১. স্বপ্রতিজ্ঞ সামুরাই

১৭০১ সাল। জাপান।

টোকিও ভ্রমণের সময় (তখন এর নাম ছিল এডো), অভিজাত বংশীয় লোক আসানো নাগানরি অন্য আরেকজন অভিজাত বংশীয় লোক কিরা ইয়োশিনাকার সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। এই বিবাদের কারণে শাসক গোষ্ঠী নাগানরিকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং সেপুকু (পেটে ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা) করার আদেশ দেয়। পরের দিন নাগানরি তা করতে বাধ্য হন।

জাপানের এই এডো যুগে সামুরাইরা ধণাঢ্য এবং অভিজাত বংশীয় ব্যক্তিদের সামরিক পরামর্শক, ব্যক্তিগত রক্ষী হিসাবে কাজ করতো। এই সামুরাইদের তাদের প্রভুর প্রতি আনুগত্যের একটা শপথ নিতে হতো। কোনো কারণে কেউ যদি প্রভুকে হত্যা করে, তবে সামুরাইরা প্রভু হত্যার প্রতিশোধ নেবে, এই ছিল শপথের বিষয়।

আসানো নাগানরির এরকম সাতচল্লিশজন সামুরাই ছিল। এরাও আনুগত্যের সেই শপথ নিয়েছিল। প্রভু মারা যাবার পরে এরা তখন রনিন। প্রভুহীন সামুরাইদের রনিন ডাকা হতো। এই সাতচল্লিশজন রনিন প্রভু হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্য পরিকল্পনা শুরু করে। খুব নীরবে, নিভৃতে, সন্তর্পনে, বুকের মধ্যে প্রতিশোধের তুষের আগুন ধামাচাপা দিয়ে।

দীর্ঘ দু’বছর অপেক্ষার পর এক অসতর্ক দিনে তারা সশস্ত্র হামলা চালায় ইয়োশিনাকার বাড়িতে। ইয়োশিনাকাকে আটকে ফেলে তারা। তাকে জানায় যে, প্রভু হত্যার বদলা নিতেই এখানে এসেছে তারা। তাদের প্রভুর মতই ইয়োশিকাকে এখন সেপুকু করতে হবে। কাপুরুষ ইয়োশিকা সেপুকু করতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন রনিনরা ইয়োশিকার কল্লা কেটে নেয় তরবারির এক আঘাতে। তারপর তার কর্তিত মস্তক নিয়ে যায় নাগারনির কবরের কাছে। তার সমাধিতে ইয়োশিকার মুণ্ডু স্থাপন করে তারা মৃত প্রভুকে জানায় যে, আনুগত্যের যে পবিত্র শপথ তারা নিয়েছিল, সেই শপথকে রক্ষা করেছে তারা।

এরপর সাতচল্লিশজন রনিনই কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিচার হয় তাদের। বিচারকের রায়ে এদেরকে সেপুকু করতে বলা হয়। সাতচল্লিশজননের মধ্যে ছেচল্লিশজন রনিনই বিনা প্রতিবাদে মাথা উঁচু করে আত্মহত্যা করে। বাকি একজনের খবর জানা যায় না। হয়তো এর মধ্যেই মারা গিয়েছিল, কিংবা বিচারে মুক্তি পেয়েছিল সেই সামুরাই।

২. ললিতাদিত্যের লজ্জ্বা

অষ্টম শতাব্দী। গৌড় এবং কাশ্মীর।

গৌড়ের তখন ঘোর দুর্দিন। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর একশ বছর কেটে গেছে। শশাঙ্কের সময়ে কর্ণসুবর্ণকে কেন্দ্র করে গৌড় তথা বাংলার যে জয়জয়কার উঠেছিল, গড়ে উঠেছিল সুবিশাল সাম্রাজ্য, তা নিঃশেষিত প্রায়। যে যে ভাবে পারে লুটেপুটে, আক্রমণ চালিয়ে বাংলার সেই শৌর্যবীর্যময় সময়কে ধূলায় মিটিয়ে দিচ্ছে। চারিদিকের আক্রমণে দিশেহারা বাংলা।

এই সময়ে কাশ্মীরে রাজত্ব করছিলেন ললিতাদিত্য মুক্তাপীড় নামের একজন প্রবল রাজা। শুধু গৌড়েই নয়, সমগ্র উত্তর ভারতেও তখন এক অরাজক পরিস্থিতি। অসংখ্য খণ্ড-বিখণ্ডে বিভক্ত দেশ। নবধর্মে বলিয়ান আরবরা প্রায়শই হামলা চালাচ্ছে ভারতের উত্তর অংশে। তাদের নজর পুরো ভারতবর্ষের দিকে। মূলত আরব আক্রমণ রোখার জন্যই শক্তি সঞ্চয় করা শুরু করেন ললিতাদিত্য। পরে এই শক্তি নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন রাজ্য বিস্তারে। শুধু উত্তর অংশেই নয়, তাঁর নজর পড়ে পূর্বদিকেও। ভারতের বিচ্ছিন্ন রাজ্যগুলিকে নিজ ছত্রতলে সংঘবদ্ধ করার জন্য সৈন্যবাহিনীকে অগ্রসর হবার আদেশ দিলেন তিনি।

ওই সময় কান্যকুজ্বের রাজা ছিলেন যশোবর্ম্মা। বিখ্যাত বীর ছিলেন তিনি। কিন্তু ললিতাদিত্যের সমকক্ষ ছিলেন না। তাঁর দুর্বলতা ছিল তাঁর কামিনীকাতর দুর্বল হৃদয়। আমাদের এরশাদ সাহেবের মত রূপসী ললনাদের রূপসৌন্দর্যের প্রতি লালায়িত ছিলেন তিনি। কনৌজ প্রাসাদের মধ্যে তিনি রূপের মেলা বসিয়েছেন। সেই রূপসীদের অঙ্গরাগের ব্যবস্থা দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেয়। যশোবর্মা তাদের সঙ্গে জলক্রীড়া করেন; তাপদগ্ধ দেহ শীতল করবার জন্য তাদের নিয়ে গ্রীষ্মাবাসে যান। শুধু কি তাই? রাজসভায়ও তাঁর নারী চাই। সভাসদ্গণসহ রাজকার্য্য পরিচালনা করবার সময়ে বন্দিনী গৌড় রাজবালাগণ তাঁর বরবপুতে চামর ব্যঞ্জন করে। (গৌড়বাহো, শ্লোক ৭৩৮-৯৬)

কাজেই ললিতাদিত্য যখন তাঁর প্রবল পার্বত্য বাহিনী নিয়ে কান্যকুজ্ব আক্রমণ করলেন, সেই আক্রমণকে রুখে দাঁড়ানোর মত হিম্মত যে এরকম একজন রমণীখেলুড়ে বীরের থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। দুর্ধর্ষ পার্বত্য সেনাদলের মোকাবেলায় সমতলবাসী কনৌজিয়ারা অসমর্থ হয়ে পড়ে। যশোবর্ম্মা পরাজিত ও বিতাড়িত হলেন।

কনৌজ জয় করে ললিতাদিত্যের বাহিনী জয় করে নেয় কলিঙ্গ। তারপর ছুটে আসে গৌড়ের সীমানায়। ওই সময় গৌড়ের রাজা ছিলেন গোসাল নামের একজন। নানাবিধ আক্রমণে এমনিতেই পর্যুদস্ত তিনি। ললিতাদিত্যের বাহিনীর এই কঠিন আক্রমণ সামলানোর ক্ষমতা তাঁর ছিল না। একজন দুর্বল রাজার যা করণীয়, ঠিক তাই করেন তিনি। একপাল হস্তি ললিতাদিত্যের জন্য উপঢৌকন হিসাবে পাঠিয়ে সন্ধির প্রস্তাব পাঠান তিনি। ললিতাদিত্য এই সন্ধির প্রস্তাব মেনে নেন। গৌড়ের সীমানা থেকে ফিরে যান তিনি।

এর কিছুদিন পরেই গৌড়ের রাজা গোসালকে কাশ্মীরে ডেকে পাঠান তিনি। কাশ্মীরে যাবার বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিলেন গোসাল। কিন্তু ললিতাদিত্য ভগবান পরিহাস-কেশব বিগ্রহের নামে শপথ করে বলেন যে, গৌড়ের রাজা তাঁর অতিথি। নিমন্ত্রণে এলে তাঁর কোনো ক্ষতি তিনি করবেন না। গৌড়ের রাজা ভগবানের নামের এই শপথের ভরসায় কাশ্মীর গিয়ে পৌছুলেন। ললিতাদিত্য বীর ছিলেন, কিন্তু একই সঙ্গে একজন কপটচারী কাপুরুষও ছিলেন। ফেরার পথে তিনি গুপ্তঘাতক লাগিয়ে ত্রিগামী নামের এক জায়গায় গৌড়ের রাজাকে হত্যা করেন। পথের কাঁটা দূর হয়েছে, এতেই খুশি ছিলেন তিনি। তাঁর বীরত্বে যে কালিমা পড়েছে এই কাপুরুষতায়, সেটা অনুধাবন করার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। বা থাকলেও, এতে কোনো গুরুত্ব তিনি দেন নি।

৩. বঙ্গের বিক্রম সেনানীরা

অষ্টম শতাব্দী। গৌড় এবং কাশ্মীর।

গৌড়ের রাজাকে হত্যার বিষাদময় কাপুরুষতার কাহিনি এসে পৌঁছালো বাংলায়। শোকে স্তব্ধ সবাই। এর মধ্যে রাজার কয়েকজন বীর যোদ্ধা চোয়ালবদ্ধ করে শপথ নিলেন এই কাপুরুষোচিত হত্যার প্রতিশোধ নেবার। শোককে সন্তর্পণে বুকের গভীরে নামিয়ে দিয়ে প্রতিশোধের অনন্ত অনল জ্বাললেন তাঁরা সেখানে। বঙ্গ থেকে সুদূর কাশ্মীরে গিয়ে শোধ তুলবেন এই অপমানের। সমভূমি পাড়ি দিয়ে সুউচ্চ পার্বত্য কঠিন ভূমিতে যাবেন তাঁরা। তারপর বুঝিয়ে দিয়ে আসবেন বাঙালি কি জিনিস। নিজের জীবনের পরোয়া তাঁরা করেন না। ললিতাদিত্যকে হত্যা করে উচিত শিক্ষা দিয়ে আসবেন কাশ্মীরিদের, এই ছিল তাঁদের ভাবনা।

যোদ্ধার বেশে যাওয়া যাবে না। পুরো অঞ্চল ললিতাদিত্যের দখলে। তাই, তীর্থযাত্রীর ছদ্মবেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা হবে পূণ্যপীঠ সারদামন্দিরে যাওয়া হচ্ছে। সারদামন্দির তখন কাশ্মীরের বিখ্যাত পূণ্যপীঠ।

কাপুরুষোচিত রাজ হত্যার প্রতিশোধ নেবার আত্মঘাতী মিশন নিয়ে, তেরশো বছর আগে কয়েকজন অদম্য বাঙালি যোদ্ধা এগিয়ে যেতে থাকে হাজার মাইল দূরের এক অজানা অচেনা দেশের উদ্দেশ্যে।  তাদের হিমশীতল চোখের আড়ালে লুকোনো বারুদগন্ধী আগুন, চোয়ালের দৃঢ়তায় কঠিন প্রতিজ্ঞা, ফুলে উঠা বুকে জাতির সম্মান বাঁচানোর বহমান ইচ্ছা।

ছদ্মবেশী বাঙালি সৈনিকেরা কাশ্মীরে প্রবেশ করলেন। কিন্তু তাঁদের দুর্ভাগ্য। ললিতাদিত্য তখন দেশান্তরে। ললিতাদিত্যকে না পেয়ে, যে পরিহাস-কেশব বিগ্রহের সামনে দাঁড়িয়ে ললিতাদিত্য শপথ নিয়েছিলেন, তারপর প্রতারণা করেছিলেন, সেই বিগ্রহকে গুঁড়িয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেন বাঙালি রণযোদ্ধারা।

পরিহাস-কেশবের মন্দিরের সামনে গিয়ে তীর্থযাত্রীর বেশ খুলে ফেলেন তাঁরা। শাণিত তরবারি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মন্দিরের ভিতরে। তাঁদেরকে মন্দিরের ভিতর ঢুকতে দেখে পূজারিরা মন্দিরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। ভিতরে আটকা পড়ে যান যোদ্ধারা। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র দমেন না তাঁরা।

তবে, এই যোদ্ধারা একটা ভুল করেছিলেন। তাঁরা পরিহাস-কেশবের বিগ্রহ ভেবে যেটাকে আক্রমণ করেছিলেন, তা ছিল আসলে রামস্বামীর বিগ্রহ। রামস্বামীর বিগ্রহটী রূপার তৈরি। প্রবল আক্রোশে বাঙালি যোদ্ধারা রামস্বামীর বিশাল বিগ্রহটি ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলতে থাকেন।

আক্রমণের খবর রাজধানী শ্রীনগরে যেতে বেশি সময় লাগে নি। সেখান থেকে বিশাল সেনাবাহিনী এসে ঘিরে ধরে মন্দির। মরিয়া বাঙালি যোদ্ধারা অসি হাতে বিপুল বিক্রমে লড়ে যেতে থাকেন এক অসম যুদ্ধ। মৃত্যুকে পণ করেই তাঁরা এই দূর দেশে এসেছিলেন। কাজেই ভয় কী তাঁদের? সুগঠিত, সুদৃঢ় শ্যামল দেহগুলো রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়ে যেতে থাকে কঠিন মাটিতে। কিন্তু, সম্মান, মর্যাদাটুকু ঠিকই তাঁরা তুলে রাখলেন মাথার অনেক উপরে, একেবারে আকাশের কাছাকাছি।

জাতীয় মর্যাদার রক্ষার আত্মঘাতী মিশন সমাপ্ত হলো বাঙালি যোদ্ধাদের করুণ রাগিণীর সুরে।

৪. কহলন পণ্ডিতের কথকতা 

এই ঘটনার চারশ বছর পরে কাশ্মীরের ঐতিহাসিক কহলন পণ্ডিত একটা বই লিখেছিলেন। যার নাম হচ্ছে রাজতরঙ্গিনী। এই বইতে বাঙালির এই বীরত্বগাথা লেখা রয়েছে। তিনি লিখেছেনঃ

গৌড়াধীশের সাহসিক অনুজীবিগণ প্রভু-হত্যার প্রতিশোধ মানসে অদ্ভুত বীরত্বপ প্রদর্শন করিয়াছিলেন। তাহারা সারদামন্দির দর্শন ছলে কাশ্মীর দেশে প্রবেশ করিয়া, সাক্ষী দেব পরিহাস-কেশবের মন্দির বেষ্টন করিল। সেই সময়ে নরপতি দেশান্তরে ছিলেন। তাহাদিগকে মন্দিরে প্রবেশ করিতে অভিলাষী দেখিয়া পূজকগণ পরিহাস-কেশবের মন্দির-দ্বার রুদ্ধ করিল।

বিক্রমশীল গৌড়বাসিগণ পরিহাস-কেশব ভ্রমে রজতময় রামস্বামীর বিগ্রহ উৎপাটিত করিয়া রেণুরূপে পরিণত করিল ও তিল তিল করিয়া চতুর্দ্দিকে নিক্ষেপ করিল। অনন্তর সৈন্য সকল নগর হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া তাহাদিগকে আক্রমণ করিল।

শোণিতসিক্ত শ্যামবর্ণ গৌড়ীয়গণ, সৈন্যগণের অস্ত্রাঘাতে নিহত হইয়া ভূতলে পতিত হইল; যেন অঞ্জনশৈলের শিলাখণ্ড সকল মনঃশিলার রসে রঞ্জিত হইল। তাহাদের রুধির ধারায় এবংবিধ অসাম্ন্য প্রভুভক্তি উজ্জ্বলীকৃতি ও পৃথিবী ধন্য হইয়াছিল।

দীর্ঘকাল লঙ্ঘনীয় গৌড় হইতে কাশ্মীরের কথাই বা কি বলিব এবং মৃতপ্রভুর প্রতি ভক্তির কথাই বা কি বলিব? গৌড়ীয়গণ তখন যাহা সম্পাদন করিয়াছিলেন বিধাতার পক্ষেও তাহা সম্পাদন করা অসাধ্য। আজও রামস্বামীর মন্দির শূন্য দেখা যায়। সেই গৌড়ীয়গণের যশে ব্রক্ষ্মাণ্ড পরিপূর্ণ রহিয়াছে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যে, এই ইতিহাস কোনো বঙ্গবান্ধবের লেখা ইতিহাস নয়। কহলনের বাঙালিদের প্রতি কোনো সহানুভূতি থাকাতো দূরের কথা বরং বিরূপ মনোভাবেরই পরিচয় আমরা পেয়ে থাকি। তিনি গৌড়ীয়দের রাক্ষস বলে অভিহিত করতেও ছাড়েন নি। কিন্তু বীরের বন্দনা এমন জিনিস যে, শত্রুপক্ষও বিস্ময়ে নিজের অজান্তেই তা করে ফেলেন। কহলনও তাই করেছেন।

সুদূর অতীতের সুমহান এই বঙ্গ সামুরাইদের প্রতি রইলো সশ্রদ্ধ স্যালুট।

__________________________________

পরিশীষ্টঃ

সেই কোন সুদূর সময়ে কাপুরুষোচিতভাবে নিহত হওয়া নিজেদের রাজা হত্যার বদলা নিতে সামান্য কজন বাঙালি যোদ্ধা হাজার মাইল দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে গিয়ে আক্রমণ শানিয়েছিল শক্তিশালী রাজ্য কাশ্মীরে। স্বজাতির অপমান তাঁদের গায়ে এমনই কাঁটার মত বিধেছিল। অসম যুদ্ধে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে বিন্দুমাত্র বাধে নি তাঁদের। অথচ আজকে যখন নিজের দেশের মানুষকে উলঙ্গ করে পশ্চাতদেশে পিটিয়ে যায় ভিন্ন দেশের বাহিনী, তখন প্রতিবাদতো দূরের কথা, অনেকে যুক্তিতর্ক নিয়ে নেমে পড়ে তাকে ন্যায্য করার জন্য। আমাদের কোথায় কোথায় দোষ তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার জন্য। যে ইস্পাত কঠিন মানসিকতা আমাদের পূর্বপুরুষরা সময়ে সময়ে দেখিয়েছেন, সেই তেজি রক্তের ধারা আমাদের ধমনী থেকে কীভাবে যেন উধাও হয়ে গিয়েছে।  এই লেখাটা পড়ে কারো রক্তনালীতে যদি কিঞ্চিৎ পরিমাণেও কাঁপন জাগে, নিজেকে স্বার্থক মনে করবো আমি।

আমার আগের লেখায় উল্লেখ করেছিলাম যে, দ্বিজেন্দ্রলাল মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে তাঁর বিখ্যাত গান বঙ্গ আমার জননী আমার লিখেছিলেন। এই গানের সুর করেছিলেন তিনি। গানটি নিজে গাইবার সময় বা কাউকে শিখিয়ে দেবার সময় তিনি এতই উত্তেজিত হয়ে পড়তেন যে, উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তেন প্রায়শই। আজকে তিনি যদি দেখতেন যে, বাঙালির রক্ত কেমন শীতল হয়ে পড়েছে, তিনি বোধহয় আবারো উচ্চ রক্তচাপে ভেসে যেতেন।

 

httpv://www.youtube.com/watch?v=vNAXOC7M7nM

 

তথ্যসূত্রঃ

১। বীরত্বে বাঙালীঃ  অনিলচন্দ্র ঘোষ

২। বাঙ্গালীর বলঃ  রাজেন্দ্রলাল আচার্য্য

৩। বৃহৎ বঙ্গঃ  দীনেশচন্দ্র সেন

৪। গৌড়ের ইতিহাসঃ  রজনীকান্ত চক্রবর্ত্তি

৫।  গৌড় কাহিনীঃ শৈলেন্দ্র কুমার ঘোষ

৬। গৌড়রাজমালাঃ রমাপ্রসাদ চন্দ

৭। History of Ancient Bengal: R. C. Majumder

৮। http://history.howstuffworks.com/historical-events/10-biggest-cases-of-revenge.htm#page=2