অনেকে হয়ত ভার্চ্যুয়াল জগতের কল্যানে অলরেডি অবগত হয়েছেন, আবার অনেকে হয়ত এখনো জানেন না । তবে টাইটেলটা পড়ামাত্রই যেকোন পাঠকের পক্ষে (বাংলা সিনেমার মতো প্রথম দৃশ্যর পরে) ধারণা করা সম্ভব, কি ঘটবে পরবর্তীতে । নতুন কোন আবিষ্কার নয়, পুরাতন দাঙ্গা-হাঙ্গামার তরতাজা খবর নিয়ে এই যৎসামান্য লেখা । দূরে থেকে ও প্রিয়জনদের জীবনের হুমকি আরেকটি নিদ্রাহীন রাত অতিবাহিত করাই । চোখগুলো ভেজাভেজা নয় তবে অনেক ক্লান্ত, ভারী মন, নার্ভাস অনুভব হচ্ছে । ২০১০ সালে অভিজিৎ দা একটা লেখা লিখেছিলেন, মোর গাঁয়ের সীমানার পাহাড়ের ওপারে প্রতিধ্বনি শুনি । সেই পাহাড়ের প্রতিধ্বনি আরো শোনা যাচ্ছে । বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর শহর রাঙামাটিতে বসবাসরত পাহাড়ীদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয় । গত সেপ্টেম্বারের ২২ তারিখ হতে পাহাড়ীরা নিদ্রাহীন রাত অতিবাহিত করছে । চলছে মনভারী করার মতো মারো- ধরো, সেটেলারদের উল্লাস । চারদিকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় আকাশ অনেক ভারী । প্রশাসনের ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকাস্বত্তেও গত ২৩ তারিখের রাতে সেটেলারের উগ্রপন্থীরা পৃথক পৃথকভাবে ট্রাইবেল আদাম, রাজমনি পাড়া এবং ভেদভেদিতে আক্রমন চালানোর চেষ্টা করে । পাহাড়ীদের প্রতিরোধের মুখে তারা গ্রামগুলোতে ঢুকতে না পারলে ও মারো, জ্বালাও হৈল্লাস করতে করতে উস্কানি দিতে থাকে । চারিদিকে চাপা ভয়ে পাহাড়ী নারী -শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয় । ফেইসবুকের আপডেটগুলো পড়তে পড়তে হঠাৎ অবচেতন হয়ে পড়ার উপক্রম হই ।

Army
বীর সেনাবাহিনীর নীরব ভূমিকা

তবে একটা কথা না বললে নয়, অনেক মেডিয়া এবং কি ব্লগ জগতে সাধারণ বাঙালি শুভাকাঙ্কিদের ও একই ধারণা পার্বত্য চট্রগ্রামে মারামারি মানে “বাঙালি-পাহাড়ীর সংঘর্ষ“, যা একটা পক্ষপাতমূলক ধারণার মতো হয়ে কাজ করে । ‘সংঘর্ষ’ এবং ‘হামলা’ দুটো ভিন্ন জিনিস । প্রতিরোধকে যদি সংঘর্ষের কাতারে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে হামলার ইন্ধনদাতা মূল দুষ্কৃতিকারীরা আইনের হাত থেকে বেঁচে যান । এবার শুনি ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে হয়েছে।

video footage (1) of the Rangamati attack
যেভাবে বনরুপাতে আক্রমন করা হয়

স্বাভাবিকভাবে ভিন্নভিন্ন পত্রিকায় ভিন্নভিন্নভাবে ঘটনার বিবরণী তুলে ধরা হয় । আজকের প্রথম আলো” পত্রিকা থেকে;

আদিবাসী এক ছাত্রের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে রাঙামাটি কলেজের বাঙালি ছাত্রটি বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে কলেজে হামলা চালালে ছাত্ররা জাতিগত ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে যায়। তবে কলেজের ঘটনাটিকে সংঘর্ষ বলা গেলেও কলেজের বাইরে যা ঘটেছে তা সোজাসাপ্টা জাতিবিদ্বেষী হামলা। বাঙালি ও আদিবাসী উভয় পক্ষ সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। সেনাবাহিনী এবং পুলিশ সংঘর্ষ-পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। তাদের উপস্থিতি সত্ত্বেও শহরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীরা নির্বিচার হামলার শিকার হয়। উত্তেজিত কিছু বাঙালি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সভায় হামলা করে বেশ কয়েকজন আদিবাসী জনপ্রতিনিধিকে মারধর করে। প্রায় দেড় হাজার বাঙালি বনরূপা বাজারে আদিবাসীদের ওপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। কয়েকটি আদিবাসী বসতিতেও হামলা করা হয়। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং পুলিশের তরফে ১৪৪ ধারা জারি হলে দুষ্কৃতকারীদের দৌরাত্ম্য কমে। সেই ১৪৪ ধারা এখনো চলছে এবং পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই শান্ত বলা যায় না।

[লিংক]

পত্রিকাগুলোতে প্রথমে সংঘর্ষ হিসেবে লেখা হলেও পরবর্তীতে হামলা হিসেবে উল্লেখ করা হয় । যে হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন জুম্ম ছাত্র, একজন সরকারী চিকিৎসক, ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ২ জন কলেজ শিক্ষক ও ৫ জন বাঙালি ছাত্র আহত হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয় ও বিশ্রামাগারসহ জুম্মদের ঘববাড়ী ও দোকানপাত ভাঙচুর করে ।

Army
ঐ পিছনে দেখা যায় একটা মসজিদ এবং আক্রমনাত্মক সেটেলার, মাঝখানে আর্মি এবং আর্মিদের মুখোমুখী দুজন প্রতিবাদী পাহাড়ী

দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার‘ এই প্রবাদটা বেশিরভাগ ডিগ্রীধারী লোকই জানে । বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে বহু সংখ্যালঘু ধর্মালম্বীর বসবাস । সম্প্রতি বার্মায় রোহিংগা, আসামের ঘটনার প্রতিশোধমূলক আক্রমণ পার্বত্য চট্রগ্রামে যে ঘটনোর চেষ্টা করা হচ্ছে তার আভা অনেক আগে পাওয়া গেলেও প্রশাসনের সাম্প্রদায়িক মনোভাব কোন হামলাকে থামাতে পারে না । রাঙামাটির ঘটনাটি পূর্ব-পরিকল্পিত বলে বিজ্ঞ মহলের ধারণা কেননা নিমিষে কয়েকমিনিটের ব্যবধানে পুরা রাঙামাটি শহরে একযোগে হামলা চালানো হয় ।

Dr. Sushovon Dewan
সেটেলারদের আক্রমনে গুরুতর আহত ডাঃ সুশোভন দেওয়ান

এবং প্রতিবাদ

Protest

পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত । যেকোন সময়ই সেটেলার বাঙালিরা হামলা চালাতে পারে এমন আশংকা এখনো বিরাজ করছে, ২ বছর আগে যেমনটা ঘটেছিল খাগড়াছড়িতে । তবুও এই দেশ আমার বলে চোখের পানি মুছে হলেও বেঁচে থাকার জন্য প্রতিবাদ করি, যদিও আইনের রক্ষকরা এত উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ও চোখ-মুখ খোলা রেখে ঘুমান ।

Protest

নিচের লিংকগুলো সময় হলে …………… ।

…………………………………………………………………………………………………………………………………..
১. Prothom Alo: দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে দমন করুন: রাঙামাটিতে জাতিগত সন্ত্রাস
২. Banglanews24: বিলাইছড়ি হাসপাতাল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
৩.BBC: BBC: রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা কালও থাকবে: প্রশাসন
৪. Prothom Alo: বাঙালি-আদিবাসী সংঘর্ষ, রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা
৫. The Daily Star: Rampage in Rangamati
৬. The New Age: Rangamati tense
৭. chtnews24: রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলা

বিঃদ্রঃ ছবি এবং ভিডিওর জন্য ফেইসবুক বন্ধুদের কাছে কৃতজ্ঞতা রইল