বেহেস্তের পরী

(একটি বিনোদন পোষ্ট)
আকাশ মালিক
উৎসর্গ-কাজী রহমান।

কোরান হাদিস পড়ে আমরা মোটামুটি সবাই বেহেস্ত সম্পর্কে অবগত। বেহেস্তের বাসিন্দা, বিশেষ করে প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগণের আকর্ষণীয় বিবরণ শুনে আমরা অবাক হয়েছি, তারা দেখতে কেমন? ছোটবেলা সুরা আর রাহমান পড়ে এমনটাই চিন্তা করেছি বহুদিন। অনেকদিন মুরুব্বীদের পরামর্শে এই সুরা পড়ে বুকে ফু দিয়ে ঘুমিয়েছি। ওয়াজ মাহফিলে হুজুরদের মুখ থেকে বেহেস্তী পরীদের রূপের বর্ণনা শুনে বুড়ো মানুষদেরও নড়েচরে বসতে দেখেছি। সুরা আর রাহমান পড়ে বেহেস্তের সিটিজেনসিপ নিয়ে পরীদের সঙ্গ পাওয়ার সপ্ন মনে জাগে নাই এমন মানুষ বোধ হয় দুনিয়ায় খুব কমই আছেন। এই সপ্ন দেখে কতো চুর ডাকাত সন্ত্রাসী যে মসজিদমূখী হলো তার সীমা সংখ্যা নাই। আজ তাদের চেহারা সুরত দেখে আমি একটু ভয় পেয়ে গেছি, তাই আপনাদের স্বরণাপন্ন হলাম। এখন সেই সুরা আর রাহমান পড়তেও আমার ভয় লাগে। এ ব্যাপারে আপনাদের এডভাইস বা অপিনিয়ন নেয়াটা জরুরী মনে করি। বেশী কথা না বাড়িয়ে সুরাটার ফজিলতি আয়াতগুলো আরেকবার তেলাওত করা যাক।

সুরা আল রাহমান-
(শুরু করছি পরম করুণাময় আল্লাহ মাবুদ পালনকর্তার নামে, যিনি বেহেস্ত দোজখ সৃষ্টি করে রেখেছেন মানুষ সৃষ্টির আগে।)

আয়াত-
৫) সূর্য ও চন্দ্র হিসাবমত চলে।
৬) এবং তৃণলতা ও বৃক্ষাদি সেজদারত আছে।
৭) তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদন্ড। And the heaven He raised and imposed the balance
১৪) তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে।
১৭) তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক।
১৯) তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন।
২০) উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করেনা।
২২) উভয় দরিয়া থেকে উৎপন্ন হয় মোতি ও প্রবাল।
২৪) দরিয়ায় বিচরণশীল পর্বতদৃশ্য জাহাজসমূহ তাঁরই (নিয়ন্ত্রনাধীন)।And to Him belong the ships [with sails] elevated in the sea like mountains.
(পর্বতদৃশ্য জাহাজ! আল্লাহর উপমার তুলনা হয়না)
২৯) নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সবাই তাঁর কাছে প্রার্থী। তিনি সর্বদাই কোন না কোন কাজে রত আছেন।(নো ব্রেইক টাইম, নো হলিডে, নো পেনশন। ( সুবহানাল্লাহ)
৩১) হে জিন ও মানব! আমি শীঘ্রই তোমাদের জন্যে কর্মমুক্ত হয়ে যাব। (হঠাৎ থার্ড পার্সন থেকে ফার্ষ্ট পার্সনে? তিনি তিনি করতে করতে তিনিই এখন আমি?)
৩৭) যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে তখন সেটি রক্তবর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মত হয়ে যাবে।
৪১) অপরাধীদের পরিচয় পাওয়া যাবে তাদের চেহারা থেকে; অতঃপর তাদের কপালের চুল ও পা ধরে টেনে নেয়া হবে।
৪৪) তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মাঝখানে প্রদক্ষিণ করবে।
৪৬) যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে পেশ হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দুটি উদ্যান।
৪৮) উভয় উদ্যানই ঘন-শাখা-পল্লববিশিষ্ট।
৫০) উভয় উদ্যানে আছে বহমান দুই প্রস্রবন।
৫২) উভয়ের মধ্যে প্রত্যেক ফল বিভিন্ন রকমের হবে।
৫৪) তারা তথায় রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। উভয় উদ্যানের ফল তাদের নিকট ঝুলবে।
৫৬) তথায় থাকবে আনতনয়ন রমনীগন, কোন জিন ও মানব পূর্বে যাদের ব্যবহার করেনি। In them are women limiting [their] glances, untouched before them by man or jinn
৫৮) প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগণ। As if they were rubies and coral.
৬২) এই দুটি ছাড়া আরও দুটি উদ্যান রয়েছে।
৬৪) ঘাড়ো-ঘন সবুজ।
৬৬) তথায় আছে উদ্বেলিত দুই প্রস্রবণ।
৬৮) তথায় আছে ফল-মূল, খেজুর ও বেদানা।
৭০) সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ।
৭২) তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ। Houris (beautiful, fair females) reserved in pavilions
৭৪) কোন জিন ও মানব পূর্বে তাদেরকে স্পর্শ করেনি।
৭৬) তারা সবুজ মসনদে এবং উৎকৃষ্ট মূল্যবান বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে।
৭৮) কত পূণ্যময় আপনার পালনকর্তার নাম, যিনি মহিমাময় ও মহানুভব।

বেহেস্তের বর্ণনা সাহাবিগন রাসুলের কাছে প্রায়ই জানতে চাইতেন।

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَأَلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ {يَوْمَ نَحْشُرُ
المتقين إلى الرحمن وفدا} قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ——————–

একদিন হজরত আলী (রাঃ) রসুলুল্লাহকে (দঃ) কোরানের ১৯ নং সুরা মরিয়মের ৮৫ নং আয়াত নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। আয়াতটি হলো-
الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا يَوْمَ نَحْشُرُ সেদিন দয়াময়ের কাছে পরহেযগারদেরকে অতিথিরূপে সমবেত করব।

হজরত আলী (রাঃ) জানতে চেয়েছিলেন, বাহন ছাড়া অতিথি কীভাবে হয়! রসুলুল্লাহ বললেন- ‘যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, তারা যখন কবর থেকে বের হবে তখন ফেরেস্তারা পাখাওয়ালা সাদা উষ্ট্রী নিয়ে তাদের স্বাগত জানাবে, তার উপর থাকবে স্বর্ণের আসন। তাদের জুতার ফিতা হতে ঝলমলে আলো নির্গত হবে। সেই উষ্ট্রীগুলো প্রতি পদক্ষেপে দৃষ্টির পলক যতদূর যায় ততদূর গমণ করবে। এভাবে তারা জান্নাতের দরজার নিকট পৌছে যাবে। সেখানে দুটি ঝরনা প্রবাহিত থাকবে। যখন তারা সে দুটির একটি হতে পান করবে, তাদের চেহারার মধ্যে প্রশান্তির চি‎হ্ন ফুটে উঠবে। তারা অন্য ঝরনাটির পানি দিয়ে ওযু করবে। এর পর তাদের চুল আর কখনও এলোমেলো হবে না। এর পর তারা জান্নাতের দরজায় কড়াঘাত করবে। সেই কড়াঘাত শুনে সকল হুর বুঝতে পারবে যে তার স্বামী আগমণ করেছে। অতিরিক্ত তাড়াহুড়ার কারণে তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা হবে। সে একজন চাকরকে পাঠাবে দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। উক্ত চাকরের সৌন্দর্য ও উজ্জলতা এতটাই বেশি হবে যে, যদি আল্লাহ উক্ত জান্নাতীর নিকট এই চাকরকে পরিচয় না করিয়ে দিতেন তবে তাকে দেখে সে সেজদায় পড়ে যেতো। সে দরজা খুলে বলবে, আমি আপনার সেবক যাকে আপনার দেখাশুনার ভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উক্ত জান্নাতী ঐ খাদেমকে অনুসরণ করে যখন তার স্ত্রীর নিকট পৌছাবে, অতিরিক্ত তাড়াহুড়ার কারণে তার স্ত্রী স্বম্ভিত হারিয়ে ফেলবে। সে তাবু থেকে বের হয়ে উক্ত ব্যক্তির সাথে আলিঙ্গন করবে এবং বলবে ‘তুমি আমার ভালবাসা আমি তোমার ভালবাসা। আমি তুষ্ট কখনও রুষ্ট হবো না। আমি প্রসন্ন কখনও বিষন্ন হবো না। আমি চিরজীবী কখনও মৃত্যুবরণ করবো না’। তার পর সে এমন একটি বাড়িতে প্রবেশ করবে যার নিচ হতে উপর পর্যন্ত এক লক্ষ গজ। তা স্থাপিত হবে মনি মানিক্যের পাথরের উপর। বাড়িটির ভিতরে যাওয়া আসার রাস্তাসমূহ লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের হবে, কোনো একটি রাস্তা অন্যটির মতো হবে না। উক্ত ব্যাক্তি যখন শোবার ঘরে প্রবেশ করবে তখন সেখানে একটি পালঙ্ক দেখতে পাবে। তার ওপর ৭০ টি তোষক থাকবে তোষকের ওপর ৭০টি স্ত্রী থাকবে। প্রতিটি স্ত্রীর পরনে ৭০ টি পোশাক থাকবে। উক্ত স্ত্রীর সৌন্দর্য ও উজ্জলতা এমন হবে যে,] পোশাক ও অলংকার ভেদ করে তার হাড়ের মজ্জা পর্যন্ত দেখা যাবে। সে এক রাত পর্যন্ত সময় তাদের সহিত মিলিত হবে’।

সত্তরটি পোশাক ও অলংকার ভেদ করে হাড়ের মজ্জা দেখা যায় এমন পরীর সাথে রাত কাটানোর আমার আর শখ নাই। যাবার আগে আপনাদের জন্যে সতর্কবাণী- আপন স্ত্রীকে এই প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীর ছবি দেখাবেন না। কোথা থেকে পেয়েছি জানতে হলে এখানে গুঁতো মারুন,

httpv://www.youtube.com/watch?v=kSXYnzyS234