বাস্তবতার যাদু (পর্ব-১): বাস্তবতা কি? যাদু কি?
বাস্তবতার যাদু (পর্ব-২): বিজ্ঞান এবং অতিপ্রাকৃতঃ ব্যাখ্যা এবং এর শত্রু
বাস্তবতার যাদু (পর্ব-৩): বিবর্তনের ধীর যাদু
বাস্তবতার যাদু (পর্ব-৪): প্রথম মানুষ কে ছিল ?

পাথরে পরিণত

এখন, আমরা কেমন করে জানি আমাদের দূর অতীতের পূর্বপুরুষরা দেখতে কেমন ছিল, আর আমরা কেমন করে জানি তারা কখন বেঁচে ছিল? বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জীবাশ্ম থেকে জানতে পারি। এই অধ্যায়ের আমাদের পূর্বপুরুষদের সব ছবি জীবাশ্মের উপর ভিত্তি করে পূণর্গঠন করা হয়েছে তবে আধুনিক জীবজন্তুর সাথে তুলনা করে রঙ দেওয়া হয়েছে।

জীবাশ্মরা পাথরের তৈরী। ওরা সেই সব পাথর যেগুলোতে মৃত জীবজন্তু বা উদ্ভিদের আকৃতির ছাপ রয়ে গেছে। অধিকাংশ জীবজন্তু জীবাশ্মতে পরিনত হবার কোনরকম আশা ছাড়াই মারা যায়। চালাকিটা হচ্ছে, যদি তুমি নিজেকে জীবাশ্মতে পরিণত করতে চাও আরকি, ঠিক ঠিক রকম কাদা আর পলিমাটির নিচে চাপা পড়া। ঠিক সেইরকম যেগুলো একসময় শক্ত হয়ে ‘পাললিক শিলা’ উৎপন্ন হতে পারে।

এর  মানে কি? শিলা-পাথরেরা তিন রকমেরঃ আগ্নেয়, পাললিক আর রূপান্তরিত। রূপান্তরিত শিলাকে আমি বাদ দেব, কারণ ওরা অন্য দুধরনের শিলা থেকে তৈরী হয়। আগ্নেয় আর পাললিক শিলা চাপ আর তাপে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়। আগ্নেয় শিলা একসময় ছিল গলিত আকারে। যেমন এখন আগ্নেয়গীরির উদগিরন থেকে যে উত্তপ্ত লাভা বের হয় সেগুলোর মত। পরে ঠান্ডা হবার পর শক্ত পাথরে পরিণত হয়েছে। যেকোন ধরনের শক্ত পাথর বাতাস আর পানিতে ক্ষয়ে গিয়ে ছোট ছোট পাথর, নুড়ি, বালি আর ধুলো তৈরী করে। ধুলো আর বালি পানিতে ভেসে যায় আর তারপর পলি বা কাদা হিসেবে স্তরে স্তরে সমুদ্র , হ্রদ বা নদীর তলায় জমা হয়। অনেক লম্বা একটা সময় ধরে, পলিমাটি শক্ত হয়ে পাললিক শিলার স্তর তৈরী করতে পারে। যদিও সব স্তর শুরুতে সমান আর অনুভূমিক থাকে, কোটি কোটি বছর পর যখন আমরা তাদের দেখি সে সময়ের মধ্যে প্রায়ই তারা কাত হয়ে, উলটে অথবা দুমড়ে-মুচড়ে যায় (কেন এমন হয় তা, ভূমিকম্পের উপর লেখা অধ্যায় ১০-এ ব্যাখ্যা করা হবে )।

এখন ধর একটা মৃত প্রাণী একটা নদীর মোহনায় কাদার মধ্যে ভেসে চলে এল। এই কাদা যদি পরে শক্ত হয়ে পাললিক শিলায় পরিনত হয়,  প্রাণীটার দেহ পচে শেষ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু শক্ত হয়ে যাওয়া শীলায় সেটার আকৃতির একটা ফাঁপা ছাপ রেখে যাবে। পরিশেষে যেটা আমরা  খুঁজে পাব। এটা এক ধরনের জীবাশ্ম –  প্রাণীটার একধরনের ‘নেগেটিভ’ ছবি। অথবা এই ফাঁপা ছাপটা ছাঁচের মত কাজ করতে পারে, এর ভেতর নতুন পলি জমা হয়ে পরে শক্ত হবার পর  প্রাণীটার দেহের বাইরের দিকের একটা ‘পজিটিভ’ নকল তৈরী করার মাধ্যমে। ঐটা দ্বিতীয় ধরণের জীবাশ্ম। আরেকটা তৃতীয় ধরনের জীবাশ্ম আছে যেটায় প্রাণীটার দেহের অণু-পরমাণুগুলো, একটা একটা করে, পানিতে থাকা অণু-পরমাণু দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়। পরে সেগুলো স্ফটিকের মত দানা বেঁধে পাথর তৈরী করে। সবরকম জীবাশ্মের মধ্যে এটাই সেরা কারণ, ভাগ্য সহায় থাকলে, প্রাণীটার ভিতরের খুঁটিনাটি অনেকদিন টিকে থাকতে পারে এমনভাবে পুনর্গঠিত হয়। একেবারে জীবাশ্মের মাঝখান থেকে।

জীবাশ্মদের এমনকি তারিখ বের করা যায়। বেশীরভাগ সময় পাথরের মধ্যে থাকা তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে আমরা বলে দিতে পারি ওদের বয়স কত। অধ্যায় ৪ এ আমরা জানব আইসোটোপ আর অণু কি। সংক্ষেপে, রেডিও আইসোটোপ হচ্ছে এক ধরণের অণু যেটা ক্ষয়ে গিয়ে আরেক ধরণের অণুতে পরিণত হয়। যেমন, ইউরেনিয়াম-২৩৮ পরিণত হয় লেড-২০৬ এ। যেহেতু আমরা জানি এটা হতে কত সময় লাগে আমরা আইসোটোপকে একটা তেজস্ক্রিয় ঘড়ি হিসেবে চিন্তা করতে পারি। তেজক্রিয় ঘড়িগুলো অনেকটা জলঘড়ি আর মোমবাতির ঘড়ির মত, যেগুলো মানুষ পেন্ডুলাম ঘড়ি উদ্ভাবিত হবার আগে ব্যবহার করত। নিচে ছিদ্রওয়ালা এক ট্যাঙ্ক পানি একটা নির্দিষ্ট হারে খালি হতে থাকবে। যদি ট্যাঙ্কটা ভোরে ভর্তি করা হয়ে থাকে, তুমি পানির এখনকার উচ্চতা মেপে বলে দিতে পারবে দিন কতটা পার হয়েছে। মোমবাতির ঘড়ির বেলায়েও একই ব্যাপার। মোমবাতি একটা নির্দিষ্ট হারে পোড়ে, তাই কতখানি মোমবাতি বাকী আছে তা মেপে তুমি বলে দিতে পার সেটা কতক্ষন ধরে পুড়ছে। ইউরেনিয়াম-২৩৮ ঘড়ির বেলায় আমরা জানি অর্ধেক ইউরেনিয়াম-২৩৮ ক্ষয়ে গিয়ে লেড-২০৬ এ পরিণত হতে ৪.৫ বিলিয়ন বছর সময় লাগে। একে বলা হয় ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর ‘হাফ-লাইফ’। তাই একটা পাথরে ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর তুলনায় কতটুকু লেড-২০৬ আছে তা মেপে তুমি হিসেব করে বের করতে পারো, যখন শুধু ইউরেনিয়াম-২৩৮ ছিলো, কোন লেড-২০৬ ছিল না, তখন থেকে কতদিন পার হয়েছে। অন্যকথায়, ঘড়িটা ‘শূন্য’তে সেট করার পর কতদিন সময় গেছে।

আর ঘড়িটা কখন শূন্যতে সেট করা হয়েছে? হুম, এটা শুধু আগ্নেয় শিলাদের বেলায়ই ঘটে। তাদের ঘড়ি তখন শূন্যতে সেট হয়ে যায় যে মুহুর্তে গলিত শিলা শক্ত হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হয়। পাললিক শিলার বেলায় এটা কাজ করে না। সেটার কোন ‘শূন্য মুহূর্ত’ নেই। ব্যাপারটা দূঃখজনক কারণ পাললিক শিলাতেই শুধু জীবাশ্ম পাওয়া যায়। তাই আমাদেরকে পাললিক শিলার স্তরের কাছাকাছি থাকা আগ্নেয় শিলা খুঁজে বের করে তাদেরকে ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। যেমন, পলির ভেতরে একটা জীবাশ্মের উপরে যদি ১২০-মিলিয়ন বছর বয়সের  আগ্নেয় শিলা আর নিচে যদি ১৩০-মিলিয়ন বছর বয়সের আগ্নেয় শিলা থেকে থাকে তাহলে তুমি জানো যে জীবাশ্মের তারিখ ১২০ মিলিয়ন থেকে ১৩০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে কোন এক সময়ে হবে। এই অধ্যায়ে যতগুলো তারিখ আমি উল্লেখ করেছি তার সবগুলোই এভাবে পাওয়া গেছে। এগুলো সবই আনুমানিক তারিখ, খুব সূক্ষ্ম মাপ হিসাবে নেওয়া যাবে না।

ইউরেনিয়াম-২৩৮ -ই একমাত্র তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ না যেটাকে আমরা ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। আরও অনেক আছে। চমৎকার ব্যাপকভাবে বিস্তৃত মানের সব ‘হাফ-লাইফ’ তাদের। যেমন, কার্বন-১৪ এর হাফ-লাইফ হচ্ছে মাত্র ৫,৭৩০ বছর। তাই যেসব প্রত্নতত্ত্ববিদ মানুষের ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করেন, এটা তাদের কাজে আসে। সুন্দর ব্যাপার হলো অনেক তেজস্ক্রিয় ঘড়ির সময় স্কেল একটার আরেকটার উপর দিয়ে যায়। তাই একটা দিয়ে আরেকটা আমরা চেক করতে পারি। আর তারা সবসময়ই একই মান দেয়।

কার্বন-১৪ ঘড়ি অন্যদের থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে। এর জন্য আগ্নেয় শিলার প্রয়োজন পড়ে না, বরং এটা জীবদেহের অবশিষ্ট অংশ ব্যবহার করে। যেমন পুরোন কাঠ। এটা দ্রুততম তজস্ক্রিয় ঘড়িগুলোর মধ্যে একটা। কিন্তু তবুও ৫,৭৩০ বছর একজন মানুষের জীবনের চাইতে অনেক অনেক লম্বা। তাই তুমি প্রশ্ন করতে পারো কিভাবে জানি এটা কার্বন-১৪ এর ‘হাফ-লাইফ’? ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর হাফ-লাইফ যে  ৪.৫ বিলিয়ন বছর সেটা কিভাবে জানি তা তো দূরের কথা! উত্তরটা সহজ। অণুর অর্ধেকটা ক্ষয় হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করার দরকার নেই। আমরা অণুর অতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশের ক্ষয়ের হার পরিমাপ করতে পারি, আর তার থেকে হাফ-লাইফ (কোয়ার্টার লাইফ, হান্ড্রেডথ-লাইফ) হিসেব করে বের করতে পারি।

 

এক অতীত যাত্রা

 

 

চল আরেকটা মনে মনে পরীক্ষা করা যাক। কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবকে সাথে নিয়ে একটা টাইম মেশিনে উঠে পড়ো। ইঞ্জিন চালু করে ধাঁ করে দশ হাজার বছর অতীতে চলে যাও। দরজা খুলে দেখ কিরকম মানুষের সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে। তুমি যদি এখন যেটা ইরাক সেখানে অবতরন কর, তাহলে তারা কৃষিকাজ আবিস্কারের প্রক্রিয়ায় থাকবে।  অন্য বেশীরভাগ জায়গায় তারা হবে ‘শিকারী-সংগ্রহকারী’, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়ায়, বন্যপ্রাণী শিকার করে আর বন্য ফলমূল, বাদাম আর শিকড়-বাকড় সংগ্রহ করে। ওরা কি বলছে তা তুমি বুঝতে পারবে না আর ওদের পরণে থাকবে একেবারেই ভিন্ন ধরনের পোশাক-আশাক (যদি কোনরকম থেকে  থাকে আরকি)। তা সত্ত্বেও, তুমি যদি তাদের আধুনিক পোশাক-আশাক আর আধুনিক চুলের ছাঁট দাও, আধুনিক মানুষদের থেকে ওদের পার্থক্য করা যাবে না ( বা আধুনিক মানুষেরা এক অন্যের থেকে যতটুকু আলাদা তার থেকে বেশী আলাদা করা যাবে না।) আর তারা তোমার টাইম মেশিনে চড়ে আসা আধুনিক মানুষদের যে কারো সাথে প্রজনন করার ব্যাপারে সম্পূর্নভাবে সক্ষম থাকবে।

 

এখন, ওদের মধ্য থেকে তোমাদের সাথে যেতে চায় এমন একজনকে নাও ( হয়ত তোমার দাদার-৪০০-বাবাকে, কারণ আনুমানিকভাবে এই সময়েই উনি সম্ভবত বেঁচে ছিলেন) আর আবার টাইম মেশিনে যাত্রা শুরু কর। আরও দশ হাজার বছর পেছনে চলে যাও। বিশ হাজার বছর আগে, যেখানে তোমার দাদার-৮০০-বাবার সাথে দেখার করার সুযোগ রয়েছে। এবার যেসব মানুষদের তুমি দেখবে তাদের সবাই ‘শিকারী-সংগ্রহকারী’। কিন্তু এবারো তাদের দেহ পুরোপরি আধুনিক মানুষের মতো, এবারো তারা আধুনিক মানুষের সাথে প্রজনন করার ব্যাপারে এবং বাচ্চা জন্ম দিতে পারে এরকম সন্তান উৎপাদন করতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম। ওদের মধ্যে থেকে একজনকে তোমার টাইম মেশিনে তুলে নাও আর আরও দশ হাজার বছর অতীতে যাত্রা শুরু করো। এভাবে করতে থাকো, দশ হাজার বছর করে করে লাফ দিয়ে যেতে থাকো, প্রত্যেকটা যাত্রাবিরতিতে নতুন যাত্রী তুলে নাও আর তাকে অতীতে নিয়ে যাও।

ব্যাপারটা হলো অবশেষে, অনেক অনেক বার দশ হাজার বছর করে লাফ দিয়ে যাবার পর,  তুমি হয়ত যখন এক মিলিয়ন বছর অতীতে চলে যাবে, তুমি খেয়াল করতে শুরু করবে যে টাইম মেশিন থেকে বের হবার পর যেসব মানুষদের সাথে তোমার দেখা হচ্ছে তারা অবশ্যই আমাদের থেকে ভিন্ন। আর তোমার যাত্রার শুরুতে যারা তোমার সাথে চড়েছিলো তাদের সাথে প্রজনন করতে পারেনা। কিন্ত তারা তোমার যাত্রী তালিকায় যারা নতুন তাদের সাথে প্রজনন করতে পারে। যারা প্রায় ওদেরই সমান প্রাচীন।

ধীরে ধীরে পরিবর্তন যে সূক্ষ্ম একটা ব্যাপার, হাতঘড়ির সরতে থাকা ঘন্টার কাঁটার মত -তা নিয়ে আমি আগে যে কথা বলেছি সেটাই আবারো বললাম। কিন্তু এবার ভিন্ন একটা মনে মনে করা পরীক্ষা ব্যবহার করে বললাম। ব্যাপারটা দুইভাবে বলার মত মূল্য রাখে। কারণ এটা ততটাই গুরুত্বপূর্ন। তারপরো বোঝা যায় কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এর মর্ম উপলব্ধি করা এত কঠিন কেন।

আমাদের অতীত যাত্রা আবার শুরু করা যাক। সেই সুন্দর মাছটার কাছে ফিরে যেতে যেতে কতগুলো স্টেশনে নামা যাক। ধরা যাক আমাদের টাইম মেশিনে করে আমরা ‘ছয় মিলিয়ন বছর আগে’ নাম লেখা স্টেশনে সবেমাত্র এসে পৌছলাম।  এখানে আমরা কি খুঁজে পাব? যতক্ষন ধরে নিচ্ছি আমরা আফ্রিকাতে আছি, আমরা আমাদের দাদার-২৫০,০০০-বাবাকে ( কিছু প্রজন্ম কম-বেশী হতে পারে) খুঁজে পাব। তারা বনমানুষ হবে। দেখতে হয়ত কিছুটা শিম্পাঞ্জীর মত  হবে। কিন্তু ওরা শিম্পাঞ্জী না। তার বদলে, শিম্পাঞ্জীদের সাথে আমরা যে পূর্বপুরুষ ভাগাভাগী করি তারা সেই পূর্বপুরুষ। আমাদের থেকে তারা এত আলাদা হবে যে তারা আমাদের সাথে বাচ্চা জন্ম দেবার জন্য মিলিত হতে পারবে না, আর শিম্পাঞ্জীদের থেকেও এত আলাদা হবে যে তাদের সাথেও বাচ্চা জন্ম দেবার জন্য মিলিত হতে পারবে না। কিন্তু ‘পাঁচ মিলিয়ন নয়শ নব্বই হাজার বছর আগে’ লেখা স্টেশন থেকে যেসব যাত্রীদের নিয়েছিলাম তাদের সাথে বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে। আর যাদের ‘পাঁচ মিলিয়ন নয়শ হাজার বছর আগে’ লেখা স্টেশন থেকে নিয়েছিলাম সম্ভবত তাদের সাথেও পারবে। কিন্তু যারা ‘চার মিলিয়ন বছর আগে’ লেখা স্টেশন থেকে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিল সম্ভবত তাদের সাথে পারবে না।

 

 

চল আমাদের দশ হাজার বছর লাফ দিয়ে চলা আবার শুরু করে একেবারে পঁচিশ মিলিয়ন বছর আগের স্টেশন পর্যন্ত যাওয়া যাক।  এখানে আমরা খুঁজে পাব তোমার (এবং আমার) দাদার-দেড়  মিলিয়ন-বাবাকে – আনুমানিক হিসেবে। এরা বনমানুষ হবে না, কারণ তাদের লেজ থাকবে। আজকের দিনে তাদের সাথে দেখা হলে তাদেরকে আমরা বাঁদর বলতাম, যদিও আমাদের সাথে তাদের যতটুকু ঘনিষ্টভাবে সম্পর্ক তার থেকে বাঁদরের সাথে বেশী ঘনিষ্ট সম্পর্ক হবে না। যদিও আমাদের থেকে অনেক আলাদা আর আমাদের সাথে আর আধুনিক বাঁদরদের সাথে বাচ্চা জন্ম দিতে অক্ষম, তারা ‘চব্বিশ মিলিয়ন নয়শ নব্বই হাজার বছর আগে’ লেখা স্টেশন থেকে যোগ দেওয়া প্রায় একিরকম দেখতে যাত্রীর সাথে মনের সুখে বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে। সব জায়গাতেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন।

আবার যেতে শুরু করি, পিছাতে থাকি আর পিছাতে থাকি, দশ হাজার বছর করে করে, কোন যাত্রা বিরতিতেই উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন নেই। চল থেমে দেখা যাক ‘তেষট্টি মিলিয়ন বছর আগে’ লেখা স্টেশনে নামলে কারা আমাদের সাথে দেখা করতে আসে। এখানে আমরা আমাদের দাদার-সাত মিলিয়ন-বাবার সাথে হাত (নাকি থাবা?) মেলাতে পারবো। ওরা দেখতে লেমুর বা বুশবেবীর মত। আর আসলেই তারা সব আধুনিক লেমুর আর বুশবেবীর পূর্বপুরুষ, সেইসাথে সব আধুনিক বাঁদর আর বনমানুষেরও পূর্বপুরুষ, আমরা সহ। আধুনিক মানুষের সাথে তাদের যতটুকু ঘনিষ্ট সম্পর্ক ঠিক ততটুকু ঘনিষ্ট সম্পর্ক আধুনিক বাঁদরদের সাথে। আধুনিক লেমুর বা বুশবেবীর সাথেও তার থেকে বেশি ঘনিষ্ট সম্পর্ক নেই। কোন আধুনিক প্রাণীর সাথে তারা বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে না। কিন্তু তারা সম্ভবত ‘বাষট্টি মিলিয়ন বছর আগে’ লেখা স্টেশন থেকে যে যাত্রীকে তুলে নিয়েছিলাম তার সাথে বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে। চল তাদেরকে টাইম মেশিনের ভেতরে স্বাগত জানাই, আর অতীতের দিকে ছুটে চলা শুরু করি।

 

 

স্টেশন ‘একশ পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে’ –তে আমরা আমাদের দাদার-৪৫ মিলিয়ন-বাবার দেখা পাব। তিনি হচ্ছেন সকল আধুনিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মহান পূর্বপুরুষ। শুধু ক্যাঙারু জাতীয় মার্সুপিয়াল-রা (এখন যাদের বেশিরভাগই অস্ট্রেলিয়ায়, আর আমেরিকার কিছু কিছু জায়গায় পাওয়া যায়) আর মোনোট্রিম-রা ( হাসচঞ্চু প্লাটিপাস আর কাঁটাওয়ালা পিপিলিকাভুক, এখন শুধু অস্ট্রেলিয়া/নিউ গিনিতে পাওয়া যায় ) ছাড়া।  ছবিতে তাকে তার প্রিয় খাদ্য পোকা মুখে দেখা যাচ্ছে। সকল আধুনিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সাথে সে সমানভাবে সম্পর্কযুক্ত। যদিও তাকে দেখতে তাদের কারো কারো সাথে অন্যদের থেকে বেশী মিল আছে বলে মনে হয়।

 

 

স্টেশন ‘তিনশ দশ মিলিয়ন বছর আগে’ আমাদেরকে আমাদের দাদার-১৭০-মিলিয়ন-মাকে উপহার দেয়। তিনি হচ্ছেন সকল আধুনিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, সকল আধুনিক সরীসৃপ – সাপ, গিরগীটি, কচ্ছপ, কুমির – আর সকল ডাইনোসরদের ( পাখিসহ, কারণ পাখিরা ডাইনোসরদের মধ্যে থেকে আবির্ভূত হয়েছে ) মহান পূর্বসুরী। সব আধুনিক প্রাণীদের সাথে সমানভাবে দূরসম্পর্কীয় তিনি। তার মানে হলো, যেমন ধর, স্তন্যপায়ী প্রাণীরা যতখানি বদলেছে তার সময়ের পর থেকে, সরিসৃপরা সেই তুলনায় কম বদলেছে ।

 

 

এতক্ষনে আমরা যেরকম পাকা সময় পরিভ্রমনকারী হয়ে গেছি তাতে করে আমার আগে বলা সেই মাছের কাছে পৌছতে আমরা আর বেশী দূরে নেই। চলো যাত্রাপথে স্টেশন ‘তিনশ চল্লিশ মিলিয়ন বছর আগে’ –তে আর একবার বিরতি নিই। যেখানে আমরা আমাদের দাদার-১৭৫-মিলিয়ন-বাবার সাথে দেখা করব। উনি দেখতে কিছুটা গোসাপের মত। আর তিনি হচ্ছেন সব আধুনিক উভচর প্রাণীদের ( গোসাপ আর ব্যাঙ-দের) আর সেই সাথে অন্যান্য সব ডাঙার মেরুদন্ডী প্রাণীদের মহান পূর্বপুরুষ।

তাহলে এবার স্টেশন ‘চারশ সতের মিলিয়ন বছর আগে’-তে আর আমাদের দাদার-১৮৫-মিলিয়ন-বাবার কাছে, আগের পর্বে বলা সেই মাছটার কাছে,  রওয়ানা দেওয়া যাক। এখান থেকে আমরা চাইলে আরও অতীতে যেতে থাকতে পারি, আরও আরও দূরের পূর্বপুরুষদের সাথে দেখা করতে পারি। নানারকম চোয়ালবিশিষ্ট মাছ, তারপর চোয়ালছাড়া মাছ, তারপর…হুম, তারপর আমাদের জ্ঞান একরকম অনিশ্চেয়তার কুয়াশার মধ্যে ধীরে ধীরে হারাতে শুরু করে। কারন এসব অতি প্রাচীন সময়ে আমাদের জীবাশ্ম ফুরিয়ে আসতে শুরু করে।

 

 

ডিএনএ বলে আমরা সবাই ভাই-বোন

যদিও আমাদের অতি প্রাচীন পূর্বপুরুষরা দেখতে ঠিক ঠিক কেমন ছিল তা বলে দেবার জন্য আমাদের কোন জীবাশ্ম নেই, আমাদের কোনই সন্দেহ নেই যে, সব জীবিত প্রাণী আমাদের ভাই-বোন, আর একে অন্যদের ভাইবোন। আমরা এও জানি কোন আধুনিক প্রাণীরা কাছের সম্পর্কের ভাই-বোন (মানুষ আর শিম্পাঞ্জী, বা ইঁদুর আর ছুঁচো মত), আর কারা দূরসম্পর্কীয় ভাই-বোন (মানুষ আর কোকিল, বা ইঁদুর আর কুমিরের মত)। কেমন করে জানি? নিয়ম মেনে তাদেরকে একে অন্যের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে। ইদানিং, সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ আসে তাদের ডিএনএ একে অন্যের সাথে তুলনা করলে।

    ডিএনএ হচ্ছে বংশানুগতি সম্বন্ধীয় তথ্য যেটা সব জীবিত প্রাণী তাদের কোষের মধ্যে বহন করে। বিশালভাবে প্যাঁচানো তথ্যবাহী টেপ-এর উপরে ডিএনএ-এর অক্ষরগুলো বানান করে লেখা আছে । এদেরকে বলে ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমরা আসলেই পুরোণ আমলের কম্পিউটারে তথ্য ঢোকানো জন্য যে ধরনের টেপ ব্যবহার করা হত অনেকটা সেরকম। কারন যে তথ্য এরা বহন করে সেটা ডিজিটাল, আর সেটা ক্রমানুসারে এদের উপর সুতোর মত গাঁথা। লম্বা সুতোর মত সংকেত -’অক্ষর’-দিয়ে এরা তৈরী। যেগুলো তুমি গুনতে পার। প্রতিটা অক্ষর হয় সেখানে আছে অথবা নাই – আধাআধি কোন ব্যাপার নেই। এর জন্যই এটা হয়েছে ডিজিটাল আর এজন্যই আমি বলেছি ডিএনএ ‘বানান করা’ আছে।

চোখে দেখা প্রতিটা প্রাণীর, উদ্ভিদের আর ব্যাকটেরিয়ার ভেতরে থাকা সব জিন হচ্ছে সেই প্রাণীটা কিভাবে তৈরী হবে তার সাংকেতিক বার্তা। একটা সুনির্দিষ্ট বর্ণমালায় লেখা। বর্ণমালাটাতে বেছে নেবার জন্য শুধু চারটা অক্ষর আছে (যেখানে ইংরেজী বর্ণমালায় ২৬ টা অক্ষর) যেগুলোকে আমরা লিখি A,T,C,আর G  হিসেবে। কিছু দৃষ্টিগোচর পার্থক্য ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন অনেক প্রাণীর মধ্যে একই জিন থাকে। যেমন, FoxP2 নামে একটা জিন সব স্তন্যপায়ী প্রাণী আর এদের আশেপাশের অনেক প্রাণীরা ভাগাভাগী করে। জিনটা হচ্ছে ২০০০-এরো বেশী অক্ষরের একটা সুতো। এই পৃষ্ঠার নিচে FoxP2 এর মাঝখানের কোথাও থেকে নেওয়া ৮০ টা অক্ষরের একটা বিস্তার দেখানো হয়েছে। ৮৩১ নম্বর অক্ষর থেকে ৯১০ নম্বর অক্ষর পর্যন্ত একটা বিস্তার। উপরের সারিটা মানুষ থেকে , মধ্যের সারিটা শিম্পাঞ্জী থেকে আর নিচের সারিটা ইঁদুর থেকে নেওয়া। নিচের দুই সারির শেষের দুই সংখ্যা দিয়ে দেখানো হয়েছে পুরো জিনটাতে কতগুলো অক্ষর মানুষের FoxP2 জিন থেকে আলাদা।

তুমি বলতে পারো FoxP2 জিনটা সব স্তন্যপায়ী প্রাণীতে একই কারণ সংকেতের বেশীরভাগ অক্ষর একই। আর ব্যাপারটা জিনটার পুরো দৈর্ঘের বেলায় সত্যি। শুধু এই ৮০ অক্ষরের বিস্তারটুকুর জন্য না। শিম্পাঞ্জীদের সব অক্ষর আমাদের মত না, আর ইঁদুরেরটা থেকে আরও কিছুটা কম। পার্থক্যগুলো লাল কালি দিয়ে দেখানো হয়েছে। FoxP2-এর মোট ২,০৭৬ টা অক্ষরের মধ্য থেকে, শিম্পাঞ্জীদের আমাদের থেকে নয়টা অক্ষর আলাদা, যেখানে ইঁদুরদের আমাদের থেকে ১৩৯ টা অক্ষর আলাদা। আর এই নিয়ম অন্য জিনদের ক্ষেত্রেও খাটে। এটা ব্যাখ্যা করে কেন শিম্পাঞ্জীরা দেখতে অনেকটা আমাদের মত, যেখানে ইঁদুরেরা তার থেকে কম আমাদের মত।

 

 

শিম্পাঞ্জীরা আমাদের কাছের সম্পর্কের ভাই-বোন, ইঁদুরেরা আরও দূরসম্পর্কের ভাই-বোন। দূরসম্পর্কের ভাই-বোন মানে হচ্ছে সবচেয়ে সাম্প্রতিকতম যে পূর্বপুরুষ আমরা তাদের সাথে ভাগাভাগি করি সে অনেকদিন আগে বেঁচে ছিল। বাঁদরেরা ইঁদুরদের থেকে আমাদের কাছাকাছি কিন্তু শিম্পাঞ্জীদের থেকে আমাদের দূরে। বেবুন আর ছোট লেজওয়ালা রেসাস ম্যাকাক-এরা দুটোই বাঁদর, এক অন্যের কাছের সম্পর্কের ভাই-বোন, আর প্রায় একইরকম FoxP2 জিন তাদের। এরা শিম্পাঞ্জী থেকে যতটুকু দূরের, মানুষের থেকেও ঠিক ততটুকু দূরের। আর FoxP2 জিনে যত সংখ্যক অক্ষর বেবুনদের শিম্পাঞ্জীদের থেকে তফাত করে (২৪), প্রায় একই সংখ্যক অক্ষর বেবুনদের আমাদের থেকে তফাত করে (২৩)। সব খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে।

আর, এই ছোট চিন্তাটা শেষ করতে গিয়ে বলি, ব্যাঙেরা সব স্তন্যপায়ী প্রাণীদের থেকে আরও অনেক দূরের ভাই-বোন। সব স্তন্যপায়ী প্রানীদের প্রায় একই সংখ্যক অক্ষরের তফাত রয়েছে ব্যাঙেদের থেকে, সেই সহজ কারনে যে তারা নিজেরা সবাই ঠিক ঠিক একই দূরত্বের কাছাকাছি ভাই-বোন। সব স্তন্যপায়ী প্রাণী ব্যাঙেদের সাথে যে পূর্বপুরুষ ভাগাভাগি করে (প্রায় ৩৪০ মিলিয়ন বছর আগের) তার থেকে সাম্প্রতিকতম একজন পূর্বপুরুষ একে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে (প্রায় ১৮০ মিলিয়ন বছর আগের)।

কিন্তু অবশ্যই সব মানুষেরা একইরকম নয়। আর সব বেবুনরা একই রকম না, আর সব ইঁদুরেরা একইরকম না। তোমার জিনের সাথে আমার জিন আমরা এক অক্ষর এক অক্ষর করে করে তুলনা করে দেখতে পারি। ফলাফল? দেখা যাবে আমাদের দুজনের যেকোন জনের সাথে একটা শিম্পাঞ্জীর যে পরিমান মিল আছে তার থেকে আমাদের দুজনের মধ্যে আরও অক্ষর বেশী মিল হবে। কিন্তু তারপরো আমরা কিছু অক্ষর খুঁজে পাব যেগুলো আমাদের দুজনের মধ্যে এক না। তবে তা বেশী না। আমাদের দুজনের FoxP2 জিন কে আলাদা করে দেখার মত বিশেষ কোন কারণ হবে না সেটা। কিন্তু তুমি যদি আমাদের জিনে যত সংখ্যক অক্ষর সব মানুষ ভাগাভাগি করে তা যদি গুনে দেখ তাহলে দেখবে সেটা আমাদের যে কেউ একটা শিম্পাঞ্জীর সাথে যতগুলো অক্ষর ভাগাভাগি করে তার থেকে বেশী হবে। আবার তুমি আমার সাথে যতগুলো অক্ষর ভাগাভাগি কর তার থেকে বেশী কর তোমার চাচাতো ভাই-বোনদের সাথে। আর তুমি তারো চেয়ে বেশী অক্ষর ভাগাভাগি কর তোমার মা আর তোমার বাবার সাথে, আর (যদি থাকে) তোমার আপন ভাই বা বোনের সাথে। বস্তুত, দুইজন মানুষ এক অন্যের সাথে কতটুকু কাছাকাছি সম্পর্কিত তা তুমি তারা কতগুলো ডিএনএ-এর অক্ষর ভাগাভাগি করে তা থেকে হিসেব করে বের করতে পারবে। এটা একটা মজার হিসেব। আর খুব সম্ভবত এ সম্পর্কে আমরা ভবিষ্যতে আরও বেশী কথাবার্তা শুনতে পাবো। যেমন ধর, পুলিশ কাউকে খুঁজে বের করতে পারবে যদি তাদের কাছে তার ভাইয়ের ডিএনএ-এর ‘আঙ্গুলের ছাপ’ থেকে থাকে।

কিছু জিন আছে যেগুলো সব প্রাণীতে একই রকম বলে চেনা যায় (সামান্য পার্থক্য বাদে)। এসব জিনে কতগুলো অক্ষর আলাদা তা গুনে দেখাটা বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রজাতী কতটা কাছাকাছি সম্পর্কিত তা হিসেব করে বের করার কাজে আসে। অন্যান্য জিনগুলো আরও দূরের সম্পর্কের হিসেব বের করার কাজে আসে, যেমন মেরুদন্ডী আর কেঁচো জাতীয় ক্ষুদ্রাকৃতির অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে। অন্যান্য জিনগুলো আবারো কাজে আসে একটা প্রজাতীর ভিতরকার সম্পর্ক হিসেব করে বের করতে – যেমন, তুমি আমার কতখানি কাছের সম্পর্কের তা হিসেব করে বের করার বেলায়। জানতে আগ্রহী হলে বলে ফেলি, যদি তুমি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহন করে থাকো, আমাদের সাম্প্রতিকতম পূর্বপুরুষ  সম্ভবত কয়েকশ বছর আগে বেঁচে ছিলেন। তুমি যদি তাসমানিয়ার আদিবাসী বা আমেরিকার আদিবাসী হয়ে থাকো তাহলে আমাদের ভাগাভাগি করা পূর্বপুরুষ খুঁজে পেতে আমাদেরকে দশ-বিশ হাজার বছর পেছনে যেতে হবে। তুমি যদি কালাহারী মরুভূমির একজন !কুঙ্গ সান হয়ে থাকো, তাহলে হয়ত আমাদেরকে আরও পেছনে যেতে হবে।

সমস্ত সন্দেহের উর্ধে যেটা সত্য তা হলো পৃথিবীতে বুকে থাকা অন্য প্রজাতীর প্রত্যেকটা প্রাণী আর উদ্ভিদের সাথে আমরা একজন পূর্বপুরুষ ভাগাভাগি করি। আমরা এটা জানি কারণ সব জীবিত প্রাণী, জন্তুজানোয়ার, উদ্ভিদ আর ব্যাকটেরিয়াদের মধ্যে কিছু জিন এক বলে চেনা যায়। আর, সর্বোপরি, বংশগতির সংকেতটাই – যে অভিধানের মাধ্যমে সব জিন অনুবাদ করা হয় – আজ পর্যন্ত চোখে দেখা সব জীবিত প্রাণীদের সবার ক্ষেত্রে একই। আমরা সবাই ভাই-বোন। তোমার বংশতালিকায় -সহজেই বোঝা যায় যাদের শুধু সেই শিম্পাঞ্জীরা আর বাঁদরেরাই নেই – আরও আছে ইঁদুরেরা, মহিষেরা, গিরগিটিরা, ক্ষুদ্রকায় ক্যাঙারু জাতীয় ওয়ালাবিরা, শামুকেরা, ড্যান্ডেলিয়ন গাছেরা, সোনালী ঈগলেরা, ব্যঙের ছাতা নামের ছত্রাকেরা, তিমিরা, ছোট্ট ভাল্লুকের মত দেখতে ওম্ব্যাট-রা আর ব্যাকটেরিয়া জীবানুরা। সবাই আমাদের ভাই-বোন। ওদের প্রত্যেকের সর্বশেষ জন পর্যন্ত। এটা কি যেকোন পৌরাণিক কাহিনীর চেয়ে আরও অনেক বেশী চমৎকার চিন্তা না? আর সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে এটা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি।

( দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত)