পটভূমি:

অভিযোগ করা হয়, কক্সবাজারের রামু উপজেলার বৌদ্ধ পাড়ার উত্তম বড়ুয়া নামের এক যুবক তার ফেইসবুক একাউন্ট থেকে কুরআন শরীফের অবমাননা করে একটি ছবিটি পোস্ট করে।

প্রতিক্রিয়া:

এই অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার (২৯/০৭/২০১২) রাত দশটায় রামুতে জামাত-শিবিরের একটি মিছিল বের হয়। মিছিল করে শহর প্রদক্ষিণ শেষে এরা উত্তম বড়ুয়ার বিচার দাবী করে।

কিছুক্ষণ পর রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আরেকটি দল মিছিল নিয়ে বের হয়ে রামুর বৌদ্ধ পাড়ার দিকে এগোয়। বিশেষানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত এই ধর্মান্ধ বড়াহরা রামুর ওই বৌদ্ধ পাড়ার প্রায় পনেরোটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই কাঠমোল্লা ধর্মান্ধ মুসলমানরা এরপর এগিয়ে তিনটি বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেয়। সাথে চলে মন্দির লুটপাট।

এরপর, বিশেষ জোশে জোশান্বিত এই ধর্মান্ধ মুসলমানের দল আশেপাশের আরো কয়েকটি বৌদ্ধ গ্রামে হামলা চালায়, আগুন দেয় আরো কয়েকটি মন্দিরে।

প্রকৃত ঘটনা

ফেসবুকের একটি গ্রুপ ইনসাল্ট আল্লাহ-এ কুরআন শরীফের অবমাননা করে একটি ছবিটি পোস্ট করা হয় এবং তাতে উত্তম বড়ুয়াকে ট্যাগ করা হয়। আর এর প্রেক্ষিতে বিশেষানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত কাঠমোল্লারা চালায় বৌদ্ধদের উপর এই তান্ডব। সাথে ইন্ধন হিসেবে যোগ হয় সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ইস্যু

 


রামু সীমা বিহারের বৌদ্ধ মূর্তি

 

প্রশাসনের ভূমিকা:

রাত এগারোটা থেকে ভোররাত চারটা পর্যন্ত চলে জামাত-শিবির ও কাঠমোল্লা ধর্মান্ধ মুসলমানদের এই তান্ডবলীলা। এই পাঁচ ঘন্টা পুলিশ-বিজিবি-স্থানীয় প্রশাসন এই বড়াহদের নাকি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি? সেলুকাস!

 


বৌদ্ধ মন্দিরের ভাঙা মূর্তি

 

বর্তমান অবস্থা:

সর্বমোট পনেরোটি মন্দির পুড়িয়ে দেয়া হয়। এরমাঝে আছে তিনশ বছরের পুরনো রামু সীমা বিহার। এছাড়া, ধ্বংস করা হয়েছে প্রায় পঞ্চাশটির বেশি বৌদ্ধ বসতি, দোকান-পাট। এখন রামুতে ১৪৪ ধারা জারি আছে রবিবার সকাল হতে।

আজ রবিবার দুপুর বারোটার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়ার লাখেরা অভয় বৌদ্ধবিহারের মূল মন্দিরসহ পাঁচটি শাখামন্দির ভাঙচুর করেছে ধর্মান্ধ মুসলমানদের একটি দল। পরে একটি হিন্দুমন্দিরও ভাঙচুর করা হয়। এরপর এই উন্মাদের দল আশেপাশের বৌদ্ধ-হিন্দু বসতিতে আক্রমন করে। পরে, এরা কোলাগাঁও বৌদ্ধবিহারে ও নবারণ সংঘ দুর্গাবাড়ী হিন্দুমন্দির ভাঙচুর করে।

সাতকানিয়া থানার সংখ্যালঘু ডেমসা গ্রামে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এছাড়া পটিয়ার পাচুরিয়াতেও হিন্দু-বৌদ্ধদের হামলার চেষ্টা করা হয়। বোয়ালখালির শাকপুরার সংখ্যালঘুদের হামলার বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে ধর্মান্ধ মুসলমানরা।

:line:

বাংলাদেশে আইন আছে, আদালত আছে। নিজের মতামত প্রকাশ করার জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ আছে, ফেসবুক, ব্লগ আছে। কেউ যদি কারও কথায়/কাজে আহত বোধ করে, কারও বিশ্বাস যদি কারও কথায়/কাজে আঘাত প্রাপ্ত হয়, সেটার বিচার চাইবার জন্য আদালত আছে। এই সব আঘাতের জবাব দেয়ার জন্য পত্রিকা, ব্লগে, উন্মুক্ত আলোচনার মঞ্চ আছে। কিন্তু আমাদের সমাজের এই সব ধমার্ন্ধ, কাঠমোল্লা, জামাত-শিবির, কওমী মাদ্রাসার অপদার্থ অমানুষ বড়াহ নন্দনগুলো এইসব মানবিক পথগুলো না ধরে সব সময় সহিংসতার রাস্তায় চলে। হত্যা করে নিরীহ মানুষ, ধ্বংস করে উপাসানালয়, অন্য ধর্মাম্বলীদের বসতি-ব্যবসায়।

এই মৌলবাদীগুলো কিছুদিন আগে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’-এর জন্য ইউটিউব বন্ধ করার আন্দোলন করল। অন্যের উপর রাগ করে নিজের গালে জুতা মারার মত করে আমাদের মহামান্য সরকারও এতে সাঁয় দিল।
এই ঘটনার রেশ যেতে না যেতে সামান্য একটা ফেসবুকীয় ছবির জন্য ধ্বংস করা হলো বৌদ্ধদের মন্দির-মূর্তি, বসতি। মানবিক বা, যৌক্তিক পন্থায় কোন কিছুর বিরোধিতা করা যায়, সভ্য উপায়ে বিচার চাওয়া যায়, এই বিষয়টিই মাথায় থাকে না এসব কুকুরছানাদের।

সরকারও এদের লাই দিয়ে যাচ্ছে। টানা পাঁচ ঘন্টা প্রশাসনের নাকের উপর বসে এরা বৌদ্ধদের নিপীড়ণ করল, অথচ, প্রশাসন ব্যবস্থা নিল ভোররাতে। এসব নিমমোল্লা অমানুষদের সব সরকারই লাই দিয়েছে। এতে করে যে দেশের সর্বনাশ করা হচ্ছে তা বুঝেও নিজের লাভের জন্য চুপ করে থাকে গোদীলোভী সরকার ও দলগুলো।

এর আগে চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদ, হাটাজারীতে হিন্দু মন্দির-বসতিতে আক্রমন করেছিল নোংরা ধর্মান্ধ কীটগুলো। তারও কয়েকমাস আগে চট্টগ্রামের ব্রিকফিল্ড রোডে খ্রীস্টানদের উপর হামলা করে এই নরপশুগুলো। এভাবে, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রীস্টান, মুক্তমনাসহ সব মানবতাবাদী ও বিরোধীদের দমন করতে থাকবে এইসব ধর্মান্ধ, কাঠমোল্লা, জামাত-শিবির, কওমী মাদ্রাসার প্রোডাক্ট ছাগুগুলো। একদিন হয়ত দেখা যাবে, ওই কীটগুলো ছাড়া আর কেউই অবশিষ্ট নেই।

ভয় হচ্ছে…………অজানা ভবিষ্যতের ভয়ে কেঁপে উঠছি বারবার। বাংলাদেশ কি তবে বাংলাস্তান হতে চলল?

তথ্য ও ছবি সহায়িকা:

 

০১০২০৩০৪