কাপছে দেখো হাঁটুখানি শিবির জামাতের

দুরুদুরু করছে দেখো দিলটা রাজাকারের

হচ্ছেটা কী চারিপাশে? দিচ্ছে কারা ঘের?

কোথা থেকে এলো ফিরে বিচ্ছুগুলো ফের?   

 

রাজনৈতিক দাবী আদায়ের আন্দোলন  যে কতখানি শৈল্পিক,  কতখানি নয়নাভিরাম, কতখানি মাধুর্যময়, কতখানি মার্জিত, কতখানি আবেগী, কতখানি উচ্ছ্বাসময়, কতখানি  সহযোগিতাপরায়ন আর কী পরিমাণ সৃষ্টিশীল হতে পারে, শাহবাগ  আর বাংলাদেশের মানুষ তা বুঝিয়ে দিল।  নিরস্ত্র মানুষের সম্মিলিত শক্তি যে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের চেয়েও বহু গুণে শক্তিশালী, অনেক বেশি কার্যকর, অনেক বেশি ফলপ্রসু, তাও বুঝিয়ে দিল এই প্রজন্মের তরুণেরা। হাতের সাথে হাত মিলিয়ে, কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে নীরবে দৃঢ়চিত্তে  দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের শক্তি পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি শক্তিধর, বেশি তেজস্বি। আগ্নেয়গিরির আগুনস্রোত লুকিয়ে থাকে সম্মিলিত মানুষের ভালবাসাময় বুকে। এই আন্দোলন অনাগত দিনে পৃথিবীর সকল প্রান্তের সকল গণ আন্দোলনের ব্যকরণকেই পালটে দেবে। পালটে দেবে আন্দোলনের সব পাঠ্যবইকে।আগামী সময়ে দুনিয়ার বহু প্রান্তে, বহু দেশে,বহু বিষয় নিয়ে মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। সেই সব  আন্দোলনে তারা অনুকরণ করার চেষ্টা করবে শাহবাগের এই অনুপম, অদৃষ্টপূর্ব আন্দোলনকে।সেইসব মানুষেরা বিশুদ্ধ শ্রদ্ধা নিয়ে স্মরণ করবে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষদের। এ বিষয়ে আজ আমার কোনো সন্দেহ নেই,নেই কোনো দ্বিধা, নেই কোনো সংশয়, সংকোচ।জয়তু বাংলাদেশ!!! জয়তু নতুন প্রজন্ম!!!!

সংস্কৃতিগত  এবং রাজনৈতিকভাবে এতো সমৃদ্ধ একটা দেশ  কীভাবে পাকিস্তানের মত একটা মাথামোটা,  অরুচিশীল, অমার্জিত, যুদ্ধবাজ, উদ্ধত, দেমাগী, বর্বর, ধর্মান্ধ সংস্কৃতির, মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার একটা দেশের সাথে তেইশ বছর থেকেছে,  সেটাই এক পরম বিস্ময় আমার। তার  চেয়েও অপার বিস্ময় হচ্ছে, এই নিম্নরুচিসম্পন্ন, গ্রাম্য মোড়লের মত আচরণগত, দিন দিন অন্ধকারের অতলে হারিয়ে যাওয়া দেশটার প্রতি এখনো কিছু মানুষের প্রেমপিরিতির বাহার দেখে। কী অবলীলায় না তারা ভালবাসে  তাদের পাকি ভাইদের, কী অবলীলায় না তারা গদগদ প্রেমে মত্ত হয় তাদের সাথে। আমি শুধু অবাক বিস্ময়ে দেখি আর শুধু ভাবি, কীভাবে পারে? কীভাবে এরা এই কাজটা করতে  পারে?

এদের কি একবারো মনে হয় না একাত্তরের কথা? একবারো কি মনে পড়ে না তিরিশ লাখ মৃত স্বজনের কথা? একবারো কি এদের সামনে এসে  দাঁড়ায় না সেই সব আত্মত্যাগী শহীদেরা? স্মৃতিতে কিংবা স্বপ্নে? কিংবা মনের আয়নায় ক্ষণিকের ভুলে? সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ  মা  বোনের  কথাও কি মনে পড়ে না তাদের? কি  নির্মমতা দিয়ে, কি পরিমাণ নিষ্ঠুরতা দিয়ে, কি পরিমাণ লালসার তরল ঢেলে তারা অশুচি করেছে আমাদের মা-বোনদের? তাদের জীবনটাকে তছনছ  করে দিয়েছে পিশাচের মত, সব স্বপ্নকে বুটের নীচে পিষে পিষে। সেই সব বীরাঙ্গণারা কি একবারো আসে না এদের মনোভূমিতে? একবারো কি কোনো বীরাঙ্গণা তাদের কাছে এসে অশ্রুসজল চোখে বলে না, বাবারা, আমাদের কষ্টগুলো কি তোমাদের একটুও পোড়ায় না? কি করে পারো আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে দেওয়া  মানুষদের ভালবাসতে? আমরা কি তোমাদের  কেউ না? এতই পর? 

যে সব তরুণেরা পাকিস্তানের খেলার সময় আমাদের মাথা গ্লানিতে হেট করে দিয়ে পাকিস্তানের রঙিন পতাকা  গালে আঁকে,  চাঁদ-তারার কুৎসিত পতাকা আন্দোলিত করে স্টেডিয়ামে নাচানাচি করে, যে তরুণীটি  আফ্রিদির সান্নিধ্য পাবার জন্য, তার  বাহুলগ্না হবার জন্য মরিয়া হয়ে “ম্যারি মি, আফ্রিদি”  বলে শরমহীন হরমোনের প্রদর্শনী ঘটায়, তারা কি একবারও ভাবে না এসব কথা? একবারো কী ভাবে না শহীদদের কথা? বীরাঙ্গণাদের কথা? বনে জঙ্গলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ করা সেই সব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা? এগুলো করার সময় একবারো কি তাদের মনে পড়ে  না যে, একদা এই মাঠেই ক্রিকেট খেলতো দুজন স্বপ্নবাজ তরুণ। জুয়েল আর মুশতাক। শুধুমাত্র আমাদের কারণে, দেশের কারণে ক্রিকেটের মাঠ ছেড়ে বিপজ্জনক রণাঙ্গণে গিয়েছিল তারা।  আমাদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের  একটি নিজস্ব দেশ দেবার উদ্দেশ্যে ব্যাট আর বল হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল তাঁরা। তার  বদলে হাতে তুলে নিয়েছিল রাইফেল  আর গ্রেনেড। জুয়েল আর মুশতাককে এই পাকিস্তানিদের পূর্বপুরুষেরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এসব কি একবারও মনে পড়ে না  এই সব কুলাঙ্গার বাঙালিদের?  একবারো কি এদের মনে পড়ে না গগন নামের একটা নিরীহ ছেলের কথা?  দেশ থেকে বহু দূরে, সুদূর বেলজিয়ামে  বাংলাদেশ নিয়ে আজেবাজে  মন্তব্য করেছিল একদল পাকিস্তানি। গগন, আমাদের প্রিয় গগন, নিরীহ নির্বিরোধী একটা ছেলে,  সহ্য  করতে পারে নি দেশের সেই অপমান। প্রতিবাদ করেছিল সে সেই সব বাজে কথার।  এই অপরাধে বেলজিয়ামের রাস্তায় গগনকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে  কুপিয়ে  মেরেছিল পাকিস্তানিরা দলবেঁধে। এই যে এতো কিছু, এতো রক্তের  দাগ,  অপমান, অত্যাচার, নির্যাতন, এতো কিছুর  পরেও পাকিস্তান প্রেম থাকে কী  করে কিছু মানুষের মধ্যে? এই ব্যর্থতা আসলে কাদের? তাদের নাকি আমাদের? 

পাকিস্তানপ্রেমী বাঙালিদের  বলছি। দয়া করে আপনাদের মেরুদণ্ডহীনতা, নির্লজ্জতা, চাটুকারিতা, ভিন্নদেশের  প্রতি গদগদ প্রেমময়তা দিয়ে আমাদের আর অপমান করবেন না।  যদি কারো পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উদ্দাম নাচানাচি করার ইচ্ছা থাকে,  যদি কারো পাকিস্তানি সুদর্শন আর সুঠাম ক্রিকেটারদের কণ্ঠলগ্না হতে প্রবলভাবে ইচ্ছা করে, যদি কারো পাকিস্তানিদের সাথে উর্দুতে বাতচিত করার  খায়েশ থাকে, সোজাসুজি পাকিস্তানে চলে যান। মন-মনন  পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করে দিয়ে, শুধু দেহটাকে বাংলাদেশে রেখে লাভটা কী? আপনাদেরও এতে কোনো লাভ নেই, আমাদেরও লাভ নেই। দুই পক্ষেরই ক্ষতি। 

একাত্তর  সালে  জামাত যে সব অপকর্ম করেছে, তাতে এই সংগঠনের অস্তিত্ব বিলোপ হয়ে যাবার কথা ছিল স্বাধীনতার  পরপরই। কিন্তু আমাদের নেতৃতের ব্যর্থতার কারণে তা হয় নি। বরং দিন দিন জামাত পুষ্ট হয়েছে।  অস্ত্রশস্ত্রে নিজেদের সজ্জিত করেছে সশস্ত্র ইসলামি বিপ্লব করার বাসনায়। জামাত শিবির বাংলাদেশে কী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তা আশির দশক থেকে যাদের স্মৃতি আছে তাদের জানতে আর বাকি নেই। একে প্রতিহত করার জন্য অনেক সময় সশস্ত্র  প্রতিরোধও করা হয়েছে। কিন্তু  জামাত-শিবিরের উত্থান ঠেকানো যায় নি তাতে করেও। বিষফোঁড়ার মত উঠে এসেছে চামড়া ভেদ করে। তবে এখন ভিন্ন  ইতিহাস। জামাত কাহিনি এখন শেষপ্রান্তে। এই সংগঠনের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে। সেই আশির দশক থেকে জামাতের সশস্ত্র আগ্রাসনকে আমরা সশস্ত্রভাবে প্রতিহত করার  যে চেষ্টা আমরা করেছি, এখন বোঝা গেছে যে, ওটা ছিল ভুল পদ্ধতি। চেতনার বিকাশ না ঘটিয়ে শুধু অস্ত্র দিয়ে মৌলবাদকে প্রতিহত করা যায় না। কারণ তারা অস্ত্রে আমাদের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী, আচরণে আরো বেশি আক্রমণাত্মক। শাহবাগ আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়েও ভয়ংকর আস্ত্র নিয়ে এসেছে। প্রতিটা বাঙালির হৃদয়ে শুদ্ধ চেতনার বিকাশ ঘটিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে নতুনভাবে সামনে নিয়ে এসেছে,সবার হাতে হাতে নয়, দেশপ্রেমের স্নিগ্ধ মোমবাতি জ্বেলে দিয়েছে সবার অন্তরের ভিতরে। আর এতে করে বহুকাল পরে মানুষ জেগে উঠেছে, ঘৃণাভরে তাকিয়েছে জামাতিদের প্রতি। কোটি কোটি মানুষের ঘৃণার চাপ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। জামাতের মত দানবও এই ঘৃণার সুনামিতে ভেসে যাচ্ছে অথই সাগরে। মরার আগে মরণ কামড়  দেবে হয়তো, কিন্তু মৃত্যু অনিবার্য। আমরা ওদের মূল স্রোত থেকে আলাদা করে দিয়েছি। আর কোনোদিনই তাদের পক্ষে মুল স্রোতে আসা সম্ভব হবে না। ছোট্ট একটা বাচ্চাও এখন জানে রাজাকার কী, তাদের কী প্রাপ্য। কাজেই, আর কদিন পরেই জামাত শিবির যে ইতিহাস হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে আমার অন্তত কোন্নো সন্দেহ নেই। মুসলিম লীগ বলে এখন যেমন কিছু নেই, জামাত শিবির বলেও আর কিছু থাকবে না এই বাংলাদেশে।  নারী-পুরুষ নির্বিশেষে  সবার মাঝে, এমন কি ছোট ছোট বাচ্চাদের চোখেও রাজাকারদের প্রতি যে ঘৃণার আগুন আমি দেখলাম এ কদিনে, এই আগুনের তেজ এড়ানো জামাতিদের র্কম নয়। অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের আর অস্ত্র না ধরলেও চলবে  আর। তুই রাজাকার বলে, এর সাথে যে ঘৃণা ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে, ওতেই মরণ বিষ মেশানো আছে জামাত শিবিরের জন্য। 

সারা দেশের মানুষকে এক সুতোয় বেধে যেভাবে এক জমিনে এনে ছেড়েছে শাহবাগ, তার তুলনা মেলা ভার।  মানুষের  সাথে মানুষের এমন সম্মেলন এর আগে ঘটেছে শুধু একাত্তরে। তবে এবারের আন্দোলন বড় অদ্ভুত। মানুষের সাথে মানুষের সম্মিলনে, মানুষের সাথে মানুষের হাতের বন্ধনে, মানুষের সাথে  মানুষের কাঁধের মিলনে যে অমিত শক্তি সঞ্চারিত হয়, যে অমিত বিক্রম তৈরি হয়, যে উন্মাদনার জোয়ার আসে তা  অবিশ্বাস্য। মাত্র কিছুদিন আগেও কেউ কল্পনা করতে পারে নি যে, মৃত, শুষ্ক নদীতে এমন ভরা যৌবন আসবে। তীব্র জোয়ারে ভেসে যাবে চারিপাশ। কল্পনারও অতীত সব অদ্ভুত সৌন্দর্যময় কর্মসূ্চী আসবে একের পর এক, আর গোটা দেশ এক হয়ে গিয়ে সফল করে তুলবে সেই সব কর্মসূচী। নেতা কে হবে তা নিয়ে কামড়াকামড়ি নেই।  যে যোগ্য সেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। ছেলে না মেয়ে, কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামচ্ছে না। যোগ্য নেতার পিছনে স্লোগান দিচ্ছে সবাই সমস্বরে। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, সবাই একাকার  হয়ে গিয়েছে এই আন্দোলনে। বাবার ঘাড়ে চড়ে পিচ্চিবুড়ো আসছে বিশাল ভাব নিয়ে, কিশোরী আসছে বীরদর্পে জনকের হাত ধরে, স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা আসছে দল বেধে, আসছে মাদ্রাসা থেকে ছাত্র-শিক্ষকেরারা, জড়ো হচ্ছে পাহাড়ি ছাত্ররাও। বৃদ্ধা আসছে নাতিকে নিয়ে। গর্ভবতী মা আসছে  অনাগত শিশুকে  নিয়ে, যেন চেতনার এই জাগরণ সঞ্চারিত হয় তার গর্ভস্থ শিশুর মধ্যে, সদ্যবিবাহিতা তরুণী চলে আসছে স্বামী অফিস যাবার পরে লুকিয়ে। কোনো মা হয়তো নিয়ে আসছেন বাসার সব পুরোনো পত্রিকা, তার সন্তানেরা এগুলো মাথায় দিয়ে ছায়ার পরশ নেবে বলে। ভিখিরি তার জমানো সব টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাওয়াচ্ছে আন্দোলনরত মানুষদের, কোনো কোনো রিকশাওয়ালা টাকা নিচ্ছে  না শাহবাগ অভিমুখী মানুষের। যে টোকাই লিখতে জানে না, সেও চক পেন্সিল দিয়ে অন্যের লেখা অনুকরণ করে দিয়ে আসছে রাজাকারদের বিচার চাওয়ার  স্বাক্ষর ব্যানারে। লীনা রহমান তাঁর ফেইসবুকে লিখেছেন,

গতকাল একটা কাহিনি শুনলাম বন্ধু মুন্নার কাছে… ওরা একটা ব্যানার নিয়া বসছে আজিজের সামনে। অনেকেই স্বাক্ষর করতেছিল সেটাতে… এক দুই বছরের পিচ্চি, সে খালি “অ” লেখা শিখছে। সেই পিচ্চি ঐ “অ” ই লেইখা গেছে ব্যানারে… এইটাই ওর প্রতিবাদ!!!

এই হচ্ছে আন্দোলন! এই হচ্ছে আলোর ঝর্নাধারা!! এই হচ্ছে আগুনের ফুল!!!  এই হচ্ছে অর্জন!!!!

আজ বাংলাদেশে আগুনের  ফুল দুপাশে ফুটিয়ে যে আলোর স্রোতস্বিনীর জন্ম হয়েছে, তা বহমান থাকুক আজীবন। সকল  আঁধার  যেন দূর হয়ে যায় আলোকের এই ঝর্ণাধারার ঝিলিমিলি স্রোতে।

————————————————-

ঝালমুড়ি চানাচুর

একঃ

সারা বাংলাদেশে প্রতিটা মানুষের একটা করে  মোমবাতি জ্বালানোর খবরে, আর শাহবাগে লক্ষ লক্ষ মোমবাতি জালানোর যে শৈল্পিক এবং শক্তিশালী ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম আমি। ফেইসবুকে একটা একটা স্ট্যাটাস লিখতে গিয়েছিলাম  আমি। লিখতে গিয়ে  দেখলাম  কিছুটা বড় হয়ে গিয়েছে। তাড়াহুড়োর কারণে অনেক টাইপো ছিল। ঠিক করতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না। আমাদের সাইফুল জানালো যে, স্ট্যাটাস সম্পাদনা করা যায় না। সন্ধ্যায় হঠাত করে মনে হলো যে, ওখানে না যাক, আমার ফাইলতো শুদ্ধ করতে পারি আমি। এই শুদ্ধ করতে গিয়ে সেই ছোট লেখাটা মোটামুটি বেশ বিশাল হয়ে  গেলো। আর হয়েই যখন গেলো, তখন মুক্তমনা  ছাড়া কোথায়ই বা পোস্ট করবো? 

দুইঃ

মুক্তমনা থেকে সরে আছি আমি বেশ কিছুদিন ধরেই। এখানে যাতায়াত নেই বললেই চলে। চোখের আড়াল হলেই নাকি মনের আড়াল হয়। সেরকম হয়তো হয়েও গিয়েছে। কিন্তু এর মাঝেও কেউ কেউ মনে রাখে। কেন যেন,  সম্পূর্ণই বিনা কারণে। এরকমই একজন অর্ফিউস। কয়েকদিন  আগে আমাকে অনুরোধ জানিয়েছিল এই আন্দোলন নিয়ে একটা  লেখা লিখতে। যদিও প্রাথমিকভাবে এই লেখা সেই অনুরোধে নয়, তারপরেও লেখাটা বড় করতে গিয়ে বার বার আমার অর্ফিউসের  কথাই মনে হচ্ছিল। আমার এই লেখাটা তাই অর্ফিউস নামের সেই চমৎকার ছেলেটির জন্য উৎসর্গীকৃত হলো।

তিনঃ

রায় ঘোষণার পরে রাজাকার কাদের মোল্লা এক বিরাট ভুল করে ফেলেছিল। ফাঁসি হয় নি সেই আনন্দেই হয়তো। দুই আঙুল তুলে বিজয় চিহ্ন দেখিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষকে। পরের ঘটনাতো আমরা  এখন চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবীর ইতিহাসে  সেরা ব্লান্ডারগুলোর তালিকা করলে এটা শীর্ষে থাকবে  নিঃসন্দেহে।  🙂

 

 

কাদের মোল্লার এই ভুল নিয়ে একটা ছড়া  স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ফেইসবুকে। এখানে তুলে দিচ্ছি সেটা। 

রায় শুনে খুশি মনে মোল্লা কাদের,

তুলেছিল দু’ আঙুল দেখাতে যাদের।

চটে গিয়ে তারাই ডাকে মহাসমাবেশ,

রাজাকারের বংশ করবে যে নিকেশ।

শাহবাগের মোড়ে রচে ভাই ইতিহাস,

ইতি হলো জামাতের গলায়  দিয়ে  ফাঁস। 

চারঃ

আমার এক পুরোনো ছাত্রী থাকে রাঙামাটিতে। নাম সীমা।  ওর একটা ছোট  ছেলে আছে। সীমা আমার এই স্ট্যাটাসে মন্তব্য করতে  গিয়ে  বলে যে, আমার ছেলেও স্লোগান দেয় ক তে কাদের মোল্লা তুই রাজাকার, তুই রাজাকার তারপর আমাকে বলে খ তে কি? শেষে নিজেই বলে গ তে গোলাম আজম তুই রাজাকার, তুই রাজাকার। আমি ওকে বলি যে, খ তে খালেক  মজুমদার, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার, এটা শিখিয়ে দাও। ও বলে যে, দেব শিখিয়ে স্যার, আমার ছেলে অনেক খুশি হবে।

পাঁচঃ

আমার ফেইসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে রানা রায় নামের এক ভদ্রলোক আছেন। এই আন্দোলন নিয়ে তিনি দারুণ উচ্ছ্বসিত। অসংখ্য স্ট্যাটাস দেন প্রতিদিন, সেই সাথে আন্দোলনের দারুণ দারুণ  সব ছবি। এই ছবিটা তাঁর ওয়াল থেকে নেয়া। ছবিটাকে আমি আমার ল্যাপটপের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে  রেখে দিয়েছি তার অনুমতি ছাড়াই।

আমার একটাই মাত্র সন্তান। ছেলে। মেয়ের জন্য বুকের মধ্যে সুপ্ত একটা হাহাকার তাই রয়ে গিয়েছে সবসময়ই। ছবির এই অনিন্দ্যসুন্দর নিষ্পাপ মেয়েটাকে দেখে সেই হাহাকার আরো তীব্র হয়েছে। আমার এরকম পরীর মত একটা কিশোরী কন্যা থাকলে, আর আমি দেশে থাকলে, আমার মেয়েটাও হয়তো তার বাবার হাত ধরে, লাল সবুজের পোশাক পরে, কপালে বাংলাদেশের পতাকার ব্যান্ড জড়িয়ে শাহবাগের  মোড়ে যেতো। তারপর ডাগর দুটো নিষ্পাপ চোখে আগুন জ্বেলে, ফুটফুটে  কচি মুখে তীব্র কাঠিন্য এনে, বুকের সবটুকু ভালবাসাকে  ফুসফুসে জড়ো করে, মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে আরো অসংখ্য  মানুষের সাথে গলা মিলিয়ে স্লোগান দিত, জয়য়য়য় বাংলা।