চলে আমার হাওয়ার গাড়ি উইড়া রে….. উইড়া
ধিনাক ধিনাক ধিন তা
মুখে তবলার বোল তুলতে তুলতে কিছুটা বিরক্ত হলেন তিনি, অতিরিক্ত দুই মাত্রার আওয়াজ কে তোলে রে! আসে পাশে কেউ তো নাই, ভরপেট নাশতা করে দু’ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে কাজে যাচ্ছেন আজ অনেক দিন, সকালের এই সময়ের একাকিত্ত কাজের অলিখিত পূর্বশর্ত ছিল আর এমনটাই হয়ে আসছিল এতগুলো দিন। গায়েবি কিছুতে অবিশ্বাসী তাহার অন্তরাত্তা কাঁপিয়া উঠিল যখন সাইকেলের পিছনের চাকা বিনা নোটিসে এমন করিয়া লাফাইতে লাগিলো যেন তাহাতে প্রাণ ফুৎকার করা হইয়াছে। তিন বছর বয়স হইতে সাইকেলে ঘুরে বেরানো তিনি তাহার পূর্ন চেতনার অধীকারের আসনে বসিয়া অসম্ভবকে সম্ভব করিলেন, নদীতে না গিয়া অর্ধাংশ সদ্য ঘোড়া উপাধি পাওয়া যন্ত্রটি তাহার বাম পাকে ভালবাসার বন্ধনে বাধিয়া তাহাকে নিয়া রাস্তায় যাত্রা বিরতি করিল। শিশির ভেজা মেঠো পথ রক্তে ভিজে একাকার। পায়ের গোড়ালি হইতে ছিড়ে যাওয়া সাইকেলের চেইন কর্তৃক উৎপাদিত ১০ ইঞ্চি লম্বা এবং ২ ইঞ্চি গভীর ক্ষত পরীক্ষা করিতে করিতে মঞ্চের পর্দা নামিল।
পঞ্চাশের দশকের রাজশাহীর কোন এক গ্রাম।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দিশেহারা তার মাথায় ঘুরছে কিছুক্ষন আগে ঘুরে যাওয়া ডাক্তারদের কথা, “ঘাঁ ছড়িয়ে পরছে, অ্যাম্পিউট করতে হবে।” যন্ত্রনায় কাতর তিনি পরিবারের সবাইকে বিদায় করে একা একা কি করা যায় ভাবছিলেন। এমন সময় উপস্থিত তিনি কর্তৃক একদা গ্রেফতারকৃত এবং উপহারস্বরুপ পিটুনি খাওয়া এক লোক। “স্যার, ওই ব্যাডাগো কতা না শুনি আমার সাথে চলেন, সুস্থ কইরে ছাইরে দিব আপনারে……

ঘন্টাখানেক পরে সারা ঊত্তরবঙ্গে তোলপাড় শুরু, সরকারি হাসপাতাল থেকে দিনে দুপুরে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর অত্যন্ত মেধাবি একজন কর্মকর্তা চিকিৎকসাধীন অবস্থায় উধাও!!!
পদমর্যাদায় তার উপর, তার উপর এবং তারও উপরের পদের কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ব্যাক্তিগতভাবে অনুসন্ধান চালিয়েও তাঁর কোন হদিস বের করতে না পেরে প্রথমত বিব্রত, তারপর রাগান্বিত এবং সবশেষে হতভম্ব হয়ে পড়ে রইলেন, তাহার কোনো খবর নাই। নাই মানে নাই…

দিন পনের পরে হঠাৎ ওয়ার্ড বয়ের চিৎকার, “স্যার, স্যার আসছে; স্যার, স্যার আসছে।”
গত পনের দিনের ফলহীন অমানুষিক অনুসন্ধানের অবসাদ সবাই মিটালেন চিৎকার করে “আপনি কি মনে করেছেন নিজেকে! এইভাবে উধাও? কি মুল্য আছে আপনার ওই মেধার যা এতগুলো মানুষকে পেরেশানির চরম সীমানায় রেখে? জবাব দিন?”

নাটকীয় ভঙ্গিতে গায়ের চাদর সরাইয়া বিছানা হইতে নামিয়া সে সময়ে উপস্থিত সর্বোচ্চ পদমর্যাদার(ডাক্তার) ব্যক্তির মুখোমুখি দাড়ায়ে সবার অবিশ্বাসী দৃষ্টি উপভোগ করিতে করিতে দুর হইতে ভাসিয়া আসিতে লাগিলো অগ্নিবাণী, “আপনারা কলা শিখেছেন পড়াশুনা করে, এই দেখুন আমার পা যেটা সেদিন কেটে ফেলার জন্য ছুরি ধাঁর করছিলেন। সামান্য ঘাঁ সারাতে পারেন না আপনারা আবার বড় বড় কথা! এই ব্যাটা অশিক্ষিত চোর আমার চিকিৎসা করেছে!”

—- “না! আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টায় বিফল হয়েই পা কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, নাহলে যেভাবে ঘাঁ ছড়াচ্ছিল তাতে আপনাকে বাচানো মুসকিল হয়ে যেত।”

**** “তাহলে আমার পা ঠিক হল কি করে?”
বিব্রত সকল ডাক্তার চুপ এবং চুপ।
“কি পারলেন না বলতে? যে চুন দিয়ে পান খেয়ে আজ আমার মুখ লাল, সেই চুন হচ্ছে আমার অসুধ। বুঝেননি এখনো? It is (CaO) mixed with (H2O) that was used as a paste in the affected area that resolved the germ completely.

সব বড় ডাক্তাররা এমনকি সিভিল সার্জেন পর্যন্ত রাজ্যের বই নিয়ে ছুটোছূটি, নাহ, এমন কিছুতো নাই তাতে! সব কিছু যদি বইয়েই থাকতো তবে মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতার মানেটা কি?
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই কাহিনীর নায়ক অত্যন্ত সফলতা এবং দক্ষতার সাথে ত্ৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং তারপর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিবিধ গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে যেমন উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারী কর্মকর্তা ছিলেন, আছে, তেমনি আছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু শিল্পপতি। সেদিন ডাক্তারদের কথামত পা কেটে ফেললে কি হত একবার ভেবে দেখবেন কি?

অর্ধশতক পরে আলী হোসেন ঢাকা থেকে একটা মৃতদেহ নিয়ে ময়মনসিংহ যাচ্ছে…
“শালা খা**র পো*রা আর কাম পায়না, টেকা দিবোনা হাফ আর আমারে দিয়া মরা টানাইতাছে। মা*রে *দি আমি এই কামের।”

ঘন্টা দুয়েক পরে উল্লাসে ফেটে পড়া একদল শিক্ষার্থির রং খেলার মাঝে পরে রংধনুর সাত রঙ্গে মাখামাখি হইয়ে অন্তত ১ কেজি মিষ্টি খাওয়ার পর হতভম্ব আলী হোসেন জানতে পারলেন মূল ঘটনা। পোনে তিন বছর ক্লাশ করার পর এই প্রথম আজ তারা ব্যাবহারিক ক্লাস পাবে! সেকি আনন্দ!!! আম্বুলেন্স ভাড়া অর্ধেক পাবার পরও তার মনে সেদিন কোনো ক্ষোভ ছিলনা। বরং ছোট ছোট ছেলেমেয়েরগুলোর প্রতি শিক্ষা ব্যবস্থার এই করুন অবস্থার কথা ভেবে। দিনের শেষে এরা কি সেই কলা জানা ডাক্তারগুলোর থেকে আহামরি ভাল কিছু হবে??

লেখাটি তাদের জন্য যারা যে জিনিশ পড়ার যোগ্যতা নাই, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ফাকে শুধু নাম্বার আর মিথ্যা বলার অসীম মূল্যবান ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত বেহায়াপানার অধিকারী হয়ে এমন সকল কাজে সুযোগ পেয়ে রাস্তায় বুক এবং পাছা ফুলিয়ে হাটে যে সকল কাজের জন্য তাদের থেকে অনেক অনেক বেশি যোগ্য এবং সে বিষয়ে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত এবং সর্বোপরি সৎ মানুষগুলো শুধুমাত্র কম নাম্বার এবং লোক দেখানো বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা করেনি বিধায় আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

দয়াল তোমরা কলা খাবা গাছ লাগায়া খাও
কেন পরের গাছের কলা ধরে মাতবারি দেখাও

চুন