কোন ভূমিকায় যেতে চাই না। ভূমিকা দেবার সময় আর নেই। সরাসরি কিছু তথ্যে চলে যায়:

* ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট, পাকিস্তানের লাহোর শহরে মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী ‘জামাত’ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৫৩ সালে Qadiani Problem নামের বইয়ে মওদুদী আহমাদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করে। যার ফলশ্রুতিতে, সারা পাকিস্তানে মওদুদীর অনুসারীরা হাজার হাজার আহমাদিয়াকে হত্যা করে।

* মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাত-ছাত্র সংঘ (শিবির) মিলে গঠন করে আল-বদর, আল-শামস নামের বাহিনী। যাদের কাজ ছিল পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তা করা।

* ১৯৭১ সালের ০৬ জুন মওদুদী মুক্তিযোদ্ধাদের হিন্দুদের দ্বারা অনুপ্রাণিত, ইসলামচ্যুত বলে আখ্যা দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দমনে পাকিস্তানের সামরিক হস্তক্ষেপ যৌক্তিক বলে মতামত দেয় মওদুদী।

* ১৯৭১ সালের ৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলে, জামাত পূর্ব পাকিস্তানে দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

* ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের দমনের উদ্দেশ্যে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ বলেছিল, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র, যুক্তি নয়’।

* ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় খানজাহান আলী রোডের আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামাত-ইসলামী ছাত্র-সংঘের কর্মীদের সমন্বয়ে জামাতের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সহকারী আমীর মাওলানা এ. কে. এম. ইউসুফ প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করে।

* ১৯৭১ সালের পহেলা জুন জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স-১৯৭১ জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করে।

* ১৯৭১ সালের ০৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশ বলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়।

* ছাত্রসংঘের (বর্তমানে ছাত্র শিবির) সভাপতি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লার নেতৃত্বে পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে আল শামস ও আল বদর বাহিনী গঠন করা হয়। আল বদর ও আল শামস বাহিনীর আমীর ছিল মতিউর রহমান নিজামী। এসময় নগর ছাত্রসংঘের সভাপতি আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ নিজামীর সার্বক্ষনিক সহযোগী ছিল।
১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় নিজামী রাজাকার-আল শামস-আল বদর বাহিনীতে যোগ দিতে ও সদস্যদের উৎসাহ দিতে বলে, “It is our conviction that the day is not far off when, standing side by side with our armed forces, our youth will raise the victorious flag of Islam the world over by defeating the Hindu Army and finishing off Hindustan”।

* ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতার মাত্র দুইদিন আগে রাজাকার, আল-শামস, আল-বদর বাহিনীর সরাসরি সহযোগীতায় সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবি তথা, শিক্ষক, সাংবাদিক , চিকিৎসক , চিত্রশিল্পী , প্রকোশলী ও লেখকদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী হত্যা করে। এঁদের অনেকের লাশ ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মাদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ-এ মারাত্মক ক্ষত-বিক্ষত পিছমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।

* ১৯৮১ সালের মার্চে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক তবারক হোসেনকে শিবির কলেজ-ক্যাম্পাসে কুপিয়ে হত্যা করে। মৃত্যুর আগ-মুহুর্তে পানি, পানি করে কাতরাচ্ছিলেন তবারক। তখন তার মুখে এক শিবিরকর্মী প্রশ্রাব করে।

* ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫ নম্বর কক্ষে শিবিররা ছাত্র ইউনিয়নের শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে।

* ১৯৮৬ সালে শিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় ছাত্র-সমাজের আবদুল হামিদের ডান হাতের কবজি কেটে তা বর্শায় গেঁথে সারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিন করে।

* ১৯৯২ সালের জুনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচার দাবির আন্দোলন হতে ডাকা হরতালের মিছিলে শিবির অর্তকিত হামলা করলে মুকিম নামে একজন আন্দোলনকারী শহীদ হয়।

* ১৯৯৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরের শহীদদের গণকবরে স্মৃতিসৌধ নির্মানের জন্য স্থাপিত ভিত্তি-প্রস্তর শিবির ভেঙে ফেলে।

* ১৯৯৯ সালের ১৮ জানুয়ারি কবি শামসুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে জামাতের মদদপুষ্ট সংগঠন হরকাতুল জিহাদ।

* ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি লেখক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে জামাতের মদদপুষ্ট সংগঠন হরকাতুল জিহাদ।

* আশির দশক হতে হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের নাম দিয়ে আলাদা সংগঠন করে জামাত-শিবির বাংলাদেশে তালেবান-ঘরানার মানুষের বসবাস করার অযোগ্য জঙ্গি রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা করে আসছে।

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড: আবুল বারাকাতের গবেষণা অনুসারে, জামাতের অধীন আলাদা শতাধিক জঙ্গি সংগঠন আছে, যেগুলোকে জামাত-শিবির জঙ্গি ও নাশকতার কাজে ব্যবহার করে। এই সংগঠনগুলো বা, এগুলোর কোন কর্মী ধরা পড়লে জামাত এদের দায় সরাসরি অস্বীকার করে এবং এই সংগঠনগুলো জামাতের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় বলে দাবী করে। জামাতের সমস্ত জঙ্গি কর্মকান্ডের অর্থ সরবরাহের নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক।

* হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান এবং জেএমবির গ্রেফতারকৃত সদস্যদের জবানবন্দী থেকে এটা স্পষ্ট যে, হুজি, জেএমবিসহ শতাধিক জঙ্গি সংগঠনকে সরাসরি নিয়ন্ত্রন করে ও সহায়তা দেয় জামাত।

* ২০১২ সালে চট্টগ্রামের ব্রিকফিল্ড রোডে খ্রীস্টানদের, ফতেয়াবাদ ও হাটাজারীতে হিন্দু মন্দির-বসতিতে হামলা করে ধর্মান্ধ জামাত-শিবির।

* ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একটি ফেসবুক ছবিকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে রামুসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বৌদ্ধ বিহার ও জনবসতির উপর হামলা করে জামাত-শিবির।

* শাহবাগের গণআন্দোলন শুরু হবার পর শহীদ রাজীব হায়দার, জাফর মুন্সী, বাহাদুর মিয়া, কিশোর রাসেল মাহমুদকে জামাত-শিবিরের রাক্ষসদের হাতে প্রাণ দিতে হয়।

* গতকাল (২২ ফেবুয়ারি) জামাত-শিবির তার আসল রূপের পুরোটাই সারা দেশবাসিকে দেখিয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে ওরা বাংলার কেউ নয়।

জামাত-শিবির জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নামাজের জন্য পাতা গালিচায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। জামাত-শিবির নিজেদেরকে বাংলাদেশে ইসলামের কান্ডারী ভাবে। অথচ, এই হল তাদের অবস্থা।
জামাত-শিবিররা মাছরাঙা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবদুল্লাহ তুহিন, এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান জাহেদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে বেধড়ক পেটায়।
কাঁটাবন এলাকায় হঠাৎ করে অ্যাম্বুলেন্স করে এসে জামাত-শিবির ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
মিরপুর ১০ নম্বরে, জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা হঠাৎ করে পুলিশের উপর চড়াও হয়।

চট্টগ্রামে জুম্মার নামাজ শেষে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ, জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ থেকে জামাত-শিবির বের হয়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদের আক্রমন করে। এসময় নামাজ পড়তে আসা নিরীহ জনতাকে জামাত-শিবির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। জামাত-শিবিরের জঙ্গিদের হামলায় আহত হয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশ।
জামাত-শিবিরের জঙ্গিদের একটা অংশ চট্টগ্রামের প্রেসক্লাবে ভাঙচুর চালায়। জামাত-শিবিররা প্রেসক্লাবের নিচে ‘বাতিঘর’ পাঠাগার ও বইবিতানে ভাঙচুর করে। গণজাগরণ মঞ্চের ভাস্কর্য ও ব্যানারে আগুন দেয়।

রাজশাহীতে জামাত-শিবির গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙচুর করে। এসময় জামাত-শিবিরের হামলায় পুলিশ, সাংবাদিক ও বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী মারাত্মক আহত হয়।

সিলেটে জুম্মার নামাজের পর জামাত-শিবিররা সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভাংচুর করে ও মাতৃভাষা দিবসে দেয়া ফুল ও বর্ণমালায় আগুন দেয়।

চাঁদপুরে জামাত-শিবিররা আমাদের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে। পরে, ছেঁড়া পতাকা নিয়ে বুনো-উল্লাস করে শহরের একটি অংশ প্রদক্ষিন করে।

সারা বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত জেলা ও থানা শহরে শাহবাগের গণআন্দোলনকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা জুম্মা নামাজ শেষে পুলিশ-সাংবাদিকদের হামলা করে। জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে, শহীদ মিনারের অবমাননা করে, গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙচুর করে।

‘শাহবাগ আন্দোলন-২০১৩’ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বস্তরের সর্ববিশ্বাসের সর্বমতাদর্শের মানুষের আন্দোলন। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য হল একাত্তরের ঘাতক-দালাল ও তাদের অনুসারীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা।
শাহবাগের আন্দোলনে কেউ কখনই ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু বলে নাই। এই আন্দোলন কোন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।
শাহবাগের আন্দোলনকে পর্যদুস্ত করে যুদ্ধাপরাধী ও নিজেদের বাঁচাতে জামাত-শিবির ‘ইসলাম গেল, ইসলাম গেল’ বলে চেঁচাচ্ছে।
সেলুকাস! সেলুকাস!! সেলুকাস!!!
ধর্মের অবমাননা করল কে? আর, ধর্মের অবমাননার দায়ে দোষী হল কে?
জামাত-শিবিররা যুদ্ধাপরাধী ও নিজেদের বাঁচাতে শাহবাগের আন্দোলনের নামে অপপ্রচার করছে এই বলে, শাহবাগের আন্দোলন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে।
আমরা সবাই আসল সত্য জানি ও বুঝি। জামাত-শিবিরই মূলত: ইসলাম ধর্মদ্রাহী। জামাত-শিবিরই ইসলাম ধর্মকে পুঁজি করে মানবতাবিরোধী নানান অপকর্ম করছে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে যতগুলো ক্যাপিটাল ক্রাইম আছে, সবগুলোর সাথে জড়িত একাত্তরের খুনি-ধর্ষনকারী জামাত-শিবিরই হচ্ছে আসল ধর্মবিকৃতকারী।
সুতরাং, কোন প্রকার অপপ্র্রচারে কান না দিয়ে আসুন আমরা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও তাদের অনুসারী জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি।

জামাত-শিবির আমাদের জাতীয় পতাকা ছিঁড়েছে, আমাদের শহীদ মিনার ভেঙেছে। বাংলা, বাঙালী ও বাংলাদেশের প্রতি ওদের শ্রদ্ধা নেই।
এখন সিদ্ধান্ত আমাদের হাতেই।
আমরা কি চাই?
ধর্মবিকৃতকারী-ধর্মব্যবসায়ী জামাত-শিবিরের তালেবানি বাংলাস্তান চাই নাকি, ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও চার লক্ষ বীরাঙ্গনার কষ্টার্জিত বাংলাদেশ চাই?
যদি বসবাস উপযোগী বাংলাদেশ চাই, তাহলে এখনই রুখে দাড়াতে হবে জামাত-শিবির-রাজাকারদের বিরুদ্ধে।

যে যেখানেই থাকুন না কেন, নিজের সামর্থ্য ও অবস্থান অনুসারে জামাত-শিবির-রাজাকারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন।

.