[ অনেক সময় শুধু জান নিলেই চলেনা , হত্যা পরিকল্পনায় জান নেয়ার সাথে সাথে মান সম্মান নেয়ার বিষয়টাও অন্তর্ভূক্ত রাখতে হয় যাতে করে আহাজারির পরিমান সর্ব নিম্ন পর্যায়ে সীমিত রাখা যায় । মান না নিয়ে জান নেয়ার একটা সমস্যা আছে – এতে এক নতুন শহীদের জন্ম হয় ]

জনপ্রিয় ব্লগার ইস্রাফীল হিসুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় এই সময়ের সুপারহিট আদিরসাত্মক ‘ইশারা’ ব্লগের একটি ঘটনা নিয়ে । বাংলাদেশের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের প্রামাণ্যচিত্র সেই ব্লগে সচিত্র আকারে প্রকাশ হওয়ার পর আমাকে ডিজি সাহেব এক রকম জোর করেই তিন দিনের নোটিশে বার্লিন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। ভোর পাঁচটায় ঢাকায় ফিরেই ডিজি সাহেবকে ফোন করতেই অপর প্রান্ত থেকে বলে উঠলেন , “এক্ষণি বাসায় আয়, তোর সাথে জরুরী কথা আছে।” আমি আর কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দিলাম। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসা মেজর আসাদকে বললাম ‘ সরাসরি বাসায় যেতে বলেছে ।’ মেজর আসাদ সাথে সাথে মুহুর্তের মধ্যে গাড়িটাকে যেভাবে উল্টোদিকে ঘুরালেন সেটাকে দৃষ্টিনন্দন বললে অত্যুক্তি হবে না। আমি বিজ্ঞের মত জিজ্ঞাসা করলাম , ব্যাংককের কোর্সে শেখা ? আসাদ সাহেব মুচকি হেসে বললেন , না স্যার ! আমি অবাক হয়ে বললাম , তাহলে কোথায় ? আবার মুচকি হেসে বললেন, তেল আবিব, স্যার ।

ডিজি সাহেবের কাছ থেকে যা জানার জেনে বাইরে এসেই আসাদ সাহেব কে বললাম , আমার একজন নারী অফিসার দরকার।

অরুণা এবং আমি বসে আছি ঢাকার রূপসী বাংলা হোটেলের একটি কক্ষে। আমার পাশে ক্যাপ্টেন অরুনা প্রায় তিন ঘন্টা ধরে তার আই প্যাড নিয়ে ব্যস্ত। এর মধ্যে তার সাথে কোন কথা হয় নি তো বটেই দৃষ্টি বিনিময় হয়েছে এমনটাও বলা যাবে না। একটু পর পর তিনি কফির মগে চুমুক দিয়েই চলেছেন। আমাকে কফি পানে কেউ হারাতে পারলে এই অরুণাই পারবে ! এবার অরুনা একজনকে ফোন করে বললেন , “আসা চাই কিন্তু !” এটা বলেই আই প্যাডের কভার বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ই টি এ ২০২০ , স্যার । আমি ঠান্ডা কন্ঠে বললাম, রজার দ্যাট !

রাত পৌনে নয়টা বাজে। রুমের ভেতর ঘুট ঘুটে অন্ধকার কারণ সব বাতি নেভানো হয়েছে। দরজায় তিন বার পরপর নক করার শব্দ হওয়ার পর কয়েক সেকেন্ড পর দুবার নক হল। অরুনা দরজার কাছে গিয়ে বললেন , ইশারা ! অমনি অপর প্রান্ত থেকে একটা শিস দেয়ার আওয়াজ পেলাম । অরুণা দরজা খুলে দিতেই একজন ভেতরে প্রবেশ করে বললো , এত অন্ধকার কেন ? লাইট অন কর ! লাইট জলতেই প্রবেশকারী দেখলো যে, কক্ষে একজন নারী ও সাতজন পুরুষ এবং সবার হাতেই একটি করে হ্যাকলার এন্ড কক এমপি ৫ সাব মেশিন গান।

গুলশানের একটা সেইফ হাউজে ঘরের ভেতর তিন জন বসে আছি । আমি, মেজর আসাদ এবং আমাদের ‘অতিথি’। মেজর প্রশ্ন শুরু করলেন আমাদের অতিথিকে।

কয়টা ব্লগে ব্লগিং করেন ?
চারটা ব্লগে ।
সবই একনামে না মাল্টি নিকও আছে ?
এক নামে না, মাল্টি নিকও আছে ।
মাল্টি নিকে ধরা পড়েছেন কখনও?
না পড়িনি স্যার। ঠাঁস করে একটা চড়ের শব্দ হল । আমাদের অতিথি জোরে ও মা করে চিৎকার করে উঠলেন।
গুপ্তমনা ব্লগের নাম শুনেছেন কখনও ?
জ্বী স্যার , শুনেছি। ওখানে গুপ্তবাবুর চটির মত করে চটি লেখা হয়।
ওখানে ব্লগিং করেছেন কখনও ?
না , স্যার । ঠাঁস করে আবার একটা চড়ের শব্দ।
বেশ । এবার ওখানে আপনাকে ব্লগিং করতে হবে ।
চটি লিখতে হবে আমাকে স্যার ? আবার একটা চড়ের শব্দ কানে আসলো । ও বাবা বলে চিৎকার করে উঠলেন আমাদের অতিথি।
কার ভিডিও আপলোড করব স্যার ? কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অতিথি বললেন।
সেটা সময়মত আপনার কাছে পৌছে যাবে। গুপ্তমনায় এবার কি নামে ব্লগিং করবেন ?
ইস্রাফীল হিসু। ঠিক আছে না স্যার ? আমাদের অতিথির দুটো রক্তলাল চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।

দৈনিক কামকালের সম্পাদককে একটা ফোন করেই ডিজি সাহেবকে জানিয়ে দিলাম যে , সব কিছুই পরিকল্পনা মাফিক এগুচ্ছে।

একমাস পরে দৈনিক কামকালের প্রথম পাতায় একটি নারী কেলেঙ্কারী এবং শোক সংবাদ বেড়িয়েছে । জনপ্রিয় আদিরসাত্মক গুপ্তমনা ব্লগে প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী জামিল চৌধুরীর পরকীয়া প্রেমের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর মন্ত্রী মহোদয় নিজের লাইসেন্সকৃত পিস্তলের গুলীতে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার একমাত্র সাক্ষী জামিল চৌধুরীর ব্যক্তিগত ড্রাইভারের ভাষ্যানুযায়ী মন্ত্রী সাহেব হটাৎ নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলী করেন। পুলিশ অবশ্য এরকম অশ্লীল ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইস্রাফীল হিসু নামের এক ব্লগারকে খুঁজে বেড়াচ্ছে ।

আজ সকালে বার্লিনে স্টার বাকসে কফির অর্ডার দেবার সময় মুখ খুলতেই পেছন থেকে একটা নারী কন্ঠ বলে উঠল , দুটো ক্যারামেল মকা , ভেনটি ! আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি এক চেনা মুখ । মুচকী হেসে বললাম , ইনসমনিয়া এখনও হয়নি ? বেড়ালের মত গর গর শব্দ করে উত্তর এল ” কামড় দেব কিন্তু !”