শান্ত হয়ে বসুন, একটু দম নিন।

আমি জানি আপনি বাংলাদেশী হিসেবে জন্মে খুব গর্ব বোধ করেন। কারন আপনার পূর্ব পুরুষেরা পাক হানাদারদের মত হিংস্র পশুর কাছে থেকে ছিনিয়ে এনেছে এই দেশটির স্বাধীনতা। একাত্তরের কথা চিন্তা করলেই গর্বে আপনার বুক কয়েক ইঞ্চি ফুলে ওঠে। আপনাদের সরকারী বেসরকারী সব টিভিতেই ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় সমর্থক রাজাকার-আলবদরদের কুকর্ম নিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হয়। আপনার মনে হতেই পারে রাজাকার-আলবদরেরা বিলুপ্ত হয়েছে দেশ থেকে।
কিন্তু আসল সত্যটা কি জানেন?

না, তারা উবে যায়নি। বরং তারা আবার তৈরি হচ্ছে পুরো দেশের মানুষকে জিম্মি করার জন্য। তারা হল জামাত-শিবির।

প্রতি বছর ডিসেম্বর আর মার্চ আসলেই যেমন আমরা সবাই দেশ প্রেমী হয়ে উঠি, জামাত শিবির কিন্তু তা নয়। তারা সারা বছরই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ১৯৭১ সালে তাদের দুষ্কর্মের ফল ভোগ করার হাত থেকে বাঁচতে।

আমাদের সরকার খুবই বোকা। প্রতিবার যে ক্ষমতায় যায়, বিটিভিকে নিজের দখলে নিয়ে নিজের প্রচারণার কাজে লাগায়। বর্তমান আওয়ামিলীগ সরকারও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আসল সত্য হল অন্য বাংলা চ্যানেল দেখার সুযোগ থাকলে পারত পক্ষে বাংলাদেশের কোন মানুষই বিটিভি দেখেনা। বিদেশীদের দেখার প্রশ্নই ওঠে না। বিদেশিরা যেসব মিডিয়ার খবর দেখে, সেসবে গিয়ে প্রচার চালায় জামাত-শিবিরের বেতন ভুক্ত কর্মীরা। তারা মোটামুটি বিশ্ববাসীকে জানিয়ে ফেলেছে যে তারা রীতিমত দরবেশ প্রকৃতির মানুষ, এবং বাংলাদেশে আওয়ামিলীগ তাদের নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে।

সত্যই কি তাই? সত্যই কি ৭১-রে কোন গণহত্যা ঘটেনি? কেউ পাকিস্থানীদের দালালী করেনি?

এটাই যদি ভেবে থাকেন, তবে আপনি ১৯৭১-রে পাকি ক্যাম্পে শতবার ধর্ষিত আপনার মা কিংবা বোনের সাথে প্রতারণা করছেন। আপনি প্রতারণা করছেন বুকের সব রক্ত হারিয়ে অবসন্ন হাতে শত্রুর দিকে বন্দুক তাক করে থাকা মুক্তিযোদ্ধা বাবার সাথে।

এত কিছুর পরেও এই দেশেরই অসংখ্য মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই বলে গলা ফাটিয়েছে। এই মানুষদের সংখ্যা দেশে এতটাই বেশি ছিল যে তাদের সমর্থন দিয়ে আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় বসেছে। এখন সারা দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে কবে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় হবে, সেই আশায়। সেই চাপেই আওয়ামিলীগকে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অভিযুক্তদের বিচার শুরু করতে হয়েছে।

দেশের বাইরে কিন্তু জামাত-শিবিরের প্রচারণা এক বিন্দুও কমেনি। তারা লক্ষ লক্ষ পাউন্ড খরচ করে ব্রিটিশ আইনজিবি নিয়োগ করেছে। হাজার হাজার ডলার নিয়ে মার্কিন লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। শত শত বেতনভুক্ত ব্লগার তৈরি করেছে বিভিন্ন ব্লগে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য। প্রায় সবগুলো নামকরা বিদেশি পত্রিকার ব্লগে তারা তাদের মনের মাধূরী মিশেয়ে যা খুশি লিখে চলেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে ট্রাইব্যুনাল বিরোধী কথা বলছে। এরাই আবার ফেসবুকে চটকদার পেজ খুলে বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। সব কিছুর উদ্দেশ্য একটাই। আর তা হল প্রকৃত অপরাধীদের বিচার বন্ধ করা।

তাদের সর্বশেষ কর্মকান্ড হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ আদালত “ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল” এর একজন বিচারপতির সাথে আর এক জন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞের স্কাইপে কথোপোকথন এবং ইমেইল হ্যাক করে “দ্য ইকোনোমিস্ট” পত্রিকার হাতে তুলে দেয়া। ইকোনোমিস্ট এখনো সেটা প্রকাশ না করলেও বাংলাদেশের একটি পত্রিকা “আমারদেশ” সেই কথোপোকথনের একাংশ তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করেছে।

কথোপোকথনে অস্বাভাবিক তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। সেখানে বিচারপতি বলেছেন সরকার চাইছে ডিসেম্বরের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে রায় দিয়ে দিতে। তাতে বিচারপতি না করেছেন। অর্থাৎ বিচার তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। পুরো ব্যপারটা হল আসলে চমক লাগানো এবং ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে মানুষের মনকে বিষিয়ে তোলার একটা প্রক্রিয়া। কথায় বলে একটা মিথ্যাকে ১০০ বার বললে তা সত্য হয়ে যায়। তারা সেটাই করছে। এমনকি জামাত-শিবিরের কিছু ফেসবুক পেজ থেকে আরো অনেক অপ্রাসঙ্গিক ঘটনার সাথে এই ঘটনাকে মিলিয়ে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।

আমরা এই দরিদ্র বাংলাদেশের মানুষ। অপরাধ সংঘটনের ৪১ বছর পরে তার বিচার শুরু করতে যাচ্ছি। এটা খুব সহজ একটা ব্যাপার নয়। তেমন কোন সুযোগ সুবিধা-ই এই ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের দেয়া হয়নি। এমনকি এই বিচারক পয়সা বাঁচাবার জন্য স্কাইপে বিনে পয়সায় কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের সাথে। এই ধরনের বিচার এই দেশে আগে হয়নি। তাই তিনি বিশেষজ্ঞ কারো সাথে আলোচনা করতেই পারেন। এতে দোষের কি আছে?

এখন বোঝা যাচ্ছে যে ঠিক কি কারনে এই যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে আসা মানুষেরা ভয় পেত। প্রতিটি পদক্ষেপে জামাতি-শিবির আঁড়ি পেতে রেখেছে। আমাদের অদক্ষ সরকার এসব সামাল দিয়ে উঠতে পারছে না।

এত কিছুর পরেও আপনাকে কিন্তু এই ঘৃণ্য পশু জামাত-শিবিরই ব্যবহার করে চলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে হাদিস লিখে, পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে ভূল ভাবে ব্যাখ্যা করে, চটকদার পোস্টার বানিয়ে তারা আপনাকে বোঝাতে চাইছে যে পুরো বিচারটা আসলে ভূয়া। আপনি এই সবের প্রকৃত ঘটনা না জেনেই সেটাকে সত্য হিসেবে ধরে নিচ্ছেন। ফেসবুকে এই সব ছবিতে লাইক দিচ্ছেন, কমেন্ট করছেন। একবারও ভেবে দেখছেন না, তারা কিভাবে আপনাকে ব্যবহার করছে।

দয়া করে নিজেকে এই পশুদের ক্রীড়নক হতে দেবেন না। এবারে যদি এই শয়তানদের বিচার না হয়, তবে আর কখনোই হবে না। সারা বিশ্বে আমরা সেরা বেঈমান জাতি হিসেবে পরিচিত হব। তখন আপনি আপনার সন্তানকে মুখ দেখাবেন কি করে? যে তার নিজের পূর্বপুরুষ হত্যার বিচার করতে পারেনা, তার সন্তানের চোখে সে মেরুদন্ডহীন কেঁচো হিসেবেই ধরা দেবে? মানুষ হিসেবে নয়!

আসুন, হাতে হাত এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যাবতীয় প্রপাগান্ডা প্রতিরোধ করি। প্রতিটি ইংরেজী নামকরা পত্রিকার ব্লগে একাউন্ট খুলে ১৯৭১ এর প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরি। সেসব জায়গায় জামাত-শিবিরের বিভ্রান্তিকর লেখাগুলো ডিফেন্ড করি। বিশ্ববাসীর কাছে তাদের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরি। এই মুহূর্তে আপনার নীরবতা শত্রুর পক্ষেই যাবে।

অবশ্যই আমরা এই যুদ্ধে জয়ী হব, যেমনটা হয়েছিলাম ১৯৭১-রে।