্বীতিয়তঃ পরকাল/আল্লাহ/জান্নাত/দোজখ ইত্যাদি কাল্পনিক বিষয়ের ধুয়া তুলে চোখের সামনে এই সুন্দর পৃথিবীর সুন্দরতম দেশের ওপর নৃশংসতা চালানো রাজাকারদের বাঁচিয়ে দেবার অপচেষ্টায় যুক্ত হওয়া দেখে আমাদের জনগনের কি চোখ ফোটা উচিত নয়, যে নাছতিকেরা যা বলে, মানে ইছলাম রক্ষার উছিলায় এই ধর্মজীবিরাই একবার গনহত্যা করেছে পাকিস্তানের হাত দিয়ে একাত্তরে, আবারও করবে যদি দেখে ইছলাম হুমকির মুখে, কিংবা ধর্মগুলি আসলে কল্পকাহিনী, এবং ইসলামের সাপ্লায়ার সউদি সবচেয়ে বড়ো ভন্ডের জাত, তারা তথাকথিত শান্তির ধর্ম ইসলামের বারোটা বাজিয়ে দেবার জন্য সালাফিদের পাঠাচ্ছে, মাদ্রাসাগুলি পরিনত হয়েছে একেকটা জঙ্গী তৈরির কারখানা, এই কথাগুলিকে আমলে নিয়ে ধর্মকে ফেরৎ পাঠানো দরকার না ব্যক্তিগত গন্ডীতে?

আর জনগনের প্রতিনিধি সরকারের কি উচিত নয়, সউদি রাজার পয়সার তোয়াক্কা না করে, মাদ্রাসাগুলিকে সাধারন শিক্ষাব্যব্স্থার আওতায় নিয়ে আসা, রাষ্টকে নিরাপদ করতে ধর্মপেশাকে নিয়ন্ত্রনের অধীনে আনা, লাইসেন্স নিয়ে তারপরেই ধর্মপ্রচারের আইন করা, জঙ্গীবাদ, তার প্রচার ও উৎসাহপ্রদান শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে নিষিদ্ধ করা?

মসজিদগুলিতে কি কি বয়ান করা হয়, মাদ্রাসাগুলিতে কি গেলানো হয়, আর টিভিতে ধর্ম প্রচারের নামে কিকি কুসংষ্কার খাওয়াও হয়, এসব নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার না?

কি বলেন?