দেশে একদিকে যুদ্ধপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবীতে অনলাইন ব্লগাররা আন্দোলন করেছেন; এবং আরেকদিকে নাস্তিক/মুরতাদ, ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগারদের শাস্তির দাবীতে সমান্তরালে আরেকটি আন্দোলন চালাচ্ছেন দেশের নামকরা আলেমগণ এবং ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি। এই টানাপোড়েনে জামাত শিবির দেখালো স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সবচেয়ে চরম সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের উদাহরন। আন্দোলনরত আলেমদের দাবীমতে শাহবাগের আন্দোলন আসলে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীর আড়ালে নাস্তিক এবং বামপন্থী লোকজনের ইসলামের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। শাহবাগের সাথে জড়িত নেতৃস্থানীয় ব্লগার, এমনকি যোগদানকারীরাও সকলে ওনাদের মতে ঘৃন্য নাস্তিক যাদের সাথে এমনকি ওনারা আলোচনাতেও বসতে রাজী নন। ওনাদের এমন ধারনার মূল কারন হিসেবে আপাত চোখে নিহত ব্লগার রাজীবের কিছু ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখিই টার্নিং পয়েন্ট বলে ধারনা করা হয়। মূল্যবোধগত পার্থক্যর কারনে আম জনতার এক একজনার কাছে এক একটি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ন, আবার অনেকে আছেন দুই ধারার আন্দোলনেরই সমর্থক।

শাহবাগ আন্দোলনের স্বপক্ষেরও অধিকাংশই মনে করছেন যে নিহত রাজীবের লিখিত ইসলাম বিদ্বেষী কার্যক্রম কিছু ডানপন্থী মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রকাশ হবার কারনেই দেশের আলেম সমাজ এবং ইসলামী দলগুলি মাঠে নেমেছে যা প্রকারান্তে জামাতের পক্ষে গিয়েছে। এটা কতটা সঠিক তা আলোচনা করা দরকার। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম আন্দোলনকারী আলেমদের অন্যতম বড় প্ল্যাটফর্ম, যার নেতা প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শাহ আহমেদ শাফি, মূলতঃ উনিই আলেমদের বর্তমান আন্দোলন সংগঠিত করেছেন এমন প্রতীয়মান হয়। ওনারা একাধিকবার বলেছেন যে যুদ্ধপরাধীদের বিচার ইস্যু নিয়ে ওনাদের কোন আপত্তি নেই, আদালতেই তার ফয়সালা হবে, জামাত শিবিরের সাথে ওনাদের কোন সম্পর্ক তো নেইই এমনকি অনেকে জামাতকে ধর্মীয় কারনেই অত্যন্ত অপছন্দ করেন। ওনাদের মূল দাবী যা সেটা হল ওনাদের ভাষায় নাস্তিক/মুরতাদ ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার যারা মহানবী সম্পর্কে অবমাননাকর উক্তি ব্লগে করেছে তাদের শাস্তির, যা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে রাজীবের মৃত্যুর পরে। কথা হল যে মৃত রাজীবকে নিয়ে এমন টানাটানি তার মৃত্যুর আগে ওনার বা হেফাজতে ইসলামের ভূমিকা কেমন বা কতটা নিরপেক্ষ ছিল? ওনারা কি আসলেই রাজীবের মৃত্যুর পরেই ক্রোধান্বিত হয়ে মাঠে নেমেছেন, নইলে নামতেন না? শাহবাগ আন্দোলন বয়া যুদ্ধপরাধীদের বিচার সম্পর্কে রাজীবের মৃত্যুর আগে ওনাদের দৃষ্টিভংগী কেমন ছিল?

সামান্য ঘাটাঘাটি করে দেখতে পাই যে মাননীয় আল্লামা শাফি ১৫ই ফেব্রুয়ারী ওনার মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিলে বিবৃতি দিয়েছেন “ইসলামের দুশমনরা তরুণ সমাজকে ইসলামের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে : আল্লামা শফী ”। শাহবাগ আন্দোলন মাননীয় আল্লামা শাফি কি চোখে দেখে এসেছেন তা সংবাদ শিরোনামই বলে দেয়, বিস্তারিত পাঠ করলে ওনার আপত্তির কারনগুলি পরিষ্কার হয় যেগুলি আলোচনা নিষ্প্রয়োযন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল ব্লগার রাজীব কিন্তু তখনো বেঁচে, রাজীব খুন হয় একই ১৫ই ফেব্রুয়ারী রাতে, তার নামে নানান ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখি আলোচনায় আসে আরো ২/৩ দিন পরে। কাজেই পরিষ্কার দেখা যায় যে আল্লামা শাফি আন্দোলনকে রাজীবের মৃত্যুর আগ থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখে এসেছেন, প্রবল ভাবে বিরোধীতা করে এসেছেন। তার হেফাজতে ইসলাম দলের নেতারা আরো বেশ কিছু আলেমসহ রাজীব হত্যার ৩ দিন আগেও শাহবাগ আন্দোলন ইসলাম বিরোধী অপশক্তির আষ্ফালন বলে রণ হুংকার ছেড়েছেন। জামাতের সাথে সম্পর্ক বিহীন আল্লামা শাফি সাঈদী ন্যায় বিচার পায়নি এই অভিমত ব্যাক্ত করলেও জামাত শিবিরের দেশব্যাপী ভয়াবহ অব্যাহত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ওনাকে এখনো কিছু বলতে শোনা যায়নি। হেফাজতে ইসলাম দলের নেতারা আরো বেশ কিছু আলেমসহ রাজীব হত্যার ৩ দিন আগেও শাহবাগ আন্দোলন ইসলাম বিরোধী অপশক্তির আষ্ফালন বলে রণ হুংকার ছেড়েছেন । আন্দোলনকারীরা হেফাজতে ইসলামের ভাষায় ‘সাজানো নাটকের নট-নটি’। নাস্তিক রাজীবের কারনেই আলেমগন খেপেছেন এই তত্ত্ব কতটা বাস্তবসম্মত বলে মনে হয়? রাজীবের মৃত্যুর আগে থেকেই কি আল্লামা শাফি ও হেফাজতে ইসলাম প্রকাশ্যেই শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন না, উষ্কানিমূলক নানান অপমানকর বানী ছাড়ছিলেন না? অন্যান্য হাজার হাজার আলেমের (নয়া দিগন্তের ভাষায়) সাঈদীর মুক্তি দাবী করে আরো আগে জানানো দাবীর কথা নাহয় বাদই থাকল।

শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধীতাকারি দলে আরো যোগ দিয়েছেন আরো বেশ কিছু ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল যাদের মাঝে আছেন বেশ ক’জন বিতর্কিত ব্যাক্তিত্ব যাদের বিরুদ্ধে ’৭১ সালে পাক বাহিনীর দালালির প্রমান আছে, বর্তমান সময়ে জামাত শিবিরের হয়ে কাজ করার অভিযোগ আগে থেকেই ছিল, প্রমান আছে নিষিদ্ধ হওয়া জংগী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার বা পৃষ্ঠপোষকতা করার।

হেফাজতে ইসলামের সাথে একই মঞ্চে আন্দোলনরত সমমনা ১২ দলীয় জোটে আছেন নেজামে ইসলামী পার্টির (’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতাকারি একটি দল) মুফতি ইজহারুল ইসলাম যিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জংগী দল হরকতুল জিহাদের সাথে সম্পৃক্ততার কারনে বেশ ক’বার গ্রেফতার হয়েছেন, তার পুত্রকেও পাকিস্তানের জংগী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার কিছু সদস্যর সাথে ২০০৯ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল। উনি এখন যুদ্ধপরাধের থেকে ধর্মঅপরাধ ডবল শাস্তিযোগ্য ফতোয়া দিচ্ছেন এতে অবাক হবার তেমন কিছু নেই। সে কারনেই হয়ত আর রাখঢাকের পরোয়া না করে সরাসরি “‘মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে’ ” দৃপ্ত ঘোষনা দিচ্ছেন। তার দলের মহাসচিব অবশ্য সে দাবী একবার অস্বীকার করেছেন ব্যাক্তিগত অভিমত বলে।

আলেমদের আন্দোলনের আরেকজন গুরুত্বপূর্ন নেতা হিশেবে আবির্ভূত হয়েছেন আরেকজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি মাওলানা মহিউদ্দিন খান, যাকে ইসলামে অগাধ পান্ডিত্যের কারনে ‘আলেমে দ্বীন’ বলে অভিহিত করা হয়। উনি মাসিক মদীনা নামক এক বিপুল জনপ্রিয় ইসলামী পত্রিকা প্রায় অর্ধশতাব্দী কাল ব্যাপী প্রকাশ করে আসছেন, বহু ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থের রচয়িতা। এই পত্রিকা আমার নিজের পরিচিত মহলেও অনেকে নিয়মিত সাবস্ক্রাইব করেন। এই আলেমে দ্বীন সাহেব বর্তমানে সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ও রাবেতা আলম আল ইসলামীর স্থায়ী সদস্য, জমিয়াতুল ওলামায়ে ইসলাম নামের আর এক স্বাধীনতা বিরোধী দলেরও সভাপতি। উনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জংগী সংগঠন হরকতুল জিহাদ (হুজি) দলের এডভাইজার ছিলেন বলে কড়া অভিযোগ আছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী হুজি নেতা মুফতি হান্নানকে ছাড়াতে তিনি মেলা তদবির করেছিলেন। উনি বাংলা ভাইদের কার্যকলাপও ভাল কাজ হিশেবে গণ্য করে মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন । এতে বেজায় গোস্ম্যা করে এরপর উনি সাপ্তাহিক ২০০০ এর বিরুদ্ধে উকিল নোটিস দেন। সাপ্তাহিক ২০০০ মুফতি হান্নান ওনার মদিনা পত্রিকা অফিস কক্ষে ওনার সাথে বৈঠক করছে এমন ছবি সহ জবাব দেবার পর সংগত কারনেই আর উচ্চবাচ্য করেননি২০০৫ সালে উনি আজকের নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরির সাথেও যোগ দিয়েছিলেন। এই নরম দিলের আলেম সাহেব আল বদর সর্দার নিজামী এবং সাঈদীর গ্রেফতারের সংবাদে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। । ’৭১ সালে উনি ময়মনসিং এ রাজাকার দলের সাথে যুক্ত ছিলেন এই অভিযোগে ২০০৯ সালে ওনার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল।

আন্দোলনরত আলেমদের দলে আরেকজন নেতা আছেন খেলাফত মজলিশ দলের মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক যিনি ছিলেন ‘৭১ সালে পাক তাবেদার মালেক মন্ত্রীসভার একজন সদস্য। “একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়” বইতে সসম্মানে এই বিশিষ্ট আলেম সাহেবের নাম আছে। নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের শাস্তি দাবীদার শীর্ষ আলেমদের মাঝে আরো দুজন প্রখ্যাত আলেম জৈনপুরী পীর এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ও খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ্জী হুজুর (একজন মূখ্য স্বাধীনতা বিরোধী) পুত্র আহমদউল্লাহ আশরাফও হুজির সাথে জড়িত ছিলেন

আন্দোলনরত ১২ দল (আহবায়ক উপরে বর্নিত মাওলানা মহিউদ্দিন খান) ও হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলামী পার্টি জামাতের সাথে কোন সম্পর্ক নেই, যুদ্ধপরাধীদের বিচারে তাদের কোনই আপত্তি নেই বলে চললেও তাই সংগত কারনেই প্রশ্ন উঠছে। যায় যায় দিনের খবর, হেফাজত ও ১২ দলের আড়ালে জামায়াত-হরকাতুল জেহাদ । মনে করার কারন নেই যে এসব দলের কাঁধে ভর করে জামাতের অপততপরতার সংবাদ এইই প্রথম এসেছে কিংবা নেহায়েতই কোন উর্বর মস্তিষ্কের রিপোর্টারের কন্সপিরেসি থিয়োরী। জামাতের হয়ে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বাতিলের আন্দোলনে প্রক্সি দিতে গত সেপ্টেম্বর মাসে ১২ দল আন্দোলনে নেমেছিল, সে আন্দোলনে এমনকি সম্মুখে থেকে অংশ নিয়েছিলেন সাঈদী পুত্র শামীম সাঈদী। জামাতের দেওয়া বিভিন্ন সন্ত্রাসী পরিকল্পনা এই ইসলাম রক্ষক ১২ দল কার্যকর করার দায়িত্ব নিয়েছিল। জামাতের হয়ে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বাতিলের আন্দোলনে প্রক্সি দিতে গত সেপ্টেম্বর মাসে ১২ দল আন্দোলনে নেমেছিল । আপাতত আর কারো উদাহরন দিতে চাই না।

আমি অবশ্যই দাবী করছি না যে আন্দোলনরত সকল আলেমই ওপরের উদাহরনগুলির ভেতর পড়ে যাবেন কিংবা সব সংগঠনই জংগী বা যুদ্ধপরাধী সহায়ক। নিঃসন্দেহে আন্দোলনে অনেক শান্তিকামি আলেম আছেন যারা আসলেই যুদ্ধপরাধী ইস্যু নিয়ে মাথা ঘামান না, যুদ্ধপরাধীদের সমর্থন করেন না, যারা প্রকৃতই মাঠে নেমেছেন ধর্ম ও নবী অবমাননার সংবাদ পেয়ে। যে কোন আইন সংগত শান্তিপূর্ন আন্দোলনেই আমার কোন আপত্তি নেই, তাতে আমার সমর্থন থাক কি না থাক। সেসব আলেমদের উচিত হবে নিজেদের আন্দোলনের স্বার্থেই বিতর্কিত লোকজনের সংসর্গ পরিত্যাগ করা। আর যারা যুদ্ধপরাধীদের বিচার কোন কারনে চান না তাদেরও উচিত ছলাকলা বাদ দিয়ে সরাসরি সেটা ব্যাক্ত করা। অনলাইন ব্লগার ও দেশের ধর্মভীরু জনতা আলেমদের ধর্মীয় সংস্কৃতির কারনেই খুবই সম্মান করে, সে সম্মান নষ্ট যেন না হয় সেটা রক্ষার দায়িত্ব আলেমদেরই। সম্মান কখনো কখনো জোর করে আদায় করা গেলেও মাত্রা ছাড়ালে জোর করে ধরে চিরজীবন রাখা যায় না।

নিহত ব্লগার রাজীব বা অন্য কেউই শাহবাগে ইসলাম বিদ্বেষী কিংবা নাস্তিক্য প্রচার হয় এমন কোন বক্তব্য দেয়নি, তারপরেও কিভাবে যেন শাহবাগ আন্দোলন নাস্তিকদের ইসলাম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্র এমন ধারনা ব্যাপকভাবে ছড়ানো হয়েছে (এ বিষয়ে সামনের পর্বে আলোকপাত করব)। তারা কেউ কোন রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন না, এই আন্দোলন এক অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ন ও সুশৃংখল আন্দোলন হিশেবে আন্তর্জাতিভাবেও প্রসংশিত হয়েছে। অথচ সেসব চাপা পড়ে গেল ব্যাক্তিগত ধর্মবিশ্বাসের আড়ালে, বড় হয়ে সামনে চলে আসল কে আস্তিক কে নাস্তিক কে কত বড় ধার্মিক এসব বায়বীয় প্রশ্ন।

এক মৃত রাজীবের কারনে পুরো শাহবাগ আন্দোলনে অংশগ্রহনকারীরা সকলে নাস্তিক মুরতাদ হলে, আন্দোলন ইসলাম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্র হলে, (আদতে যদিও ঘটনা তেমন নয়) বেশ ক’জন জীবিত বিতর্কিত লোকজন ও সংগঠনের কারনে আলেমদের আন্দোলন যুদ্ধপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য স্বাধীনতা বিরোধী কিংবা জংগীদের ষড়যন্ত্র বলে কেন চিহ্নিত করা যাবে না এই প্রশ্ন নিশ্চয়ই সম্মানিত আলেমদের করা যাবে না। এখন দেশে মনে হয় শিশু ধর্ষকের চাইতেও জঘন্য গালি নাস্তিক/মুরতাদ। আমি ইসলামের যতটা জানি তাতে শুনেছি যে কাউকে অমুসলমান বলার অধিকারও কাউকে দেওয়া হয়নি যতক্ষন না সে নিজে ইসলাম পরিত্যাগের ঘোষনা দেয়, কাউকে অমুসলমান অন্যায্যভাবে বলাটাও মহা গুনাহর কাজ, আলেমরা নিশ্চয়ই আরো ভাল জানেন। আন্দোলন নিয়ে যত যাইই কথা হোক শাহবাগের নেতা বা যোগদানকারী অনেকেই নাস্তিক কিংবা অমুসলমানও নন। কোন ধর্মের শিক্ষাদানকারী/হেফাজৎকারীরা উগ্রতা শিক্ষা দিলে সে ধর্মের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই অনুসারীদেরও শ্রদ্ধা ফিকে হয়ে আসবে।

বহুদিন আগের ঢাকা কলেজের এক স্মৃতি এই প্রসংগে প্রায়ই মনে পড়ে। ক্লাসের একজনকে পেটাতে মোহাম্মদপুর থেকে হুবহু মাফিয়া ষ্টাইলের কোট প্যান্ট পরা বাছা বাছা ৩ জন ক্যাম্পাসে এসেছে। টার্গেটকে খেলার মাঠে পেয়ে একশন শুরু হল, মুশকিল হল টার্গেটের সাথের আরেকজনও দেখা গেল অযাচিতভাবে মার খাচ্ছে। সে বেচারা কাঁদ কাঁদ স্বরে বলে; ‘ভাই আমারে মারেন ক্যান, আমি কি করছি?’ ষন্ডা দল ক্ষনিকের জন্য একটু থমকে গেলেও জবাব দেয়, ‘তুই লাল শার্ট পরছস ক্যান….ক্যান পরলি লাল শার্ট” সাথে সাথে আরো দুই ঘুষি।

রাজীবের যায়গায় অমি পিয়াল মারা গেলেও ঘটনা একই ঘটত। তখন বার করা হত মুক্তিযুদ্ধ ব্যাবসায়ীর ছদ্মবেশে পর্ণ ব্যাবসায়ী অমি পিয়ালের কুতসিত চেহারা (অমি পিয়াল এক সময় যুদ্ধপরাধীদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে বাংলা পর্ন সাইটেও ঘোরাঘুরি করেছেন যার ব্যাখ্যা তিনি নিজে বহুবার কোন রকম সঙ্কোচ ছাড়াই দিয়েছেন)। ফলাফল হত একই, শাহবাগ আন্দোলন তখন সফলভাবে জামাতিদের দাবীমত চিত্রায়িত হত অসামাজিক কার্যকলাপের আড্ডাখানা হিসেবে। নয়া দিগন্ত আমাদের দেশে থাবা বাবার লেখার যায়গায় ছাপা হত পর্ন সাইটে লেখা অমি পিয়ালের নামে রসালো পোষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী অনেকে আলোচনা শুরু করতেন পিয়ালের জন্যই কিভাবে আন্দোলন রসাতলে গেল……এসব বিতর্কিত লোক না এলেই ভাল হত। নয়া দিগন্ত, আমার দেশ, আন্দোলনরত আলেমগন তো প্রথম থেকেই বলে আসছেন যে শাহবাগ আন্দোলনে আগুন জ্বালানো, নাচগান, নারী পুরুষের অবাধ মিলন জাতীয় নানান বেশরিয়তি কাজকারবার চলছে। (আজ দেশের ৩ বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ম্যাডাম জিয়াও একই কথা বলেছেন)। পর্ণ ব্যাবসায়ী নেতাদের শিষ্যরা আর কতটা ভাল হতে পারে?

বহু মেধাবী লোক ব্লগ জগতে আছেন তারা কেউ যেন এ লেখার অর্থ আবার করে না বসেন যে আমি রাজীবের যাবতীয় ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখি হালাল করার দায় নিয়েছি। শাহবাগ আন্দোলন ইস্যুতে যে কারনে ‘ব্লগার’ রাজীবের শ্বশুড়ের নাম কিংবা দেশের বাড়ি কোথায় নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই সেই একই কারনে রাজীবের ধর্মবিশ্বাস কি তা নিয়েও আমার তেমন আগ্রহ নেই। আমার কিছুটা আগ্রহ হয়েছে আন্দোলনে তার ভূমিকা কি ছিল তাতে। তার লেখায় কেঊ আপত্তিকর কিছু অবশ্যই পেতে পারেন, যত খুশী তার নিন্দা করতে পারেন। তাকে শহীদ বলা কিংবা কুত্তা বলা কিছুতেই তার আর কিছু যাবে আসবে না – এইটুকুতে নিশ্চয়ই আস্তিক নাস্তিক সকলেই একমত হবেন। আল্লাহ থেকে থাকলে তিনি নিশ্চয়ই শাস্তি/পুরষ্কার নির্ধারনে অধম বান্দাদের রেকমেন্ডশনের অপেক্ষায় থাকেন না। শুধু এইটুকু অনুরোধ যে রাজীবের লেখার জের ধরে আন্দোলনে জড়িত অন্যান্যদেরও অপ্রাসংগিকভাবে গালিগালাজ করবেন না বা রাজীবের মত নাস্তিকদের জন্যই আলেমগণ মাঠে নেমে জামাতকে অজ্ঞাতসারে সুবিধে করে দিচ্ছেন এমন সিদ্ধান্ত একটু বাস্তব প্রসূতভাবে করবেন। শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন, জাহানারা ইমামও অতীতে নাস্তিক মুরতাদ এসব হয়েছেন, জাফর ইকবালও একই কারনে অনেকের কাছে নাস্তিক। জাহানারা ইমাম ‘জাহান্নামের ইমাম’ বলেও এক শ্রেনীর লোকের গাল খেয়েছেন। জাহানারা ইমামকে পরাজিত করা যায়নি কারন তিনি ব্যাক্তি জীবনে নামাজ রোজা করলেও এসব নাস্তিক মুরতাদ গালি খেয়ে কিছু অসূস্থ ধর্মব্যাবসায়ী ও উন্মাদের কাছে নিজে কত বড় ধার্মিক তা প্রমানের চেষ্টা করেননি, নিজের ধর্মবিশ্বাস নিজের কাছেই রেখেছিলেন, ধর্মকে চরম তামাশার বস্তুতে রূপান্তরিত করেননি।

[আপডেট]ঃ এই লেখা প্রকাশের পর খবর এসেছে আজই চট্টগ্রামে আলেমদের অরাজনৈতিক সংগঠন যারা যুদ্ধপরাধীদের বিচারে কোন আপত্তি নেই বলে দাবী করে আসছিলেন তাদের সমাবেশ থেকে সরাসরি সাঈদীর মুক্তি দাবী করা হয়েছে।
হেফাজতের সমাবেশে সাঈদীর মুক্তি দাবি