ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-১
ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-২
ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-৩
ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-৪

গত ক’বছর ধরেই নানান মৌলবাদী চরমপন্থী গোছের দলে অনেক ভাল ভাল নিরীহ ছেলেপিলে রিক্রুট হচ্ছে শোনা যায়। বুয়েটের সাম্প্রতিক আন্দোলনে শিবির ও হিজবুত তাহরিরের (হিতা) ভূমিকা নানান সূত্রে আলোচনায় এসেছে; সেই আন্দোলনের যৌক্তিকতা যাইই হোক, এটা বোঝা গেছে যে বুয়েটের ছাত্র শিক্ষক দুই লেভেলেই অনেকেই এসব দলের সমর্থক বা সাথে যুক্ত। শুধু বুয়েটেই নয়, আরো খবর দেখুন, “উগ্র মৌলবাদীদের আস্তানা হয়েছে নর্থ সাউথঃ পাঠচক্রের আড়ালে শিবির ও হিযবুতের বৈঠক” [১]। বুয়েটের খবরে তেমন অবাক হবার কিছু নেই, সেখানে বহু আগ থেকেই শিবির আছে, হয়ত আগে সেরকম সক্রিয় ছিল না। নর্থ সাউথে পড়ে সাধারনত অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেরা, যারা আল্ট্রা মডার্ন নামে পরিচিত। এ ধরনের ছেলেপিলেরা কেন মৌলবাদী সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে? বুয়েট কিংবা নর্থ সাউথ নয়, এমন রিক্রুটমেন্ট চলছে আরো বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই। “জঙ্গী সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ! [২]”

শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়, এমনকি সেনাবাহিনীর মত অতি সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানেও মৌলবাদীরা অবস্থান নিচ্ছে এমন অভিযোগ এখন আর কেবল গুজব নয়, স্বীকৃত সত্য; “সেনাবাহিনীতে হিযবুত প্রভাব” [৩]। কয়েক দফায় ধরপাকড়ও হয়েছে। এরা এমনকি ক্যু করার মত শক্তি রাখে সেটাও কিছুদিন আগে প্রমান হয়েছে। সেনাবাহিনী থেকেই বলা হয়েছে ‘কিছু ধর্মান্ধ’সদস্য এর সাথে জড়িত ছিল, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী চরমপন্থী মৌলবাদী নানান দলের নিয়ন্ত্রনে এটা সকলেই জানি, এর জের ধরে সে দেশের কি অবস্থা সেটাও দিনের আলোর মত পরিষ্কার। আমাদের দেশেও কি সেই দিন সমাগত?

নানান গোয়েন্দা সংস্থা [৩] ও মিডিয়া রিপোর্টে দেখা যায় যে আধুনিক সব নামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষিত প্রফেশনাল শ্রেনীর অনেকে চরমপন্থী হিতার প্রতি ঝুঁকছে; যা মৌলবাদী প্যাটার্ন বদলে দিচ্ছে। এরশাদ আমলেও ইসলামী ছাত্র শিবিরের মিছিল বলতে দেখা যেত গত বাঁধা টুপি দাঁড়িওয়ালা চেহারার লোকজনের সমাহার। এর পরিষ্কার ও বিপদজনক ব্যাখ্যা হল মৌলবাদের গ্রহনযোগ্যতা বা জনপ্রিয়তা বেড়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত শ্রেনীর এই দলে ঝুঁকে পড়া অশনি সংকেত। মৌলবাদীর উলটো বলতে আগে বোঝা যেত আল্ট্রা মডার্ণ, এখন আর সে দিন নেই। এরা কি ভাষায় ও কিভাবে রিক্রুটমেন্টের কাজ করে তার একটি নমুনা দেখুন, “জিন্স, টি-শার্ট পরিহিত, কানে হেডফোন পরা অথবা ঝুলন্ত তরুণ আপনাকে লম্বা একটি সালাম দিয়ে হাতে লিফলেট ধরিয়ে দিল। সেখানে লেখা থাকতে পারে, যেমন ছিল ২০১১-এর ১৩ আগস্টের লিফলেটে‘কাফের–মুশরিকদে শাসকদের অপসারণ করে পবিত্র কোরানের শাসন, খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে’সমাবেশ ও মিছিল।“ [২]। পবিত্র কোরানের শাসন না হয় বোঝা যায়, যেকোন মুসলমানেরই কোরানের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজের শরীক হবার কথা এবং অপরকেও আহবান জানানোর কথা, কিন্তু কাফের মুশরিকের দালাল শব্দটির গুরুত্ব কি? দেশের সরকার কাফের মুশরিকদের দালাল মানেটা কি? বর্তমান আওয়ামী সরকার ভারত ঘেঁষা বলে যে চিরন্তন কড়া অভিযোগ আছে সেটার পরিপ্রেক্ষিতেই কি এমন আহবান? ব্যাপারটা অত সরল নয়।

[৩] সূত্রের র্যাহব কর্মকর্তা একটি খুব গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিয়েছেন, “বাংলাদেশে যেখানে হরকাতুল জিহাদ বা জেএমবির মতো নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের কার্যক্রম শহরাঞ্চলের বাইরে অনেক বিস্তৃত, সেখানে হিজবুত তাহরিরের সদস্যদের অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীরা। র্যা বের মুখপাত্র কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, এ সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়েও তারা এ বিষয়টিই বারবার লক্ষ্য করেন। তিনি বলেন, “অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনে গ্রেপ্তারকৃত অধিকাংশই ছিল অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত লোকজন। কিন্তু হিযবুত তাহরীরের গ্রেফতারকৃতদের শতকরা ৯৯ জনই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অথবা পেশাজীবী।”

হিতার রাজনৈতিক আদর্শের প্রচারনা [৪] পড়লেই পরিষ্কার হয় যে কাফের মুশরিকের দালাল তারা কেবল ভারত এমনকি আওয়ামী সরকার বিষয়ে বলেনি। তাদের ধর্মভিত্তিক ‘প্রকৃত’ ইসলামী রাষ্ট্রের রূপরেখা ঠান্ডা মাথায় কিংবা সিরিয়াসলি পড়া কষ্টকর হলেও সেটা পড়লে জানা যায় যে তাদের সেই আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র হল দুনিয়াময় সব মুসলমান প্রধান দেশ নিয়ে একটি খিলাফত; যার সাথে কিছু বিধর্মী দেশের সীমিতাকারে সম্পর্ক থাকতে পারে এবং কিছু দেশের সাথে কোন রকমই সম্পর্ক থাকা চলবে না। তবে সম্পর্ক যাইই থাক বিধর্মী কোন দেশের থেকে অর্থ বা অন্য কোন প্রকার সাহায্য সহায়তা নেওয়া যাবে না ইত্যাদী ইত্যাদী। এসব নীতিমালা তারা কোরান হাদীসের নানান বানী দিয়ে ব্যাখ্যা করেছে। তাদের চরম অবাস্তব, অমানবিক, সাম্প্রদায়িক সব নীতিমালা পড়ে অনেক সময় হাঁসি পেলেও ব্যাপারটা হালকা করে দেখার মত নয়। মাদ্রাসা শিক্ষিত তালেবানদের মত বলা যায় না যে আধুনিক শিক্ষা বিবর্জিত, প্রকৃত ইসলাম জানে না বলে এমন হয়েছে।

খুব গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন; নুতন প্রজন্মের আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক ছেলেমেয়ে, প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পেশাজীবি শ্রেনীর লোকে, এমনকি সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য কেন হিতার মত উগ্রবাদী সংগঠনে আকৃষ্ট হচ্ছে? মাদ্রাসা জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কিছু ছাত্র শিক্ষকদেরই আগে কেবল এসব সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট দেখা যে; পীর মতিউর (‘৮৯ সালের ঘটনা), বাংলা ভাই, শায়খ রহমান এরা সকলে মাদ্রাসা প্রোডাক্ট। এসবের কারন অনুসন্ধানে অনেকেই চট করে আমেরিকা ইসরাইল টেনে আনেন। আমেরিকা ইসরাইলের সাম্রাজ্যবাদের প্রতিক্রিয়ায় আধুনিক ধারায় পড়াশুনা করা ছেলেপিলে, পেশাজীবিরা হিতার মত দলে যোগ দিচ্ছে? আমেরিকা ইসরাইল ঘায়েল করতে এরা বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে ইসলামী বিপ্লব ঘটাতে চায়?

বিশ্বাসী মনে বিশ্বাস করতে না চাইলেও এসবের মূল কারন সেই ধর্মশিক্ষার এক ধরনের ব্যাখ্যার ভেতরেই আছে। ধর্ম কর্মকে যখন কেবল মাত্র মানসিক শান্তি বা আত্মিক মুক্তির মাধ্যম এভাবে চিন্তা না করে একমাত্র পরিপূর্ন জীবন বিধান হিসেবে গ্রহন করার শিক্ষা দেওয়া হয় সমস্যার সূত্রপাত হয় সে যায়গা থেকেই হয়। কারন বাস্তব জীবনে পরিপূর্ন ধর্ম মেনে জীবন যাপন চালানো সম্ভব নয়, ধর্মের সূত্র যতই পবিত্র হোক আপোষ করতেই হয়। ধর্ম শিক্ষা এক ধরনের জীবন যাপনের নির্দেশনা দেয় (অবশ্যই ধর্মীয় জীবন বিধানের সব কিছুই অগ্রহনযোগ্য এমন নয়) আর দৈনন্দিন জীবন চলে অন্য ধারায়। সোজা কথা ধর্মশিক্ষার ক্লাসে একজন শেখে যে কোরান হাদীসের সব বানী অভ্রান্ত, সেসব মেনেই জীবন চালাতে হবে, এসব পবিত্র সূত্রের জীবন বিধানের নির্দেশনার যৌক্তিতা চ্যালেঞ্জ করা চলবে না, মেনে চলতেই হবে। অন্যদিকে বাস্তব জীবনে দেখে কোরান হাদীসের বহু বানীই অগ্রাহ্য করা হচ্ছে, বড় বড় আলেম স্কলারগন কোরান হাদিস যেভাবে ব্যাখ্যা করে নানান ফতোয়া দেন প্রচলিত সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নীতি চলে তার উলটো ধারায়। সোজা কথায় দেশে ইসলামী হুকুমত চলছে না। এই পরস্পর বিরোধী দুই ধারা জন্ম দেয় এক মহা মানসিক দ্বন্দের। যার ভেতর ধর্মের প্রভাব যত বেশী তার মধ্যে এই দ্বন্দ্ব কাজ করে তত বেশী, এর প্রকাশ ঘটে নানান ভাবে। সেই দ্বন্দ্বের কারনে করতে হয় নানান দ্বি-চারিতা, নিতে হয় পরস্পর বিরোধী অবস্থান। এই দ্বিধা দ্বন্দ্বের চরম প্রকাশ শুধু তত্বীয় ধর্মচর্চাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর জের পড়ে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন (এখানে রাজাকারি মানসিকতার কথা বলছি না), রাজনীতি, দেশের প্রচলিত আইন, এমনকি খেলাধূলার মত বিষয়ের মধ্যেও। সবচেয়ে মারাত্মক কথা, এভাবে জন্ম হয়েছে এবং দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে পরস্পর বিপরীত দুই ধারা। না, এটা আস্তিক নাস্তিক ধারা নয়। খোদ ধার্মিকদের ভেতরেই জন্ম হয়েছে এই মেরুকরনের।

এই দ্বন্দ্ব আরো প্রবল মাত্রা পায় ধর্মের চোখে যাবতীয় সব সমস্যা মূল্যায়ন করতে গেলে। তখন মনে হয় যে দেশের ও জীবনের যাবতীয় সব সমস্যার মূলে হল ইসলামী শাসন না থাকা কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা থাকা। ইসলামী শাসন কায়েম করতে পারলেই সব মুশকিল আসান, কাজেই চাই ইসলামী বিপ্লব। রাজনৈতিক দর্শন হয়ে পড়ে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার মানে হল কাফের মুশরিকের দালাল (হিতার প্রচারনা যেমন), কারন ইসলামকে পূর্নাংগ জীবন বিধান হিসেবে মানতে গেলে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা মানা যায় না। সত্য কথা বলতে কেউ ইসলামকে ‘পূর্নাংগ’ জীবন ব্যাবস্থা মনেপ্রানে বিশ্বাস করলে তিনি আবার কিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা সমর্থন করতে পারেন তা আমিও বুঝি না, এই ধরনের দ্বন্দ্বে ভোগা বেচারাদের অবস্থা সবচেয়ে করুন, এরা পরীক্ষিত ইসলাম রক্ষাকারী হলেও হার্ডকোর ধার্মিকদের গালি খান, হজমও করে যান নীরবে কারন ইসলামের দৃষ্টিভংগী নিজেরা ভালই জানেন। নীরবে হজম করার কারন হল বিতর্ক শুরু করলে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থার সমর্থনে প্রকৃত সরল সত্য স্বীকার করতে হবে যে ইসলাম মেনে পূর্নাংগ জীবন যাপন সম্ভব নয়, ইসলামের বহু বিধিবিধানই বাদ দিতে হবে। সেটা কিভাবে সম্ভব? তখন আবার মুসলমান ষ্ট্যাটাস নিয়ে টান পড়বে। এজন্যই বলেছি যে ধার্মিকদের ভেতরেই দুই মেরূকরন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা নিয়ে বর্তমান। এই দ্বন্দ্বের বহু উদাহরন বাংলা ব্লগেই আছে।

দেশে ধর্মকর্মের বাহ্যিক রমরমা বেড়েছে, এমনকি এখন মাদ্রাসা জাতীয় প্রতিষ্ঠানও দরকার নেই, সাধারন শিক্ষালয় থেকেই সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা পেয়ে আসছে তাই তারা অনেকে এমন আহবানে সহজে সাড়াও দিচ্ছে। কে এসব আহবানে সাড়া দেবে কে দেবে না তা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর; যেমন তার নিজের জ্ঞান বুদ্ধি, পড়াশুনা (শুধুই স্কুলের বই নয়) ধর্ম সম্পর্কে ব্যাক্তিগত মূল্যায়ন, পারিবারিক পরিবেশ নানান কিছু। এটা বুঝতে হবে যে কোন অসত উদ্দেশ্যে নয়; তারা প্রকৃত ইসলামী ব্যাবস্থা কায়েম করে সুশাসন নিশ্চিত করে সব সমস্যার সমাধান হবে এ উদ্দেশ্যেই এসব উগ্রবাদী সংগঠনে আকৃষ্ট হচ্ছে। কারন তারা দেখছে যে বড় দলগুলি যারা ক্ষমতায় যায় তারা পরিপূর্ন ইসলামী শাসন কায়েমের কথা মুখেও আনে না। ধর্মীয় শিক্ষা যার মাঝে যত প্রবল, যে পূর্ন ইসলামী কেতায় দেশ চালানোর স্বপ্ন দেখে তার আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়া তো দূরের কথা, বিএনপির সমর্থকও হবার চাইতে জামাত বা হিতা জাতীয় দলের সমর্থক হবার সম্ভাবনা অতি প্রবল। বিশ্বাস না হলে আলেম সম্প্রদায়, মাদ্রাসা শিক্ষক ছাত্রদের মাঝে সমীক্ষা চালনো যেতে পারে। এখন অবশ্যই প্রশ্ন হতে পারে যে হিতা জাতীয় দলের দৌরাত্ম্য হঠাত সাম্প্রতিক সময়েই কেন দেখা যাচ্ছে? ’৭০ এর দশকেও কেন এদের দৌরাত্ম্য সেভাবে অন্তত আমাদের দেশেও ছিল না? ধর্মশিক্ষার নামে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রতা, জিহাদী মাল মশলা তো সব সময়ই ছিল। ইবনে কাথিরের তাফসির, মারেফুল কোরান এ জাতীয় অজস্র বই পুস্তক বহু শতক ধরেই তো আছে।

এই প্রশ্নের জবাবও সহজ। এসব উগ্রবাদী ধ্যান ধারনা কেতাবের পাতায় সুপ্ত টাইম বোমার মত থাকলেও সে টাইম বোমা ডেটোনেট করে যায়গায় যায়গায় বসানোর কাজ করানোর মত সমন্বিত উদ্যোগ সেভাবে ছিল না। দিনে দিনে ধর্মের রমরমা বাড়ছে,এসব মাল মশলাও দ্রুত ছড়াচ্ছে; যেমন স্কুলের ধর্মশিক্ষার বই এ আবশ্যিক বিষয় হিশেবে পাঠ দেওয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার। এর সাথে অতি অবশ্যই দরকার অর্থকড়ি, ট্রেনিং যেটা আসছে বাইরের কিছু দেশ থেকে। এই কারনেই হিতা সম্পর্কে র্যা ব কর্মকর্তার মূল্যায়ন খুবই সঠিক। জেএমবি বা হুজি মৌলবাদী চরমপন্থী দল হলেও এরা হল অনেকটা লোকাল প্রোডাক্ট, তাই এদের কার্যক্রম আঞ্চলিক ভাবেই সীমাবদ্ধ, এসব দলের ফান্ড বাইরে থেকে এখন আর সেভাবে আসে না, হিতার মত কোন রকমের পরিষ্কার রাজনৈতিক আদর্শও এদের ছিল না। অন্যদিকে হিতা ’৫০ এর দশকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিষ্ঠিত দল যার শাখা আছে বহু দেশে, এই দেশেও তাদের শাখা আন্তর্জাতিকভাবেই সম্পর্কিত, বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বেশ কিছু মুসলমান প্রধান দেশেও এরা নিষিদ্ধ হলেও বর্তমানে এদের অন্যতম ঘাঁটি ব্রিটেনে, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা আসলেই তেমন কাজের নয়।

ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের একজন অধ্যাপক সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ধর্মভিত্তিক উগ্রপন্থী ছাত্র সংগঠনে বিপুল পরিমান ছাত্রছাত্রীর যোগদান বিষয়ে দীর্ঘ গবেষনা করেছেন [৫]। তার গবেষনাতেও দেখা যায় যে বিস্ময়কর ভাবে বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিপুল পরিমানে ছেলেমেয়ে ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী দলে, বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরির (হিতা) এ যোগ দিচ্ছে। ব্যাপারটা আরো ব্যাপক কৌতূহলোপদ্দীক এ কারনে যে এই রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়ায় হিতার কাছে অনেক পিছিয়ে আছে মৌলবাদী স্বাধীনতা বিরোধীদের বড় সবচেয়ে বড় শক্তি ইসলামী শক্তি শিবির। খোদ রাজধানী শহরের আধুনিক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্রছাত্রীরা হিতার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে, কেনই বা শিবিরের মত সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠনও জনপ্রিয়তায় হিতার সাথে পেরে উঠছে না?

গবেষনাপত্রটিতে এর কারন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মূলতঃ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকাকে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা অন্যান্য ছাত্র সংগঠন যেমন ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রদল, ইউনিয়ন এসবে যোগ দিতে পারে না, উলটো দিকে হিজবুত তাহরি ধর্মীয় সভার আবরনে নিশ্চিন্তে ছাত্রছাত্রী রিক্রুট করতে পারে। অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে তবলীগ জামাতও এই গবেষনায় দেখা যায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ধর্মীয় বিষয় অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কর্তৃপক্ষও এসব ধর্মসভার নামে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা দেয় না। ফলে হিতার সামনে অবারিত দ্বার, প্রায় প্রতিটি প্রাইভেট এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও বেশ কিছু অধ্যাপক আছেন এই দলের সাথে জড়িত। হিতায় যোগদান সম্পর্কে এই ব্যাখ্যা আমার কাছে কিছুটা অসম্পূর্ন মনে হয়েছে। মৌলিক কারন হিসেবে ছাত্রদের মাঝে ধর্ম ও রাজনীতিকে এক করে দেখার প্রবনতা চিহ্নিত করা হলেও অতি গুরুত্বপূর্ন এ বিষয়টা বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়নি। ধর্ম ও রাজনীতি একাকার করে ফেলার প্রবনতা কোথা থেকে আসল? এ দর্শনগত শিক্ষা কি আমাদের সমাজ থেকেই ছেলেপিলেরা পায় না? সংগঠন করতেই হলে অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আরো নানান রকমের সৃজনশীল সংগঠন জনপ্রিয়তা না পেয়ে হিতার মত একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন কেন জনপ্রিয়তা পাবে? বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ছাত্ররাজনীতির ওপরেই যেখানে প্রবলভাবে ভাল ছাত্রছাত্রীদের ভেতর অনীহা তৈরী হয়েছে? এই মৌলিক প্রশ্নগুলির জবাব এ গবেষনায় খোঁজা হয়নি।

ধর্ম নিয়ে উন্নাসিকতা যত চলবে; ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থা কায়েম করার শপথ যত শোনা যাবে ততই দিনে দিনে এ জাতীয় উগ্রবাদী ধর্মভিত্তিক দলের জনপ্রিয়তাও বাড়বে। সত্য কথা বলতে ’৭১ সালে ধর্মওয়ালা রাজনৈতিক দলগুলি রাজাকারি না করলে আজ দেশে এদেরই ক্ষমতায় দেখতে পাওয়া তেমন বিচিত্র কিছু ছিল না। বড় দুই দলে পরিবারতন্ত্রের অবসান হলে বড় ধরনের ভাংগনের সম্ভাবনা আছে, তখন সেই ভাংগনের রাজনৈতিক সুবিধে পাবে এরাই। বিশেষ করে ডানপন্থী ধারার বিএনপি সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে এদের প্রতি সহানুভূতিশীল প্রচুর আছে, বর্তমান বিএনপির জামাত ঘেঁষা নীতি কিংবা যুদ্ধপরাধীদের বিচারের বিরোধী করা বিচ্ছিন্ন কিংবা বেগম জিয়ার একক সিদ্ধান্ত নয়, এটা আদর্শগত মেলবন্ধনেরই প্রমান। বিএনপি ধারার কোন বুদ্ধিজীবিই এ কারনে এই নীতির সমালোচনা কোনদিন করেন না, উলটো উল্লসিত হয়ে সাবাশি দেন। বর্তমানে নিষিদ্ধ বা মোট সংখ্যার তূলনায় কোন সাপোর্ট বেজ নেই বলে হিতাকে হেলাফেলা করা উচিত নয়। বেআইনী করন, অত্যাচার নীপিড়ন চুড়ান্ত সমাধান নয়। মিশরের ইসলামী ব্রাদারহুডকেও এক সময় নাসেরের সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, চালানো হয়েছিল গণ গ্রেফতার, আইনী বেআইনী নির্যাতন। বিতাড়িত হয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছিল সৌদী আরবে। সেই নিষিদ্ধ দলই আজ সেখানে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। আমাদের দেশের অবস্থাও এক সময় এমন হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দেশে নানান পর্বতসম সমস্যা সব সময়ই থাকবে, আরো ক্ষমতায় যারা যায় সে সব দলই অসত, দূর্নীতিবাজ। কাজেই লোকে এক সময় বিকল্প খুঁজবেই, সেই বিকল্প হবে ইসলামী শাসন; কারন বাল্যকাল থেকে ধর্মশিক্ষার গুনে লোকে জানে যে এই শাসনই শ্রেষ্ঠ ব্যাবস্থা, এটা কায়েম করা যায়নি বলেই এতদিন এত দূর্ভোগ আর অনাচার। আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধান যে অতি জটিল বিষয় তা কে কাকে বোঝাবে। মিশরে ব্রাদারহুডের মুল্যায়নে আরো অনেক অপেক্ষা করতে হবে, তবে ইতোমধ্যেই সেখানে নানান কারনে জনতা তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।

গভীর ইসলামী জ্ঞানে পরিপূর্ন কেউ আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি তো দূরের কথা, বিএনপির আধা ধর্মীয় আধা সেক্যুলার রাজনীতিরও সমর্থক হবার সম্ভাবনাও কম। মন্দের ভাল হিশেবে বিএনপিকে এরা হয়ত বেছে নেবে। দেশে এন্টি-আওয়ামী ধারার ভোট ব্যাংক থাকার কারন এখানেই নিহিত। যদিও এই ধারার লোকেরা অনেকে সরাসরি এই কারন বলেন না, ’৭১ পরবর্তি আওয়ামী নানান অপশাসনের নজির তুলে ধরেন। ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা প্রকৃতপক্ষে দেশে মুক্তিযুদ্ধের আবেশ কেটে যাবার পর অপসারিত হতে খুব বেশীদিন লাগেনি। মুক্তিযুদ্ধের আবেশ কাটার পর অনেকের মাঝেই ধর্মনিরপেক্ষ নীতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এসেছে স্বাভাবিক ভাবেই, এমনকি এদের মাঝে অনেক মুক্তিযোদ্ধাও আছেন যারা ’৭২ সালের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মানতে পারেননি ধর্মীয় আদর্শগত কারনেই। মরহুম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল, হামিদউল্লাহ, কাদের সিদ্দিকীর পরিবর্তিত রাজনৈতিক দর্শন পর্যালোচনা করলে এ দলের মনোভাব অনেকটা বোঝা যায়। এই দলের অনেকেই ধর্মভিত্তিক ব্যাবস্থা কায়েমের স্বার্থে চিহ্নিত রাজাকারদের সাথে জোট বাঁধতেও রাজী, মেজর জলিল সাহেব করেও দেখিয়ে গেছেন। ধর্মের এমনই মহিমা। বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির বাস্তবতা নিয়ে পরে লেখার ইচ্ছে আছে, সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ধর্মীয় শিক্ষার কোন ব্যাবহারিক মূল্য নেই এটা জেনেও লাখ লাখ ছেলেপিলেকে মাদ্রাসা নামক এক অদ্ভূত শিক্ষা ব্যাবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়। কোন রাজনীতিবিদ, নীতি নির্ধারক, বড় আমলা তো দুরের কথা, এমনকি ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতারাও দেখা গেছে তাদের ছেলেপিলেকে মাদ্রাসা নয়, সাধারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পড়ান। যেমন রাজাকার মান্নান মাওলানা নিজে সেই ’৭১ সাল থেকেই ছিল মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির নেতা, কিন্তু তার তিন ছেলের কাউকে সে মাদ্রাসায় পড়ায়নি। এই লোকের প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব এক সময় ছিল দেশের অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় পত্রিকা, এমন মনে হয় কেবল আমাদের দেশেই সম্ভব।

কিন্তু এ শিক্ষা ব্যাবস্থা বন্ধ তো দুরের কথা, যুগোপযোগি করার সংস্কারের কথা বললেও সকলে তেড়ে আসেন, ইসলাম ধ্বংসের আলামত পেয়ে যান। আম জনতাও এই প্রবনতার খুব বাইরে তা নয়। কারন এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ে সমাজের নিম্নে আয়ের কিংবা যাদের কোন গতি নেই তারা, এদের কথা কে চিন্তা করবে? এরা মাদ্রাসায় পড়ে মোল্লা হয়ে মসজিদে আজান দেবে, মিলাদ পড়াতে আসলে দুই বাক্স মিষ্টি বেশী দিয়ে বলা হবে আলেমের সম্মান সকলের অগ্রে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়র বিজনেস প্রফেশনাল এদের হবার দরকার নেই, কারন এদের ভূমিকা আরো বিশিষ্ট; এরা পরকালে নিজেদের বেহেশতে যাবার সিঁড়ি হিসেবে কাজ করবে। কেবল নিজেদের ছেলেপিলেকে সেই সিঁড়ি বানানো কোনমতেই যাবে না। ধর্ম নিয়ে দ্বি-চারিতার আরেক উদাহরন এটা। এর মধ্যে সম্ভবত কায়েমি স্বার্থেরও ব্যাপার আছে। এমনিতেই দেশে প্রতিযোগীতা তীব্র, তার ওপর মাদ্রাসায় পড়া লাখ লাখ ছেলেপিলেও যুক্ত হলে কেমন হবে? এর চাইতে এদের পরকালের পাথেয় হিসেবে বুঝ দেওয়াই উত্তম। তারাও খুশী আল্লাহর পথে শিক্ষা লাভ করে, আম জনতাও খুশী নিজেদের ছেলেমেয়েকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়র ইত্যাদী প্রফেশনাল বানাবার রাস্তা ফাঁকা করে একই সাথে এতিম দরিদ্রদের আলেম মোল্লার বানিয়ে পরকালের সিঁড়ি হিসেবে ব্যাবহার করে। এক ঢিলে একেবারে তিন পাখি।

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, “মাদ্রাসা শিক্ষিতরাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বিরোধীতা করেছে,করছে এবং করবে। পাকিস্তান আদর্শের প্রতি তারা যতটা আত্মিক টান অনুভব করে, বাংলাদেশের আদর্শের প্রতি ততটা নয় [৬]।” ‘মাদ্রাসা ও মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়ে একটি সমীক্ষায় লিখেছেন আবদুল মোমেন, “জাতীয় চেতনা বিহীন এই শিক্ষা আরো ভয়াবহ বিকৃতির প্রকাশ ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়। কি ওহাবী কি সুন্নী বাংলাদেশের প্রায় সকল মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র ছিল স্বাধীনতার বিপক্ষে। এ ব্যাপারে ব্যাতিক্রম একেবারে হাতে গোনা দু’চারটি। ……মাদ্রাসার বিকাশ ও বিস্তারের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও আদর্শের বিরোধী চেতনার যেন শক্তি বৃদ্ধি ঘটেছে”। এর কারনও মোমেন ব্যাখ্যা করেছেন, “মাদ্রাসা শিক্ষিত মৌলানারা অধিকাংশ সামাজিকভাবে এমন এক রক্ষনশীলতার পক্ষালবম্বন করে থাকে যা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও নানারূপ কুপমন্ডুকতাকে প্রশ্রয় দেয়” [৬]।

মুনতাসীর মামুন কিংবা আবদুল মোমেনের মূল্যায়ন মোটেও অবাস্তব বা অসত্য কিছু নয়। এমন মনে করার কোন কারন নেই যে ’৭১ সালের পর মাদ্রাসা ওয়ালারা ভুল স্বীকার করে নিজেদের সংশোধন করেছে, কিংবা সরকার থেকে কোন ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে আশায় গুড়ে বালি। হয়েছে আরো উলটো। ধর্ম, ধর্মীয় শিক্ষা সম্পর্কে অন্ধ অবসেশনের কারনে সকলে বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাধা তো দূরের কথা উলটো বেড়ালকে পূর্ন ননীযুক্ত দুগ্ধ দ্বারা পুষ্ট করার কাজেই স্বাধীনতার পর থেকেই লিপ্ত আছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করার পুরষ্কার হিসেবেই সম্ভবত স্বাধীনতার পর মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে পাক আমলেরও তিনগুন বরাদ্দ ধার্য করেন বংগবন্ধু সরকারই। ব্যাং এর ছাতার মত বাড়তে থাকে বেসরকারী কওমী মাদ্রাসার সংখ্যাও। বর্তমানেও অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যায় সাধারন শিক্ষার থেকে বেশী।

কওমী মাদ্রাসায় ছাত্ররা কেমনতর সাম্প্রদায়িক শিক্ষা পেতে পারে তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যেতে পারে কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের মহাপরিচালক মহোদয়ের ভাষ্য ঠেকেঃ Abdul Jabbar, Director-General of the Koumi Madrasa Board, told the Banglanews24.com.bd, “As our National Anthem is written by a Hindu poet, being a citizen of a Muslim majority country we cannot allow Tagore’s song as the national anthem. [৭]” এসব লোকে দেশের লাখো ছেলেপিলেকে শিক্ষা দেবার দায়িত্বে আছেন। মুনতাসীর মামুন আবুল মোমেনদের মূল্যায়ন কোনমতেই অগ্রাহ্য করা যায় না। যে শিক্ষা দেশের পরবর্তি প্রজন্মকে সরাসরি স্বাধীনতা বিরোধী চেতনায় কুশিক্ষিত করে সে শিক্ষা সম্পর্কে দেশের সব রাজনৈতিক দল,আম জনতার সরব ও নীরব সমর্থন, সর্বাধিক অর্থ বরাদ্দ মনে হয় কেবল মাত্র এই দেশেই সম্ভব।

মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার নিয়ে বহু প্রস্তাবনা ব্রিটিশ আমল থেকেই হয়েছে, কিছু কার্যকরি সংস্কার হয়েছেও। সে সংস্কার মূলতঃ সরকারী আলীয়া মাদ্রাসার কারিকুলাম যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ধর্মীয় কিছু বিষয় ইংরেজী, গনিত, বিজ্ঞান বিষয়ক কোর্স দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়, এতে বহু মাদ্রাসা ছাত্র নিঃসন্দেহে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন জাতীয় পেশার বাইরে সাধারন শিক্ষার্থীদের মত অন্যান্য পেশায় যাবার সুযোগ পাচ্ছে (যদিও পরিসংখ্যান বলে এই হারও অতি নগন্য)। কথা হল মাদ্রাসায় যেসব ধর্মীয় বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয় সেসব কারিকুলামে ঠিক কি ধরনের মৌলিক শিক্ষা শিক্ষার্থীরা পায় সেসব মনে হয় না মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারে সেভাবে চিন্তা করা হয় বলে। নইলে মুনতাসীর মামুন কিংবা আবুল মোমেনদের কথা গুরুত্ব দেবার মত কিছু ছিল না। শুধু ইংরেজী, অংক, বিজ্ঞান যোগ করলেই শিক্ষা সংস্কার হয় না।

কওমি মাদ্রাসাগুলির ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রন না থাকার কারনে তাদের সিলেবাসে বলতে গেলে শত শত বছরেও তেমন পরিবর্তন হয়নি। সরকারী নিয়ন্ত্রন বা অর্থায়ন নেই বলে যে কেউ দেশে খেয়াল খুশীমত বিদ্যালয় খুলে যা খুশী শেখাতে পারবে এটা কিভাবে মানা যায় আমি জানি না। আমি নিজের গাঁটের পয়সায় ধমাধম ধর্ম শিক্ষালয় খুলে শেখানো শুরু করলাম ধমাধম ধর্ম বাদে সকল ধর্ম বাতিল,ধমাধমে অবিশ্বাসীরা সকলে মহাপাপী যাদের বিরুদ্ধে জেহাদ করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব এবং এসব শিক্ষার আলোকে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী চেতনা গড়ে তোলা শুরু করলাম তো আমাকে সরকার বাধা দিতে পারে না, আমার শিক্ষার যে সব অংশ এসব সাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনা গড়ে তুলে সেসব অংশ পরিমার্জনের অধিকার রাখে না? যে শিক্ষকরা প্রকাশ্যে মিডিয়ায় ‘হিন্দু’ কবির লেখা জাতীয় সংগীত অস্বীকার করতে পারেন তারা নিজেদের বিদ্যালয়ে ঠিক কি ধরনের চেতনা গড়ে তোলেন সেটা বুঝতে খুব কষ্ট হবার কথা নয়। মুনতাসীর মামুন, আবদুল মোমেনদের মূল্যায়ন তাইই প্রমান করে, অন্য আরো সূত্রও আছে।

প্রাচীনপন্থী সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ভিত্তিক শিক্ষা চর্চার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র শিক্ষকদের মাঝে স্বাধীনতা বিরোধী ধ্যান ধারনার চর্চা অত্যন্ত পরিষ্কার। আলিয়া মাদ্রাসাগুলিকে সরকারী নিয়ন্ত্রনে এনে অনেকটা বাস্তবমূখী কারিকুলাম ধার্য করা গেলেও সরকারী নিয়ন্ত্রনহীন কওমী মাদ্রাসাগুলির অবস্থা ভয়াবহ। আমি বেশী রেফারেন্স দিচ্ছি না; মাদ্রাসা, সাথে জাতীয় সংগীত জাতীয় পতাকা লিখে বাংলা বা ইংরেজীতে গুগল সার্চ দিন। দেখবেন গাদি গাদি সংবাদ সূত্র বার হচ্ছে মাদ্রাসায় বিজয় দিবস, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত অবমাননা, নিয়ে। এমনকি আদালতকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে এসব নিয়ে। আদালত, থানা পুলিশের ভয় দেখিয়ে কাউকে উদারতা, অসাম্প্রদায়িকতা বা স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করা তো যায় না, করতে হয় উপযুক্ত শিক্ষা ও মূল্যবোধ চর্চার ব্যাবস্থা করে। এটা আমরা কবে বুঝব?

মাদ্রাসা শিক্ষার আলোচনা আমার মূল বিষয় নয়। এ প্রসংগ এ কারনে এনেছি এটা ব্যাখ্যা করতে যে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মূল্যবোধ কোথা থেকে জন্ম নেয় সেটার জ্বলন্ত উদাহরন দেখাতে। কারন এসবের সূত্র নিয়ে মোটা দাগে ভুল ধারনা আছে, যার কিছু ইচ্ছেকৃত ভাবে সত্য এড়ানো আর কিছু অজ্ঞানতা বশতঃ। কিছুদিন আগে জাফর ইকবাল স্যার শিবির করা তরুনদের উদ্দেশ্যে একটি কলাম লিখে আবারো জামাত শিবির চক্রের রোষে পড়েছেন। সত্য বলতে সে কলাম পড়ে আমিও অনেকটা হতাশ হয়েছি। জাফর স্যারও মনে হয়েছে কেন ছেলেপিলে শিবির করে সে কারন হয় বোঝেন না কিংবা আরো অনেকের মত জেনেশুনে এড়াতে চান। ওনার সম্ভবত মনে হয়েছে যে শিবির করলে ভাল চাকরি বাকরি পাওয়া যায় সেটাই মূল কারন।

এটা সত্য যে শিবিরের অনেক ছেলেপিলে জামাত নিয়ন্ত্রিত অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পায়। তবে সকলের চাকরিই এভাবে হওয়া সম্ভব নয়, মূল কারন চাকরি পাওয়া নয়। হিজবুত তাহরির যারা করে তাদের চাকরি বাকরি কে বা কারা দিচ্ছে? নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তাদের উলটো সরকারী চাকরি পাওয়া অসম্ভবের মত হবে, বহু দেশে উচ্চশিক্ষার ভিসাও পাবে না। যে কারনে আধুনিক শিক্ষা দীক্ষা পেয়েও ছেলেপিলে হিতায় যোগ দেয় সেই একই কারনেই জামাত শিবিরেও লোকে যোগ দেয়। টাকা পয়সা, ক্ষমতা, চাকরি বাকরি সেকেন্ডারি। এরা সকলেই খিলাফত ভিত্তিক আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখে, জামাত শিবির বেশী ধুরন্ধর বলে এখনো অনেকটা আপোষের নীতিতে আছে, হিতার ধৈর্য্য অতটা নেই। যেসব মুসলমান প্রধান দেশে প্রকাশ্য রাজনীতি আছে সেসব বেশীরভাগ দেশেই এই জাতীয় ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী দল আছে। মিশরের ব্রাদারহুড আর আমাদের জামাত শিবিরের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক আদর্শগত মিল স্যার জানেন না? ব্রাদারহুডের প্রাক্তন নেতারা এখন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধপরাধী বিচার নিয়ে নানান কুতসা ছড়াচ্ছে। ব্রাদারহুড আজ ক্ষমতায় বসেছে টাকা পয়সা চাকরি বাকরি বিলিয়ে? এসবের দলের সব সদস্য চাকরি বাকরি, টাকা পয়সা পাবার কারনে এসব দলে যোগ দেয় নাকি আদর্শগত কারনে যোগ দেয় এ নিয়ে কোন সংশয় থাকা উচিত?

মাদ্রাসাগুলিতে সাম্প্রদায়িক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনা কি টাকা পয়সা, চাকরির লোভ দেখিয়ে বিকশিত করা হয়? ধর্মীয় শিক্ষার সাথে রাজাকারি আদর্শের যোগ না থাকলে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মধ্যে ’৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত রাজাকারি আদর্শের চর্চা ও বিকাশ কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? The fundamentalist policies of Jamayate Islami were gradually spread throughout rural Bangladesh through the activities of its student wing (Bangladesh Islami Chhatra Shibir), Madrasah students and the maulanas [৮] এমনকি আলিয়া মাদ্রাসাগুলি, যেগুলি সরকার নিয়ন্ত্রিত সেগুলিতেও কেন একচেটিয়া শিবিরের রাজত্ব? আত্মপ্রতারনা আর কতদিন? ইসলামের সাথে রাজাকারি বা সাম্প্রদায়িক চেতনার কথা শুনলে কট্টর ধার্মিকরা তো বটেই, এমনকি অনেক মডারেট ধার্মিকও খেপে ওঠেন। কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব দেন না যে কেন ইসলামী লাইনে পড়াশুনা করা মাদ্রাসা ছাত্র/শিক্ষক, আলেম সমাজের মাঝে রাজাকারি দল বা দর্শন এত জনপ্রিয়। ব্লগে যারা ছাগু নামে পরিচিত তাদের সাথে ধর্মীয় জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় জাফর ইকবাল স্যার, অমি পিয়াল ভাই কিংবা মডারেট ধার্মিকরা পারবেন? যাইই মনে করুন, লোকে ধর্মচর্চার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেম মোল্লার কাছেই যাবে, আপনাদের কাছে নয়; সেসব আলেম মোল্লাও জামাতিদেরই আপন মনে করবে। আজ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে মসজিদ মাদ্রাসা থেকে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীতে ক’টা মিছিল বার হয়েছে? তারা কি মিছিল মিটিং পছন্দ করেন না? কটা বিবৃতি ওনারা এ বিষয়ে দিয়েছেন?

শুরুতেই বলেছিলাম যে বর্তমানে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত আল্ট্রা মডার্ন তরুন প্রজন্মের কাছে হিতা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে শিবিরের থেকে বেশী। এর একটি কারন অবশ্যই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতির বিধিনিষেধ। তবে অপর সম্ভবত জামাত শিবিরের ’৭১ সালের ভূমিকা। এর কিছুটা কৃতিত্ব অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিও দাবী করতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বলতে একচেটিয়া তারা জামাত শিবিরকে লেবেল করেন, আসল সূত্র কোথায় সেটা কেউ কৌশলে বা কেউ অজ্ঞানতাশত এড়িয়ে যান। যুদ্ধপরাধের ইতিহাস বর্ননার সাথে এটাও প্রয়োযন তাদের রাজনৈতিক ধারা কেন ক্ষতিকর সেটা ব্যাখ্যা করা। যুদ্ধপরাধীদের দল থেকে খেদিয়ে দিলে জামাত শিবিরে আর সমস্যা থাকবে না? এর ফলাফল হল স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক চক্র সাইনবোর্ড বদল করছে, হিতার উত্থান এটাই প্রমান করে। তরুন প্রজন্মের ছেলেপিলে ইসলাম কায়েম হোক এ শিক্ষা পায়, আবার জামাতিদের বিশ্বাস করে না ’৭১ এর ভূমিকার কারনে। হিতার নেতা পাতি নেতাদের মাঝে চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীরা নেই, প্রচারনার লিফলেটেও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন কথা নেই। এ অবস্থায় হিতা তরুন প্রজন্মের কাছে আদর্শ ইসলামী দল হিসেবে স্থান পেয়ে যাচ্ছে। সেই ইসলামী সমাজ কায়েমের নামে এরা নিষিদ্ধ দলে যোগ দিতেও দ্বিধা করছে না। হিতার রাজনৈতিক আদর্শ বর্তমান জামাতের থেকেও বেশী উগ্র।

হিতার সদস্য সংখ্যা এখনো কম কিংবা সংসদে জামাতিদের আসন কম বলেও উল্লসিত হবার কোন কারন নেই। জামাত হিতা জাতীয় দলের মূল সদস্যের চেয়ে এদের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক বেশী থাকে। এই কথাটা আমি স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পর্কেও সবসময়ই বলি। এই তথ্য সেই গবেষনাপত্রেও [৫] আছে। বাস্তব উদাহরন আমাদের আশে পাশের ব্লগেই আছে। এইসব দলের মূল শক্তি এখানেই, এদের এক সারপ্রাইজ সাপোর্ট বেজ থাকে।

এটা বুঝতে পারি যে ফেসবুকে শিবিরের ছেলেপিলে বেজায় উতপাত করে, তাদের মোকাবেলা করতে হবে। তাই বলে মূল সমস্যা জামাত শিবির, এদের ধরে ধরে রাস্তাঘাটে ঠ্যাংগানী দিলে কিংবা গদাম দিয়ে ফেসবুক বা ব্লগ থেকে তাড়িয়ে দিলেই মুশকিল আসান এমন ধারনা অত্যন্ত ভ্রান্ত। মূল যায়গায় সরাসরি হাত না দিলে উপায় নেই। আপনি সন্তানদের ছেলেবেলা থেকে শেখাবেন ইসলামী শাসন কায়েম ছাড়া উপায় নেই, সিলেবাসে সাম্প্রদায়িক জেহাদী শিক্ষা দেবেন, এরপর বলবেন যে “ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সমস্যায় পরিণত হয়েছে” [৯]? দমন পীড়নে তারা আরো শক্তিশালী হবে, নৈতিক বল পাবে যে তারা সত্য পথে আছে বলেই ইসলাম বিরোধী শক্তি এসব দমন পীড়ন চালাচ্ছে। খেলার মাঠে পাকিস্তানের পতাকা গালে লাগিয়ে পাকিস্তানী ব্রাদারদের ‘উই আর সেম’ বলা যুবককে গালি দেবার কতটা অধিকার আমাদের থাকে যে সমাজে সকল মুসলমান ভাই ভাই শিক্ষা দেওয়া হয়? সকল মুসলমান ভাই ভাই মেনে নিলে পাকিস্তানীদের ভাই ডাক শুনলে উত্তেজিত হওয়ার মানে কি? অশ্রাব্য গালি দিয়ে কারো ভেতর থেকে ভ্রাতৃত্ববোধ দূর করা যাবে? ঊটপাখি নীতি গ্রহন করে কোন লাভ নেই। মেরুকরন তীব্র হচ্ছে, সঙ্ঘাত এক সময় হবেই, সেই সঙ্ঘাত বলপ্রয়োগে না হয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক হওয়াই মংগল। রাস্তাঘাটে লগি বৈঠা দিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মত সমাধান কোন সূস্থ সমাজের লক্ষন হতে পারে না। রোগ সারানোর চাইতে রোগের প্রতিরোধ সবসময়ই উত্তম। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির জন্ম রোখা না গেলে উপায় নেই।

হিতায় চিহ্নিত যুদ্ধপরাধীরা নেই বলে শিবিরে যোগ না দিয়ে হিতায় যোগ দিলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমস্যা হচ্ছে না বা হবে না? একচেটিয়া জামাত শিবিরই একমাত্র স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি এমন প্রচারনার ব্যাপারে আরেকটু ভাবার অনুরোধ করি। আজকের চিহ্নিত যুদ্ধপরাধীরা বিচারে হোক আর স্বাভাবিকভাবেই হোক এক সময় ধরাধম ত্যাগ করবে। এরপর জামাত যুদ্ধপরাধীদের দল সে যুক্তিও অনেকটাই ফিকে হয়ে আসবে। আজকের দিনেই চোখের সামনেই এসব নৃশংস অপরাধীরা হাজির থাকতেও জামাত শিবিরের সমর্থকরা জাফর ইকবাল স্যারের লেখা পাত্তাও দেবে না। মরে ভুত হওয়া নেতারা ৫০ বছর আগে কে কি করেছে তাও আবার আদালতেও হয়ত যা প্রমান করা যায়নি সে ইতিহাস প্রবল ধর্মপ্রেমের কাছে একেবারেই ফিকে হয়ে যাবে। বাস্তব জীবনে তো বটেই, আশেপাশের সাইটেই দেখা যায় প্রবল রাজাকারি আদর্শের লোকজনকে বড় আলেম বলে ধর্মপ্রিয় লোকেরা কিরকম সম্মান করেন। জাফর ইকবাল স্যারের মত আবেগী কলামে এমন আলেম ভক্তি দূর হবে, সেই প্রিয় আলেমকে ব্লগাররা বলবে যে তুই রাজাকার দূর হ? হিতা, শিবিরের রাজাকারি আদর্শ, সাম্প্রদায়িক চেতনা এসবই আছে ধর্মীয় সূত্রের ব্যাখ্যা করে রাজনীতি ও দৈনন্দিন জীবন যাপনে প্রয়োগের মারাত্মক প্রবনতার ভেতর। এর বিরুদ্ধে সরাসরি কথা না বললে, চ্যালেঞ্জ না জানালে কেবল লগি বৈঠা আর গদামের ভরসায় থাকার উপায় নেই। সঙ্ঘাতের পথ কেবল চাপাতির কোপে বিশ্বজিতের মত নিরীহ প্রান ঝরানো কিংবা বড়জোর লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে জনাকয়েক শিবির কর্মী কমাতে পারে।

সূত্রঃ

১। উগ্র মৌলবাদীদের আস্তানা হয়েছে নর্থ সাউথঃ পাঠচক্রের আড়ালে শিবির ও হিযবুতের বৈঠক
২। জঙ্গী সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক
৩। সেনাবাহিনীতে হিযবুত প্রভাব
৪। হিযবুত তাহরির
৫। Religion, Politics, and the Modern University in Pakistan and Bangladesh; Matthew J. Nelson – The National Bureau of Asian Research, NBR PROJECT REPORT, April 2009
৬। শান্তি কমিটি ১৯৭১ – মুনতাসীর মামুন, মাওলা ব্রাদার্স ।
৭। Taboo on national anthem in Koumi Madrasas continue
৮। MADRASAH EDUCATION AN OBSERVATION- Muzib Mehdy; Editor Rokeya Kabir Bangladesh Nari Progati Sangha, ( page-69)
৯। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সমস্যায় পরিণত হয়েছে