প্রথমত একটি ব্যপার স্পষ্ট হওয়া উচিত বলে মনে করি যে যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে এইসব ঘৃনিত মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে জাতির কলঙ্ক মোচনের যে দাবি বিগত চার দশক ধরে এক প্রকার অপমানিত হয়ে আসছিল তার একমাত্র কারন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দাবির সুপরিকল্পিত রাজনীতিকরন।যে দেশে রাজনীতিরই রাজনীতিকরনের মত পুঁজিকরণ ঘটে সেখানে এরকমটিইতো কাম্য! অথচ এই রকম একটা গণ দাবী বাস্তবায়নের মহৎ উদ্যোগ নেয়ার কথা ছিল খোদ রাষ্ট্রের। কিন্তু আমরা তা পারিনি। কেননা আমরা আজ পর্যন্ত কোনো জাতীয় সরকার গঠন করতে পারিনি, গঠন করেছি দলীয় সরকারের! আর তাই আইন,বিচার ও প্রশাসনের মত জাতীয় গুরুত্তপূর্ণ স্তম্ভগুলোর মত জাতীয় দাবিগুলোও আজ দলীয়। শুধু তাই নয়, দলীয় হয়েছে জাতীয় চেতনা, মুক্তিযোদ্ধের মত জাতীয় গৌরব, এমনকি আমাদের কতিপয় মুক্তিযোদ্ধারাও। বাদ যায়নি সার্বভৌম জাতীয়তা,ধর্ম,বর্ণ,এমনকি চেহারাও। আর তা নাহলে আজ স্বাধীনতার এই চার দশকেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও কেন পাহাড় কেঁদে বেড়ায় কল্পনা চাকমাদের খোঁজে, কেনইবা দেখতে হয় কেবল তিন শব্দের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্যের।।

আবারও বলি সমস্যাটা পুঁজিবাদী রাজনীতিভূক ব্যবসায়ীদের। আর তা নাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে নব গঠিত ট্রাইব্যুনালের ৭৩ পরবর্তী সংশোধিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিচার পরবর্তী সম্ভাব্য সকল জটিলতা এড়াতে কেন আগে থেকেই ট্রাইব্যুনাল আইন খতিয়ে দেখা হলনা তা আমার বোধগম্য নয়। আমাদের সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকেরা এতটা উদাসীন আমি তা মনে করিনা। উল্লেখ্য সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি নিজামুল হক কে নিয়ে সৃষ্ট স্কাইপে জটিলতার পর দ্রুত সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। কেন তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু যা জানিনা তাহলো কেন আগে নয়? কেন আগে থেকে এইসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে আমাদের পরিশ্রমের অর্থ ব্যয় করে উনারা ব্যর্থ হন, কেন এইরকম একটা বিচার প্রক্রিয়ার আঁতুর ঘরেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে আমরা লজ্জিত হই? কীভাবেই বা বাচ্চু রাজাকাররা পালিয়ে যায়? আর কাদের মোল্লার এমন রায় আসে,যেখানে ৬টি মামলার ৫টিই প্রমানিত হওয়ার অর্থ দাঁড়ায় ঐ ৫টি মামালায় অভিযোগকৃত সকল হত্যাকান্ডই মহামান্য ট্রাইব্যুনালের কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত! সত্যিই বলতে হয়-হায়! সেলুকাস…কি অপার বিস্ময়!……দেখাইলে জাতিময়……!!

শুধু এখানেই শেষ নয়। প্রধান বিরোধী দল যারা কিনা এইসব স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভূকদের(জামায়াত,শিবির) সেই পঁচাত্তর পরবর্তী Indemnity প্রদানের মাধ্যমে যে Commitment দিয়েছিলেন তারই অঙ্গীকার পূরনের দায় জলন্ত বাসের চালকের দেহ ভষ্ম দিয়ে মিটাচ্ছেন আজ অবধি।আজ জাতীয় ঐক্যের এই সর্বোচ্চ নিবেদনে উনাদের এই আত্মস্বীকৃত রাষ্ট্রদ্রোহীতার সাথে যে ইতিহাস কার্পন্য করবেনা তা বলা বাহুল্যই। ৮৭ এর গণ আন্দোলনের শহীদ নূর হোসেন বেঁচে থাকলে আজ এই ফাল্গুনের জনস্রোতে আসতেন কিনা তা জানিনা। কেননা তিনি ক্ষমতাসীন সরকারী জোটে যখন এক কালের জলপাই পোষাকধারী স্টিম রোলার,ভোটের সংখ্যাতত্বে জাতীয় স্বত্তার ধর্মীয়করনের জনককে সময়ের পালা বদলে ক্ষমতায় আসীন দেখতেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি লজ্জায় নিজেকে ধিক্কার দিতেন। সম্প্রতি আমরা আরেকবার অপমানিত হলাম; অর্থমন্ত্রী শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মানাধীন ভাস্কর্য স্থাপনে বিরোধীতাকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন! উল্লেখ্য বিগত নবম সংসদ নির্বাচনে উনারা সাময়িক সময়ের জন্য এই খেলাফতে মজলিসের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন! যেমনটি করেছে বিএনপি মৌলবাদীদের সাথে। একে উনারা গণতান্ত্রিক রাজনীতির কৌশল কিংবা যাই বলুন, দায় নিতে হবে সবাইকে। ইতিহাসে যেমনটি নিয়েছিল মুসলীম লীগ,পাকিস্তান পিপলস পার্টি। আর তাই আমাদের প্রকৃত ইতিহাস আমাদেরই হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। যোদ্ধাপরাধীদের বিচারের মত একটি ঐতিহাসিক জাতীয় পদক্ষেপে কেন প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল একমত হতে পারলনা তার জবাব দেয়ার সময় মনে হয় আর বেশী দেরি নয়।

ইতিহাস কথা কয়। ৪৭, ৫২ ও ৬৯ এর দায় আমরা মিটিয়েছি ৭১-এ, প্রয়োজনে আবার মেটাব ২০১৩এ। কেননা প্লাস্টিক স্নায়ুর যে অপবাদ নতুন প্রজন্ম বয়ে বেরাচ্ছিল, তা প্রমানে আমাদের ৮টি দিনও লাগেনি।।

একলব্য