রায়হান আবীরের নতুন বই ‘মানুষিকতা’ এই বইমেলায় আসছে এই খবর প্রথম তার দেয়া স্ট্যাটাস থেকেই জানতে পারি। তার লেখার ধরন ভালো লাগে দেখেই মনঃস্থির করি বইটি কিনে ফেলবো। সেই সাথে আরও একটি জিনিস মনঃস্থির করি যে বইটি পড়ব এবং শেষ করব। তার এবং অভিজিৎ রায়ের বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ ৭০ ভাগের মত পড়েছিলাম, যত টুকু পড়েছি বেশ ভালোই লেগেছে, কিন্তু তারপরও কেন শেষ করিনি এই উত্তর জানতে আমাদের কোন অলৌকিক শক্তির দ্বারস্থ হতে হবে।

বুঝতেই পারছেন, এখন যেহেতু পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখতে বসেছি, আমি আমাকে দেয়া কথা রাখতে পেরেছি। যাই হোক, মানুষিকতা বইয়ে আছে তিনটি অধ্যায়। তিনটি অধ্যায়ের আলাদা আলাদা করে প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার আছে বলে মনে করি।

প্রথম অধ্যায়ে আছে, ‘ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া’, তিনটি অধ্যায়ের মধ্যে এই অধ্যায়কেই আমার সবচেয়ে অনবদ্য মনে হয়েছে। পুরো অধ্যায়টিই যেন একটি রোলার কোস্টার রাইড। বাস্তব জীবনে রোলার কোস্টার রাইড আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করলেও বইয়ের পাতায় ব্যাপারটা যে কোন পাঠকদের জন্যই বেশ চমকপ্রদ ব্যাপার। লেখক এই অধ্যায়ে কখনো আমাদের একেবারে দৈনন্দিন জীবনের আপাত ক্লিশে ঘটনা গুলো সামনে তুলে দেখিয়ে যেমন দিয়েছেন যুক্তিবাদী মানুষের অযৌক্তিক আচরণ, ঠিক তেমনি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা আলোচনা করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন প্রচলিত বিশ্বাসের রীতিকে।

আমাদের সবার মধ্যেই কেন জানি একটা প্রবল বিশ্বাস কাজ করে যে আমি ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে এক দৌড়ে রাস্তা পাড় হতেই পারি, এভাবে পাড় হতে গিয়ে কেউ কেউ মরে যায় সত্যি, কিন্তু সেই কেউ নিশ্চয়ই আমি হবো না এরকম একটা নিশ্চয়তা কে জানি আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়। অনেক লোকই সিগারেট খেয়ে, মদ খেয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরে, আমরা নিজেকে বুঝাই এইটাও তো সত্যি অনেকের কিছুই হয়না। আমরা এক অবিশ্বাস্য নিশ্চয়তার সাথে নিজেদের ‘কিছুই হবেনা’-দের দলে ফেলে দিই। ঠিক কোন যোগ্যতা বলে আমরা এই ‘সেফ জোনে’ অন্তর্ভুক্ত করি নিজেকে আমরা ব্যাখ্যা করতে না পারলেও মোটামুটি সবাই আমরা তাই করি। লেখক খুব অস্বস্তিকর প্রশ্ন রেখেছেন আমাদের জন্য, তাহলে কি আমরা নিজেরাই আমাদের জীবনকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করিনা? উত্তরে লেখক বলছেন, আমাদের বিশ্বাস করার একটা সহজাত প্রবৃত্তি আছে, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অযৌক্তিক হলেও আমরা তাই বিশ্বাস করি যা আমরা দেখতে চাই। আর এর সুত্র ধরেই চলে আসে অলৌকিক শক্তির কথা, ধর্মের কথা। কিছুদিন আগেও দেখেছিলাম বন্ধুদের ফেসবুকে শেয়ার দিতে যে কোরানে ‘ল্যান্ড’ শব্দটি আছে ১৩ বার এবং ‘সি’ শব্দটি আছে ৩২ বার যেটিকে শতকরা হিসাবে নিয়ে গেলে দেখা যায় আমরা যে জানি পৃথিবীর শতকরা ২৯ ভাগ স্থল এবং ৭১ ভাগ জল সেটিকেই নির্দেশ করে। খেয়াল করুন, যারা কোরানের এই মিরাকল প্রচার করছে, তারা কিন্তু কেউই বাস্তবে গুণে দেখেনি আসলেই শব্দগুলো অতবার আছে কিনা। গোনাগুনি তো দূরের কথা, তারা বছরে কোরান কয়বার খোলে কিংবা আদৌ পড়তে পারে কিনা সেটাতেই আমার সন্দেহ প্রবল। তারপরও তারা এই মিরাকল প্রচার করে একটা শান্তি অনুভব করে এই ভেবে যে তারাই একমাত্র সঠিক পথের অনুসারী।

প্রথম অধ্যায়ের এবং সম্ভবত পুরো বইয়ের-ই আমার সবচেয়ে প্রিয় অংশ হচ্ছে ডোপামিন লেখা অনুচ্ছেদ। লেখক আমাদের একেবারে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে বুঝিয়ে দেন যে আমরা সাধারণত যে লক্ষ্যের পিছনে ছুটি, গন্তব্যে পৌঁছার চেয়ে সেই ছুটাছুটিতেই আমরা অনেক বেশি আনন্দ লাভ করি, নিজেদের ভিতরে একটা তাড়না বোধ করি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কারো মনে হবেনা, সারা জীবন তো বহু দৌড়াদৌড়ি করলাম, আগামী ৫ বছর একটু ঝিমোই। কিন্তু হার্ভার্ডে হয়ত চান্স পাবার আগে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়াটাকেই একেবারে বিশ্বজয় সমতুল্য মনে করেছিল সেই একই মানুষটি।

এইসব চিরপরিচিত অনুভূতির সাথে সাথে ব্যবচ্ছেদ চলেছে বিশ্বাসের, ধর্মের এবং ধর্মানুভুতির। অনেকেরই ধারণা যে যাই বিশ্বাস করুক, কারো ধর্মানুভুতিতে আঘাত করা উচিত নয়। মানুষ আসলে বুঝেনা ধর্মানুভুতির ব্যাপ্তি কতটুকু। মডারেট বিশ্বাসীদের এই কথা মেনে নিয়ে আমরা যদি সদা সচেষ্ট থাকতাম সব সময় যাতে কারো কোন ধর্মানুভুতিতে আঘাত না লাগে, তাহলে আজও আমরা জানতাম সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে, বিধবা স্ত্রী’রা হয়ত আজও স্বামীর চিতায় আত্মাহুতি দিতেই থাকতো, বিবর্তন নিক্ষেপিত হতো ডাস্টবিনে। ওয়েট। আপনি হয়ত ভাবছেন, ‘বান্দর থেকে মানুষ আসার গালগপ্পো’ তো এখনও কোন সুস্থ মানুষ বিশ্বাস করেনা। আপনি বিশ্বাস না করলেও বিজ্ঞানিরা মোটামুটি সবাই কেন জানি বিবর্তনকে সত্য বলে মানছে। ধরে নিই, এক সময় বাংলাদেশে রাতারাতি ৯৯ ভাগ মানুষ বিবর্তনকে সত্য মনে করা শুরু করল, কিন্তু একজন এসে অন্যরকম দাবি করে বসলো। তো আমরা কি তখন তার কল্লার দাম হাঁকবো? রায়হান আবীর এরকমই একটি উদাহরণ টেনেছেন,

একটি বিশেষ ব্যাপারে ১০০ জন মানুষ একমত। ধরে নেই বিষয়টি বিবর্তন। কথা থেকে উড়ে এসে একজন বলল, বিবর্তন আসলে হয়নি, পৃথিবী থেকে হাঁটা দূরত্বে এক গ্রহে বসবাসকারী বাসিন্দারা আসলে ভিডিও গেমস খেলেছে, আর আমাদের কাছে যা প্রকৃতি সেটি ঐ খেলার সিমুলেটেড মডেল ব্যতিত অন্যকিছু নয়-তখন আমাদের কি উচিত হবে কথাটি হেসে উরিয়ে দেওয়া? আমাদের কী করা উচিত হবে তবে? আমাদের উচিত হবে চ্যালেঞ্জকারীকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে, কেনো আমরা সবাই বিবর্তন সত্য হয়েছে এ ধারণাটি পোষণ করছি তার কারণ খতিয়ে দেখা-উদ্দেশ্য থাকবে নিজেদের ভুল ধরা। আমাদের জ্ঞান সবসময়ই অসম্পূর্ণ, সব সময় আমাদের সুযোগ থাকবে এগিয়ে যাওয়ার এবং এগিয়ে যাওয়ার গতি আমরা ত্বরান্বিত করতে পারি, চ্যালেঞ্জকারীদের কথায় কান দিয়ে, তাদের মুখে হাত দিয়ে না।

দ্বিতীয় অধ্যায়ের নাম, ‘মানুষের মত মন’, আমাদের নিজেদের মস্তিষ্কের উপর আমাদের থাকে এক অগাধ আস্থা। কিছুক্ষণ আগে চাবি কই রাখলাম এইটা মনে রাখতে না পারলেও আমরা ৫ বছর আগে কী হয়েছিল সেই ব্যাপারে মাঝে মাঝেই বেশ আত্মবিশ্বাসী থাকি। রায়হান আবীর বলছেন, আমরা প্রত্যেকেই কিছুটা ডিলুশনাল, মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে এই মতিবিভ্রমের মাত্রাটাই শুধু বেশি। আমরা সবাই কম-বেশি পাগল, এইটা বুঝাতেও তিনি উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীদের পরীক্ষার কথা। প্রার্থনার উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এই অধ্যায়ে। কিছুদিন আগে জর্জ কারলিনের এই ভিডিও দেখছিলাম, সেখানেও এই প্রার্থনা নিয়ে ভালোই উপহাস দেখছিলাম। প্রার্থনা কাজ করে কিনা, এইটাও যে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করতে পারেন, লেখক আমাদের তা মনে করিয়ে দেন। তার সোজা সাপটা কথা, বিভিন্ন ধর্মের মুমূর্ষু রোগীকে এনে তাদের নিজেদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে বলা হোক। তারপর যদি দেখা যায়, শুধু এক বিশেষ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেই রোগী বেঁচে উঠছে, আর বাকি সব পটল তুলছে, তাইলে প্রার্থনা খুবই ফলপ্রসূ এই হাইপোথেসিস প্রমাণিত হবে। এরকম যে কোন প্রমাণ আসেনি, তা বুঝতেই পারছেন।

এই অধ্যায়ের শেষের দিকে একটা বড় অংশ ব্যয় করা হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের নাইকন ক্যামেরার উপর। অবিশ্বাসের দর্শনে প্যালের ডিজাইন থিওরি নিয়ে অনেক বিশদ আলোচনা আছে। সেইটা পড়ে থাকলে এই অংশে এসে পাঠক কিছুটা ঝিমিয়ে পড়তে পারেন। আর প্যালে-ফ্যালের নাম জীবনে প্রথম শুনলে পাঠক অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন ‘আশারাফুল মাখলুকাত’ মানুষের চোখের গঠন জটিল হতে পারে, কিন্তু কোনভাবেই প্রাণী জগতে সবার সেরা না, বরং এই জটিল জিনিসও কিভাবে কোন অলৌকিক শক্তির অংশগ্রহণ ছাড়াই বিবর্তিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে তার কথা পাঠক বুঝতে পারবেন।

তৃতীয় এবং শেষ অধ্যায়ের নাম, ‘আমাদের মন’। রায়হান আবীর বলেন, “ছোটবেলায় ভাবতাম, আচ্ছা পৃথিবীর সবচেয়ে সত্য ধর্মের অনুসারী হবার গৌরব অর্জনের জন্য আমি কী করেছি? না! নিজেকে ঠিক এই প্রশ্ন করতাম না। আমি আসলে আনন্দিত হতাম অন্য অনেকের মত করেই…” 

লেখক মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিল বলে এক ধরনের স্বস্তি প্রকাশ করেন, সেই সাথে বাঙালি আর মুসলমান এই দুই সত্তার দ্বন্দ্বের খোলস উন্মোচন করার চেষ্টা করেন। উঠে আসে, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বা বাচ্চু রাজাকারের কথা। মনে আছে, ছেলেবেলায় আর দশটা পরিবারের মত আমার পরিবারও টেলিভিশন থেকে কীভাবে ইসলামিক জীবন যাপন করা যায় তা মাঝে মাঝে জানার চেষ্টা করত, বুঝার চেষ্টা করত। এই শিক্ষা কার কাছে থেকে নিতো বাংলাদেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান? খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজের জন্য যে বাচ্চু রাজাকার এখন পাকিস্তানে পলাতক তার কাছে তার সবিনয়ে জানতে চাইত কী করলে খোদা খুশি থাকবে, কী করলে উনি বেজার হবেন। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, তার মুখোশ উন্মোচন হবার পর কেউ মিছিল করেনা এই বলে যে এনটিভি বা এটিএন-এর অফিস পুড়িয়ে দাও কারণ তারা একজন যুদ্ধাপরাধীকে দিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামের তরিকা প্রচার করেছে। মেহেদী মাখানো সেই নূরানি চেহারার প্রিয় হুজুর এখন আর ‘প্রকৃত’ ইসলামের অ্যামব্যাসেডর হতে পারেন না। কিন্তু এত সৌভাগ্য হয়না কার্টুনিস্ট আরিফের। এখনও আমি ক’দিন পর পরই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেখতে পাই যেখানে নেদারল্যান্ডের সব ধরনের পণ্যকে বর্জন করার সংগ্রামী আহ্বান দেখতে পাই। কারণ? আর কী, সেই কবে জানি নেদারল্যান্ডের এক পরিচালক ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে একটি চলচিত্র নির্মাণ করেছিল-সাবমিশন। কিন্তু কেউ খুশির খবরটা জানে না, কেউ খবর পায়নি যে একজন মুসলমান ইতিমধ্যেই এই পরিচালককে জবাই করে ফেলেছে দিনে দুপুরে, তাও আবার নেদারল্যান্ডের মাটিতেই।

বিশ্বাসীদের আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে কোন দেশই আসলে পুরোপুরি ধর্ম মানছে না এখন, মানলে এত অরাজকতা হতো না। সব ধর্ম বিশ্বাসীদের নিয়ে বলা গেলেও মুসলমানদের উদাহরণই টেনেছেন লেখক। অবশ্য এতে অনেকেই লেখককে মনে করতে পারেন ইসলাম বিদ্বেষী। অনেক জায়গাতেই লেখক খ্রিস্টান/ইহুদি/হিন্দুদের কথাও উল্লেখ করেছেন, সুতরাং আমি নিশ্চিত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও লেখককে একই রকম খ্রিস্টান/ইহুদি/হিন্দু বিদ্বেষী মনে করতে পারবেন। যাই হোক, কেউই যেহেতু পুরোপুরি ইসলামিক না, তারপরও যদি ধর্ম পালন মাপার যদি কোন স্কেল থাকতো, সৌদি আরব নিশ্চিতভাবেই এক নম্বরে থাকতো। রায়হান আবীর সৌদি আরবের কাপড় ধরে বেশ জোরেসোড়েই টান দিয়েছেন। তিনি ২০০২ এর ১১ মার্চের একটি ভয়াল ঘটনার উল্লেখ করেছেন। বাচ্চা মেয়েরা সেদিন সৌদি নিয়ম মোতাবেক মাথায় হিজাব আর বুরকা পড়েই স্কুলে গিয়েছিল। স্কুলের ভিতর গিয়ে তারা হিজাব/বুরকা খুলে পড়তে বসে যায়। বিপত্তি বাঁধে যখন স্কুলে আগুন ধরে, ফলে হিজাব/বুরকার তোয়াক্কা না করেই তারা বের হয়ে পড়তে চায় স্কুল থেকে। চোখের সামনে এভাবে ধর্মের মান-সম্মান নষ্ট হতে দেয়নি সে দেশের ধর্মীয় পুলিশ, তারা মেয়েগুলোকে পিটিয়ে আবার স্কুলের ভিতরে ফেরত পাঠিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। যাক বাবা, মানুষ পরে, এই যাত্রায় বেঁচে গেল অন্তত তাদের সাধের শান্তির ধর্ম। এই ঘটনার উল্লেখ দেখেই আপনি ভাবছেন, সৌদি আরবে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সঠিক ইসলাম জানার জন্য একজন অবিশ্বাসী/ বেধরমি ঠিক কার কাছে যাবে? সারা জীবন ধরে যেসব মুসলিম স্কলার শুধু কুরান নিয়েই পড়ে থাকেন, তারাও একমত না একজন আরেকজনের সাথে, তাদের মতে তারা বাদে অন্যরাই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করছে। এই লুপের শেষ নিরপেক্ষ দর্শকরা আর দেখতে পায় না।

রায়হান আবীর তার বইয়ে আমাদের আস্থা রাখতে বলেন গোল্ডেন রুলের উপর-‘Treat others the way you want to be treated.’ তিনি স্বপ্ন দেখতে চান যে একটি যুক্তিনির্ভর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব এই বাংলাদেশেও, এই জন্যই হয়ত তিনি এই বিজ্ঞান বিমুখ সমাজে এখনও কলম ধরেন।

শেষ করার আগে বলতে চাই, অনেকেরই, বিশেষ করে অবিশ্বাসী অনেকের মধ্যে এমন একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে এসব লিখে কী কোন লাভ আদৌ হয়! যাদের আলোকিত করার জন্য এই প্রচেষ্টা, তারা কি ছুঁয়েও দেখে এসব বই! আমাদের মনে রাখতে হবে, যারাই বিশ্বাসকে জলাঞ্জলি দিয়েছে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে, তাদের কেউই ওহীপ্রাপ্ত হন নি, তাদের কাউকে তাদের পিতা-মাতা ধমক লাগিয়ে বিশ্বাস খেদিয়ে বিদায় করেন নি। আমি নাড়া খেয়েছিলাম আরজ আলী মাতুব্বর পড়ে, অন্য কেউ যে রায়হান আবীর পড়ে হবেনা তা আমরা বলতে পারিনা।

কাউকে না কাউকে এই অপ্রিয় সত্যগুলো লিখে যেতে হবেই, রায়হান আবীরের তাই অবশ্যই আমার কাছে একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য।