এই দেশে সবচেয়ে বড় তিনটা দল হলো, বাংলাদেশ জাতীয়তা বাদী দল (BNP), বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ , এবং জাতীয় পার্টি। এই তিনটা দলের নামের কোথাও ইসলাম শব্দটা নাই। তার মানে কি এই দল গুলো অনৈসলামিক? বাংলাদেশে যত ভোটার আছেন তার ৯০-৯৫%(আনুমানিক) ভোট এই তিনটা দল পায়। বাকি পিপীলিকার মতো কিছু দল আছে তারা বাকি ভোট পায়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান। এই মুসলমানরাই এই তিনটা দলকে ভোট দেয়। এই বিশাল মানুষ এই তিনটা দলকে ভোট দিয়ে তবে কি অনৈসলামিক কাজ করছে?

শাহবাগের আন্দোলনের কর্মসূচি সারাদেশে এক সাথে পালিত হচ্ছে। প্রতিটা জেলা সদরে হাজার খানেক তরুন এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা জানিয়ে প্রতিদিন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। উপজেলা,হাট বাজার সহ প্রায় সবখানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। রাজাকারদের প্রতি মানুষের ঘৃণার নানা রকমের অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে সবার মাঝে। ধর্মান্ধ উগ্র মৌলবাদকে এই দেশের মানুষ কখনোই পছন্দ করেনা। এই পছন্দ করেনা টা আন্দোলনের মাধ্যমে তুলে এনেছেন তরুনরা। প্রতিটি নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছে এই দেশের মানুষের ধর্মবিশ্বাস থাকতে পারে কিন্তু ধর্মান্ধতা এরা পছন্দ করে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে সংসদ নির্বাচন কোথাও তাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখা যায় নাই।

ধর্মকে পুঁজি করে জামাত, শিবির এই দেশের ব্যবসা বানিজ্য করে চলেছে। এই দেশের সহজ সরল মানুষকে ধর্মীয় আবেক কে কাজে লাগিয়ে তাদের ব্যবসা বানিজ্য বিস্তার করছে। এলাকার উন্নয়ন মুলক কাজে তাদের কখনোই দেখা যায় নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলাতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাই দেখতে পাই। কিন্তু ছাত্রদের অধিকার নিয়ে তারা কখনোই সরব ছিলনা। ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে যখন তখন মানুষের সুর সুরি উস্কে দিয়ে অস্থিতিশীল করে তুলেছে এই দেশের প্রতিটা প্রান্ত। রামুর ঘটনা এই তো চোখের সামনে ঘটে গেল। শিবিরের অপকর্মের ফিরিস্তি নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে।এবং এই লেখা গুলো বেশির ভাগই অনলাইনে, ব্লগে।

ব্লগকে স্বাধীন মত প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে পাওয়ায়। শিবিরের হিংস্রতার বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছে ব্লগাররা। তাদের অপকর্মের প্রমাণ সহ মানুষের সামনে নিয়ে এসেছে ব্লগ ফেসবুক। সংবাদ মাধ্যম,টেলিমিডিয়া বিজ্ঞাপনের জন্য এই কাজ করতে পারে না। কিন্তু ব্লগ গুলোর এই সীমাবদ্ধতা নেই। অনলাইনে মৌলবাদীরা একেবারে কোন ঠাসা।তাদের নিজেদের কিছু ব্লগ থাকলেও সার্বজনীন ব্লগ গুলাতে তাদের ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করে ব্লগাররা। তরুনরা ব্লগের মূল শক্তি হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখানে মাথা উঁচু করে আবার দাঁড়ায়। প্রায় সব ব্লগেই নিয়ম করে দেয়া হয়। দেশ,এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন লেখা দেয়া যাবে না। এভাবেই গড়ে উঠে অনলাইন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক ঝাঁক তরুন। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিরলস ভাবে পরিশ্রম করে সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবান দলিল। মুক্তিযুদ্ধে হয়ে উঠে অনলাইনে তরুণদের উদ্যমের হাতিয়ার।

আজ শাহবাগের এই আন্দোলন সেই তরুণদেরই সৃষ্টি। সেই ব্লগারদের ই আন্তরিকতায় সংগঠিত। এই নতুন প্রজন্মের অহংকার তাই মুক্তিযুদ্ধ।

গণজাগরণ মঞ্চকে নাস্তিকদের আখড়া বলা হচ্ছে।চলছে অকাতরে মিথ্যাচার, অপপ্রচার।”আমার দেশ” প্রতিকায় আজকে যখন ব্লগারদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলতে থাকে। তথ্যের গাঁজা খুড়ি দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে থাকে। মাহমদুর রহমান আর কোন কিছু না পেয়ে ব্লগ গুলোর বিরুদ্ধে সাধারণ জনগনকে ক্ষেপিয়ে তুলতে চেষ্টা করছে। কিন্তু যারা জ্বলে উঠলে পৃথিবী পরিবর্তন হতে বাধ্য,সেই তরুণরাই এখন শাহবাগে। এখানে দল মত নির্বিশেষ একত্র হয়েছে সেই হারানো মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ফিরিয়ে আনতে। সেই ৪২বছরের কালিমা দুর করতে। এই তরুনদের আজ ধর্মের অপপ্রচার দিয়ে বিভ্রান্ত করা সহজ নয়। আজ রাজপথে যারা এই নিয়ে বিদ্রোহ করবে তারাই প্রজন্ম চত্তর তৈরী করে নিচ্ছে সারা দেশটাকে। প্রতিদিন মানচিত্র তৈরী হচ্ছে ,পতাকা উড়ছে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সমবেত স্বরে। এখানে এই জুজুর ভয় কি টিকবে?

এখন জামাত শিবির বিভ্রান্ত করার সুযোগ আছে সেই ৫% মানুষকে। আমাদের দেশের মানুষ যত সহজ সরলই হোক,আওয়ামীলীগ,বিএনপি,জাতীয় পার্টির বিকল্প কোন ইসলামী ট্রেড মার্কের দলকে বিকল্প চিন্তা করেনা। বিএনপির আমলে যদি ইসলামের ক্ষতি না হয়ে থাকে। আওয়ামীলীগের আমলে যদি ইসলাম অক্ষুন্ন থেকে থাকে, জাতীয় পার্টির সৈরশাসনেও যদি ইসলাম বিস্তার করতে পারে। তবে আজ কেন একটা ইসলামী দলের হাত ধরে ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে হবে? আওয়ামীলীগ যদি এখনো মনে করে তাদের ভোটের স্বার্থে,রাজনীতির স্বার্থে এই হিংস্র জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ না করবে তাহলে এর প্রায়শ্চিত তাদের করতেই হবে।

এই প্রজন্ম চত্ত্বরের অহিংস আন্দোলন, প্রজন্ম চত্তরের শান্তি প্রিয় জনতা, এই প্রজন্ম চত্ত্বরের নিরীহ মানুষ যে কোন মূহুর্তে অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠতে পারে। আগুন লাগলে দেবালয় এড়ায় না ,এই আগুন থেকে আওয়ামীলীগ আপনারাও রেহাই পাবে না। বিএনপি আপনারা ইতিমধ্যে অনেক দেরি করে ফেলেছেন এখনো হয়তো কিছু সুযোগ আছে। একবার অস্তিত্ব বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে দেখতে পারে।

সময় এখনই, এখনই সময়। তাদের নিষিদ্ধ করেন। এই গুটি কয়েক মানুষের ভোটের আশায় আপনারা আম ছালা দুই হারাবেন। যত ভাল আচরণই তাদের সাথে করেন। যত ছাড়ই এই হিংস্র জানোয়ারদের জন্য দেন। তাদের ভোট আপনারা পাবেন না। এই মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য সারা দেশের আশা আকাঙ্খাকে ধুলায় মিশিয়ে দেবেন না। আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে আর বেইমানি করবেন না।

জয় বাংলা,জয় জনতা।