প্রথম দিন মেলায় যেতে হয় যতটা না বই কিনতে তার চেয়ে বেশি মেলার গন্ধ নিতে। অন্তত আমি এই কারণে প্রথম দিন মেলায় যাই, মানে গত চার বছর ধরে যাচ্ছি আর কি! বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে আমার মেলা ব্লতে ছিল কোন চাচা বা ফুফাকে ঝলাঝুলি করে একদিন মেলায় আসা, সেবা প্রকাশনীর সামনে গাদাগাদি করে থাকা ভিড়ের জঠরে ঢুকে যাওয়া এবং একশ টাকা বাজেটের মাঝে তিনটা তিন গোয়েন্দা কিনে ফেলা!!! মজার ব্যাপার হল আজকে মেলায় অন্য কোন স্টল থেকে কিছু কেনা হয়নি, অনেকদিনপর আমার সেই ভুখানাঙ্গা কালের মত মেলা থেকে সেবা প্রকাশনীর তিনটা বই নিয়ে বাড়ি ফিরলাম, পুরাই নস্টালজিক কাহিনি! 😛

এবার মেলার একটা স্বস্তিকর ব্যাপার হচ্ছে রাস্তার দুই পাশে স্টল নেই, তাই রাজনৈতিক ও ইসলামী মার্কা তেলমারা বইবেচা স্টলের সংখ্যা একরকম নেই বললেই চলে। রাস্তাতেও স্বস্তির সাথে হাটা যাচ্ছে। যদিও আমি উন্মাদ ও অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের স্টলকে খুব মিস করেছি। প্রতিবারই এই দোকানগুলোতে যাই উন্মাদের স্টিকারের জন্য এবং পোস্টকার্ডের জন্য। এইবার নাকি শুধুমাত্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে স্টল দেয়া হয়েছে। অন্যপ্রকাশের সামনে বরাবরের মত ভিড় দেখে সেইদিক আর মাড়াইলামনা এইবারও।

শুদ্ধস্বরে গিয়ে পরিচিত কাউকে পেলামনা। তাই ইতস্তত চক্কর মারা শুরু করলাম। খুঁজে বের করলাম আগামী প্রকাশনী। এই স্টলটার প্রতি আমার অন্যরকম একটা ভালবাসা আছে, হুমায়ুন আজাদের সারি সারি বই সাজানো দেখতে দেখতে মনে হয়, ইস যদি কোনক্রমে দেখতে পেতাম লোকটা স্টলের ভেতর চেয়ারে বসে আছে! অটোগ্রাফ চেয়ে ব্বিরক্ত করতামনা। শধু দেখতাম।

আজকের মেলায় সবচেয়ে মজার যে দুটি ঘটনা ঘটেছে সেই দুটিই হচ্ছে দুজন শিশুকে নিয়ে। কালি-কলম প্রকাশনীতে একটা ৬-৭ বছরের ছোট মেয়ে ঢুকেছে বাবার হাত ধরে। ঢুকেই দেখে আইনস্টাইন মিয়া তার দিকে লাল জিভ বের করে ভেঙচি কাটছেন (সাদাকালো একটা স্কেচে জিভটা লাল করে আইনস্টাইনের বিখ্যাত ভেঙচি মারা ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করা হয়েছে বইটার।) ্বইটা দেখে মেয়ে জিজ্ঞাসা করে, “বাবা, বাবা, এটা কি?” মেয়েটা বানান করে পড়তে শিখেছে তাই বাবার উত্তরের জন্য তর সইলনা তার, নিজেই বানান করে পড়ে ফেলল নাম- সে-লি-বে-টি-জো-ক-স, আ-হো-সা-ন হা-বী-ব (সেলিব্রেটি জোকস আহসান হাবীব)। তারপর শুরু হইল তার ঝুলাঝুলি, সে এইটা কিনবে! খুব মজা লাগছিল মেয়েটাকে অবাক হয়ে আইনস্টাইনের জিভের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে!

পরের ঘটনা ভাষাচিত্র প্রকাশনীতে, সেখানে সাত-আট বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখলাম পুরো বড়দের মত করে ক্রেতা এক শিশুকে বলছে, “শোন, এগুলো হচ্ছে ছোটদের বই, আর ওগুলো হচ্ছে একটু বড়দের বই, ঐ যে আমাদের চেয়ে একটু বড় যারা আছে না- তাদের পড়ার জন্য। আমরা এগুলো পড়ব একটু বড় হলে। এখানে এই এই আর এই সারির বইগুলো হচ্ছে আমাদের ছোটদের জন্য!” হঠাৎ আমার চোখে চোখ পড়তেই সে দেখল আমি তার দিকে চেয়ে হাসছি। সে কোন পাত্তা না দিয়ে মনের আনন্দে শিস বাজাতে লাগল! ঠিক তখনই এক বয়স্ক ক্রেতা একটা বই বললেন প্যাকেট করে দিতে। মেয়েটি পাকা কর্ত্রীর মত পাশের সেলসম্যানকে ধমক দিয়ে বলল “এই দেখছনা বই চাচ্ছে, এখনি এটার একটা কপি দাও!”

বিঃদ্রঃ বইয়ের দাম তো ভালই বেড়েছে! তিন বছর আগে হুমায়ুন আজাদের “নারী” কিনেছিলাম দুইশ কত দিয়ে যেন। তার দাম এখন পাঁচশ টাকা!!! অনেক বইই দামের জন্য ছোঁয়া যায়না! :-Y

ফেব্রুয়ারি মাসটা ৩২ দিন হইলে কি ক্ষতি ছিল? :-s
যাই হোক, আগামী সাতাশ দিন আশা করি মেলায়ই থাকব প্রতি সন্ধ্যায়। :))