রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ এই আন্দোলনে পক্ষে বিপক্ষে ট্যাগ দিবার প্রতিযোগিতা অব্যহত আছে। দেশের বড় দুটি দলই এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য অস্থির হয়ে আছে। খালি চোখে দেখলে মনে হবে আওয়ামীলীগ ই মনে হয় এর ফল ভোগ করবে। আসলে তা নয়। দুইটি দলই এই নিয়ে তাদের স্বার্থ বাজ পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে।

আন্দোলন যতদিন চলবে,মানুষের দৃষ্টি এই দিকেই থাকবে। এতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের লাভ অনেক। মিডিয়া থেকে জনগন এই ইস্যু নিয়ে থাকার কারনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি,তেল,বিদ্যুত,গ্যাস,গাড়ি ভাড়া,বাসা ভাড়া এই বিষয় গুলাতে আন্দোলন নেই বললেই চলে। ভোট ব্যাংকে এই ছোট আন্দোলন গুলোর প্রভাব কম নয়। তাই সরকার কোন ভাবেই চায় না, তার সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ এই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস,বাজার নিয়ে আন্দোলনে নামুক। পদ্মাসেতু ইস্যুটা সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছিল,হলমার্ক কেলেঙ্কারি,ডেসটিনি দুর্নীতি,শেয়ার বাজারের খবর এখন আন্দোলনে চাপা পড়ে আছে।

আন্দোলনের প্রভাব ব্যপারে এখন সন্দেহ করার কোন সুযোগ নাই। দেশে ক্রিকেটের একটা বানিজ্যিক আসর এবার এই আন্দোলনের কারনে জনপ্রিয় হয়নি। প্রায় সব দিনই গ্যালারি ফাঁকা ছিল। যারা গ্যালারিতে ছিল তাদের মাঝেও এই আন্দোলনের আভাস পাওয়া যা। গত খেলায় দেখলাম ভিআইপি গ্যালারি থেকে একজন মাঠে নেমে গেছে, তার হাতে ধরা

“hang war criminals”

এই ধরনের পোস্টার । তাই মানুষের মুল আকাঙ্খার জায়গা এখন রাজাকারের ফাঁসি। এই ইস্যুটির চেয়ে কোন ইস্যু মানুষকে আকর্ষণ করতে পারছেনা। এটা সরকারের পক্ষে অবশ্যই যাচ্ছে।

এবং যাচ্ছে যে তার আর একটা বড় প্রমাণ সরকার প্রথম থেকেই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছে। আন্দোলনের নিরাপত্তার দিকেও তার সজাগ দৃষ্টি আছে। এখানে মজার একটা বিষয় আছে, সরকার এই আন্দোলনকে সহযোগিতা করার বড় কারন হলো লাখ জনতাকে ভয় পাওয়া। প্রজন্ম চত্তরের প্রতিটা কর্মসূচি সারা দেশে এক সাথে পালিত হচ্ছে। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকার থাকার পরেও এই ভাবে যুবক,তরুনরা এটা করতে পারবে ব্যপারটা বিষ্ময়কর নয় মহা বিষ্ময়কর।এই দাবানল ছড়িয়ে পড়লে তারাও বিপদে পড়বে।সরকারী বুঝতে পেরেছে, বাধা পেলে তার রুপ যে কোন মূহুর্তে পরিবর্তিত হতে পারে।

আন্তর্জাতিক ভাবে একটা চাপ অবশ্যই সরকারের উপর আছে। গাঁয়ে আগুন লাগলে দেবালয় এড়ায় না। সব কিছুই পড়ু ছাড়খার করে দিতে পারে। নিজেদের বাঁচানোর জন্যই আওয়ামীলীগের এই সহযোগিতা করার ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিলনা। সহজ ভাষায় আওয়ামীলীগ বাধ্য হয়েছে সহযোগিতা করতে।যে কোন দেশের বিপ্লব,বা জাগরণকে ই পাশের রাষ্ট্র ভয় পায়। এই জাগরণ যদি তার দেশে ছড়িয়ে পরে তখন তাকে সামাল দেয়ার রিক্স কোন ভাবেই নিতে চায়না। একাত্তুরে আমাদের মুক্তি যুদ্ধ দ্রুত নিষ্পত্তি করা ভারতের জন্য এই জন্য অপরিহার্য ছিল। আর তরুণদের আন্দোলন তো কোন একটা আদর্শের ভিত্তিতে হয় নাই। হয়েছে জনমনের দাবীর প্রেক্ষিতে। অন্তত আমেরিকার মতো দেশ যারা একাত্তুরে আমাদের রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে, এখনো যুদ্ধপরাধীদের কৌশলে পক্ষ নিচ্ছে। তাদের একটা বড় চাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

এই আন্দোলনে আর বড় একটা সুবিধা আওয়ামীলীগ পাচ্ছে। সেটা হলো বিরোধী দল এখন আন্দোলন করতে পারছেনা। যত দিন প্রজন্ম চত্তর জ্বলতে থাকবে বিএনপি মাঠে নামার সাহস করবে না। কারন এই চত্তরে তারও লোকজন রয়েছে তাই কৌশলে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। বিএনপিকে কোন ঠাসা করার এমন সুযোগ আওয়ামীলীগ কেন ছাড়বে?

দাবার শেষ চালের আগে কিছু প্রস্তুতি পর্ব থাকে। এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে বিএনপি। তারাও জানে তাদের গন্তব্য কোথায় হবে। প্রতিদিনই কৌশলে সমর্থন এবং বিরোধিতা দুটাই করতে চেষ্টা করেছে। দুই নৌকায় পা দেয়ার বিপদ তারা হয়তো টের পাবে। কিন্তু যতদিন বিপদ না হয় ততদিনে কিছু আদায় করার লোভও সামলাতে পারছে না। তাদের এক নেতা পজেটিভ ভাবে বলেন জামাতের মতো কিছু দল জোট থেকে চলে গেলে কোন ক্ষতি হবে না। আবার রাতেই সুর পরিবর্তন করে বলেন, জোট আরো শক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন এই বিবৃত্তি দেখে আমাদের এক বড় ভাই বলছে। বিএনপি জোট অটুট আছে যত জোড়ে যতবার বলবে। বুঝতে হবে জোটের ফাটল তব বড় হচ্ছে। কথাটা আমার মনে ধরেছে।

বিএনপির যে প্রধান আন্দোলনের ইস্যু তা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন করা। বিষয়টা আমার কাছে খুব খেলো মনে হয়। এটা যে কোন মুহূর্তে বিএনপি এই ইস্যু ত্যাগ করতে পারে এবং লীগ এই ইস্যুতে বিএনপিকে সমর্থন দিতে পারে। এটা তাদের রাজনীতিতে বড় কোন সমস্যা বলে মনে হয় না। কিন্তু এই সুযোগে অনেক দিন বিপদে থাকা বিএনপি জামাতকে এক হাত দেখার সুযোগ পেয়েছে।

যদি ঘটনা এমন হয়, প্রতিদিন একবার জামাতের কর্মসূচিতে বিএনপি সমর্থন দেবার জন্য দশ কোটি টাক দেয়া হবে। আমি অবাক হবো না। বিএনপির সম্প্রতি কিছু কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে জামাতকে নিয়ে আন্দোলনে নামার ঝুঁকি নিচ্ছে না। কিসের ঝুঁকি? প্রজন্ম চত্তর তাদের উপর হামলা চালাবে এই ঝুঁকি? অবশ্যই না। ঝুঁকিটা নিজেদের ভেতরে। এখন জামাতকে নিয়ে মাঠে নামলে নিজেদের মধ্যে বিভেদটা স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। বিএনপি জেনে বুঝে এই কাজ করতে পারেনা। কিন্তু তবু কেন জুটের ব্যাপারে কথা বলছে। তাদের তো কেউ জানতে চাইছে না যে তারা জোট রাখবে কি রাখবে না। এই বলার পেছনে বড় টাকার অংক কাজ করে বলে আমার বিশ্বাস।

জামাত এতদিন জোট ছেড়ে দিয়ে বিএনপিকে বিপদে ফেলে দেবার যে হুমকি দিয়ে আসছিল। বিএনপির সকল কর্মসূচিতে জামাত তাদের ব্যানার নিয়ে উপস্থিতি বুঝাতে চেষ্টা করেছে। এবং বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় লাঠি হাতে উপস্থিত থেকে নিজেদের অবস্থানকে অনেক মজবুত করে ফেলেছে। বিএনপি তাদের নিজেদের টাকা, এবং জনবল ছাড়া নানা কর্মসূচি সম্পন্ন করে জামাতের উপর নির্ভর করেছে। এক সময় তার তাকিয়ে দেখল জামাত ছাড়া তাদের এখন চলা সম্ভব নয়। অন্যের কাধে ভড় দিয়ে এবার নিজেই হাঁটার পদ্ধতি ভুলে গেল। কিন্তু এইবার সুযোগ এসেছে ,তাই জামাতকে সুধে আসলে একটু ঝাঁকিয়ে নিতে চায়।

জামাত নিষিদ্ধ হলে বিএনপির লাভ ছাড়া ক্ষতি কিছু হবেনা। এই ভোট তো বিএনপিই পাবে।

বিবিসি সংলাপে, জয়নাল আবেদীন ফারুককে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জামাত নিষিদ্ধ হলে তাদের কি দলে নেবেন? ফারুক উত্তরে বলেছিলেন, তারা তো আওয়ামী লীগেও যেতে পারে।

আমার ধারনা বিএনপি মোটামুটি ভাবে প্রস্তুতি নিয়েই নিয়েছে যে জামাত নিষিদ্ধ হবে। তাই ভেতরে ভেতরে বিএনপি কিছুটা খুশিই বলতে গেলে। কিন্তু তবু জামাতকে বাতিল করেছে না কেন? তার প্রধান কারন আওয়ামীলীগের সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে ততদিন আন্দোলন করার এত সহজ একটা হাতিয়ার কি করে ফেলে দেয়। একটু না হয় ময়লা হাতে লেগেছে তাতে কি? আর আওয়ামীলীগের সাথে আন্দোলন করলে ধর্ম একটা বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। জামাতকে সাথে রাখলে হাতিয়ারে সাথে একটা ভাল গ্লাভসও পাওয়া গেল। বিএনপির নেতারা দাঁড়ি টুপি রাখার ঝামেলায় জড়াল না, মসজিদে মসজিদে দৌড়াতে হল না। এই কাজটা তো জামাতই করবে। তাদের সমর্থন এই জন্য বিএনপির কিছুটা দরকার। কিন্তু এই সব কাজ সিদ্ধি হয়ে গেলে জামাতকে ও তাদের দরকার নাই।

বিএনপি একটা নির্বাচনমুখী দল। তারা নির্বাচনে যাবে এটা বাস্তব। তাই তারা হিসাব করে ভোটের। ৯১এর পর থেকে কোন সরকারই দুইবার ক্ষমতায় আসতে পারেনা। একটা দল ক্ষমতায় এসে এতই দূর্নীতি শুরু করে যে মানুষ বাধ্য হয় তাদের বয়কট করতে। কিন্তু সরকার দলকে বয়কট করে বিকল্প কিছু পায়না। আবার সেই বিরোধী দল ক্ষমতায় আসে। এই সমীকরণে পরের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। মানুষ যেহেতু বাধ্য তাদের ভোট দিতে তাই তারা দুই দিকেই রক্ষা করে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপি ভাল করেই জানে আন্তর্জাতিক চাপ আছে জামাতের মতো উগ্র ধর্মীয় দলের সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে পাশের দেশ ভারতের একটা চাপ থাকাই স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সফর,এবং ভারতের পররাষ্টমন্ত্রী খালেদার বাস ভবনে সৌজন্য সাক্ষাত করা ইত্যাদি থেকে এটা অনুমান করা যায়। কিছু একটা চাপ তার উপর আছে। মাঠে যখন জামাত বিরোধী আন্দোলন তখন বিএনপি যে চাপে আছে তা সহজেই বুঝা যায়।

জামাত নিষিদ্ধ করার ব্যপারে আওয়ামীলীগের যেমন চাপ নেই। তেমনই জামাত নিষিদ্ধ করার ব্যপারে বিএনপিও সরাসরি কিছু বলছে না। ২২ ফ্রেব্রুয়ারির জামাত ছদ্দবেশে দেশে যে তাণ্ডব করেছে। জাতীয় পতাকা ছিড়ে,আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। শহীদ মিনার ভেঙ্গেছে। এর পরে কি জামাত নিষিদ্ধ করতে আরো কোন অযুহাতে দরকার পরে? আমরা চাই ভূত যেন সর্ষের ভেতরে না থাকে।

আমরা রাজনীতি বুঝিনা,দেশ প্রেম বুঝি। ক্ষমতা বুঝি না শান্তি বুঝি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য এবার আপনারা ক্ষমতার রাজনীতি বন্ধ করেন। এই দেশে একাত্তরের ঘাতক দালালদের দেখতে চাইনা। এটা কোন দলের দাবী নয় জনগনের প্রাণের দাবী। অবিলম্বে জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন।

রাজাকারের ফাঁসি চাই।
জামাত শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে।
জয় বাংলা।