নোটঃ এই লেখাতে রানী নামে যাকে আনা হয়েছে তিনি একজন বাস্তব মানুষ। যা বলা হচ্ছে সেটাও বাস্তব এবং টরোন্টো শহরে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া অনেকের জীবনের সত্যকথন। হয়তো আমার জীবনেরও, কিন্তু আমি লিখছি রানীর জীবনে ঢুকে গিয়ে, বলছি রানীর মুখের ভাষায় –যে ভাষা সত্তিকার অর্থেই রানী ব্যবহার করে। রানী আমার কাছের পরিচিত একজন মানুষ , যার জীবনে ঢুকে গিয়ে লিখতে পারবো বলেই লেখা শুরু করছি । ২০০৭ সালের জুন/জুলাই মাসে মুক্তমনায় প্রথম লেখা শুরু করেছিলাম মডারেটর ফরিদ আহমেদ এর সহযোগিতায় ,লিখেছিলাম বাসুন কে মা ধারাবাহিক পর্বের ৫০ টা চিঠি । ২০১৩ সালে আবার ফিরে আসতে ইচ্ছা হলো মুক্তমনায় , যোগাযোগ করলাম অভিজিৎ রায় কে , তাকেও বিশেষ ধন্যবাদ। এই চিঠি লেখার পরিকল্পনা হয়েছিলো অন্য একজনের সাথে,যদি চিঠি ভালো লাগে পাঠকের তাহলে তার জন্যই এই চিঠির জন্ম, তাকেই উৎসর্গ । আমি যা লিখছি ,যা বলছি সব ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা,পথ চলতে যা পাই প্রতিদিন ।(লেখক)

খোলনালচে————-
তোমারে কি নামে ডাকন লাগবো সেইডা জানিনা,তাই অনেক ভাইবা চিঠিটা সম্বোধন-হীন সুরু করলাম, আশা করতেছি তোমার উত্তরের পরে একটা পথ বাইর হইবো। কি অবাক কান্ড হুনো, আমি কিছু না জাইনা, কিছু না বুইঝাই এমুন একটা কাম সুরু করলাম। তোমার কথায় ভরসা কইরা । কিন্তু জানো, এই যে আমার ৩ মাইয়া বড় হইয়া গ্যাছে ,আমি প্রায় ১৫ বছর বিদেশ আছি,তোমার লগে পরিচয় হয়েছে তাও ৫ বছরের বেশী, তুমারে দেখছি না, জানছি না, সুদু ফোনে তোমার গলা হুনছি, এই তুমিই আমারে কইছো, হাতে চিঠি লিখতে, তাইলে নাকি আমার মন ভালা লাগবো, তুমি কইছো ,কিচ্ছুই ভাবনের কাম নাই,আমার মনে যা আইবো আমি জেন তাই লিখি । তাই কি হয় কও? তুমি তো বেবাকই জানো, আমাই পড়াশুনা , ফ্যামিলি, সবই জানো, আমি তো ভালা কইরা বাংলা কইতেই পারি না । যদি পেটে কিছু থাকতো তাইলে কি আর আজকে বিদেশে গার্মেন্টস-এ কাম করন লাগে, আবার এইডাও ঠিক এই বিদেশ এক আজব জায়গা,কত কত বিশাল পাশ দেওন মানুষরাও কাম করে আমাগো লগে । যাক, তাইলে আমি লেখা সুরু করলাম তুমারে,কেমুন? কি করবা তুমি আমার চিঠি দিয়া ? সারাদিন ফ্যাক্টরিতে কাম করি আমি,এইহানে আমরা কিছু উলের জামা কাপড় সিলি দেই, বিশাল বড় টানা টানা ঘর, বাংলাদেশে কোনদিন কোন গার্মেন্টস এ যাই নাইক্কা, কিন্তু এইডা নাকি সেরকমই কাজ, আমার লগে আর যারা বাঙ্গালী মহিলা কাম করে তারা আমারে তাই কইছে । শিফটে শিফটে কাম আমাগো,ভোর অন্ধকার থাকতে বাসা থাইকা বাইর হই,কামে যাইতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা, বাস মিস করলে আরো বেশী সময় । কিন্তু সময় মত বাইর হইলে বাস মিস করি না । এই যে গত ২ বছর হইল তোমার সাথে লুকাইয়া কথা কই, আমার প্রিথীবির কেঊ জানে না, তোমার লাইগা আমার মন পোড়ায়,আমি কান্ধি, যদিও ২ টা বইন ছাড়া আমার কেউ নাই, যেই ৩ মাইয়ারে পেটে ধইরা বড় করছি,হেরা বড় হইয়া গ্যাছে ,সংসারে তেমুন কাম নাই আমার, খালি রান্না কইরা ফ্রিজে রাইখা দেওন, সবাই নিজেরা বাইরা খায় , এক লগে খাওনের টাইম নাইকা। আর আমার স্বামী ?হের গল্প তো করছি তোমারে,তাই না? কিন্তু এই চিঠি লেখন যখন সুরু করছি , তখন হের কথাও আয়া পড়বো। শোন, তোমারে আগেই কইয়া রাখি , এই ফ্যাক্টরিতে কাম করি ৮ ঘণ্টা শিফটে, এই কামের ফাকে ফাকে আমাগো ৩ টা ব্রেক আছে, ১৫ মিনিট কইরা, কালকা ডলার শপ থাইকা একটা মোটা রুল টানা কাগজ আর কলম কিইন্না আনছি , তোমারে চিঠি লেখনের লাইগা,এই চিঠি কিন্তু তুমি কাঊরে দেখইবা না কইলাম, তুমি কিন্তু আমার কাছে কিরা কাটছো কইলাম, মনে আছে ? জানো দূর থেইকা মানুষ দেখতাছে আমি চোখ মুছতাছি,আউজকা আর না, আমাগো শিফট আবার সুরু হইবো,কামে ফাঁকি দিলে কইলাম ফায়ার, তোমারে আবার লিখুমনে, তুমি নিজের দিকে খেয়াল নিবা কইলাম, ভা্লা থাকো ।
পুনশ্চ—তূমি তো জানো আমার বাপ/মায়ে আমার নাম রাখছে রানী, কিন্তু আমার জীবন কি রানীর লাগান ? তুমি কও ? তাই নীচে নাম লিখুম না, তুমি আমারে যা বলবা তাই হইবো আমার নাম, আর তূমি তোমারে যা ডাকতে কইবা তাই ডাকুম তোমারে ,এই চিঠি দিয়া আমার নতুন জীবন হপায় সুরু হইলো ।
লুনা শীরিন ,১৩ /০১/১৩