১.

ভাইলোগ, আজকে আমাদের জাতির জন্য এক অন্ধকারময় কলঙ্কের দিন। বর্তমান আম্লিগ সরকার ৭১-এর কসাই কাদের দাদুর বীরোচিত কর্মকান্ডের মূল্যায়নতো করেই নি, উপরন্তু তাকে জেলের অভ্যন্তরে ঢুকিয়েছে। আমরা এই রায়ের বিরোধিতা করছি। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

কী করেছেন উনি? বেশি হলে দু চারশ মানুষই মেরেছিলেন মিরপুরের আলোকদি গ্রামে। (মিথ্যাবাদীরা বলে থাকে ৩৪৪ জন।) তাতে একেবারে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ করে রাখার অধিকার আম্লিগকে কে দিল?

কী করেছেন উনি? বেশি হলে কয়েকজন নারীকে ধর্ষনই করেছেন। তাতে একেবারে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ করে রাখার অধিকার আম্লিগকে কে দিল?

কী করেছিলেন উনি? হয়ত কবি মেহেরুন্নিসাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যাই করেছিলা। তাতে একেবারে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ করে রাখার অধিকার আম্লিগকে কে দিল?

কী করেছিলেন উনি? হয়ত উনার পবিত্র হস্তমুবারকের উছিলায় সাংবাদিক আবু তালেবকে হত্যাই করেছিলেন। তাতে একেবারে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ করে রাখার অধিকার আম্লিগকে কে দিল? আপনাদের কী মনে হয় না যেখানে যেখানে কাদের দাদুর হাতের ছোঁয়া পড়েছে আবু তালেব-এর সে জায়গাগুলো বেহেস্ত নসিব হবে? এটা কি আবু তালেবের জন্য সৌভাগ্য ছিল না?

কী করেছিলেন উনি? হয়ত ওসমান গণি ও গোলাম মোস্তফাকে হত্যাই করেছিলেন? তাতে আপনার আমার কী এমন ক্ষতি হয়েছে? তাতে একেবারে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ করে রাখার অধিকার আম্লিগকে কে দিল?

কী আর এমন করেছিলেন আমাদের কসাই কাদের দাদু? মিরপুরের কালাপানি লেনের হজরত আলী এবং তার স্ত্রী আমিনা এবং দুই মেয়ে খাদিজা ও তাহমিনা, দুই বছরের ছেলে বাবুকে হত্যাই না হয় করেছিলেন। তার মাত্র এগারো বছরের মেয়েকে উনি আর উনার সাহাবীরা মিলে না হয় একটু ধর্ষনই করেছিলেন। এটা গন্ডগোলের(!?) বছর কে না করেছিল? তাতে একেবারে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ করে রাখার অধিকার আম্লিগকে কে দিল?

আমরা বাঙলাদেশের আমজামকাঁঠালজনতা কসাই কাদের দাদুর বিরুদ্ধে এই সমস্ত সত্য কিন্তু মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞ্যাপন করছি। তিনি শুয়োর হতে পারেন। কিন্তু শত হলেও মানুষ! আমাদের অন্তরের অন্ত্যস্থল থেকে তার বেকসুর খালাসের দাবী জানাচ্ছি।

২.
কয়েকদিন আগে আমি আমার খোমা খাতায় একটা স্ট্যাটাস দিয়ে জাতে উঠেছিলাম। বলেছিলাম বাচ্চু রাজাকার(আসলে মিথ্যা প্রপাগান্ডা!) পলাতক বিধায় ফাঁসির রায় হয়েছে। থাকলে হত না। কেউ কেউ তার সাথে দ্বিমত করেছিলেন। সবুর করতে বলে বলেছিলেন, সবুর করেন, এত বিপ্লবের কথা বলে হবে। আমিও বেয়াদপ পাবলিক, বলেছিলাম আপনিও ভাই সবুর করেন, আগেই দেশপ্রেমে ভাসলে চলবে।

যাই হোক কথা হচ্ছে, আজকের রায়ের ঘটনাটা আসলে কী?

একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, বিচারের রায় এর থেকে বেশি কিছু আশা করাটা হত ইতিহাস বিস্মরনের পরিচয়। আগে বুঝতে হবে আম্লিগের পক্ষে জামায়াতের বিচার করা সম্ভব কী না সেটা।
এক কথার উত্তরে বলা যায় সম্ভব।

সম্ভব, কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে সম্ভব?
আজকে দেশ থেকে বিএনপি উঠিয়ে দিন। জামাতের বিচার করতে আম্লিগের কোন সমস্যা নেই। কারন?
কারন, তখন প্রধান বিরোধি দল জাতীয় পার্টি, আর জামাত একটা অপ্রয়োজনীয় আগাছা। জাতীয় পার্টিকে আম্লিগের সাথে নির্বাচনে জিততে হলে কয়েক হাজার বছর চেষ্টা করতে হবে। এক কথায় বলা যায় এরশাদের উত্তরাধীকার উৎপাদনের সম্ভবনার মতই সে সম্ভবনা সন্দেহজনক। সুতরাং সেকুলারিজমের ঝান্ডা উড়িয়ে এদেরকে চুপচাপ করাতে আম্লিগের মতন সন্ত্রাসী দলের বেশি সময় লাগবে না।

ব্যাপার হচ্ছে যেহেতু বিএনপি মাঠে আছে, সুতরাং বিএনপিকে সাইড লাইনে নিতে হবে। এরশাদ চাচ্চু তার উন্মত্ত যৌবনে ফুসে উঠতে পারছে না সুতরাং বিদিশা+রওশন*(এমন আরো অনেক বিদিশা+রওশন)=এরশাদ কাহিনী খতম। বাকি থাকে জামাত। আদর্শিক বুলি আম্লিগ যতই কপচাক, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পার্টনার না পেলে সেক্সটয় হিসাবে জামাতকে আম্লিগের ব্যাবহার করতে কোন সমস্যা হয় না। সুতরাং জামাতের সাথে একটা দড়াদড়িতে যেতে পারলে ক্ষমতা হাতের তালুতে থেকে যাচ্ছে। এবং বর্তমানে বিএনপি নামে একটা রাজনৈতিক দল আছে এটা জনগন ভুলতে বসেছে!

তবে ঝামেলা একটা রয়ে যাচ্ছে। সেটা হল, নির্বাচনী ইশতেহারে আম্লিগ ৭১-এর কিছু চরিত্রের কর্মকান্ডের চমৎকার সফলতার জন্য তাদের পুরষ্কৃত করার কথা বলেছে। এখন কী করা যায় সাধারন জনগন আর জামাতকে একই সাথে হাতে রাখতে হলে? মানে সহজ বাঙলায় সাপও মারতে চাই লাঠিও ভাঙতে চাই না। একমাত্র উপায়, ধরে সবগুলোকে জেলে পুরে তারপরে মজা দেখতে থাকো। সময় এসে যাবে নির্বাচনের, আবার ইশতেহার দাও, “আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, যতটুকু বাকি আছে সেটাও এসে করব”।
ইন ফ্যাক্ট কিছু দিন আগে, আইন প্রতিমন্ত্রি বলেওছেন এই কথা। আমরা এই টার্মে যতগুলো পারি ততগুলোর বিচার করব এবং পরবর্তীতে জনগনের ম্যান্ডেট চাইব আবার বিচার করার জন্য। আমি পত্রিকার রেফারেন্স দিতে পারছি না, টেলিভিশনের খবরে দেখেছি।

এখানেই আসে, বাচ্চুর ফাঁসির রায়ের ব্যাপারটা। বাচ্চু রাজাকারকে ইচ্ছে করেই পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। কারন?
কারন তাতে করে তার ফাঁসির রায় দিয়ে সাধারন জনগনকে দেখানো যাবে এবং একই সাথে জামাতকেও ক্ষেপানো হবে না। বাচ্চু বর্তমানে জামাতের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। বাচ্চুর ফাঁসির রায়ের পরে জামাত-শিবিরের নিশ্চুপ থাকা সে প্রক্রিয়ারই প্রতিফলন।

আরেকটা ব্যাপার এখানে উল্লেখ করা যায়, প্রধান আসামীদের যে তালিকা সে তালিকায় গোলাম আজম মতান্ত্বরে গুয়াজম মতান্ত্বের আরো অনেক আজম এর বহু পরে আছে বাচ্চুর নাম। বিচার কার্যে বাচ্চুর রায় হলে গেল কিন্তু গোলাম আজম মতান্ত্বরে গুয়াজম মতান্ত্বের আরো অনেক আজমের বিচারের কোন খবর নাই। যদিও সে’ই হল রাজাকারকুলশিরোমনী।

একই প্রক্রিয়ায় কাদের মোল্লার রায় হয়েছে। মৃত্যুদন্ডের তো কোন প্রশ্নই আসে না কারন আম্লিগের সাথে জামাতের সেরকম কথা হয় নি। এবং এর রায়ও কার্যকর হবে কী না সেটা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। বাচ্চুর ফাঁসি হয়েছে কাদের মোল্লার থেকে অনেক লঘু পাপে। সেখানে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন হয়েছে বাচ্চুর চাইতে অনেক অনেক বেশি অপরাধ করেও। সুতরাং ডালে লবন তো হয়ই নাই তার উপরে ডাল মে কুচ কালা, ধলা, লাল, নীল, বেগুনী ইত্যাদি হ্যায়।

আর কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে যদি এই হয় তাহলে অন্যান্য রায় সম্পর্কে কথা বলা হবে শক্তির মারাত্বক অপচয়। এমনিতেই আমরা বাঙালিরা পুষ্টিহীনতায় ভুগি।

৩.

এখন কথা হচ্ছে তাহলে কী হবে সামনে।
উত্তরঃ কেউ জানে না। শুধু সম্ভবনার কথা বলা যায়। দুটো ব্যাপারের কথা খুবই সহজে বলা যায়।
এক. কনফেডারেশন আর দুই, জামাতকে নির্বাচনে নিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা। কারন বিএনপি যাবে না।
তাহলে নির্বাচনে শুধু বিএনপি ছাড়া আর সবাই যাবে। এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পাবে কারন স্বীকৃতি দেওয়ার যে বড়ভাই আম্রিকা, আম্রিকার এতে কোন ক্ষতি নাই।
–আমি একটা ভার্শন বললাম, আরো অনেক ভার্শনের কাহিনী ঘটতে পারে।–

আরেকটা যেটা ঘটতে পারে, সামরিক শাসন আসতে পারে। সম্ভাবিলিটি হ্যাজ। সুতরাং বাদ দেয়া যাচ্ছে না।

আম্লিগের জামাতের সাথে যে মোচড়ামুচড়ি দেয়ানেয়া চলছে সেটার আরেকটা প্রমান হল, সাংবিধানিকভাবে জামাত নিষিদ্ধ(যদিও প্রচুর পরিমানে স্ববিরোধিতা সংবিধানে রয়েছে)। ৭২-এর সংবিধানে ধর্মভিত্তিক সমস্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষনা করে হয়েছিল যেটা “স্বাধীনতার ঘোষক” জিয়া মিয়া রদ করেছিল। বর্তমান আম্লিগ সেই রদ আবার সংশোধন করেছে। সুতরাং সাংবিধানিকভাবে জামাতকে নিষিদ্ধ করতে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।

কিন্তু আম্লিগ সেটা কেন করছে না? জিজ্ঞাসিত হলে আম্লিগের পক্ষ থেকে আমরা শুনতে পাচ্ছি জামাত একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। বাঙলাদেশে অনেক অনিবন্ধিত দল রাজনীতি করছে। তাদেরকে কি নিষিদ্ধ করা হয়েছে? হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করেছে আম্লিগ। জামাত-শিবিরে কী সমস্যা? আরে ভাই, ডাল মে কিছু তো হ্যায়!

৪.

আমি রায়ের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকলেও গত রাতে ঘুমাতে পারি নি। সকালে চিন্তা করেছিলাম একবারে রায়টা দেখেই ঘুমাবো। চোখ কথা না শোনায় ঘুমিয়ে যেতে হয়। আর আমি ঘুমালে সাধারন কেয়ামতের আলামত না দেখা দিলে ঘুম ভাঙে না। সেই আমি প্রত্যেক আধা ঘন্টা অন্তর অন্তর ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা চেক করে দেখেছি বুকের এক কোনায় নিভুনিভু করে জ্বলতে থাকা আশার সলতেটা জাগিয়ে রেখে। কিন্তু ফলাফল ইয়া বড় একটা শুণ্য।

৫.

সব কথার শেষ কথা জনগন চাইলে সব কিছু সম্ভব। আম্লিগের কৌশল আম্লিগের পাছা দিয়ে ঢুকিয়ে যদি কেউ দিতে পারে সেটা জনগন। জনগন একসাথে হলে জামাতি হরতাল, আম্লিগের কৌশল সব পোতানো মুড়ি হয়ে যাবে।

কিছু কিছু হিসাবে দেখা যায় জামাত ৫ থেকে ৮ ভাগের মতন ভোট পায়। জনগন একসাথে হয়ে খালি জিপার খুলে এক ফোঁটা করে যদি মুতে দেয়, জামাত-শিবির ঢাকার রাস্তায় আটলান্টিকের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে শহীদ হবে।

গতকাল বিকাল থেকে শাহবাগে অগুনতি জনগন ঠিক এই কাজটিই করে যাচ্ছে। একত্রিত হচ্ছে। দাবী জানাচ্ছে। যদি মনে করেন জনতার আদালতে এই সমস্ত শুয়োরের বাচ্চাদের পাছায় শিমুল গাছের ডাল ঢুকাবেন, তাহলে এসে পড়ুন আজ শাহবাগে। শামিল হোন সবার সাথে।