লিখেছেন:কামালউদ্দিন আহমেদ

কদিন পূর্বে বটিভিতে ভগবান কৃষ্ণের জন্ম ‎উৎসব অনুষ্ঠানে একটি নাটিকা দেখলাম। তা থেকে যতোটুকু বুঝতে পারলাম। প্রায় একই কাহিনী ওখান ‎‎থেকে ধার করে যীশু বা ঈসাকে বানানো হয়েছে! ঈসার বা যীশুর গল্পে পরে আসছি। প্রথমেই কৃষ্ণের যে ‎কাহিনীটি দেখছিলাম তার যতোটা মনে পড়ে তার বিবরণ। এক অত্যাচারি রাজা (নামটা ‎সম্ভবত দশরথ) তার পিতাকে বন্দি করে (আওরঙ্গজেবের মতো) রাজসিংহাসনে বসে প্রজাদের উপর ‎‎জোরজুলুম চালিয়েই যাচ্ছে। ভগবানের এটা সহ্য হচ্ছিলো না, তাই সে চিন্তা করলো ওই রাজাকে শায়েস্তা ‎করতে হলে তাকে জন্ম নিতে হবে। (যে ভগবান হও বললেই সব হয় তাকে কেন জন্ম নিয়ে শয়তান ‎‎(অত্যাচারিদের) শায়েস্তা করতে হবে তা আমার বোধগম্য নয়)। যাহোক রাজা তার একমাত্র বোনকে বিয়ে ‎দিলো এবং বোনকে তার নতুন জামাইসহ এগিয়ে দিতে যাচ্ছিলো। পথিমথ্যে হঠাৎ রাজা দৈববাণী শুনতে ‎‎পেলো, “এর গর্ভে যে সন্তান হবে (৮ নম্বর সন্তান) সে তোমাকে হত্যা করবে।” হঠাৎ এরূপ দৈববাণী ‎শুনে রাজা তরবারি বের করলো আদরের বোনকে হত্যা করার জন্য তা দেখে নতুন জামাই এবং বোন ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো কেন সে নিজের বোনকে হত্যা করতে চাচ্ছে। তখন ‎রাজা দৈববাণীর কথা বললো, পরে এরা দুজন প্রাণ ভিক্ষা চাইলে রাজা একটি শর্তে রাজি হলো। শর্তটি ‎হলো তার বোনের যতো সন্তান হবে তা রাজার হাতে তুলে দিতে হবে। বিশেষ করে ৮ নম্বর সন্তান এবং ‎তাদেরকে বন্দি জীবন-যাপন করতে হবে। বন্দিখানার গেট সব সময় বন্ধ থাকে এবং পাহারাদার থাকে ‎যাতে ওরা পালিয়ে যেতে না পারে বা সন্তান হলে যাতে তাকে বাইরে পাচার করতে না পারে।‎

যখন আট নম্বর সন্তানটি হতে যাচ্ছে, অর্থাৎ ওই নারীর প্রসব ব্যাথ্যা ওঠে তখন দারোয়ান ঘুমিয়ে ‎পড়ে আর এই ফাঁকে এক দেবদূত কারাগারের তালা খুলে মধ্যে এসে হঠাৎ হাজির এবং সে তাদের ‎বললেন গোকূলে এক নারীর এক সন্তান হচ্ছে তাকে এখানে এনে রাখবে এবং তোমাদের সন্তান সেখানে রেখে আসবে। এজন্যই বোধকরি আমরা প্রায়ই এই শ্লোকটি বলি যে, “তোমারে ‎বধিবে যে গোকূলে বেড়েছে সে।” যাহোক, দেবদূতের কথামত সন্তান জন্ম নেবার পর মা তখনও অজ্ঞান ‎হয়ে পড়ে আছে, পিতা সন্তানটিকে নিয়ে বেরিয়ে যায় এবং গোকূলে গিয়ে সেখানে যেভাবে দেবদূত ‎বলেছিলো সেইভাবে দেখতে পায় এক মহিলা সন্তান জন্ম দিয়েছে এবং ঘুমিয়ে আছে। কৃষ্ণর পিতা ‎কৃষ্ণকে ওই মহিলার পাশে রেখে তার সন্তানটিকে নিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর ‎‎দারোয়ানের ঘুম ভাঙ্গলে দেখতে পায় একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তখন রাজাকে খবর দিলে রাজা এসে ‎সন্তানটিকে তার মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে মারে। নাটিকাটিতে অবশ্য দেখানো হয়নি অন্য ‎আর ৭টি সন্তানকে এভাবে মারা হয়েছিলো কিনা? ‎

কৃষ্ণ ও ঈসার জন্ম কাহিনীতে আশ্চর্যরকমের মিল এবং অলৌকিক কাহিনীর ছোঁয়া। ঈসার জন্ম কাহিনীতে ‎‎তো রয়েছে মহাঅলৌকিক কাহিনী! মুসা ও মোহাম্মদের এরূপ আশ্চর্যজনকভাবে জন্ম হয়নি। তাদের জন্ম ‎হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই অর্থাৎ সাধারণ মানুষের মতোই। তবে ঈসা ও মুসার জন্মের পর যেসব ঘটনার ‎বিবরণ জানা যায় তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং একজন তথাকথিত দয়ালু ঈশ্বর বা যিহোবা যে কিভাবে এমন ‎নির্মম, নিষ্ঠুর, ঘাতক হতে পারে তা কল্পনারও অতীত। যখন কোন ভগবান বা ঈশ্বর নিজে জন্ম নেবার ‎সময় অন্য শিশুদের হত্যা জায়েজ করে তখন ওসব ভগবান বা ঈশ্বরদেরকে (যদি থাকেও) অমান্য করলে ‎‎বোধকরি কোন অন্যায় হবে না। যীশু বা ঈসা এবং মুসার জন্মের পর বহু শিশু হত্যা করা হয়েছিলো! যা ‎‎কোনভাবেই একজন বা বহুজন দেবতা/ঈশ্বরের অকল্পনীয় হিংস্রতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ‎

এবার আসি যীশুর জন্ম কাহিনীতে। ভগবান কৃষ্ণ যেভাবে মানুষবেশে নারীর গর্ভে জন্মেছিলো (যদিও তার ‎পিতা ছিলো) কিন্তু যীশু জন্মেছিলো পিতা ছাড়াই ঈশ্বরের কথিত মহাশক্তিবলে। যহোক, বিশ্বাসীদের বিশ্বাস ‎মতে, ঈশ্বর বা আল্লা চাইলে যদি সবই হতে পারে, তাহলে পিতা ছাড়া সন্তানও হতে পারে! তাতে ‎অবিশ্বাসীরা অবাক হলেও বিশ্বাসীদের কিছু যায়-আসে না! পূর্বেই উল্লেখ করেছি এদের তিনজনেরই জন্মের ‎সময় শিশু হত্যা হয়েছিলো, যা ভগবান বা ঈশ্বরদের অত্যন্ত অমানবিক এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। ‎‎যেমন বাইবেলে যীশুর জন্ম কাহিনী এরূপ:-

মথি ১ম অধ্যায় ১৮-২৫:‎ 18 …য়োষেফের সঙ্গে তাঁর মা মরিয়মের বাগদান হযেছিল; কিন্তু তাঁদের বিযের আগেই জানতে পারা গেল যে পবিত্র আত্মার শক্তিতে মরিয়ম গর্ভবতী হযেছেন৷ 19 তাঁর ভাবী স্বামী য়োষেফ ন্যায়পরায়ণ লোক ছিলেন৷ তিনি মরিয়মকে লোক চক্ষে লজ্জায় ফেলতে চাইলেন না, তাই তিনি মরিয়মের সাথে বিবাহের এই বাগদান বাতিল করে গোপনে তাকে ত্যাগ করতে চাইলেন৷ 20 তিনি যখন এসব কথা চিন্তা করছেন, তখন প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাঁকে দেখা দিযে বললেন, “য়োষেফ, দায়ূদের সন্তান, মরিয়মকে তোমার স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে ভয় করো না, কারণ তার গর্ভে যে সন্তান এসেছে, তা পবিত্র আত্মার শক্তিতেই হযেছে৷ 21 দেখ, সে এক পুত্র সন্তান প্রসব করবে, তুমি তাঁর নাম রেখো যীশু, কারণ তিনি তাঁর লোকদের তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করবেন৷” 22 এই সব ঘটেছিল যাতে ভাববাদীর মাধ্যমে প্রভু যা বলেছিলেন তা পূর্ণ হয়৷ 23 শোন! “এক কুমারী গর্ভবতী হবে, আর সে এক পুত্র সন্তান প্রসব করবে, তারা তাঁকে ইম্মানূযেল যার অর্থ “আমাদের সঙ্গে ঈশ্বর” বলে ডাকবে৷ 24 য়োষেফ ঘুম থেকে উঠে প্রভুর দূতের আদেশ অনুসারে কাজ করলেন৷ তিনি মরিয়মকে বিযে করে বাড়ি নিযে গেলেন৷ 25 কিন্তু মরিয়মের সেই সন্তানের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত য়োষেফ মরিয়মের সঙ্গে সহবাস করলেন না৷ য়োষেফ সেই সন্তানের নাম রাখলেন যীশু৷

খ্রিস্টনগণ বিশ্বাস করেন, যীশু জন্মের পূর্বেই তার ভাববাণী বা ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিলো ওল্টটেস্টামেন্ট বা ইহুদি শাস্ত্রে; যেখানে লেখা আছে (যিশাইয় বা ইসাইয়া ৭ অধ্যায় ১৩-১৪ পদ বা আয়াত) যিশাইয়া ভাববাদী বলছিলেন, ভবিষ্যতে এক কুমারী বা যুবতী মহিলা গর্ভবতী হয়ে পুত্র প্রসব করবে এবং তার নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল অর্থাৎ [আমাদের সহিত ঈশ্বর]। যা পরিপূর্ণভাবে খ্রিস্টান সমপ্রদায়ের বিশ্বাস। যতোদূর জানি, এ আয়াত দুটো নিয়ে বিভ্রান্তি‎ রয়েছে। সম্ভবত মুসলমানেরা দাবি করেন যে এ আয়াতের ভবিষ্যত বাণী অনুসারে মুহাম্মদ এসেছে আর খ্রিস্টানগণ দাবি করেন যীশু এসেছে। আয়াত দুটো হলোঃ 13 যিশাইয় বললেন, “দাযূদের পুত্র, আহস মন দিযে শোন| লোকের ধৈর্য়্য়ের পরীক্ষা কি তোমাদের কাছে যথেষ্ট নয়? তোমরা কি আমার ঈশ্বরেরও ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে চাও? 14 ঈশ্বর আমার প্রভু, তোমাদের একটা চিহ্ন দেখাবেন: ঐ যুবতী মহিলাটি গর্ভবতী হবে এবং দেখ সে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে| তার নাম রাখা হবে ইম্মানূযেল|” তবে যেহেতু ভবিষ্যতবানীতে ইম্মানুয়েল অর্থাৎ আমাদের সহিত ঈশ্বর নাম রাখার কথা বলা হয়েছে, সেহেতু খ্রীস্টানদের দাবী বেশি যৌক্তিক। ‎

যীশুর জন্মের সময় কি ঘটেছিলো তা দেখা যাক: মথি 2 : 1-23): 1 হেরোদ যখন রাজা ছিলেন, সেই সময় যিহূদিয়ার বৈত্‌লেহমে যীশুর জন্ম হয়৷ সেই সময় প্রাচ্য থেকে কযেকজন পণ্ডিত জেরুশালেমে এসে যীশুর খোঁজ করতে লাগলেন৷ 2 তাঁরা এসে জিজ্ঞেস করলেন, “ইহুদীদের যে নতুন রাজা জন্মেছেন তিনি কোথায়? কারণ পূর্ব দিকে আকাশে আমরা তাঁর তারা দেখে তাঁকে প্রণাম জানাতে এসেছি৷” 3 রাজা হেরোদ একথা শুনে খুব বিচলিত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে জেরুশালেমের সব লোক বিচলিত হল৷ 4 তখন তিনি ইহুদীদের মধ্যে যাঁরা প্রধান যাজক ও ব্যবস্থার শিক্ষক ছিলেন, তাঁদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, মশীহ (খ্রীষ্ট) কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন? 5 তাঁরা হেরোদকে বললেন, “যিহূদিয়া প্রদেশের বৈত্‌লেহমে, কারণ ভাববাদী সেরকমই লিখে গেছেন: 6 “আর তুমি যিহূদা প্রদেশের বৈত্‌লেহম, তুমি যিহূদার শাসনকর্তাদের চোখে কোন অংশে নগন্য নও, কারণ তোমার মধ্য থেকে একজন শাসনকর্তা উঠবেন যিনি আমার প্রজা ইস্রাযেলকে চরাবেন৷'” মীখা 5:2 7 তখন হেরোদ সেই পণ্ডিতদের সঙ্গে একান্তে দেখা করার জন্য তাঁদের ডেকে পাঠালেন৷ তিনি তাঁদের কাছ থেকে জেনে নিলেন ঠিক কোন সময় তারাটা দেখা গিযেছিল৷ 8 এরপর হেরোদ তাদের বৈত্‌লেহমে পাঠিযে দিলেন আর বললেন, “দেখ, তোমরা সেখানে গিযে ভাল করে সেই শিশুর খোঁজ কর; আর খোঁজ পেলে, আমাকে জানিযে যেও,. যেন আমিও সেখানে গিযে তাঁকে প্রণাম করতে পারি৷” 9 তাঁরা রাজার কথা শুনে রওনা দিলেন৷ তাঁরা পূর্ব দিকে আকাশে যে তারাটা উঠতে দেখেছিলেন, সেটা তাঁদের আগে আগে চলল এবং শিশুটি যেখানে ছিলেন তার ওপরে থামল৷ 10 তাঁরা সেই তারাটি দেখে আনন্দে আত্মহারা হলেন৷ 11 পরে সেই ঘরের মধ্যে ঢুকে শিশুটি ও তাঁর মা মরিয়মকে দেখতে পেযে তাঁরা মাথা নত করে তাঁকে প্রণাম করলেন ও তাঁর উপাসনা করলেন৷ তারপর তাঁদের উপহার সামগ্রী খুলে বের করে তাঁকে সোনা, সুগন্ধি গুগ্গুল ও সুগন্ধি নির্যাস উপহার দিলেন৷ 12 এরপর ঈশ্বর স্বপ্নে তাঁদের সাবধান করে দিলেন যেন তাঁরা হেরোদের কাছে ফিরে না যান, তাই তাঁরা অন্য পথে নিজেদের দেশে ফিরে গেলেন৷ 13 তাঁরা চলে যাবার পর প্রভুর এক দূত স্বপ্নে য়োষেফকে দেখা দিযে বললেন, “ওঠো! ” শিশুটি ও তাঁর মাকে নিযে মিশরে পালিযে যাও৷ যতদিন না আমি তোমাদের বলি, তোমরা সেখানেই থেকো, কারণ এই শিশুটিকে মেরে ফেলার জন্য হেরোদ এর খোঁজ করবে” 14 তখন য়োষেফ উঠে সেই শিশু ও তাঁর মাকে নিযে রাতে মিশরে রওনা হলেন৷ 15 আর হেরোদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকলেন৷ এরূপ ঘটল যাতে ভাববাদীর মাধ্যমে প্রভুর কথা সফল হয়; প্রভু বললেন, “আমি মিশর থেকে আমার পুত্রকে ডেকে আনলাম৷” 16 হেরোদ যখন দেখলেন যে সেই পণ্ডিতরা তাঁকে বোকা বানিযেছে, তখন তিনি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হলেন৷ তিনি সেই পণ্ডিতদের কাছ থেকে যে সমযের কথা জেনেছিলেন, সেই হিসাব মতো “দুবছর ও তার কম বয়সের যত ছেলে বৈত্‌লেহম ও তার আশেপাশের অঞ্চলে ছিল, সকলকে হত্যা করার হুকুম দিলেন৷ 17 এর ফলে ভাববাদী যিরমিয়র মাধ্যমে ঈশ্বর যে কথা বলেছিলেন তা পূর্ণ হল: 18 “রামায় একটা শব্দ শোনা গেল, কান্নার রোল ও তীব্র হাহাকার, রাহেল তাঁর সন্তানদের জন্য কাঁদছেন৷ তিনি কিছুতেই শান্ত হতে চাইছেন না, কারণ তারা কেউ আর বেঁচে নেই৷” যিরমিয় 31:15 19 হেরোদ মারা যাবার পর প্রভুর এক দূত মিশরে য়োষেফকে স্বপ্নে দেখা দিযে বললেন, 20 “ওঠো! এই শিশু ও তাঁর মাকে সঙ্গে নিযে ইস্রাযেল দেশে ফিরে যাও, কারণ যাঁরা এই ছেলের প্রাণ নাশের চেষ্টা করেছিল তারা সকলে মারা গেছে৷” 21 তখন য়োষেফ উঠে সেই শিশু ও তাঁর মাকে নিযে ইস্রাযেল দেশে গেলেন৷ 22 কিন্তু য়োষেফ যখন শুনলেন যে হেরোদের জায়গায় তাঁর পুত্র আর্খিলায় যিহূদিয়ার রাজা হযেছে, তখন তিনি সেখানে ফিরে যেতে ভয় পেলেন৷ পরে আর এক স্বপ্নে তাঁকে সাবধান করে দেওয়া হল, 23 তখন তিনি গালীলে ফিরে নাসরত্ নগরে বসবাস করতে লাগলেন৷ এই রকম ঘটল যেন ভাববাদীর মাধ্যমে ঈশ্বর যা বলেছিলেন তা পূর্ণ হয়: তিনি নাসরতীয়বলে আখ্যাত হলেন৷

এবার আমরা দেখবো মুসার জন্মবৃত্তান্ত (ওল্ড স্টেটামেন থেকে)। তার জন্মের সময়ও ঈশ্বর প্রচুর শিশু ‎হত্যায় মেতেছিলো। ‎
যাত্রাপুস্তক ১ অধ্যায় ৭ থেকে ২২ আয়াত (আংশিক): 7 ইস্রায়েলের লোকদের অসংখ্য সন্তান ছিল| তাদের লোকসংখ্যা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে গিয়েছিল| ফলস্বরূপ মিশর দেশটি ইস্রায়েলীয়তে ভরে গিয়েছিল| 8 সেই সময় একজন নতুন রাজা মিশর শাসন করতে লাগলেন| 9 রাজা তাঁর প্রজাদের উদ্দেশ্যে বললেন, “ইস্রায়েলের লোকদের দিকে দেখ, ওরা সংখ্যায় অসংখ্য এবং আমাদের থেকে বেশী শক্তিশালী! 10 তাদের শক্তিবৃদ্ধি বন্ধ করবার জন্য আমাদের কিছু একটা চতুরতার সাহায্য নিতেই হবে| কারণ, এখন যদি যুদ্ধ লাগে তাহলে ওরা আমাদের পরাজিত করবার জন্য ও আমাদের দেশ থেকে বের করে দেবার জন্য আমাদের শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে|” 11 মিশরের লোকরা তাই ইস্রায়েলের লোকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার ফন্দি আঁটল| অতএব ইস্রায়েলীয়দের তত্ত্বাবধান করবার জন্য মিশরীয়রা ক্রীতদাস মনিবদের নিয়োগ করল| এই দাস শাসকরা ইহুদীদের দিয়ে জোর করে রাজার জন্য পিথোম ও রামিষেষ নামে দুটি শহর নির্মাণ করাল| এই দুই শহরে রাজা শস্য এবং অন্যান্য জিনিসপত্র মজুত করে রাখলেন| 12 মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের কঠিন পরিশ্রম করতে বাধ্য করল| কিন্তু তাদের যত বেশী কঠিন পরিশ্রম করানো হতে থাকল ততই ইস্রায়েলের লোকদের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং বিস্তার ঘটতে থাকল| ফলে মিশরীয়রা ইস্রায়েলের লোকদের আরও বেশী ভয় পেতে শুরু করল| 13 আর সেইজন্য তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ইস্রায়েলের লোকদের প্রতি আরও বেশী নির্দয হয়ে উঠল| ফলস্বরূপ মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের আরো কঠিন পরিশ্রম করতে বাধ্য করল| 14 মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের জীবন দুর্বিসহ করে তুলল…| 15 ইস্রায়েলীয় মহিলাদের সন্তান প্রসবে সাহায্য করবার জন্য দুজন ধাইমা ছিল| তাদের দুজনের নাম ছিল শিফ্রা ও পূযা| 16 বয়ং রাজা এসে সেই দুই ধাইমাকে বললেন, “দেখছি তোমরা বরাবর হিব্রু মহিলাদের সন্তান প্রসবের সময় সাহায্য করে চলেছে| দেখ, যদি কেউ কন্যা সন্তান প্রসব করে তাহলে ঠিক আছে, তাকে বাঁচিয়ে রেখ, কিন্তু পুত্র সন্তান হলে সঙ্গে সঙ্গেই সেই সদ্যোজাত পুত্র সন্তানকে হত্যা করবে|” 17 কিন্তু ধাইমা দুজন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রেখে রাজার আদেশ অমান্য করে পুত্র সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখল| 18 রাজা এবার তাদের ডেকে পাঠিয়ে বললেন, “তোমরা এটা কি করলে? কেন তোমরা আমার অবাধ্য হয়েছ এবং পুত্র সন্তানদের বাঁচিয়ে রেখেছ? ” 19 ধাইমারা রাজাকে বলল, “হে রাজা, ইস্রায়েলীয় মহিলারা মিশরের মহিলাদের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী| আমরা তাদের সাহায্যের জন্য পৌঁছাবার আগেই ইস্রায়েলীয় মহিলারা সন্তান প্রসব করে ফেলে|” 20 …ইস্রায়েলীয়রা সংখ্যায় আরও বাড়তে থাকল এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠল| 21 22 পরে ফরৌণ নিজস্ব লোকদের আদেশ দিলেন, “তোমরা কন্যা সন্তান বাঁচিয়ে রাখতে পারো| কিন্তু পুত্র সন্তান হলে তাকে নীলনদে ছুঁড়ে ফেলতে হবে|”

যাত্রাপুস্তক ২ অধ্যায় ২ থেকে ২৫ আয়াত (আংশিক): ‎2 সে সন্তানসম্ভবা হল এবং একটা সুন্দর ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিল| পুত্র সন্তান দেখতে এত সুন্দর হয়েছিল য়ে তার মা তাকে তিন মাস লুকিয়ে রেখেছিল| 3 তিন মাস পরে যখন সে তাকে আর লুকিয়ে রাখতে পারছিল না, তখন সে একটি ঝুড়িতে আলকাতরা মাখালো এবং তাতে শিশুটিকে রেখে নদীর তীরে লম্বা ঘাসবনে রেখে এলো| 4 শিশুটির বড় বোন তার ভাইয়ের কি অবস্থা হতে পারে দেখবার জন্য দূরে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের ঝুড়ির দিকে লক্ষ্য রাখছিল| 5 ঠিক তখনই ফরৌণের মেয়ে নদীতে স্নান করতে এসেছিল| সে দেখতে পেল ঘাসবনে একটি ঝুড়ি ভাসছে| তার সহচরীরা তখন নদী তীরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল| তাই সে তার সহচরীদের একজনকে ঝুড়িটা তুলে আনতে বলল| 6 তারপর রাজকন্যা ঝুড়িটা খুলে দেখল য়ে তাতে রযেছে একটি শিশুপুত্র| শিশুটি তখন কাঁদছিল| আর তা দেখে রাজকন্যার বড় দযা হল| ভাল করে শিশুটিকে লক্ষ্য করার পর সে বুঝতে পারল য়ে শিশুটি হিব্রু| 7 এবার শিশুটির দিদি আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রাজকন্যাকে বলল, “আমি কি আপনাকে সাহায্যের জন্য কোনও হিব্রু যাত্রীকে ডেকে আনব য়ে অন্তত শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে পারবে? ” 8 রাজকন্যা বলল, “বেশ যাও|” সুতরাং মেয়েটি গেল এবং শিশুটির মাকে ডেকে আনল| 9 রাজকন্যা তাকে বলল, “আমার হয়ে তুমি এই শিশুটিকে দুধ পান করাও| এরজন্য আমি তোমাকে টাকা দেব|” তারই মা শিশুটিকে য়ত্ন করে বড় করে তুলতে লাগল| 10 শিশুটি বড় হয়ে উঠলে মহিলাটি তার সন্তানকে রাজকন্যাকে দিয়ে দিল| রাজকন্যা শিশুটিকে নিজের ছেলের মতোই গ্রহণ করে তার নাম দিল মোশি| শিশুটিকে সে জল থেকে পেয়েছিল বলে তার নামকরণ করা হল মোশি| 11 একদিন, মোশি বড় হয়ে যাবার পর সে তার নিজের লোকদের দেখবার জন্য বাইরে গেল এবং দেখল তাদের ভীষণ কঠিন কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে| সে এও দেখল য়ে একজন মিশরীয় একজন হিব্রু ছোকরাকে প্রচণ্ড মারধর করছে| 12 মোশি চারিদিকে তাকিয়ে দেখল কেউ ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে না| তখন মোশি সেই মিশরীয়কে হত্যা করে তাকে বালিতে পুঁতে দিল| 13 পরদিন মোশি দেখল দুজন ইস্রায়েলীয় নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে| তাদের মধ্যে একজন অন্যাযভাবে আরেকজনকে মারছে| মোশি তখন সেই অন্যাযকারী লোকটির উদ্দেশ্যে বলল, “কেন তুমি তোমার প্রতিবেশীকে মারছো? ” 14 লোকটি উত্তরে জানাল, “তোমাকে কে আমাদের শাস্তি দিতে পাঠিয়েছে? বলো, তুমি কি আমাকে মারতে এসেছ য়েমনভাবে তুমি গতকাল ঐ মিশরীয়কে হত্যা করেছিলে? ” তখন মোশি ভয় পেয়ে মনে মনে বলল, “তাহলে এখন ব্যাপারটা সবাই জেনে গেছে|” 15 একদিন রাজা ফরৌণ মোশির কীর্তি জানতে পারলেন; তিনি তাকে হত্যা করতে চাইলেন| কিন্তু মোশি মিদিযন দেশে পালিয়ে গেল|মিদিয়নে এসে একটি কুয়োর সামনে মোশি বসে পড়ল| 16 সেখানে এক যাজক ছিল| তার ছিল সাতটি মেয়ে| কুযো থেকে জল তুলে পিতার পোষা মেষপালকে জল খাওয়ানোর জন্য সেই সাতটি মেয়ে কুযোর কাছে এল| তারা মেষদের জল পানের পাত্রটি ভর্তি করার চেষ্টা করছিল| 17 কিন্তু কিছু মেষপালক এসেছিল এবং তরুণীদের তাড়িয়ে দিয়েছিল| তাই মোশি তাদের সাহায্য করতে এলো এবং তাদের পশুর পালকে জল পান করালো| 18 তখন তরুণীরা তাদের পিতা রূয়েলের কাছে ফিরে গেল| সে বলল, “তোমরা আজ তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছ দেখছি!” 19 তরুণীরা উত্তর দিল, “হ্যাঁ, ওখানে কুযো থেকে জল তোলার সময় কিছু মেষপালক আমাদের তাড়িয়ে দিল| কিন্তু একজন অচেনা মিশরীয় এলো এবং আমাদের সাহায্য করল| সে আমাদের জন্য জলও তুলে দিল এবং আমাদের মেষের পালকে জল পান করালো|” 20 রূযেল তার মেয়েদের বলল, “সেই লোকটি কোথায? তোমরা তাকে ওখানে ছেড়ে এলে কেন? যাও তাকে আমাদের সঙ্গে খাবার নেমতন্ন করে এসো|” 21 মোশি রূযেলের সঙ্গে থাকবার জন্য খুশীর সঙ্গে রাজী হল| রূযেল তার মেয়ে সিপ্পোরার সঙ্গে মোশির বিয়ে দিল| 22 বিয়ের পর সিপ্পোরা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিল| মোশি তার নাম দিল গের্শোম কারণ সে ছিল প্রবাসে থাকা একজন অপরিচিত ব্যক্তি| 23 দেখতে দেখতে অনেক বছর পেরিযে গেল| মিশরের রাজাও ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন| কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের তখনও জোর করে কাজ করানো হচ্ছিল| তারা সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি শুরু করল| এবং সেই কান্না বয়ং ঈশ্বর শুনতে পাচ্ছিলেন| 24 ঈশ্বর তাদের গভীর আর্তনাদ শুনলেন এবং তিনি স্মরণ করলেন সেই চুক্তির কথা যা তিনি অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোবের সঙ্গে করেছিলেন| 25 ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের দেখেছিলেন এবং তিনি জানতেন তিনি কি করতে যাচ্ছেন এবং তিনি স্থির করলেন য়ে শীঘ্রই তিনি তাঁর সাহায্যের হাত তাদের দিকে বাড়িযে দেবেন|

এরপর মুসা বা মোশি তার শ্বশুরের মেষপাল চড়াতে চড়াতেই তার ঈশ্বরের দর্শন পায়। তবে মোদ্দা কথা ‎এরা ঈশ্বরের নিয়োজিত নবী হয়ে প্রথমেই হিংস্রতা অর্থাৎ খুন দিয়েই ঈশ্বরের কাজ শুর” করেছিলো। ‎‎যেমনটি দেখা যায় ইসলামেও। যদিও ইসলামের নবী কৃষ্ণ ও ঈসার ন্যায় অলৌকিভাবে জন্মগ্রহণ করেনি এবং ঈসা ও মুসার ন্যায় কোন অলৌকিক কাজ করেনি, কেবলমাত্র বাহুবলের উপর ‎‎জোর দিয়েছে, যা এখনো বহমান। যাহোক, ‎‎মোহাম্মদের জন্ম বৃত্তান্ত ও কার্যক্রম প্রায় সকলেরই জানা তাই এ নিয়ে তেমন আলোচনার প্রয়োজন নেই। ‎তবে তার নবুয়ত প্রাপ্তি আর মোশির নবুয়ত প্রাপ্তি একই প্রকার। শুধু একটুখানি ঘুরিয়ে খাওয়া আর কি! ‎‎যেমন মুসা নবুয়ত লাভ করে মেষপাল চড়াতে গিয়ে… যাত্রাপুস্তক 3 :1-17: 1 …মোশি মেষের পাল চরাতে মরুভূমির পশ্চিম প্রান্তে য়েত| একদিন সে মেষের পাল চরাতে চরাতে ঈশ্বরের পর্বত হোরেবে (সিনয়) গিয়ে উপস্থিত হল| 2 ঐ পর্বতে সে জ্বলন্ত ঝোপের ভিতরে প্রভুর দূতের দর্শন পেল| মোশি দেখল ঝোপে আগুন লাগলেও তা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে না| 3 তাই সে অবাক হয়ে জ্বলন্ত ঝোপের আর একটু কাছে এগিয়ে গেল| মনে মনে ভাবল কি আশ্চর্য় ব্যাপার, ঝোপে আগুন লেগেছে, অথচ ঝোপটা পুড়ে নষ্ট হচ্ছে না! 4 প্রভু লক্ষ্য করছিলেন মোশি ক্রমশঃ ঝোপের দিকে দৃষ্টিপাত করতে করতে কাছে এগিয়ে আসছে| তাই ঈশ্বর ঐ ঝোপের ভিতর থেকে ডাকলেন, “মোশি, মোশি!” এবং মোশি উত্তর দিল, “হ্যাঁ, প্রভু|” 5 তখন প্রভু বললেন, “আর কাছে এসো না| পায়ের চটি খুলে নাও| তুমি এখন পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছো| 6 আমি তোমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর| আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর|”মোশি ঈশ্বরের দিকে তাকানোর ভয়ে তার মুখ ঢেকে ফেলল| 7 তখন প্রভু বললেন, “মিশরে আমার লোকদের দুর্দশা আমি নিজের চোখে দেখেছি| এবং যখন তাদের ওপর অত্যাচার করা হয় তখন আমি তাদের চিত্কার শুনেছি| আমি তাদের যন্ত্রণার কথা জানি| 8 এখন সমতলে নেমে গিয়ে মিশরীয়দের হাত থেকে আমার লোকদের আমি রক্ষা করব| আমি তাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাব এবং আমি তাদের এমন এক সুন্দর দেশে নিয়ে যাব য়ে দেশে তারা স্বাধীনভাবে শান্তিতে বাস করতে পারবে| সেই দেশ হবে বহু ভাল জিনিসে ভরা ভূখণ্ড|নানা ধরণের মানুষ সে দেশে বাস করে: কনানীয, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও য়িবুষীয গোষ্ঠীর লোকরা সেখানে বাস করে| 9 আমি ইস্রায়েলীয়দের কান্না শুনেছি| দেখেছি, মিশরীয়রা কিভাবে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে| 10 তাই এখন আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে পাঠাচ্ছি| যাও! তুমি আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বাইরে নিয়ে এসো|” 11 কিন্তু মোশি ঈশ্বরকে বলল, “আমি কোনও মহান ব্যক্তি নই! সুতরাং আমি কি করে ফরৌণের কাছে যাব এবং ইহুদীদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনব?” 12 ঈশ্বর বললেন, “তুমি পারবে, কারণ আমি তোমার সঙ্গে থাকব! আমি য়ে তোমাকে পাঠাচ্ছি তার প্রমাণ হবে; তুমি ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনার পর এই পর্বতে এসে আমার উপাসনা করবে|” 13 তখন মোশি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলল, ‘কিন্তু আমি যদি গিয়ে ইস্রায়েলীয়দের বলি য়ে, “তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন,” তখন তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করবে, “তার নাম কি?” তখন আমি তাদের কি বলব?” 14 তখন ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “তাদের বলো, “আমি আমিই|” যখনই তুমি ইস্রায়েলীয়দের কাছে যাবে তখনই তাদের বলবে, “আমিই” আমাকে পাঠিয়েছেন|” 15 ঈশ্বর মোশিকে আরও বললেন, “তুমি অবশ্যই তাদের একথা বলবে: “যিহোবা হলেন তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর| আমার নাম সর্বদা হবে যিহোবা| এই নামেই আমাকে লোকে বংশ পরম্পরায চিনবে|” লোকদের বলো, যিহোবা তোমাকে পাঠিয়েছেন!” 16 প্রভু আরও বললেন, “যাও, ইস্রায়েলের প্রবীণদের একত্র করে তাদের বলো, “যিহোবা, তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর আমাকে দর্শন দিয়েছেন| অব্রাহামের, ইস্হাকের, এবং যাকোবের ঈশ্বর আমাকে বলেছেন: তোমাদের সঙ্গে মিশরে যা ঘটছে তা সবই আমি দেখেছি| 17 আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি য়ে মিশরের দুর্দশা থেকে তোমাদের উদ্ধার করব| আমি তোমাদের উদ্ধার করব এবং তোমাদের কনানীয, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশে নিয়ে যাব| আমি তোমাদের বহু সুসম্পদে ভরা ভূখণ্ডে নিয়ে যাব|”

আমি তোমাদের উদ্ধার করব এবং তোমাদের কনানীয, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশে নিয়ে যাব| আমি তোমাদের বহু সুসম্পদে ভরা ভূখণ্ডে নিয়ে যাব| ঈশ্বর বা যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার বলেই ইস্রায়েলিরা নিজেদেরকে ঈশ্বরের বা যিহোবার মাহা আশির্বাদপ্রাপ্ত জাতি মনে করে এবং খ্রীস্টানগও তা স্বীকার করে যে ইস্রায়েলিরা ঈশ্বরের ‎আশির্বাদপ্রাপ্ত জাতি, যে জাতিকে কেউ কোন দিন ধ্বংস করতে পারবে না। এমনকি এক জামায়েতে ইসলামী কর্মীর কথাও প্রায়ই একইরূপ। ‎ইস্রায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের জিঘাংসা সম্পর্কে তার সাথে কথা হচ্ছিলো। তিনি আমাকে বলছিলেন, পৃথিবীর কোন মানুষ এর মীমাংসা করতে ‎পারবে না, তাহলে কোরাণ মিথ্যা হয়ে যাবে কারণ কোরানেই নাকি আছে ইস্রায়েলিরা ইসলামের চিরশত্র“ অতএব কেউই ওদের মধ্যে শান্তি স্থাপন ‎করতে পারবে না। এই যদি হয় বিশ্বাস এবং আল্লার হুকুম, তাহালে শান্তির জন্য এতো দরি-দরবার কেন?

যাহোক, ‎মুসার নবুয়ত লাভ হয় ঈশ্বররে র্পবত হোরবেে (সনিয়) পর্বতের পাদদেশে, আর মোহাম্মদের নবুয়ত লাভ ‎হয় হেরা পর্বতের গুহায় প্রায় একই ভাবে এবং আশ্চর্যজনকরূপে। মুসার বিবরণে চমৎকার কিছু কাহিনী ‎রয়েছে যেমন, হাতের লাঠিকে সাপ বানানো, নদীর পানিকে রক্ত বানানো, নীলদনদে দুভাগে বিভক্ত করে ‎এর তলদেশ দিয়ে হেঁটে পার হওয়া ইত্যাদি। যীশুর রয়েছে আরো কয়েকগুণ বেশি মতা, সে নদীর ‎পানির উপর দিয়ে হেঁটেছে, অন্ধকে চোখ দান করেছে, মৃতকেও জীবন দিয়েছে এবং নিজেও কবর থেকে ‎জীবিত হয়েছে ইত্যাদি! যেসব আশ্চর্য ক্ষমতা মোহাম্মদের মধ্যে ছিলো না। ‎

এসব নবীরা যে আল্লাহ বা ঈশ্বরের সমকক্ষ বা একই শক্তির অধিকারী অথবা নিজেরই যে ঈশ্বর বা আল্লা ‎তা তাদের কার্যক্রম ও কথাবার্তায় স্পষ্ট। যেমন, যীশু নিজেকে ‎বলেছে, “যে আমাকে দেখেছে সে পিতাকেও (ঈশ্বরকে) দেখেছে।” আবার বলেছে, “আমি ও পিতা ‎এক।” অন্যদিকে মোশি বা মুসাকে ঈশ্বর বলেছে, তাদের বলবে, “আমিই” আমাকে পাঠিয়েছেন|” এতে প্রমাণিত হয় যে, মোশিকে ঈশ্বর ‎তার সমকক্ষ করে ইস্রায়েলিদের কাছে পাঠিয়েছে “আমি আমিই বা আমিই আমাকে পাঠিয়েছেন।” অর্থাৎ ‎আমিই ঈশ্বর, আমিই আমাকে পাঠিয়েছি বা নিজেই এসেছি। ভগবান কৃষ্ণও নিজেই এসেছে তারও প্রমাণ ‎পাওয়া যায় তার কাহিনীতে। মোহাম্মদও নিজেই আল্লার সমকক্ষ বলে প্রচার করেছে বহু আয়াতে। ‎‎যেমনÑ কুরানে আমরা শব্দটি প্রায়ই ব্যবহৃত হতে দেখা যায়, যেমনটা বাইবেলেও দেখা যায় এবং স্পষ্ট ‎করে বলাও হয়েছে পিতা বা ঈশ্বর বা প্রভু ও আমি এক।

কুরান প্রমাণ দেয় যে, সূরা আল ইমরান, ০৩: ৩১ যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। ০৩: ৩২ বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। ০৩: ১৩২ আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়।

সূরা নিসা, ০৪: ১৩ …যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন, ০৪: ৫৯ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর…। ০৪: ৬৯ আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রসুলরে আনুগত্য স্বীকার করতে বহু আয়াতে বলা হয়েছে। একজনের আনুগত্য নয় ‎‎দুজনের এবং এসব বাক্যে বোঝা যায় একজন ব্যতিত অন্যজন কিছুই না। অর্থাৎ সূরা নিসা, ০৪: ৮০ যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।

অতএব সব ধর্মেরই কাহিনী এক এবং একটি থেকে অন্যটি বেশ‎ কিছু হলেও নকল করা হয়েছে বললেও মনে করি। পাঠক চাইলে ঈসা ও মুসার আশ্চর্য ক্ষমতা নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা আছে। সবার প্রতি রইল আন্তরিক ‎শুভেচ্ছা।‎