ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ-১

কিছু ধর্ম অন্তঃপ্রান দাবীদারদের ধর্মীয় সূত্র নিয়ে ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড নীতির কিছু উদাহরন এই পর্বের মূল আলোচনা। শুধু স্কুলের ধর্মশিক্ষার বইতেই সাম্প্রদায়িকতা সীমিত নেই, এর প্রবল প্রকোপ ইসলামী জগতের অতি জনপ্রিয় হাই-প্রোফাইল আলেম ওলামাদের লিখিত নানান কিতাবেও সগৌরবে, অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অর্থে ও মদদে প্রচারিত হচ্ছে। এ পর্বে কিছুটা বিরক্তিকর হলেও তাই সামান্য তত্ত্বীয় আলোচনায় যেতে হবে, উপায় নেই, নইলে সমস্যার মূল পরিষ্কার হবে না। আরেক দল কিছু আধুনিক ডিজিটাল আলেমদের রেফার করে চেঁচানো শুরু করবেন কোনই সমস্যা নেই, ইসলাম বিদ্বেষীরাই ইসলামের নামে মিথ্যা প্রচারনা করে আসছে। তত্ত্বীয় আলোচনা ছাড়া ওনাদের প্রিয় আলেম, ঈমাম, সহি ইসলামী সূত্র যে সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে ওনাদেরই মদদে সাড়ম্বড়ে অবস্থান করছে তা পরিষ্কার হবে না।

মোকসুদুল মোমেনিন নামের কিতাব একখানা ইসলামী দৃষ্টিতে পারিবারিক সম্পর্কিত কিতাব অত্যন্ত জনপ্রিয়, আজকের দিনে জাকির নায়েক জাতের ডিজিটাল আলেমদের কাছে জনপ্রিয়তায় পেরে না উঠলেও এক সময় এর জনপ্রিয়তা উচশিক্ষিত মহলেও এতই ব্যাপক ছিল যে শ্রেনী নির্বিশেষে যেকোন বিয়ে শাদীতে অবধারিতভাবে নবদম্পতির পাথেয় হিসেবে কয়েক কপি উপহার পড়ত। এই কিতাবে ইসলামী জীবন বিধানের নামে আছে বেশ কিছু হাস্যকর, চরম নারী অবমাননাকারি বিধিবিধান; অথচ এই বই এর ৫০ এর ওপর সংস্করন বেরিয়েছে। এটা রেফার করে কেউ ধর্মীয় বিধানের সমালোচনা করলে অবধারিতভাবে শুনতে হবে যে এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, লেখক ‘দেওবন্দি’ / বিতর্কিত এমন নানান অজুহাত। এসব মেনে নিলেও বলতে হয় যে সেক্ষেত্রে লাখ লাখ লোককে ভুল ইসলাম শেখানো বই বহাল তবিয়তে অর্ধশতাব্দীরও ওপর কি ভাবে চলে আসছে? ভুল ইসলাম শেখানো এই কিতাব এত জনপ্রিয় হয় কিভাবে, নিষিদ্ধ করার দাবী কয়জন আলেম আজ পর্যন্ত করেছেন? বিকৃত ইসলাম নিয়ে সোচ্চার ব্লগের ইসলামী পন্ডিতরাই বা কি কারনে মোকসুদুল মোমেনিন, নিয়ামুল কোরান জাতের বই নিয়ে নীরব থাকেন? ব্লগের ইসলাম বিদ্বেষীদের লেখা পড়ে কয়জনে ভুল ইসলাম শেখে আর মোকসুদুল মোমেনিন/নিয়ামুল কোরান পড়ে কয় লাখ লোকে ভুল ইসলাম শেখে?

মোকসুদুল মোমেনিন জাতের দূরবর্তি সূত্র বাদ দিয়ে কিছু মূল সূত্রের দিকে যাই, ডবল ষ্ট্যান্ডার্ডের উদাহরন ইসলামী দৃষ্টিভংগীতে বিধর্মী বিশ্বাস/বিধর্মীদের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ রাখব, তাও অতি সংক্ষিপ্তাকারে, সংশ্লিষ্ট সব আয়াত আলোচনা সম্ভব নয়। আগের পর্বের আলোচিত বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জেহাদের আহবান জানানো আয়াতের আগে একই সূরাতে আরো আয়াত আছে যা পড়লে বিধর্মীদের ব্যাপারে কোরানিক বিধি আরো পরিষ্কার হয়। সরকারের শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস প্রনয়নকারীগন নিশ্চয়ই শুধু এক আয়াত ভর করে পরবর্তি প্রজন্মকে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাও যুদ্ধ জেহাদের আহবান জানাননি। আয়াতঃ ৯-২৯; যারা আল্লাহতেও ঈমান আনে না ও শেষ [বিচারের] দিনেও বিশ্বাস করে না, যা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ [ঘোষণা] করা হয়েছে, তা নিষিদ্ধ বলে গণ্য করে না, [যদিও তারা কিতাবধারী জাতি তবুও] তারা সত্য দ্বীনকে স্বীকার করে না; তাদের সাথে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা স্ব-ইচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জিজিয়া [কর] দেয় এবং নিজেদের পরাভূত মনে করে । [১] (ইউসুফ আলীর তাফসিরও এখানে আছে)। অত্যন্ত পরিষ্কার আয়াত, ব্যাখ্যার তেমন দরকার পড়ার কথা না। তবে গত লেখায় উল্লেখ করেছি যে কোরান বোঝার কিছু বিশেষ পদ্ধুতি আছে যেগুলি অনুসরন না করলে ইসলামবিদদের মতে কোরানের বেশ কিছু আয়াতের প্রকৃত মানে সম্পর্কে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকে। সে কারনে গভীর ইসলামী জ্ঞান সম্পন্ন আলেম স্কলারদের শরনাপন্ন হতে হয়। এই পদ্ধুতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরাও একটু দেখি ইসলামী জগতের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট আলেম ঈমামগন কি বলেন।

জিজিয়ার ব্যাপারে জাকির নায়েকের ব্যাখ্যা দিয়ে শুরু করা যাক। এ জাতীয় আধুনিক যুগের ব্যাখ্যাকারীগণ যারা ইসলাম বিদ্বেষী কিংবা সংশয়ে ভোগা মুসমানদের বিভ্রান্তি কাটাতে বিখ্যাত তারা অন্তত এটা বোঝেন যে মূল অর্থ সরাসরি বললে কিংবা সনাতন ধারার ব্যাখ্যাকারকদের (যেসব সূত্র পরম সম্মানের সাথে শত শত বছর ধরে ইসলামী জ্ঞানচর্চার জগতে ব্যাবহৃত হচ্ছে) রেফার করলে ইসলাম বিধর্মীদের ব্যাপারে অনুদার ও সাম্প্রদায়িক এমন অভিযোগ অস্বীকার করার কোন উপায় থাকে না তাই তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন সুগার কোটিং এর মাধ্যমে যথাসাধ্য মোলায়েম করার জন্য। সুগার কোটিং এর উপায় হল আয়াতের প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে, সব বিধর্মীদের জন্য ঢালাওভাবে প্রযোজ্য নয়, সাথে সাথে আরেকটি অপেক্ষাকৃত উদার আয়াত কোট করে বা নবীজির উদাহরতার কাহিনী বলে দিয়ে ব্যালেন্স করে ফেলা, অন্য ধর্মগ্রন্থেরও আপত্তিকর বিষয় সমূহ কোট করা (পরোক্ষভাবে মেনে নেওয়া যে আমাদেরটা আপত্তির তো কি হয়েছে, অন্যদেরটা আরো আপত্তিকর) ইত্যাদী। বিস্ময়কর ভাবে উদারতার উদাহরন হিসেবে পেশকৃত ‘লাকুম দ্বিনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন’ জাতীয় আয়াত সমূহের ক্ষেত্রে কেউ আবার এসব জটিল প্যাঁচানো পদ্ধুতির তালাশ করেন না। তখন আর কন্টেক্সট বোঝার দরকার পড়ে না, কেবলমাত্র সে সময়কার বিশেষ কয়েকজন কাফেরের উদ্দেশ্যেই এই উদার বানী সীমাবদ্ধ সকল কাফেরের জন্য নয় এমন উকিলী যুক্তি অবতারনার দরকার পড়ে না।

ইউসুফ আলী যুগের হিসেবে অনেক আধুনিক, তার ব্যাখ্যাও অপেক্ষাকৃত উদার। ওনার মত ব্যাখ্যাই এখনকার ইসলাম সেবক ভাইরা এ আয়াতের ক্ষেত্রে দেন। যেমন জিজিয়া কর হল মুসলমান রাজ্যে বসবাসকারি অমুসলমানদের নিরাপত্তার অর্থমূল্য, এমনকি এর বিনিময়ে অমুসলমানদের দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়……মুসলমানদের যাকাতের বিপরীতে এটা অমুসলমানদের জন্য ধার্যকৃত কর, জিজিয়ার পরিমান অতি সামান্য, অনেক বিধর্মী আবার মানবিকতার কারনে জিযিয়ার আওতামুক্ত……ইত্যাদী। যাক, এসব যুক্তির সারবত্তা বিশ্লেষন আমার এ আলোচনার অংশ নয়। জাকির নায়েক জিযিয়া করের সংশ্লিষ্ট আয়াত ৯-২৯ আদৌ কোটই করেননি, কারন সম্ভবত এতে সকল অমুসলমানের প্রতি যুদ্ধ করে পরাজিত করার উদাত্ত আহবান আছে যা বেশ অস্বস্থিকর, এটা কোট করাটা নিরাপদ নয়। তাই সংশ্লিষ্ট আয়াত এড়িয়ে অন্য সুরার অপেক্ষাকৃত নমনীয় আয়াত (৬০-৮) টেনে এনেছেন করেছেন সুগার কোটিং নীতিতে, আজব না? জিযিয়ার কথা ৯-২৯ এ আছে নাকি ৬০-৮ এ আছে? ভাবখানা এমন যে জিযিয়ার মাঝে ট্যাক্স ছাড়া আর কিছুই বিবেচ্য নেই। জামাল ওয়াদি ইমাম শাফি রেফার করে কি বুঝিয়েছেন উনিই বোঝেন, কিন্তু সেই ইমাম শাফির বিস্তারিত জিযিয়া/জেহাদের তত্ত্ব বর্ননা করেননি (পরে করছি), কেন করেননি পরিষ্কার হবে। আরো মজার কথা বলেছেন যে জিযিয়া নিতেই হবে এমন কথা নেই। কাউকে মানুষ মারার ফ্রী লাইসেন্স দিয়ে যদি ডিফেন্ড করেন যে হত্যা করতেই হবে এমন তো বলা হয় নাই তো কেমন শোনায়? মূলধারার স্বীকৃত তাফসিরে দেখা যাবে আসল গুরুত্বটা কোথায়, আপাত নিরীহ ট্যাক্সের টাকার হিসাবে নাকি অন্য কিছুতে। জিযিয়ার এত গুনাবলী থাকা সত্ত্বেও ওনারা কেন মুসলমান দেশগুলিতে এটি কায়েমের আহবান জানান না কে জানে। ওনারা যেভাবে জিযিয়ার গুনাবলী বয়ান করেন তো মনে হয় বিধর্মীদেরও উচিত জিযিয়ার আওতায় স্বেচ্ছায় ঢুকে যাওয়া।

প্রতিরক্ষার দায়িত্ব সম্পর্কিত কোন কথা আয়াতে আদৌ নেই, আয়াতে আছে জিযিয়া না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করা, পরাজিত করে বশ্যতা স্বীকার করানো। অথচ ওনারা আয়াতের সরাসরি বিষয় গুরুত্ব দেন না, গুরুত্ব দেন যা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বাইরের সূত্র থেকে আমদানী করা যায় তা। জিযিয়ার আসল তাতপর্য যে বিধর্মীদের পরাভূত করে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানানো এটা ওনারা পাঁকাল মাছের মতই এড়াতে পারেন। যাকাত আর জিযিয়া কিভাবে সমতূল্য হয় কে জানে। যাকাত না দিলে কাউকে যুদ্ধ করে হত্যা করার হুমকি কিংবা রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেবে না বলে ঘোষনা দেওয়ার কথা কোরানে আছে বলে আমি আজতক শুনিনি, জাকির নায়েকরা হয়ত শুনেছেন।

জাকির নায়েক কোরানের তাফসিরকারক নন, ওনার লেকচার মাদ্রাসা বা ইসলামী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় কিনা জানি না। ইউসুফ আলীর তাফসির তুলনামূলক ভাবে অনেক আধুনিক ও সংক্ষিপ্তও। তাফসীর জগতে অন্যদের তূলনায় তেমন একটা জনপ্রিয়ও মনে হয় না। এবার একই আয়াতের অন্য দুয়েকটি আরো বিস্তারিত ও জনপ্রিয় তাফসির দেখি।

জালালাইন , ইবনে কাথির ইসলামী জ্ঞানের জগতে বহু শত বছর ধরে বিপুল জনপ্রিয় তাফসির লেখক যাদের তাফসির ইসলামী একাডেমিক লাইনে পাঠ্য। জালালাইন সাহেবের ব্যাখ্যা বেশ সংক্ষিপ্ত; তাদের পরাজিত করে ইসলাম অনুগত বানিয়ে জিজিয়া কর আদায় করতে হবে, মামলা শেষ। ইবনে কাথির সাহেব আরো বিস্তারিত বলেছেন । উনি এই আয়াতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে অনুপম কনক্লুশনে পৌঁছেছেন; “Therefore, Muslims are not allowed to honor the people of Dhimmah or elevate them above Muslims, for they are miserable, disgraced and humiliated” (ধিম্মি বলতে ইসলামী শাসনাধীনে থাকা বিধর্মীদের বোঝায়)। লক্ষ্য করুন, এখানেও কিন্তু এই ব্যাখ্যাকে ততকালীন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি যেভাবে এসব আয়াত আধুনিক এপোলজিষ্টরা প্রচার করতে চান, ইউনিভার্সেল সুরেই বলা হয়েছে। এরপর কাথির সাহেব সহি হাদীস থেকে এই শিক্ষার ব্যাবহারিক প্রয়োগের উদাহরন কোট করেছেন, “Do not initiate the Salam to the Jews and Christians, and if you meet any of them in a road, force them to its narrowest alley……” কি চমতকারই না মানবতার শিক্ষা আমাদের শ্রদ্ধেয় আলেমগন ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে চিরকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন পাথেয় হিসেবে শিখিয়ে যাচ্ছেন ভাবলেই মনে অনাবিল শান্তি বয়ে যায়, ধর্মশিক্ষা বই এর প্রনেতাগনের তত্ত্বীয় বিদ্যায় মনে হয় সংশয়ের কিছু নেই, ওনারা যথেষ্ট জেনে বুঝেই স্কুলের বাচ্চাদের জন্য বই লিখেছেন বলেই মনে হয়।

এবার আধুনিক যুগের একটি অতি জনপ্রিয় কোরান তাফসির, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মুফতি শাফি উসমানি (রাঃ) সাহেবের মারেফুল কোরান খোলা যাক। এই তাফসির আরো বিস্তারিত এবং বোধকরি আরো জনপ্রিয়। বেশ কিছু বাংলা ইসলামী সাইটেও এই তাফসিরের বাংলা অনুবাদ বিনে মাগনায় পাওয়া যায়, বোধকরি বিশাল জ্ঞান ভান্ডার বলেই। সৌদী সরকারের বদান্যতায় সবুজ রঙ্গা এই তাফসিরসহ কোরানের বাংলা/ইংরেজী কপি বাংলাদেশসহ বিনামূল্যে পৃথিবীর বহু দেশে বিলি করা হয়েছে, আমার কাছেও এক কপি আছে। বাংলাদেশ, আমেরিকা, কানাডার বহু মসজিদে সেই সবুজ তাফসিরখানি সযত্নে রক্ষিত আছে আমিই দেখেছি। সরকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই অমূল্য ইসলামি জ্ঞানের বইটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করিয়েছে, ভূল থাকলে নিশ্চয়ই নানান দেশের সরকারী পর্যায় থেকে এটা প্রচারনার এত ঘনঘটা দেখা যেত না, নিদেন পক্ষে অন্তত সংশোধনী আসত। সৌদী সরকার বা বাংলাদেশ সরকার কেন পয়সা খরচ করে ভুল ইসলাম শেখাতে যাবে? সেটা কোন কারনে সম্ভব হলেও দেশ বিদেশের বিভিন্ন মসজিদে কেনই বা ভুল তাফসির পরম যত্নে রাখা হবে, ইসলামী ওয়েব সাইটগুলিতেই বা কেন এর জোর প্রচারনা থাকবে? কাজেই এর অথেন্টিসিটিতে সংশয়ের যৌক্তিক কারন আমি দেখি না।

এই তাফসিরকারক বেশ সাবলিল ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন কেন ইহুদী/খৃষ্টানরা আহলে কিতাবধারি হলেও তাদের সাথে মুশরিক গোছের কাফেরদের মতই যুদ্ধ করতে হবে, যাতে কারো মাঝে একশ্বেরবাদীদের সাথেও যুদ্ধবাজীর ব্যাপারে আর সংকোচ না থাকে। ওনার ব্যাখ্যার ইন্টারেষ্টিং অংশঃ

মারেফুল কোরান, ভ্লল্যুম-৪ (পৃষ্ঠা-৪০৩)

ওনার মূল্যবান ব্যাখ্যা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে কুফর ও শিরক হল মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধ। শুধুমাত্র ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে কেউ মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধী এমন ধারনা নিঃসন্দেহে সমসাময়িক বিশ্বের আইনী জগতে যুগান্তকারী অবদান আনতে পারে। অসীম দয়াবান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের মারফত সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ক্রিমিনালদের শাস্তি রদ করে দিচ্ছেন। তাহলে আমরা জানতে পারলাম যে ইসলামী বিশ্বাস ছাড়া অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসী (এমনকি একশ্বেরবাদী খৃষ্টান/ইহুদীও মাফ পাচ্ছে না) হওয়া এমনই ভয়াবহ অপরাধ যার যথাযথ শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের প্রতিষ্ঠান এই বিদ্যা লোকজনকে গাঁটের পয়সা খরচ করে শেখাচ্ছে। তালেবানদের আর গালি দেই কোন মুখে, তারা তো অন্তত ভন্ড নয়। তালেবানদের সম্পর্কে বহু কথা শুনলেও তারাও এমন কোন ফতোয়া দিয়েছে বলে এখনো শুনিনি। আরব দেশের সরকার সহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু সংগঠনের বিরুদ্ধে বিশ্বময় জিহাদী কনসেপ্ট রফতানীর অভিযোগ আছে, আমাদের সরকার মনে হয় আপাতত নিজ দেশেই এ কাজে মনোযোগ দিয়েছে। তবে হ্যা, কাফেরদের বিরুদ্ধে যেন জুলুম করা না হয় তাও লক্ষ্য রাখতে হবে সেটা বুজুর্গ আলেম সাহেব সতর্ক করেছেন। নবীজির রেফারেন্সে উনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে কেউ অমুসলিম নাগরিকের ওপর জুলুম চালালে নবীজি নিজে হাশরের ময়দানে সেই জালেমের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন (মারেফুল কোরান, ভ্লল্যুম-৪ (পৃষ্ঠা-৪০৪) )

বিজ্ঞ আলেম আবারো সবশেষে সতর্ক করেছেন যে জিজিয়া করকে যেন কোনভাবেই বিনিময় মূল্য হিসেবে দেখা না হয়, কারন এটা হল কাফেরদের মৃত্যুদন্ড মওকুফের বিনিময় মূল্য। কাউকে গায়ের জোরে পরাভূত করে তার জানের হুমকি দিয়ে, ‘তাবেদার প্রজা’ বানিয়ে অর্থ আদায় (মূল্য যাইই হোক) কিভাবে জুলুম ছাড়া আর অন্য কোন শব্দে অভিহিত করা যেতে পারে তা অনেক ভেবেও আমি পাইনি, হৃদয়ে সীল গালা না পড়লে নিশ্চয়ই বুঝে যেতাম। ধর্মজগতের যুক্তিবোধ বুঝতে গিয়ে অনেক সময়ই এমন খাবি খেতে হয়।

আরেক সাড়া জাগানো আধুনিক তাফসিরকারক মাওলানা মওদূদীর তাফসিরেও (তাফহিম-আল-কোরান) একই রকম কথাই আছে। এই ভদ্রলোক প্রধানত রাজনৈতিক কারনে বেশ বিতর্কিত, অনেক আলেম ওলামাও ওনাকে মানেন না। এমনকি আমাদের দেশেও বর্তমানে নিষিদ্ধ হলেও অনেক দেশের কোটি কোটি মুসলমানের চোখে উনি এখনো বিরাট বুজুর্গ আলেম। আরব সরকার ওনার ইসলামী জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে ওনাকে বিশেষ পুরষ্কারও দিয়েছে। মওদুদীর ব্যাখ্যাও ইবনে কাথির, মারেফুল কোরানের মতই, বরং আরেক ডিগ্রী বাড়া। জিজিয়া করের ব্যাপারটা যেভাবেই চিন্তা করা হোক সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উদাহরন হিসেবে অনেক মুসলমান কিছুটা হলেও লজ্জিত বোধ করে জাকির মিয়াদের কায়দায় আসল কথা চেপে যায় বলে উনি তাদের কড়া ভাষায় ধমকে দিয়েছেন। দেবারই কথা, কোরান আল্লাহর অভ্রান্ত বানী হিসেবে আসলেই বিশ্বাস করলে তা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা কিংবা পালনে ধানাই পানাই কিসের? তাদের তো মুনাফেক বলাই সংগত বলে আমিও মনে করি। যাক মওদূদী বাদ থাক, জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা এনাকে নিয়ে বেশী টানা হ্যাঁচড়া করলে আবার আমার ভেতর ছাগ গন্ধ পাওয়া যাবে, মূল পয়েন্টই মাঠে মারা যাবে। যদিও এনাকে হেলাফেলারও উপায় দেখি না, কারন শুধু জামাত শিবিরের সূত্রে নয়, খোদ ইসলাম রক্ষক ভাইদের সাইটে এনার অথেন্টিসিটির সার্টিফিকেট আছে।

ইমাম গাজ্জালী ইসলামী জগতে অতি সম্মানিত আলেম, অতি উচ্চমানের দার্শনিকও বটেন, ওনার পরিচয় দেবারও দরকার পড়ে না, নামেই ওনার পরিচয়। ‘কিমিয়ায় সাদাত’ বা ‘সৌভাগ্যের পরশমনি’ নামের ভদ্রলোকের এক অতি জনপ্রিয় বই আছে যা সমগ্র বিশ্বেই মুসলমান সমাজে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেখান থেকে বিধর্মীদের সম্পর্কে ওনার উচ্চমানের দর্শন একটু পাঠ করিঃ (পৃষ্ঠা-১১৯)

“আল্লাহর উদ্দেশ্যে শত্রুতার পরিচয় – “যে ব্যাক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাহার আজ্ঞানুবর্তি বান্দাগনকে ভালবাসিবে সে স্বতঃ (মনে হয় সতত হবে) কাফির, জালেম, গুনাহগার, ও ফাসিকদিগকে শত্রু মনে করিবে”। আমরা এই অমূল্য দর্শন পেলাম যে আল্লাহর হুকুম মেনে চলা বান্দাদের ভালবাসার পূর্বশর্ত হল কাফেরদের শত্রু বিবেচনা করা। আধুনিক কালের কিছু ফতোয়াতেও আমি একই কথাই পেয়েছি। এরপর উনি যত্নের সাথে আল্লাহর সেসব শত্রুদের বৈজ্ঞানিক শ্রেনীবিন্যাস করেছেন। আল্লাহর শত্রু হিসেবে প্রথম শ্রেনী প্রাপ্ত হল সেসব কাফের যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিগ্রহ করে, এতে তেমন আপত্তির কিছু অবশ্য নেই, যুদ্ধ করলে তাকে ঘৃনা করা যেতেই পারেই। এরপর দ্বিতীয় শ্রেনীর শত্রুর বর্ননা;

ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপার আছে এটা ইসলাম বিদ্বেষীদের মিথ্যা প্রচারনা মেনে নিলে সিদ্ধান্ত টানতে হয় যে সরলমনা জাকির নায়েক মনে হয় জানেন না যে কিছু ইসলাম বিদ্বেষী তার পিস টিভি চ্যানেলে নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে চলেছে, যেমনটা ইসলাম বিদ্বেষীরা অন্তত গত ১৬ বছর যাবত বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে ধর্মশিক্ষা বই বিনা বাধায় প্রকাশ করে চলেছে, বিধর্মীরা মৃত্যুদন্ডযোগ্য ঘৃন্য অপরাধী বলেও ঈমানী কিতাবে সাড়ম্বড়ে প্রচারিত হচ্ছে। ওনার সুবিখ্যাত পিস টিভির দুজন খ্যাতিমান নিয়মিত বক্তার কথা বিধর্মী বিষয়ে শোনা যাক।

সুন্নী সফেদ চেহারার আবদুর রহমান গ্রিন সাহেব জন্মগতভাবে একজন ব্রিটিশ মুসলিম কনভার্ট, IERA নামক এক ইসলামী দাওয়াহ সংস্থা প্রতিষ্ঠাকারী, জাকির নায়েকের পিস টিভি ছাড়াও লন্ডন ভিত্তিক ইসলাম চ্যানেলেরও একজন নিয়মিত বক্তা, লন্ডনের কেন্দ্রীয় মসজিদের সাথে সম্পর্কিত। টিভি ছাড়াও বিশ্বের বহু যায়গায় তিনি ইসলাম বিষয়ে বক্তৃতা দেন, বিতর্কে সামিল হন। বিধর্মী বিষয়ক ইসলামিক বিধিবিধান সম্পর্কে ওনার বক্তব্য বেশ বিস্তারিত এবং পরিষ্কার, ইবনে কাথির, মারেফুল কোরান, ইমাম গাজ্জালীর সাথে তেমন কোন তফাত নেই। “The prophet warned us be careful who you take as your friend because you will take your deen from your friend. You will take your religion, you will take your way of life from your friend. And this is one of the reasons why Allah (SWT) he has warned us in his book do not take the disbelievers as your awliya, do not take the Jews and the Christians or the mushrikeen as your awliya, do not prefer them to the believers, do not prefer their company to the company of the believers. Do not take them as your, and what is the word awliya? What does it mean? It has a meaning of friendship, close friendship. It has the meaning of your adviser, your protector.” For example, open Bukhari you will find the hadith that if you find the Jew or a Christian walking down the street, push them to the side. It is well known from what Umar ibn al-Khattab and the khulafa ar rashidin used to implement, that the Jew and Christian was not allowed to ride on a horse when the Muslim is riding on a horse. They would have to walk. Allah he said in the Quran about the jizya that you, that fight the people of the book, Allah (SWT) said, it’s in the Quran, fight the people of the book and those who do not believe that what Allah has made lawful as lawful and what Allah has made unlawful as lawful, until they pay the jizya and feel themselves subdued. The purpose of the jizya is to make the Jew and the Christian know that they are inferior and subjugated to Islam,. মারেফুল কোরানের তাফসিরকারকের মতই এই ভদ্রলোকেরও রসবোধের প্রসংশা করতেই হয়। In the Muslim state, although the Jew and Christian is free to practice their religion, this is allowed, but they can not display their cross and even in the time of Umar they were not allowed to re-construct or construct new churches. All of this is to create an atmosphere where the, it is encouraging the people to come to iman and Islam, not to remain upon kufr and misguidance. Yes there is, we do not force people, we do not say ‘You must become Muslim or we kill you.’ That’s not correct. But it is from Islam to create an environment where people are pressurised and encouraged to be upon the path of haq and we do not encourage people to be on the way of…কাউকে হাতজোড় করিয়ে জানের বিনিময়ে অর্থ আদায় করে, রাস্তার এক পাশ থেকে আরেক পাশে ঠেলে দিয়ে, ভীতিকর পরিবেশ তৈরী করে, ধর্ম পালনের অধিকার সংকুচিত করে, তারপর জুলুম করতে কড়া নিষেধাজ্ঞা আছে কিংবা ধর্ম গ্রহনে কোন রকম জোর জবরদস্তি নেই দাবী করা জাতীয় উতকট রসিকতা মনে হয় কেবল প্রথাগত ধর্মে অন্ধবিশ্বাসী হলেই করা যায়। ভদ্রলোক অবশ্যই শান্তিকামী ব্যাক্তি, মুম্বাইতে পিস কনফারেন্সে বক্তৃতা দিয়েছেন। ভদ্রলোকের পরের ভিডিওগুলি দেখলে শান্তির বানী আরো পরিষ্কার হতে পারে। কারো ইয়াহুদী নাছারার ইউটিউবে সংশয় থাকলে হালাল টিউবে ভদ্রলোকের শান্তির বানী আরো পূর্নাংগভাবে উপভোগ করতে পারেন।

মালয়েশিয়ার আরেক বিশিষ্ট আলেম হুসেইন ইয়ে (সম্ভাব্য ইসলাম বিদ্বেষী) জাকির নায়েকের পিস টিভি চ্যানেলেই কেন ইহুদী এবং খৃষ্টানরা চির অভিশপ্ত এবং ভ্রান্ত পথের যাত্রী তা হাসিমুখে ব্যাখ্যা করছেন, অসংখ্যা গুনগ্রাহী ঈমান্দার শ্রোতা মুগ্ধ চিত্তে তা উপভোগও করছেন। কোরান হাদীস মানলে ওনার কথা কিভাবে অস্বীকার করা যায়? আর অস্বীকার না করলে কিভাবে এসব বিধর্মীর সাথে সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক সম্ভব? জেনে শুনে চির অভিশপ্ত/পথভ্রষ্ট লোকদের সাথে সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে কে চাইবে?

ইমাম শাফি ইসলামী জগতে অতি সম্মানিত একজন আলেম যার রেফারেন্স দিয়ে জাকির নায়েকের সহযাত্রী জামাল বাদাওয়ি জিযিয়া কত মহান তা বয়ান করেছেন। ইসলাম প্রিয় ভাইদের স্বপ্নের মানব মুক্তির খোদাই সংবিধান শরিয়া আইনের (যা তারা কাফের নাছারাদের জাহেলী দেশেও চালু করতে চান) যে চারটি ভাগ আছে তার মধ্যে ওনার মতানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত শাখা ২ নম্বরে, উইকির হিসেবে সুন্নী মুসলমানদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শাফি মতবাদ অনুসারী। শতকরা যতভাগই হোক, উনি সবার কাছেই একজন অতি সম্মানিত শীর্ষ আলেম। ওনার মতামত ভিত্তিক শরিয়া অনুযায়ী ( [২] সেকশন book ‘O’ ৯-৮ – ৯-১১) জিহাদ মানে হল যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ শুধুমাত্র রক্ষনাত্মক কারনেই নয়, বিধর্মীদের আক্রমন করে তাদের দেশ দখল করা জায়েয (এমনকি কর্তব্য) বলে উনি হাদিস কোরান ঘেঁটে প্রমান করেছেন। ওনার মতে ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফাদের দায়িত্ব খৃষ্টান, ইহুদী, ও জরোবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা । কেবল আগে তাদের ইসলামে দাওয়াত দিতে হবে, যদি তারা সে দাওয়াত গ্রহন না করে তবেই এই ৯-২৯ আয়াত প্রয়োগ করে তারা যে পর্যন্ত না পরাজয় স্বীকার করে যুদ্ধ করে যেতে হবে, এর মাঝে অন্যায়ের তো কিছু নেই, তারা একমাত্র সত্য ধর্মের দাওয়াত গ্রহন না করলে তাদের হেদায়েতের আর উপায় কি? তবে যাদের আসমানী কিতাব নাই তাদের কপালে জিযিয়া দিয়েও রেহাই পাবার অপশন উনি রাখেননি, তাদের মুসলমান বনে যাওয়া কিংবা দাসত্ব গ্রহন ছাড়া গতি নেই। ওনার পুরো কিতাবে আছে অমুসলমানদের সাথে দৈনন্দিন জীবনে পালনীয় অজস্র মূল্যবান নির্দেশাবলী (সোজা বাংলায় দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানানো) যার সব না হলেও বেশ কিছু পালিত হতে আমিও নিত্য দেখি। শরিয়া আইনের বৃহত্তম শাখা হানাফি আইন বিধর্মীদের প্রতি এতটা কট্টর নয় বলে শুনেছি (যেমন হানাফি আইন কিতাবহীনদেরও জিযিয়া দিয়ে রেহাই পাবার অপশন দেয়), যদিও শাফি আইনের মত পূর্নাংগ কোন মূল হানাফি আইন শাস্ত্রের বই ওয়েবে পাইনি। শরিয়া আইনের সব শাখাতেই মুসলমান অমুসলামানের বিভেদ অত্যন্ত প্রকট, বিশেষ করে অমুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার চরম ভাবে সীমিত। শরিয়া আইনে চলা দাবী করা দেশগুলিতে এসব বিভেদ মূলক আইন নানান মাত্রায় এ আমলেও পালিত হয়। যেমন আরব দেশের আদালতে একজন মুসলমানের বিরুদ্ধে একজন অমুসলমানের স্বাক্ষ্য গ্রহন নাও করা হতে পারে। সেখানে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম প্রচার তো দূরের কথা, কারো কাছে ক্রুশ, বাইবেল, কিংবা এ জাতীয় ভিন্ন ধর্মগ্রন্থ কিংবা সংস্কৃতির চিহ্ন পাওয়া গেলে ফৌজদারী আইনে তার জেল, জরিমানা বেত্রাঘাত এসব সাজা হয়। সত্য অস্বীকারকারী অমুসলমানরা সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জীব বলে ধর্মানুভূতি কিছুটা কম থাকায় রক্ষা, নইলে তারাও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার নিত্য শোরগোল করে গেলে দুনিয়া আর বসবাসের যোগ্য থাকত না, আমাদেরো তাদের দেশে প্রবাস জীবন হয়ে উঠত দোজখেরই মত।

পাকিস্তানে ’৫৩ সালে আহমেদিয়াদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ভয়াবহ রক্তক্ষয়ি দাংগার পর সরকার বিচারপতি মুনীরের পরিচালনায় একট তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল। এই কমিশন ধর্মীয় সহিংসতা সম্পর্কিত তদন্ত করতে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় আলেম ওলামাদের সাক্ষাতকার নিয়ে রিপোর্ট দেয়। সে রিপোর্টে ইসলামী রাষ্ট্রে অবস্থানকারি বিধর্মীদের অধিকারের ব্যাপারে তাদের মত সামারাইজ করা হয়েছে; “According to the leading ulama, the position of non-Muslims in the Islamic State of Pakistan will be that of zimmies, and they will not be full citizens of Pakistan, because they will not have the same rights as Muslims. They will have no voice in the making of the law, no right to administer the law, and no right to hold public offices.”

বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেম ওলামাদেরও নি:সংকোচে মতামত নিলে এর চেয়ে ভিন্ন কিছু পাওয়া যাবার সম্ভাবনা কতটা? এসব আলেম স্কলারদের নিজের কোলে ঝোল টানার প্রবনতা দেখলেও চমতকৃত হতেই হবে। এনাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ভারতীয়রা একইভাবে সে দেশের মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানিয়ে ধর্মীয় অধিকার সংকুচিত করলে কেমন হবে? ওনারা সেটা কোনভাবেই মানবেন না, সেক্ষেত্রে ভারত দখলের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে কেউ কেউ সাফ মতামত দিয়েছেন। ইসলাম প্রচারে শক্তির প্রয়োগ (আক্রমনাত্মক জেহাদ) এনারাও সহি মনে করেন। নিজের কোলে ঝোল টানার নির্লজ্জ প্রবনতা আধুনিক ডিজিটাল আলেম/ব্লগীয় আলেমদের মাঝেও দেখা যায়। তারা মনে প্রানে বিশ্বাস করেন যে বিধর্মী দেশে তাদের পূর্নমাত্রায় ধর্মীয় অধিকার থাকবে, কিন্তু নিজেদের দেশের বিধর্মীদের সে অধিকার থাকবে না। জাকির মিয়া ‘ব্রাক্ষ্মন্যবাদী’ ভারতে বসে ভারতসহ দুনিয়াময় ইসলাম প্রচার করেন, কিন্তু আরব দেশের বিধর্মীদের ধর্মীয় অধিকার চরম ভাবে সংকুচিত করা কোরানের বানী রেফার করে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন। নিঃসন্দেহে জাকির মিয়ার মত মানসিকতার লোকে ঝাড়ে বংশে কোনদিন ভারতে কিংবা আমেরিকায় সংখ্যাগুরু হলে আরব দেশের মতই আইন বানিয়ে বিধর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানাবার স্বপ্ন দেখেন ভাবাটা নিশ্চয়ই ভুল হবে না।

গত লেখাতেই বলেছিলাম যে আমার মূল উদ্দেশ্য ইসলাম বা কোরান বিধর্মীদের সম্পর্কে কি ধারনা প্রচার করে সেটা প্রমান নয়। এখানের রেফারেন্সগুলি দিচ্ছি তার কিছু কারন ইসলামের নামে ভ্রান্ত শিক্ষা (ভ্রান্ত বলার কারন ইসলাম ডিফেন্ডার ভাইদের দাবীর প্রতি সম্মান রেখে) কিভাবে বিনা বাধায় প্রচার করা হচ্ছে যুগ যুগ, শত শত বছর ধরে স্বীকৃত আলেম স্কলারদের রেফারেন্স সমেত তা পরিষ্কার করতে। বিশেষ করে যে ডবল ষ্ট্যান্ডার্ডের কথা বার বার উল্লেখ করছি সেটার ধরন না বুঝলে সমস্যাটির স্বরুপ পরিষ্কার হবে না। আশা করি মোটা দাগের ডবল ষ্ট্যান্ডার্ডের বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। আধুনিক কালের ধূর্ত ডিজিটাল আলেমগণ অনেক রেখে ঢেকে আপত্তিকর বিষয়গুলি চেপে রেখে, আরেক সুরা থেকে অপেক্ষাকৃত নমনীয় আয়াত কোট করে, অমুসলমানের প্রতি ভাল ব্যাবহারের কিছু ক্লাসিক উদাহরন মধুর ভংগীতে বয়ান করে বিদ্বেষী/সংশয়বাদীদের মোক্ষম জবাব দিয়ে দেন, উপস্থিত ঈমান্দার ভাইদের সব সংশয় কেটে যায়, বিপুল হাততালিতে হলঘর ফেটে পড়ে। এসব আলেমগনের ব্যাখায় ঘুনাক্ষরেও মূল ধারার স্বীকৃত তাফসিরকারক, প্রবাদ প্রতীম ইমামদের সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা থাকে না। পরিষ্কার বোঝা যায় যে ওনারা মূল ধারার ব্যাখ্যা এড়াতে চান। জাকির নায়েক, ইউসুফ এষ্টেট, জামাল বাদাওয়ি এনারা কোনদিন ৯-২৯ আয়াতের ইবনে কাথিরের তাফসির কিংবা মারেফুল কোরানের ব্যাখ্যা জনসমক্ষে বলবেন? বিধর্মীদের ব্যাপারে ঈমাম শাফি কিংবা গাজ্জালীর মাসালা তারা কোনদিন ভুলেও উল্লেখ করবেন? নিজের পিস টিভির বক্তা আবদুর রহিম গ্রীনের বক্তব্যের সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই এমন কথা জাকির নায়েক কোনদিন বলেছেন? নাকি এসব বড় বড় আলেম স্কলারদের কথা অনুসরন না করতে তারা কোনদিন কাউকে পরামর্শ দিয়েছেন, সংশোধনীর দাবী তুলেছেন? ইসলামী জগতে এসব ভুল শিক্ষার প্রভাব তারা জানেন না?

সত্য বলতে জাকির গংদের ষ্ট্র্যাটেজির প্রতি আমার পূর্ন সমর্থন রয়েছে। ধর্মের প্রতি মানুষের যে পরিমান অন্ধভক্তি হাজার হাজার বছরে সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে সহজ মুক্ত নেই, তাই ধর্মের ক্ষতিকর দিকগুলি এড়াতে এমন ষ্ট্র্যাটেজির বিকল্প নেই, এতে ধর্মও বজায় থাকল আবার ক্ষতিকর তত্ত্বগুলিও হয়ত বিদায় হতে পারে। অন্য সব ধর্ম এভাবেই টিকে আছে। হিন্দু কিংবা খৃষ্ট ধর্মের অমানবিক কিংবা হেটফুল নানান নিয়ম কানুন নিশ্চয়ই এ যুগের পুরুত পাদ্রীরা প্রচার করতে চান না, জিজ্ঞাসা করা হলে তারাও নানান ভাবে ধানাই পানাই করে অপ্রীতিকর বিষয়গুলি এড়াবেন। জাকির নায়েকরা কিংবা ব্লগের আলেমরা ইমাম গাজ্জালী, ইমাম শাফি, মারেফুল কোরান, কিংবা ইবনে কাথির, আলোচিত সেই ধর্মশিক্ষার বইসহ আরো অসংখ্য আলেমের দেওয়া ফতোয়া ভুল বলে সংশোধনীর দাবী তুললে এ লেখাই লেখার দরকার বোধ করতাম না। সমসাময়িক নামী দামী ইসলাম প্রচারক থেকে শুরু করে ব্লগের ইসলাম ডিফেন্ডারদের ইউনিক বৈশিষ্ট্য হল ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড নীতি পালন করা। এনাদের একদিকে প্রশ্ন করা হলে ইসলামে কোন রকম সাম্প্রদায়িকতা, বিধর্মী বিদ্বেষ এসব নেই বলে দাবী করবেন, কখোনাবা উলটা সংশয়বাদীদের গালাগাল করবেন, আবার অন্যদিকে নিজেদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষার সিলেবাসের ভেতর সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াবেন, ধর্মচর্চার নামে সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার পাঠ সরকারী উদ্যোগে প্রচার করবেন, কাফের নাছারার সাথে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ বলে বিশিষ্ট আলেমরা ফতোয়া দেবেন যার এক জ্বলন্ত প্রমান মূল আলোচনার বিষয়বস্তু নবম দশম শ্রেনীর সরকার প্রনীত ধর্মগ্রন্থ। ধর্ম প্রচারের স্বার্থে ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড জায়েয আছে এটা মেনে না নিলে বলতে হয় যে এর মাঝে বড় ধরনের নৈতিক অসৎতার ব্যাপার আছে। ওনারা যা বলতে চান তা সরাসরি বললে নৈতিক অসৎতার প্রশ্ন তুলতাম না। বিশেষ করে নিজেদের প্রিয় সুপার হাই-প্রোফাইল আলেম ঈমামগনের মারাত্মক সব তত্ত্ব, মাসালা থাকার পরে যাবতীয় দায় ইসলাম বিদ্বেষীদের ঘাঁড়ে ফেলা বড় ধরনের ভন্ডামি।

ব্লগ জীবনেও এ জাতীয় ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড খেলার হাস্যকর ছেলেমানুষী মহড়া নিজেই দেখেছি। বছর দেড়েক আগে কোন এক কুক্ষনে অন্য এক ব্লগে কি প্রসংগে যেন বলে ফেলি যে কোরানের ৫-৫১ আয়াত অনুসারে মুসলমানদের খৃষ্টান/ইহুদীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে মানা করা হয়েছে। এরপর একজন বড় ভাই আমার ভ্রান্ত ধারনা নিরসনে পোষ্ট দিলেন। তাতে মূল বক্তব্য এই যে ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম বা মুসলমানদের ‘হেট মংগার’ প্রমানে উঠে পড়ে লেগে ৫-৫১ আয়াতের অপব্যাবহার করছে (আমিও এই দলের কিনা তা অবশ্য সরাসরি বলেননি)। ওনার মতে আলোচিত আয়াত সকল সময় কিংবা দুনিয়ার সকল খৃষ্টান/ইহুদীর জন্য প্রযোজ্য নয়, কেবল মাত্র আয়াতের প্রেক্ষাপটের মন্দ ধরনের ইহুদী/খৃষ্টানদের কথাই বলা হয়েছে। ওনার মতে বন্ধুত্ব শব্দটাও ভুল অনুবাদ, সেটা আসলে অভিভাবক (এটা শাব্দিকভাবে সঠিক তথ্য)। হতেও পারে, আমি আসলেই হয়ত ভুল বুঝেছিলাম, ওনার দাবী মত এই আয়াত কেবলমাত্র আলোচিত সেই বিশেষ গোত্রের জন্যই প্রযোজ্য হতেই পারে, কোরান আল্লাহ সকলের বোঝার জন্য সহজ করে দিয়েছেন দাবী করলেও আদতে তা বোঝা তো এত সরল নয় তা আমরা সকলেই জানি। আয়াতের বাংলা অনুবাদ রেফারেন্স দিতে উনি অধ্যাপক ইউসুফ আলীর চমতকার বাংলা অনুবাদ [১] পেশ করলেন যাতে সংক্ষিপ্ত তাফসিরও আছে। আল্লাহর কি কুদরত; ওনার নিজের পেশকৃত রেফারেন্স দেখা যায় ওনার দাবীর উলটা কথাই বলে, আমার বোঝাই সমর্থন করে (ইহুদী/খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব চিরকালের জন্যই নিষিদ্ধ)। ইউসুফ আলীর মত বিদগ্ধ আলেমরা আয়াতের মানে ভুল করেন (এমন আরো বহু অনুবাদকারী তাফসিরকারক আছেন) আওলিয়ার আসল মানে জানেন না, কিভাবে আমার বুঝে আসে না, আর সে ভুলের গুরুত্ব যে কতটা সে না হয় বাদই থাকে। আপনাকে আমি বন্ধু মানি, কিন্তু অভিভাবক কিংবা নিরাপত্তাদানকারী মানি না- এমন কথার কতটা অর্থবহ মানে হয়? আসলে বন্ধু, অভিভাবক, নিরাপত্তাদানকারী যাইই বলা হোক সবই মূলত একই ভাব প্রকাশ করে (বিধর্মীদের আপন ভাবা যাবে না) বলে প্রখ্যাত অনুবাদকারীরা একালের উকিলী দক্ষতা সম্পন্ন আলেমদের মত বন্ধু ভুল অনুবাদ এই ধারনা পয়দা করার চিন্তা করেননি। বিধর্মীদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহন নিষিদ্ধ করায় সাম্প্রদায়িকতা নেই কিন্তু বন্ধু হিসেবে গ্রহনে সাম্প্রদায়িকতা থাকত এটা কোন যুক্তিবোধে পড়ে কে জানে। ওয়েবেও বহু ইসলাম ডিফেন্ডার ৫-৫১ আয়াতে বন্ধু নয় অভিভাবক হবে এই ভুল বার করে পরম তৃপ্তি পাচ্ছেন, কেন কে জানে। এই আয়াতের মূল বিতর্কিত অংশ যে সম্প্রদায় ভাগ করে নির্দেশনা (সেটা বন্ধুত্ব, মিত্রতা ব্যাবসা, অভিভাবকত্ব যাইই হোক) সেটা ওনাদের ঈমানী মস্তিষ্কে এখনো প্রবেশ করেনি।

আমার মত এক কুখ্যাত ইসলাম বিদ্বেষীর নাকাল হওয়ার লাইভ দৃশ্য উপভোগ করতে জুটে যান আরো অনেক ঈমান্দার ভাই, তাদের মধ্যে বাংলা ব্লগ জগতের লিজেন্ডারি দুয়েকজনও ছিলেন। আল্লাহর আরেক কুদরতই হবে, তারা অনেকেই ইসলাম বিদ্বেষীদের উদ্দেশ্যে নানান মূল্যবান বানী, পোষ্ট দাতার সমর্থনে আরো কিছু আয়াত, হাদীস, আধুনিক ডিজিটাল আলেমদের ব্যাখ্যা ইত্যাদী পেশ করলেও পোষ্ট দাতার রেফার করা তাফসির যে সরাসরি পোষ্ট দাতার দাবী খন্ডন করে আমার বোঝাই সমর্থন করে এ প্রশ্ন ভুলেও তোলেননি, তাফসির ভুল সেটাও আবার বলেন না। এক পর্যায়ে যা হবার তাই হল, অবান্তর সব কথাবার্তা, মনকষাকষি। যাক, বিজয় হার আমার কথা নয়। আমার প্রশ্ন হল যে ওনারা সহি বলে শত শত বছর ধরে প্রচারিত বিভিন্ন ইসলামী সূত্র যেসব ওনাদের দাবীমতে ভুল সেসব সম্পর্কে এমন রহস্যজনক নীরবতা কেন পালন করেন? এসব ‘ভুল’ সূত্র পড়ে ভুল ধারনা প্রচারে কোন সমস্যা নেই এটা সূস্থ মাথায় কেউ চিন্তা করতে পারে?

ওনাদেরই প্রিয় সদালাপে ওনারেই প্রিয় আরেক ভাই চমতকার বাংলায় বেশ কিছুদিন ধরে একজন বিখ্যাত বয়ানকারীর কোরান তাফসির উর্দু থেকে বাংলায় সিরিজাকারে বয়ান করেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হল যে সেই আয়াতের এবং একই অর্থ বোঝায় কোরানের তেমন আরো কিছু আয়াতের বয়ান সেখানে আমার বোঝা মতই ব্যাখ্যা করলেও (মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব সাধারন ভাবেই নিষিদ্ধ) সেখানে পোষ্ট দাতা ভাই, কিংবা অন্যান্য ঈমান্দার ভাই যারা আমাকে ঘায়েল করে অশেষ তৃপ্তি পেয়েছিলেন কেউই বিন্দুমাত্র আপত্তি করেন না, উল্টো প্রসংশাই করেন। কেউই সে সব পোষ্টে বয়ানের ভুল ধরে বলেন না যে এসব আয়াত কেবলমাত্র মন্দ ধরনের বিধর্মীদের জন্যই প্রযোজ্য, কেবলমাত্র সেই প্রেক্ষাপটের জন্যই প্রযোজ্য… কোরানের অন্য নমনীয় আয়াত আমদানী করে প্রমান করেন না যে ভাল ধরনের বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্বে কোন সমস্যা নেই। নিজেরা ভুল শিখলে শিখি না, অপরকেও ভুল শেখাই, কেবল ইসলাম বিদ্বেষীরা সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুললে তবেই না তাদের উদ্দেশ্যে ঝাঁপ দেব? বিধর্মীদের সাথে সাধারনভাবে সম্পর্ক নিষিদ্ধ ঘোষনা করে ৫টি আয়াতের (৩-২৮, ৩-১১৮, ৪-৮৯, ৪-১৪৪, ৫-৫১) আলোচনাতেই আজ পর্যন্ত কেউই পোষ্টদাতার ভুল ধারনা/অপপ্রচার ভঞ্জনে এগিয়ে আসেননি। তবে সেই বয়ানের একই কথা কপি পেষ্ট করে আমি মুক্তমনায় পোষ্ট দেই তাহলে মৌচাকে ঢিল পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে, ইসলাম বিদ্বেষীরা কিভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের জাতি বিদ্বেষী প্রমানে লিপ্ত আছে সেই ষড়যন্ত্রের জাল খুলে যাবে।

এটা আল্লাহ পাকেরই আরেক কুদরত ছাড়া আর কি বলা যায় জানি না। তফাত শুধু ৫-৫১ এর ব্যাখ্যা সেই পোষ্টদাতার বয়ান অনুযায়ী শুধু বন্ধু নয়, অভিভাবক। যদিও সেই পোষ্টের মূল বয়ানুল কোরানের ইংরেজী টেক্সটে বন্ধু/অভিভাবক এক সাথেই আছে দেখেছি। বয়ানের মূল বক্তা প্রতিটা মুসলমান দেশের উদ্দেশ্যে উষ্মাও প্রকাশ করেছেন কোরানের নির্দেশ মানছে না বলে, করারই কথা। নবীজির মার্তৃভূমি সৌদী আরবের নিরাপত্তাদানকারী হল কাফের আমেরিকা, বয়ানকারীর জন্মভূমি পাকিস্তানেরও গডফাদার আমেরিকা ও চীন, এরকম বহু উদাহরন আছে। ব্যাক্তি জীবনেও বিভিন্ন মুসলমান দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলমান ইউরোপ আমেরিকার বিধর্মী দেশগুলিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ধন্য হয় (আশ্রয় গ্রহনকারি দেশকে বন্ধু নাকি অভিভাবক বলা যেতে পারে এ নিয়ে জোর বিতর্ক চলতে পারে) তাদের অনেকেও বোধকরি কোরানের এসব আয়াত যে সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য তাতে কোনরকম সংশয় প্রকাশ করবেন না। রাজনৈতিক আশ্রয় ছাড়াও কত হাজার মুসলমান স্রেফ উন্নত জীবনের লোভে পশ্চীমা বিধর্মী দেশগুলিকে ‘অভিভাবক’/’নিরাপত্তাদানকারী’ মেনে নাগরিকত্ব গ্রহন করে এসব বয়ান শুনে সাবাশি দেন তার হিসেবই বা কে রাখে। বাংগালীরা ’৭১ সালে মুশরিক ভারতকে বন্ধু/নিরাপত্তাদানকারী/অভিভাবক মেনে যে কি ভয়াবহ অপরাধ করেছিল ভাবতেই ভয় হয়, তাও আবার উম্মার একতা ভেংগে স্বজাতি মুসলমান পাকি ভাইদের বিরুদ্ধে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম ওলামা, মাদ্রাসার শিক্ষক/ছাত্র গণহারে কেন পাক সমর্থক ছিল বুঝতে তেমন কষ্ট হবার কথা না, এ নিয়ে অবশ্য পরে লেখব। ভাগ্য ভাল যে বেশীরভাগ লোকে ধর্ম সম্পর্কে তেমন জানে না। কে জানে, এখন হয়ত শোনা যাবে যে আলোচিত আয়াত কেবলমাত্র আরব দেশের খৃষ্টান/ইহুদীদের জন্য, আমেরিকান খৃষ্টান/ইহুদীদের জন্য প্রযোজ্য নয়… ‘ব্রাক্ষন্যবাদী ভারতীয়দের’ অভিভাবক মানতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এটা আদিলের আবিষ্কার কোরানের কোথাও নাই, কোরানের আয়াত আরব দেশের খৃষ্টান/ইহুদীদের ব্যাপারে…মোমিন বান্দারাও সহজেই বুঝে যাবেন যে তাদের নিজের মাঝেও কোন রকম দ্বি-চারিতা নেই, একই সাথে কোরানের সকল বানীও সকল সময়ের জন্যই প্রযোজ্য। হয়ত ওনারা সকলে দ্বীনের সেবায় হিযরত করেছেন কে জানে।

আগেই বলেছি যে কোরান আসলেই কি বলে সেটা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়, তবে কোরানে বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করা নিয়ে কিছু আপতঃ পরস্পর বিপরীত আয়াত সহাবস্থান করে বলে এ নিয়ে মুসলমানদের ভেতরেই বিভ্রান্তি আছে, যেমন আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়েই আছে। বিধর্মীদের সাথে সাধারনভাবে বন্ধুত্ব সরাসরি নিষেধ করে আল্লাহ ৩-২৮, ৩-১১৮, ৪-৮৯, ৪-১৪৪, ৫-৫১, ৯-২৩ (এ আয়াতে নিজের বাবা ভাইও কাফের হলে তাদের বন্ধু/রক্ষাকর্তা হিসেবে গ্রহন না করার নির্দেশ আছে) আয়াত নাজিল করেন। আবার কিছু আয়াত যেমন ৬০-৮/৯, ৫-৫৭/৫৮ অনুসারে যারা মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর নয়, তারা ছাড়া বাকি বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয়নি। দুই ধরনের ভাবের মধ্যে সঙ্ঘাত আছে। এক ধরনের ভাবে জেনারেলাইজড বিধর্মী, আরেক ধরনের ভাবে মন্দ ধরনের সিলেকটেড বিধর্মী। এর সমাধান আমার বিষয় নয়, যদিও পরে নাজিল হওয়া আয়াত আগে নাজিল হওয়া আয়াত বাতিল করে দেয় জাতীয় সূত্র দিয়ে হয়ত কিছুটা আলোকপাত করা যায়। সুরা তওবা (যাতে ৯-২৯ আয়াত আছে) নাজিল হয়েছে এ সব সূরার পরে, সে সুরার আয়াত অনুযায়ী বন্ধুত্ব করা সম্ভব বলে তো মনে হয় না। বিশেষ করে কাউকে যুদ্ধে পরাজিত করে জানের বিনিময়ে অর্থ আদায় করে তার সাথে বন্ধুত্ব? দুই ভিন্ন ধরনের ভাবের কারনে সংশয়ে ভোগা মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে ভাল আলোকপাত করেছে মারেফুল কোরান (পৃষ্ঠা-৩৮)। সেখানে পরিষ্কার করা হয়েছে “আন্তরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসা কোন কাফিরের সাথে কোন অবস্থাতেই জায়েয নয়। তবে অনুগ্রহ, সহানুভূতি, ও উপকার সাধন যুদ্ধরত কাফির ছাড়া সবার বেলায়ই জায়েয”। সেলফ এক্সপ্লেনেটরি ব্যাখ্যা, বিধর্মীদের সাথে সৌজন্যমূলক/ভাল ব্যাবহার করা যাবে, তবে আন্তরিক বন্ধুত্ব কোন অবস্থাতেই করা যাবে না। এখানেই শেষ নয়, সেই সৌজন্যমূলক ব্যাবহার আবার নেহায়েত ভদ্রতার খাতিরে যে তাও নয়, সেটাও হতে হবে উদ্দেশ্যপূর্ন। “এমনিভাবে বাহ্যিক সচ্চরিত্রতা ও সৌহার্দ্যমূলক ব্যাবহার সবার সাথেই জায়েয রয়েছে; তবে এর উদ্দেশ্য অতিথির আতিথেয়তা অথবা অমুসলমানকে ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত করা অথবা তাদের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করা হতে হবে।“ আশা করা যায় মোমিন মুসলমানগন বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করা যায় কিনা এ নিয়ে আর সংশয়ে ভুগবেন না। আমাদের সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের প্রতিষ্ঠান আমাদের সাম্প্রদায়িকতা শেখায় এর মাঝে কতটা ভুল আছে? জাকির নায়েকও কিছুটা কায়দা করে এ জাতীয় কথাই এ সম্পর্কে বলেন। গ্রাম্য মোল্লার কথা নয়, বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে ওয়েবেই বহু ফতোয়া আছে মারেফুল কোরানের মতই, সহি বাংলা ইসলামী সাইট সমূহেও আছে, এর কিছু সাইটে বাঘা বাঘা ইসলাম ডিফেন্ডার ভাইরা অংশগ্রহন করেন, অপরকে এসব সাইট সহি বলে রেফার করেন। ঠান্ডা মাথায় এসব ধর্মীয় বিধান নামের আবর্জনা পাঠ করাও মানসিক শাস্তির মত, একটি উদাহরন শুধু স্যাম্পল হিসেবে দেখা যেতে পারে।

পরের পর্বে কিছুটা আলোচনা করব অন্যান্যে কিছু দেশেও একই প্রবনতার সামান্য কিছু উদাহরন দেখিয়ে, আর যুগ যুগ ধরে এসব সাম্প্রদায়িকতা চর্চা সংস্কৃতির কুফল কেমন হতে পারে সেটা আলোচনায়। এত এত বিদগ্ধ আলেম ঈমামগন বিভিন্ন টাইম লাইনে কিভাবে একই ধরনের ভুল করতে পারেন? একই রকম ভুল কিভাবে মধ্যযুগের ইবনে কাথির থেকে শুরু করে একালের আবদুর রহিম গ্রীনের হতে পারে? সকলে স্কুল বালকদের মত একই চোথা মেরেছেন যা ভুল? তাহলে আর তাদের বিশিষ্ট আলেম বলে সম্মান করার মানে কি? তারা ভুল করেছেন মেনে নেওয়া যেতেই পারে, সেক্ষেত্রে মিলিয়ন ডলার মূল প্রশ্ন থেকেই যায়; কিভাবে এমন মারাত্মক ভুল শিক্ষা যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বময় ইসলামী ধর্মশিক্ষার সূত্র হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে? আমি শুধু সামান্য কিছু সূত্র যেগুলি বহুল প্রচলিত তারই সামান্য কিছু এনেছি। আরো যে কত অসংখ্য এ জাতীয় সূত্র আছে কে হিসেব করতে পারে। এসব সূত্র সরাসরি চিরতরে অস্বীকার করতে না পারলে ইসলাম সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করে না এই অভিযোগ কিভাবে অস্বীকার করা যায়?

[চলবে]

সূত্রঃ

১। মাওলানা আবদুল্লাহ ইউসুফ আলীর ইংরেজী তাফসীর অনুসরনে অনুবাদ -অনুবাদে, অধ্যাপিকা হোসনে আরা খান।

২। Reliance of the Traveller