শালিসের পরিণাম।

আকাশ মালিক

‘যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ও অভাগা, কেউ কথা না কয়,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়–
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে’ ॥

কথা ছিল পরবর্তি লেখাটা হবে ‘বেহুলার কাহিনি’। কিন্তু গত কিছুদিনের অন্যান্য ব্লগে পড়া একটি ঘটনা সর্পবিষের মত যন্ত্রণা দিচ্ছে আমার মনটাকে। যখনই আমার কিছু বলার থাকে আমি মুক্তমনায় চলে আসি। এ আমার বলার জায়গা, শুনার জায়গা, শেখার জায়গা, চিৎকার করার জায়গা। না, আমি আজ সারা দুনিয়াকে কাঁদিয়ে দেয়া মালালার কথা বলছিনা, সমগ্র ভারত কাঁপানো গণধর্ষণে মৃত্যুবরণকারী দামিনির কথা বলছিনা, আমি বলছি এক বাংলাদেশী কলেজ ছাত্রীর কথা। তার সাথে অন্যায় আচরণ করেছিল তার এক সহপাঠি। যে কোন কারণেই হউক অপরাধীকে মেয়েটি ক্ষমা করে দিয়েছিল অথবা তাকে ক্ষমা করতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা যে ভুল ছিল সেই কথাটাই আমি বলতে চাই।

ঘটনাটা ২০১০ সালের অক্টোবর মাসের। এক কিশোরী কলেজে গিয়েছিল ক্লাস করতে। কলেজটির নাম ‘জুয়েলস অক্সফোর্ড ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল’ সিরাজগঞ্জ। স্কুল রুমে মেয়েটির এক সহপাটি ফুল হাতে, সম্ভবত প্রেম নিবেদন করে। এক পর্যায়ে সে মেয়েটির গালে সজোরে তাপ্পড় মারে। ঘটনাটি তার এক সহযোগী ভিডিওতে ধারন করে আরেকজন সারা দুনিয়ায় ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়। অবলীলায় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তার চড় মারা দেখলে ধারণা করা যায় যে, সে বুঝে রাষ্ট্র, আইন, সমাজ, ধর্ম তার পক্ষেই আছে। পুরুষ লাইসেন্স পেয়ে গেছে নারী নির্যাতনের। সে আরো বুঝেছে নারী তো নারীই, ভোগ্যপণ্য, আমদানি-রফতানি যোগ্য সামগ্রী, নারী আবার মানুষ হলো কবে? কেন সে এমনটি ভাবতে পারলো? নতুন প্রজন্মের নৈতিকচরিত্রের এ অধঃপতন কেন? কিসে তার এত স্পর্ধা, এত সাহস, এত অহংকার? এর জন্যে অন্যান্য সব কিছুর সাথে আমরাও কি দায়ী নয়, আমাদের কি কিছুই করার নেই? বিষয়টা প্রথমে আমার কাছে কিছুটা সন্দেহজনক ছিল, নাটকও হতে পারে, একটি রুমে ক্যামেরা নিয়ে তিনটা ছেলে আর একটি মেয়ে? কিন্তু পরে যখন জানতে পারলাম এ নিয়ে শালিসও বসেছিল, তখন বুঝতে বাকি রইলোনা যে, তারা ও তাদের অভিভাবকরা মেনে নিয়ে নিয়েছিলেন সেটা একটা অপরাধ একটা অন্যায় কাজ ছিল। মামলা মোকদ্দমা না করে, আইনের শাসন প্রয়োগ না করে শালীসের মাধ্যমে, সমঝোতার মাধ্যমে, এডভোকাসি করে কিছু কিছু বিষয়ের নিষ্পত্তি করা যায়, কিন্তু এর পরিণাম সব সময় ভাল হয়না তার প্রমাণ এই ঘটনাটি।

বলা হচ্ছে, শালীসের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কিসের শালীস? টাকা? টাকা দিয়ে মনের ক্ষত মেটানো যায়? সামাজিক ষ্টেটাস? ছেলের বাবা পুলিশ অফিসার? ছেলে সম্ভ্রান্ত পরিবারের? আমি সামাজিক ষ্টেটাসে বিশ্বাস করিনা, এটা ভয়ংকর, ক্ষতিকর। আমি এ বিচার মানিনা। এ বিচারের নামে প্রহসন। সুবিচার কোনদিন হয় না বলেই এরকম ঘটনা বারবার ঘটে। শালীসের পরে ছেলেরা হয়তো মুচকি হাসি দিয়েছে, কি বোকারে বাবা মানুষগুলো! শালীসের দুই বছরের ভেতর মেয়ের বিয়ের পরে মেয়েটিকে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে ফেলার লক্ষ্যে তারাই আবার সেই ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। কী কচুটা হলো শালীসের মাধ্যমে? বিচার যদি করতে হয়, আনুন সেই মেয়েটিকে এই রুমে যেখানে কুলাঙ্গারটা তাকে চড় মেরেছিল। ডেকে আনুন তার সহযোগীকে যে ঘটনাটি ভিডিওতে ধারন করেছিল। আনুন সেই বদমায়েশটাকেও যে ভিডিওটি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েকে বলা হউক, ঠিক সেই ভাবে ছেলের গালে থাপ্পড় মারুক যেভাবে ছেলে তাকে মেরেছিল। সে ভিডিও রেকর্ড করুক যে আগে করেছিল আর সে’ই ভিডিও সাইবারে ছড়িয়ে দিক যে আগে দিয়েছিল। এটাই হবে সুবিচার এটাই হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আমি আইনবিদ নই, এ আমার একান্ত অভিমত।

এবার তাদের পরিচয়-

এই সেই কুলাঙ্গার, নপুংশক, কাওয়ার্ড সৃজন আহমেদ, যে মেয়েটিকে থাপ্পড় মেরেছিল।



এই তার বাবা আবুল কালাম আজাদ
বগুড়ার ধুনট থানার ওসি । রোড নং- ০৫, বাড়ী নং- ২৪,ফ্ল্যাট নং- ডি৫, ধানমন্ডি।

যে ভিডিওটি করেছে তার নাম শিপলু। বাড়ি সিরাজগঞ্জ, এখন ঢাকায় থাকে। পড়ে, DIFT BMLএ। ক্যাম্পাস- মিরপুর ১০ (স্টেডিয়াম এর ৫ নাম্বার গেট এর অপজিট)।

আর ফেইসবুকে ভিডিওটা ছড়িয়ে দিয়েছে সৃজনের সহযোগী বদমায়েশ মাসুদ রানা।

এখানে আছে সেই কুৎসিত ঘটনার ভিডিও ও পূর্ণ বর্ণনা

আরো একটা ভিডিও –

আরো একটি রিপোর্ট

আমরা চুপ থাকবো কেন? এই মেয়ে আমাদের কেউ নয় সে জন্যে? প্রবাসীরা দেশে যাবোনা তার কারণে? আমার কোন মেয়ে নেই তাই বলে? তবে তো বলতে হয় ওরা একদিন আপনার আমার দুয়ারেও আঘাত হানতে পারে সে দিন আপনাকে আমাকে সাহায্য করার কেউ থাকবেনা। হ্যাঁ, আমার মনের কথা আমি বলতে চাই। পরান খুলে বলতে চাই, মুখ ফুটে বলতে চাই, একলা হলেও বলতে চাই। কেউ না শুনলেও শুনাতে চাই, যদি তা অরণ্যে রোদনও হয়। আমি রাতের তারাকে সাক্ষী রাখবো, বনের পশুকে জানাবো, পাখিকে জানাবো, বৃক্ষের কাছে আমার প্রতিবাদ জানিয়ে যাবো। তবু আমাকে বলতেই হবে, এটা অন্যায় এটা অবিচার, ঘৃন্য, পাশবিকতা, অমানবিকতা এটা মানবতার অপমান, মনুষ্য জাতির কলঙ্ক। আমি চিৎকার করে বলতে চাই, শালিস নয়, আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই, চাই আইনি সুবিচার।